আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাত্র ৭ দিনেই হয়ে যান ফর্সা! ত্বককে করুন আরো উজ্জ্বল!

সফল ব্লগার নয়, সত্যবাদী ব্লগার হওয়াই হোক আমাদের লক্ষ্য। আপনার গায়ের রঙ যদি কালো অথবা শ্যাম বর্ণ হয় তাহলে পোস্টের বাইরে না থেকে টুক করে ক্লিক করে ভেতরে চলে আসুন আপনি নারী-পুরুষ বা মাঝামাঝি যেই হন না কেন আপনাদের জন্যই এই পোস্ট। সারা দুনিয়া ফর্সা হয়ে যাচ্ছে, আর আপনি বাকি থাকবেন কেন? গণতান্ত্রিক দেশে সবার সমান অধিকার বিজ্ঞাপন ০১: সাথী কলেজে পড়ে। সে খুব ভালো গান গাইতে পারে। কিন্তু তার গায়ের রং ময়লা, যা তার কনফিডেন্স কমিয়ে দিয়েছে! খুব ভালো গান জানার পরও গায়ের রং ময়লা হওয়ায় সে কোন অনুষ্ঠানে বা বন্ধুদের সামনে গান গাইতে লজ্জা পায়! সাথীর বান্ধবী সিলভিয়া তার এই প্রবলেম দেখে তার হাতে তুলে দিল কেয়ার এন্ড লাভলী ! মাত্র ৭দিনেই হয়ে যান ফর্সা! ১০০% গ্যারান্টি! কেয়ার এন্ড লাভলী আপনার সৌন্দর্যকে করে তুলবে আরো আকর্ষণীয় ও অতুলনীয়।

মুখের সব অবাঞ্চিত দাগ ও ব্রণকে দুর করে আপনার ভিতরের রূপকে জাগিয়ে তুলবে। আপনাকে পরিপূর্ণ নারীতে বদলাতে মাত্র ৭দিন কেয়ার এন্ড লাভলী ব্যবহারই যথেষ্ঠ! আর কেয়ার এন্ড লাভলীর জাদুকরী ছোঁয়ায় সাথী মাত্র ৭দিনেই হয়ে গেল ঝকঝকে ফর্সা! এবার সাথী কলেজের অনুষ্ঠানে গলা ফাটিয়ে গান করে সবাইকে মাতিয়ে তুললো! [নিজ দ্বায়িত্বে "মাইরালা আমারে" পড়ে ফেলুন ] বিজ্ঞাপন ০২: সোহেল একজন স্ট্যান্টম্যান। সিনেমায় হিরোদের স্ট্যান্ট দেওয়া তার কাজ। যদিও হিরোদের চেয়ে তার চেহারা এবং পারফরমেন্স কোন অংশে কম যায় না কিন্তু গায়ের রংটাই হয়েছে জ্বালা! ময়লা গায়ের রং তাকে কোন পরিচালকের সামনেই যাওয়ার সাহস জোগায় না! এরপর এসে গেল কেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম! পুরুষদেরও চিন্তা নাই, আপনাদের জন্যও এসে গেছে কেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম! আপনার মুখের কালো ভাব দূর করে আপনাকে আরো হ্যান্ডসাম এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে কেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম এর জুড়ি নাই। কেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম মেখে সোহেল তার গায়ের চকচকা রং নিয়ে পরিচালকের সামনে যেতেই পরিচালক তাকে পরবর্তী সিনেমার জন্য কাস্ট করে ফেললেন।

[আবারো নিজ দ্বায়িত্বে "মাইরালা আমারে" পড়ে ফেলুন ] কি ভাবছেন? নতুন কোন ফেয়ারনেস ক্রিমের অ্যাড? না..না...এগুলো হচ্ছে বাজারে প্রচলিত ফেয়ারনেস ক্রিম কোম্পানী গুলোর অ্যাডের ভাষা। আমি এখানে কোন ক্রিমের অ্যাড নিয়ে আসিনি...এসেছি এই সব ক্রিম আর সৌন্দর্য নিয়ে কিছু কথা বলতে। টিভি খুললেই আজকাল প্রতিটি চ্যানেলে বিভিন্ন ফেয়ারনেস ক্রিম কোম্পানীর অ্যাড দেখা যায়। যেগুলোতে কেউ মাত্র ৭দিনে কেউবা আবার ১৪ দিনে গায়ের রঙ ফর্সার গ্যারান্টি দিচ্ছেন! কেউ কেউ তো আবার বয়সই কমিয়ে দিতে পারবেন বলে দাবি করছেন। এজ মিরাকল টা্‌ইপ নাম দিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল বিক্রি করছে! নারী-পুরুষ উভয়েরই রূপ তথা সৌন্দর্য নিয়ে তারা অত্যাধিক মাত্রায় চিন্তিত! আর আমরা ম্যাঙ্গো-পিপল এইসব অ্যাড দেখে যে কোম্পানী যত চাপা মারতে পারে তার ক্রিম কিনি! যেন দেশে ফর্সা হওয়ার হিড়িক পড়েছে! ফেয়ারনেস ক্রিম আগে শুধু নারীদের জন্য হলেও এখন পুরুষরাও পিছিয়ে নেই।

