আর তোমরা যা বোঝো না তা অনুসরণ করবে না, নিশ্চয়ই শ্রবণ, দৃষ্টি এবং বুদ্ধিমত্তা – এই সবগুলোর ব্যপারে জবাবদিহি করতে হবে - কুরআন ১৭:৩৬ নামায অর্থ বুঝে পড়াটা খুবই জরুরি। আমরা যারা আরবি বুঝি না, নামায পড়াটা আমাদের কাছে একটি অনুষ্ঠান মাত্র। আমারা ভুল আরবিতে কিছু অর্থহীন আপত্তিকর শব্দ করি, হাত পা উঠা নামা করি, উপর নিচ হই, ডানে বায়ে তাকাই – আর ধরে নেই চমৎকার আল্লাহর ইবাদত করা হল। আরবি যাদের মাতৃভাষা, তারা যখন আমাদেরকে কিছুই না বুঝে আরবিতে নামায পরতে দেখে, তখন তারা অবাক হয় কেন আমরা কিছুই না বুঝে এরকম একটা কাজ দিনের পর দিন করে যাচ্ছি, যেখানে তারা বুঝে শুনে নিজের মাতৃভাষায় আল্লাহর কথা স্মরণ করছে। একটা উদাহরণ দেই, আমরা যখন বলি – কুলহু আল্লাহু আহাদ – এর বাংলা করলে দাঁড়ায় – খাও, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়।
“কুল” অর্থ “খাও”। “কু’ল” (গলার ভিতর থেকে কু বলা) অর্থ “বল”। আমরা প্রতিদিন কতবার না বুঝে বলে যাচ্ছি – খাও, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় - এই ধরে নিয়ে যে নামাযে আমরা বেশ কিছু ভালো কথা বলছি, কিন্তু কি যে বলছি তা না জানলেও চলে, আল্লাহ বুঝলেই হল। আল্লাহ পরিষ্কার বলে দিয়েছেনঃ
“আর তোমরা যা বোঝো না তা অনুসরণ করবে না, নিশ্চয়ই শ্রবণ, দৃষ্টি এবং বুদ্ধিমত্তা – এই সবগুলোর ব্যপারে জবাবদিহি করতে হবে” (কুরআন ১৭:৩৬)।
ইসলাম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম যেখানে অন্ধ বিশ্বাসের কোন জায়গা নেই।
আল্লাহ কুরআনে মানুষকে বার বার চ্যালেঞ্জ করেছেন তাঁর বাণী নিয়ে চিন্তা করতে, বোঝার চেষ্টা করতে, বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করতে, গবেষণা করতে।
"আল্লাহ তাদেরকে কলুষিত করে দেন যারা তাদের বুদ্ধি ব্যবহার করে না। " (১০:১০০)
"তারা কি কুরআন সম্পর্কে চিন্তা করে না, তাদের অন্তর কি তালাবন্ধ?" (৪৭:২৪)
"আর তারা (জাহান্নামিরা) বলবে, আমরা যদি শুনতাম বা বুদ্ধি খাটাতাম তাহলে আমরা জাহান্নামিদের মধ্যে থাকতাম না। " (৬৭:১০)
অন্ধ বিশ্বাস করে অর্থ না বুঝে ক্রমাগত গৎবাঁধা কিছু শব্দ উচ্চারন করাটা অর্থহীন। আল্লাহ চান আমরা যেন নিজেদেরকে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ বার মনে করিয়ে দেই – আল্লাহ সবচেয়ে বড়, তিনি ছাড়া আর কারো কাছে কিছু চাওয়া যাবেনা, সবসময় সৎ পথে থাকতে হবে, যারা ভুল পথে যায় তাদেরকে অনুসরন করা যাবেনা, নিজের এবং মানুষের ক্রোধের শিকার হওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
প্রতিদিন শত সমস্যা, প্রলোভন, কামনা, বাসনা, অন্যায়, মিথ্যার মধ্যে থেকেও আমরা যেন পথ হারিয়ে না ফেলি, সে কারনেই আল্লাহ মানুষকে দিনে কমপক্ষে পাঁচ বার নামায পড়তে বলেছেন, যেন আমরা বার বার নামাযে নিজেদেরকে আল্লাহর নির্দেশগুলো স্মরণ করিয়ে দেই। নামাযে আমরা যে কথাগুলো বলি তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা। নামাযের কথাগুলো শক্তিশালী অটোসাজেশন। আপনি যতবার বুঝে কথাগুলো বলবেন, আপনি তত বেশি করে অনুধাবন করবেন সেই কথাগুলোর গুরুত্ব কি। সুতরাং বুঝে শুনে নামায পড়ুন, দেখবেন নামায পরে আপনি পরিতৃপ্তি পাচ্ছেন, শান্তি পাচ্ছেন, নিজের ভেতরে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন।
