আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন চিকিৎসা বিভ্রাট

অদ্ভুত উটের পিঠে দিন দুয়েক আগে, আমার এক বন্ধু ঢাকার সেরা নার্সিংহোমে তার আলসারের সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য গিয়েছিল৷ সেখানে যে ডাক্তারকে তিনি দেখান সেই ডাক্তার খুব যত্ন করে বোঝান আলসার কোনোভাবেই সারিয়ে তোলা যায় না৷ যদিও আমার বন্ধু তার এই কথা শুনে একটুও ভেঙে না পড়ে বাড়ি ফিরে গুগল-এ গিয়ে সার্চ করে৷ সেখান দেখে ২০০৪ সালে এই তথাকথিত সারে না, এমন অসুখকে সারানোর উপায় উদ্ভাবনের জন্য দুজন বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের এই বিশেষ অবদান বহু মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেছে৷ এই ঘটনাতেই বুঝিয়ে দেয়, আমাদের দেশের ডাক্তাররা শুধু ডাক্তারিটাই মন দিয়ে করেন, আর কোথায় কি ঘটছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন কোন পদ্ধতি ও ওষুধের আবিষ্কার ঘটছে তার কোনও খবর রাখেন না৷ এখন, যারা একবার এমবিবিএস বা এমডি করে ফেলেন তার পর আর বোধ হয় কখনও বইয়ের দিকে ফিরেও তাকান না, নতুন কিছু শেখার চেষ্টাও করেন না৷ বেশিরভাগ ডাক্তাররা তাদের কাজের জীবনের প্রথম থেকে যে কোনও অসুখে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করেন ও এই ধারাই সারা জীবন ধরে বহন করে চলেন৷ কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিত্য-নতুন আবিষ্কার এখনকার চিকিৎসা পদ্ধতিকেই বদলে দিয়েছে৷ তার কোনও ধারণাও আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের নেই৷ ডাক্তারদের তথ্যের উৎস বলতে ওষুধ কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ও তাদের দেওয়া ব্রোশিওর৷ অনেক ডাক্তারকে দেখেছি সরাসরি এই ব্রোশিওর থেকে ওষুধের নাম লিখে দিচেছন, কোনও খোঁজ না করেই৷ এই মানুষদের কাছে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস নিয়ে যায়, তারা তাদের পক্ষে সম্ভব সেরা চিকিৎসা তাদের জন্য তুলে ধরবেন৷ যারা নিয়মিত গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাদের পক্ষে জানা সম্ভব৷ কিন্তু যারা একবার চিকিৎসক হয়ে গেছেন তাদের জন্য নিয়মিত আপডেট হওয়ার কোনও ব্যবস্থাই নেই৷ এই অবস্থাকে মাথায় রেখে মেডিকেল কাউন্সিলের উচিত এমন একটি নিয়ম করা যাতে, তাদের নিয়মিত পেশাদারি প্রশিক্ষণ চলতে থাকে৷ কিন্তু আইন প্রণেতারা এখনও এই নিয়ে কিছুই ভাবছেন ন। এই কারণে মেডিক্যাল শিক্ষার পরিকাঠামো বৃদ্ধি করতে হবে৷ ইউকে সহ ইউরোপের অনেক দেশেই এখন চিকিৎসকদের প্র্যাকটিস চালিয়ে যাওয়ার জন্য ও নিজেদের লাইসেন্স ধরে রাখার জন্য এমন শিক্ষায় অংশ নিতেই হয়৷ ইউএস-এর অনেক প্রদেশে চিকিৎসকদের নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা দিতে হয় ও পড়াশোনায় অংশ নিতে হয়৷ এখানে ৪০ ঘণ্টা থেকে ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে হয়, দু বছর থেকে চার বছর অন্তর এই প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক৷ আমাদের এটা বোঝা উচিত চিকিৎসা একটা পরিষেবা, একটা পেশা৷ যেখানে নিয়মিত শেখার প্রয়োজন রয়েছে৷ কোনও এক অভিজ্ঞ ডাক্তার তাঁর দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় রোগীর উপসর্গ দেখে বুঝতে পারেন তার কী রোগ হয়েছে, কিন্তু তারপর তিনি এগিয়ে যান পুরনো চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে৷ যার ফলে হয় সুস্থতা ধীরে আসে অথবা সুস্থই হয় না৷ সত্যিটা হল অসংখ্য সংস্থা পৃথিবী জুড়ে লাখো গবেষণা চালাচেছ৷ এই গবেষণালব্ধ ফল থেকে সকলকে বঞ্চিত রাখা আমার মতে অপরাধের সামিল৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রাণলায়ের উচিত প্রতি তিন বছর অন্তর পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা৷ ও এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা৷ যে চিকিৎসকরা এই পরীক্ষাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করবেন না বা এই পরীক্ষার প্রতি অবজ্ঞা দেখাবেন তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷ আমাদের দেশে যতজন মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থেকে সুস্থতায় ফিরে আসেন তার হার গোটা পৃথিবীর তুলনায় বেশ নিম্নমুখী৷ এখনই যদি আমরা এই বিষয়ে সচেতন না হই তাহলে চিকিৎসকরা একাটা সময় পর নিজেদের গোটা পৃথিবীর চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে পারবেন না, আর আমরা আধুনিক চিকিৎসার সাম্প্রতিক আবিষ্কার ও চিন্তা-ভাবনা থেকে নিয়মিতভাবে বঞ্চিত হতেই থাকব৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।