কিন্তু কেন এই ফেয়ারনেস ক্রিম??? গায়ের রং ফর্সা করাটা কি এতই জরুরী?? কোন কথা বলতে গেলে আমি সব সময় নিজের উদাহরণ দিতে পচ্ছন্দ করি। আমার ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি প্রতিদিন রুটিন করে আমার মাকে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী মাখতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মা যেমন ছিলো তেমনই আছে শুধু বয়সের ছাপটা পড়েছে চেহারায়! মাঝখান থেকে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী যে কি কাজ করলো ঠিক বুঝতে পারছি না! আপনারাও একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন আপনাদের বাড়িতে মা-বোনরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশী-বিদেশী ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করছে....বাবা-ভাইরাও পিছিয়ে নেই। যারা এগুলো ব্যবহার করছেন তাদের কি কোন লাভ হচ্ছে? গ্রামের সহজ সরল কিশোরী-যুবতী থেকে শুরু করে শহুরে আধুনিক মেয়েরা কেউ পিছিয়ে নেই ফর্সা হওয়ার এ দৌড়ে। আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী একেক জন একেক ব্রান্ডের স্নো/ক্রিম/লোশন ব্যাবহরা করছে।

কোনটার দাম ২০ টাকা আবার কোনটার ২০০০০ বা তারও বেশী!! সোনা মেশানে ক্রিম, এন্টি এজিং ক্রিম, রূপা মেশানো ক্রিম, হলুদ মেশানো ক্রিম, কমলা মেশানো ক্রিম, বাদাম মেশানো ক্রিম, পেঁপে মেশানো ক্রিম, সশা মেশানো ক্রিম কি নাই এই ক্রিমের বহরে! এখন শুধু লাউ-কদু, করল্লা, সজনে ডাটা, ধুন্দল টাইপ ফ্লেভার আসতে বাকি বলিউডের শাহরুখ খান, সালমান খান, ঐশ্বরিয়া, ক্যাটরিনা, প্রীতি জিনতা থেকে শুরু করে ঢালিউডের শাবনূর, পপি, সাকিব খান কেউ বাদ পড়েনি এই ক্রিম গুলোর বিজ্ঞাপনে! পাবলিকের প্রতিক্রিয়া: শাহরুখ খান কইসে? না মাইখা যামু কৈ! পাবলিকের প্রতিক্রিয়া: ক্যাটরিনা মাখসে এই ক্রিম? তাইলে আমিও মাইখা ক্যাটরিনা হমু! আমার নাইকা হওয়া ঠ্যাকায় কিডা! যারা নারীবাদী অর্থাৎ নারী-পরুষের সমান অধিকার নিয়ে লড়াই করছেন তাদেরকে বলছি, এই সব চটকদার বিজ্ঞাপন কি আপনাদের চোখে পড়ে না? কালো বলে কি সমাজে কোন মেয়ের মাথা উচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই? আমরা কি এখনো সেই আদিম যুগে পড়ে আছি? এখনো কি কালো-সাদা বিবেচনা করে সাফল্য আসে? এটা তো ইভটিজিং এর চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধ। ইভটিজিং যদি সামাজিক ব্যাধি হয় তাহলে তো রং ফর্সা করা ক্রিমের নামে এইসব ভাওতাবাজি আন্তর্জাতিক ব্যাধি! এদের বিরুদ্ধে আপনারা সোচ্চার হচ্ছেন না কেন? এই সব ক্রিম কোম্পানী তাদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লক্ষ-কোটি (কথিত) কালো/শ্যামলা মেয়েদের প্রতিনিয়ত অপমান করছে! আর আপনারা সব মুখ বুজে দেখছেন? নাকি নারী অধিকার শুধু ফর্সা মেয়েদের জন্য? পুরুষদের অবশ্য কিছু বলার নেই। কারণ তারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের মত ফেয়ারনেস ক্রিমেও অধিকার পেয়ে গেছেন। আসলে এই সব কোম্পানী গুলো রং ফর্সা করার কথা বলে সমাজ তথা পুরো বিশ্বের মানুষকে দুইভাগ করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত আর আমরা সব দেখে-শুনেও নির্বিকার বসে আছি। কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন? আর কত দিন আমরা মানবতার এই অপমান দেখবো? এই সব বহুজাতিক বেনিয়ারা আর কত ভাবে অপমান করলে আমাদের অনুভূতিকে নাড়া দিবে?? এরা পারলে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছেও ক্রিম বেচে আসে এখানে একটা লক্ষ করার মতো বিষয়, এ ধরণের ক্রিম কোম্পানী গুলোর বেশীর ভাগই বিদেশী কোম্পানী।