আপনার চিন্তা-ভাবনা, কথা, কাজের মধ্যে আল্লাহর উপস্থিতিকে আরও বেশি করে উপলব্ধি করছেন। আপনি নিজেই অনুধাবন করতে পারছেন কেন নামায পড়া উচিৎ, কেন আল্লাহ মানুষকে দিনে পাঁচবার নামায পড়তে বলেছেন। আল্লাহ কেন বলেছেনঃ
"পড়, যা তোমাকে এই কিতাবে প্রকাশ করা হয়েছে, নিয়মিত নামায পড়, নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অশ্লীল এবং অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখে, এবং আল্লাহর কথা সবসময় মনে রাখাটা আরও বেশি ভালো, আর আল্লাহ জানেন তোমরা কি কর"। (কুরআন ২৯:৪৫)
আসুন দেখি নামাযে আমরা কি বলিঃ
=======================================
* আল্লাহু আকবার
আল্লাহ সবচেয়ে মহান
* সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুক
সমস্ত মর্যাদা আল্লাহ আপনার, সমস্ত প্রশংসা আপনার, আপনার নামগুলো পবিত্র, আপনার রাজত্ব সবার উপরে, আপনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য প্রভু নয়।
* আউযুবিল্লাহি মিনাস শাইতয়ানির রাজিম
আমি আল্লাহর কাছে রক্ষা চাই অভিশপ্ত শয়তান থেকে।
সুরা ফাতিহা
--------------
* বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামে, সবচেয়ে দয়ালু, সবচেয়ে করুণাময়।
* আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, সকল জগতের প্রভু।
* আর রাহমানির রাহিম
সবচেয়ে করুণাময়, সবচেয়ে দয়ালু।
* মালিকি ইয়াও মিদ দীন
বিচার দিনের একমাত্র বিচারপতি।
* ইয়া কানা’বুদু ওয়া ইয়াকা নাসতা’ঈন
আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনারই কাছে সাহায্য চাই।
* ইহদিনাস সিরাতা’ল মুস্তাকি’ম
আমাদেরকে সঠিক পথ দেখান।
* সিরাতাল লাযিনা আ’ন আমতা আ’লাইহিম
তাদের পথ যাদেরকে আপনি অনুগ্রহ করেছেন,
* গা’ইরিল মাগধুবি আ’লাইহিম ওয়া লাদ দ--য়াল লি-ন
যারা ক্রোধের শিকার হয় না এবং ভুল পথে যায় না।
সুরা ইখলাস
-------------
* কু’লহু আল্লাহু আহাদ
বল, আল্লাহ এক অদ্বিতীয়।
* আল্লাহুস সামাদ
আল্লাহ চিরন্তন/আদি-অন্তহীন।
* লাম ইয়া লিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।
* ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ
এবং তাঁর সাথে কোন কিছুর তুলনা হয়না।
রুকু এবং সিজদা
-------------------
* সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম
আমার প্রভু মহান, সবচেয়ে মর্যাদাশীল
* সামি আল্লাহু লিমান হামিদা
আল্লাহ তার কথা শোনেন যে তার প্রশংসা করে
* রাব্বানা লাকাল হামদ
হে আমার প্রভু, সমস্ত প্রশংসা আপনার
* সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা
আমার প্রভু মহান, সবার উপরে
আত্তাহিইয়াতু***
----------------
* আত্তা হিইয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়িবাতু
সমস্ত শ্রদ্ধা, নামায, ভালো কাজ আল্লাহর জন্য
* আস সালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবিয়ু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
হে নবী, তোমার উপরে আল্লাহর শান্তি এবং বরকত বর্ষিত হোক
* আসসালামু আলাইনা ওয়া আ’লা ই’বাদিল্লাহিস সা’লিহিন
শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপরে এবং সমস্ত ন্যায়পরায়ণ বান্দার উপরে
* আশহাদুন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
