আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসিনার প্রত্যাবর্তন তত্ত্বাবধায়কের জন্য বড় আঘাত

[sb]উইকিলিকস থেকে রফিকুল ইসলাম॥------- বিদেশ সফর শেষে শেখ হাসিনার বিজয়দৃপ্ত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত। এর মধ্যদিয়ে দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি এবং দুই নেত্রীকে জোরপূর্বক নির্বাসনে পাঠানোর সরকারের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। দুই নেত্রীকে নিয়ে এখন সরকারের মধ্যে যে বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে তাতেও ঝুঁকি রয়েছে। ২০০৭ সালের ৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিসের পাঠানো তারবার্তায় এমন মন্তব্য করা হয়েছে। তবে ২০০৮ সালের ৫ মে পাঠানো অপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মারিয়ার্টির পাঠানো আরেকটি তারবার্তায় বলা হয়েছে, ভারতের হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী গ্রেফতারকৃত দুই নেত্রীর মুক্তির পৰে জোড়ালো আবেদন জানিয়েছে।

মরিয়ার্টির সঙ্গে এক সৌজন্য সাৰাতের সময় ভারতের হাইকমিশনার দুই নেত্রীর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কথাও তুলে ধরেন। তবে চক্রবর্তী জামায়াতে ইসলামীর জঙ্গী সম্পৃক্ততার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার ব্যাপারেও তাঁর দেশের উদ্বেগের কথা পরিষ্কারভাবে জানান। অপর এক তারবার্তায় বলা হয়, শেখ হাসিনা যাতে দেশে ফিরতে না পারেন সেজন্য সরকারের নির্দেশনার বাইরে তখন ওয়াশিংটনের মার্কিন রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশগামী বিমানে উঠতে না দিতে বিমান সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানাতে।

তিনি নির্দেশনার বাইরে গিয়ে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট জব্দ করতে মার্কিন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন, বলেছিলেন শেখ হাসিনা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত গীতা পাসি সাফ জানিয়ে দেন যে, এ অনুরোধের কোনটাই রাখা সম্ভব নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করার কোন কারণ যুক্তরাষ্ট্রের জানা নেই। বিউটেনিসের তারবার্তায় বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে বস্নাকমেইল করে নির্বাসনে পাঠানোর যে জল্পনা চলছিল তার অবসান ঘটলো হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে। এ ছাড়া নতুন একটি রাজনৈতিক গ্রম্নপ তৈরির চেষ্টাও নস্যাত হয়ে যায়।

শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্ত্থনা জানানোর জন্য দলের বেশ কয়েকজন বিশ্বসত্ম নেতা উপস্থিত হন। এদের মধ্যে চার সপ্তাহ আগে যাঁরা শেখ হাসিনাকে দূরে থাকার জন্য বলেছিলেন তাঁদেরই অনত্মত তিন জন নেতা বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী, এ ঘটনাকে সরকারের কৌশলগত পরাজয় হিসেবে উলেস্নখ করেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে স্বাগত জানাতে মোটর শোভাযাত্রাসহকারে বিমানবন্দরে হাজার হাজার লোকের স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রাজনৈতিক হানিমুন শেষ হওয়ার যাত্রা শুরম্ন হলো। তবে তিনি বলেছেন বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অবসান ঘটানোর কোন পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের নেই।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন সিনিয়র উপদেষ্টার বরাত দিয়ে বিউটেনিস তারবার্তায় বলেছেন, নির্বাসনে যাওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়া ওমরা হজ পালনের নামে সৌদি আরব বা কুয়েতে যাওয়ার পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছেন। তবে চিকিৎসার জন্য তারেক রহামানকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে বিদেশ পাঠানোর অনুমতি প্রদানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামোনা সংক্রানত্ম খালেদা জিয়ার অনুরোধের বিষয়টি মার্কিন দূতকে অবহিত করেন উপদেষ্টা। এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার উদ্দেশ যে তাঁর কাছে পরিষ্কার নয় তাও উপদেষ্টা মার্কিন দূতকে অবহিত করেন। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের পর এ প্রসত্মাবের মধ্যদিয়ে খালেদা তাঁর পরিবারের সদস্যদের রৰা করতে যাচ্ছে নাকি বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে যাচ্ছেন তাও স্পষ্ট নয়। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বেগম জিয়া একটি বিবৃতি দিলেও আওয়ামী লীগ নেতার ওই বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার কোন সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে কাজ করার তীক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তাদের আনত্মরিকতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী দাবি করেন খালেদা জিয়ার দল নানা কেলেঙ্কারিতে জাড়িয়ে মর্যাদাহীন একটি দলে পরিণত হয়েছে। ফলে কোন ব্যাপারে একটি অর্থবহ সমর্থন দেয়া দলটির পৰে কঠিন। মনত্মব্য কলামে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, দুই নেত্রীর অব্যাহত উপস্থিতির মধ্যে সরকার কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন তা পরিষ্কার নয়।

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও হাসিনার প্রত্যাবর্তনের প্রতি সংবাদ মাধ্যমের সমর্থনের প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এ ব্যাপারে অভ্যনত্মরিণ ও আনত্মর্জাতিক চাপের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। কিংস পার্টি গঠনের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে বিএনপির রাজনীতিকদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৮ সালের ৫ মে যুক্তারাষ্ট্রে পাঠানো মরিয়ার্টির তারবার্তায় ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে সাৰাতের প্রসঙ্গ উলেস্নখ করা হয়। ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী গণতন্ত্র পুনরম্নদ্ধারে কার্যকর একটি ফর্মুলা প্রণয়নের জন্য দুই নেত্রীর মুক্তির কোন বিকল্প নেই বলে উলেস্নখ করেছেন। নির্বাসিত করার মাধ্যমে দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বাইরে রাখার ব্যাপারে আর্মি সমর্থিত সরকার ব্যর্থ হয়েছে এবং ধীরে ধীরে এখন তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে মরিয়ার্টি বিনা বিচারে দুই নেত্রীকে ছেড়ে দেয়ার দাবির বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, এর ফলে অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়ার যে সংস্কৃতি শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.