দেশী কোম্পানীর সংখ্যাও কম না। গড়ে একেকজন নারী যদি মাসে একটি করেও এধরণের ক্রিম ব্যাবহার করেন তাহলে কত টাকা প্রতি মাসে অপচয় সেটা হিসাব করা মুষ্কিল! আর এই টাকার বড় অংশটাই কিন্তু চলে যাচ্ছে বিদেশীদের হাতে! আর এ ধরণের ক্রিম গুলো যে ত্বকের কোন উপকার করে না, বরং ক্ষতি করে সেটাও বিজ্ঞানী/ডাক্তাররা বার বার বলে আসছেন। অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় এধরণের ক্রিম ব্যবাহারের ফলে ত্বকের ক্ষতি হয়, ব্রণ বের হয়, পরবর্তী আরো কালো হয়ে যায় আরো কত কি! তারপরও থেমে নেই ফর্সা হওয়ার রঙ্গ!! আর দেশী কোম্পানী গুলোর কথা তো আলাদা করে বলতে হয়। এরা আরো একধাপ এগিয়ে! মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে ক্রিম বানিয়ে এরা তাৎক্ষণিক কিছু মানুষকে হকচকিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে এর ক্ষতিকর প্রভাবের হাত থেকে ব্যবহারকারীরা রক্ষা পাচ্ছে না।

একটা কোম্পানী নিষিদ্ধ করা হলে নতুন উদ্যোমে ১০টা কোম্পানী আসছে! নিষিদ্ধ কোম্পানী আরেক নাম নিয়ে পুনরায় আসছে! আর আসবেই তো, চাহিদা প্রচুর......সুতরাং যোগান দেওয়ার তো কাউকে থাকতে হবে। আর এই সুযোগে ক্রিমের ব্যাবসা করে আইনের ফাঁক-ফোকর গলে, ঘুষ দিয়ে ব্যবসা চালু রেখে আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হচ্ছে অনেকেই! আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিন্তু কালো বর্ণের মানুষ, কিন্তু কালো বলে কি তিনি বড় হতে পারেননি? অপরাহ উইনফ্রে কিন্তু ২.৮ বিলিয়ন ডলারের মালিক! কন্ডোলিৎসা রাইসের কথাও মনে আছে নিশ্চয়? মোহাম্মদ আলী? কফি আনান? মার্টিন লুথার কিং? এরা তো আমাদের দেশের মানুষের চেয়েও কালো! তাই বলে কি এরা জীবনে বড় হতে পারেনি? এরা কিন্তু কেউ আমাদের মতো ক্রিম ডলে না!! আল্লাহপাক প্রত্যেকটি মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। কারও সাথে কারও তুলনা হয় না। আমাদের চেহারা কেমন হবে তা আল্লাহপাক নিজেই নির্ধারন করে দিয়েছেন। আমার বা আপনার এত কোন হাত নেই।

সুন্দর-অসুন্দর, ফর্সা-কালো সবই আল্লাহর ইচ্ছা। সুতরাং মানুষের বাহ্যিক চেহারা তার সৌন্দর্য নির্ধারক হতে পারে না। সৌন্দর্য মানুষের ব্যবহারের মধ্যে নিহিত। আমাদের আচার-ব্যবহার, চাল-চলন কেমন হবে তা আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারি। আমাদের অন্তরের সৌন্দর্য আমরা নিজেরাই উজ্জ্বল করতে পারি।

তাই অন্তরের সৌন্দর্যই আসল সৌন্দর্য। আসুন, গায়ের রংকে ফর্সা করার ব্যর্থ চেষ্টা না করে মনের রংকে ফর্সা করি। মন থেকে সব হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, অন্যায়, মিথ্যাকে দূর করে নিজেকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলি। তাহলেই ব্যক্তি জীবনে, কর্মজীবনে তথা জীবনের সর্বস্তরে সাফল্য আসবে। বি: দ্র: এটা সামুতে করা আমার প্রথম পোস্ট।

প্রথম পোস্ট বলেই হয়তো তখন তেমন সাড়া পাইনি। রি-পোস্ট করেও যে আহামরি কিছু করে ফেললাম তা না! আমি নিশ্চিত আমার এই লেখা পড়ে কেউ ক্রিম ডলাডলি বাদ দিবেন না। দেওয়া উচিতও না! কোথাকার কোন মাগুর এসে পোস্ট ফেঁদে বসলো আর আপনারা ক্রিম মাখা বন্ধ করে দিবেন এমন হলে তো ক্রিম কোম্পানীরা আমার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা ঠুকে দিবেন তারপরও যদি ব্যাপারটা মনে একটু ভাবনার উদ্রেক ঘটায় তাই একটু পরিবর্ধন করে আবার দিলাম ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৫৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.