আমি সাক্ষি দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয়
* ওয়া আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু
এবং আমি সাক্ষি দিচ্ছি যে মুহাম্মদ তাঁর উপাসক এবং বার্তাবাহক
দুরুদ***
------
* আল্লাহুম্মা সাল্লিহ আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন
হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ, তার পরিবার এবং তার সত্যিকার অনুসারিদের শান্তি দিন,
* কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহিমা
যেমন আপনি ইব্রাহিম, তার পরিবার এবং তার সত্যিকার অনুসারিদেরকে শান্তি দিয়েছেন।
* ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ
নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসনীয়, মহান।
* আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন
হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ, তার পরিবার এবং তার সত্যিকার অনুসারিদের বরকত দিন,
* কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহিমা
যেমন আপনি ইব্রাহিম, তার পরিবার এবং তার সত্যিকার অনুসারিদেরকে বরকত দিয়েছেন।
* ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ
নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসনীয়, মহান।
কুরআনে আল্লাহ মানুষকে এই দোয়া করতে বলেছেন, যা আপনি নামাযে শেষ বসায় করতে পারেনঃ
হে আল্লাহ, আপনি আমাকে এবং আমার বাবা-মা কে যে নিয়ামত দিয়েছেন তার মূল্যায়ন করার সামর্থ্য দিন এবং আমি যেন সৎকাজ করতে পারি যা আপনি গ্রহণ করবেন। আমার সন্তানদেরকে সৎ হতে দিন। নিশ্চয়ই আমি ক্ষমা চেয়েছি এবং আমি এখন আপনার অনুগতদের একজন। (কুরআন ৪৬:১৫)
==========================================
*** আত্তাহিইয়াতু এবং দুরুদ কুরআনে নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে কিছু নামাযে বলা যাবে কিনা তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায়, কেন আমরা নামাযে নবীর এবং তার পরিবারের জন্য শান্তি চাবো? তারা কি এখন অশান্তিতে আছেন? যদি তারাই অশান্তিতে থাকেন, তাহলে আমাদের কি হবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে সবচেয়ে বড় পুরস্কার দিবেন। তাই যে ইতিমদ্ধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়েছে এবং জান্নাতিদের মধ্যে সবার আগে থাকার সম্ভাবনা বেশি, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি চাওয়াটা অর্থহীন। আমাদের দোয়ায় তাদের আর কিই বা লাভ হবে। বরং যতটুকু সময় আমরা আল্লাহর কাছে চাই, তার পুরোটাই উচিৎ নিজের জন্য আল্লাহর কাছে চাওয়া। দ্বিতীয় কারন হল আত্তাহিইয়াতুতে "হে নবী, তোমার" বলে নবীকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে যেন তিনি জীবিত আছেন।
নবী বেঁচে থাকার সময় তখনকার মানুষেরা যদি "হে নবী, তোমার" বলত, তাহলে তা মানায়। কিন্তু তিনি মারা যাবার পর তা বলাটা হাস্যকর। কুরআনে আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন কোন মানুষ মারা যাবার পর কিয়ামতের আগে তাকে প্রাণ দেওয়া হবে না। তাই সকল নবী মৃত। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে এমনভাবে কিছু বলা যেন তিনি তা শুনতে পাচ্ছেন - তা সঠিক হতে পারেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।