আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মমতাকে দুষল ভারতীয় মিডিয়া

সমকাল ডেস্ক---- (০৭/০৯/১১)______ তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের খসড়া চুক্তির প্রবল আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকা সফরে না আসায় ভারতীয় মিডিয়ার কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় মনমোহনের সফর মলিন হয়ে পড়ায় মমতাকেই দুষল ভারতের পত্রপত্রিকা ও সংবাদমাধ্যম। ভারতের উল্লেখযোগ্য সব পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশন সংবাদ চ্যানেলে মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের খবর গতকাল ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। তবে শিরোনামে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাকা সফর স্থগিত রাখার বিষয়টি। ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে মমতা থাকছেন না এবং এ দফায় তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না_ সে কথাও প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

তিস্তা চুক্তিতে মমতার সম্মতি নেই এবং কেন তিনি সম্মতি দেননি সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। সর্বোপরি ঘুরেফিরে এসেছে মনমোহনের ঢাকা সফরে মমতার না থাকা এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিটি আপাতত ভেস্তে গেছে_ সে প্রসঙ্গটি। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ পেঁৗছানোর খবর দেওয়ার পাশাপাশি মমতা না আসায় বাংলাদেশ সরকার 'নিরাশ' হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে পিটিআই ঢাকা থেকে পাঠানো এক রিপোর্টে বলেছে, যদি মমতা ঢাকায় না যান তবে বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ হতাশ হবে, যেহেতু তিনি (মমতা) বাংলাদেশের এবং প্রধানমন্ত্রী হাসিনার একজন ভালো বন্ধু। তার প্রতি এদেশের মানুষের যথেষ্ট সহমর্মিতা রয়েছে।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার গতকালের সংখ্যায় আট কলাম লিড হেডিং ছিল_ 'তিস্তায় ডুবল মমতার সফর'। মমতার পিছু হটা দুর্ভাগ্যজনক : ভারতীয় মিডিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকা সফরে না আসায় সে দেশের প্রভাবশালী কয়েকটি সংবাদপত্র পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর সমালোচনা করেছে। ভারতের সর্বাধিক প্রভাবশালী ও বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র দ্য হিন্দু, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস ও দ্য টেলিগ্রাফ শেষ মুহূর্তে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরে মমতার আপত্তিতে বিস্ময় প্রকাশ করে পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য হিন্দু সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, 'পশ্চিমবঙ্গ কী বলছে, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। যে বিষয়টি নিয়ে বছরের পর বছর আলোচনা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেই এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন।

' প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একাধিক বৈঠকে তিস্তার পানিপ্রবাহ ৪৮-৫২ ভাগে বণ্টন চূড়ান্ত হয়। এ বিষয়টি মমতা জানতেন। ' গতকাল মঙ্গলবার 'মমতা তিস্তার পানি চুক্তি ঘোলাটে করেছেন' শিরোনামে প্রকাশিত দ্য হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। পত্রিকা প্রশ্ন রেখেছে, পশ্চিমবঙ্গ কি সিকিমে বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বড় ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে? দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে, এই সফরে প্রধানমন্ত্রী সিং অনেক কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন। তবে এতে রাজনৈতিক সাফল্য সামান্যই অর্জিত হয়েছে।

মমতার এই সফর বর্জন করায় ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকি থেকেই গেল এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভ্যন্তরীণ সমস্যা আরও জটিল করে তোলা হলো। পত্রিকা আরও বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর অফিস (পিএমও) এবং বিদেশ মন্ত্রণালয় এখন এই পরিস্থিতির জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে দায়ী করছে। পত্রিকা বলেছে, এখন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিরক্ষা ও বিদেশ মন্ত্রণালয়কে ছিটমহলের সীমানা ও বিতর্কিত বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আনন্দবাজার পত্রিকা আনন্দবাজার পত্রিকার দিলি্ল সংবাদদাতার পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক বছর আগে একবার মনমোহন সিং বলেছিলেন, 'খুব ইচ্ছে হয়, নয়াদিলি্লতে প্রাতরাশ করি। মধ্যাহ্নভোজনটা করি লাহোরে, তারপর নৈশভোজটা কাবুলে।

' উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে শান্তির পায়রা ওড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি, চেষ্টাও করেছিলেন; কিন্তু ২৬/১১-এর সন্ত্রাস সেই সম্ভাবনাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। ভারত আর বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় মৈত্রীর পাশাপাশি পূর্বের অন্য প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান এমনকি মিয়ানমারকেও সঙ্গে নেওয়ার এক নতুন অধ্যায় রচিত হতে পারে তার (মনমোহনের) ঢাকা সফরে। তিস্তা চুক্তি হয়তো এ যাত্রায় সম্পাদিত হচ্ছে না, তবে দীর্ঘ কয়েক দশকের সীমান্ত বিবাদ মেটানো থেকে শুরু করে বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যদি হয়, সেটাও কম ঐতিহাসিক হবে না। মমতার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি গতকাল আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ বছর আগে দেবগৌড়া সরকার যখন শেখ হাসিনার সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করেছিল তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। সেদিন এ চুক্তি নিয়ে জ্যোতি বসুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার দেব মুখোপাধ্যায়।

এ জন্য তাকে কার্যত কলকাতা-ঢাকা-দিলি্ল 'ডেইলি প্যাসেঞ্জারি' করতে হতো। পর্দার আড়ালে তিনিই ছিলেন চুক্তি রূপায়ণের মূল স্থপতি। দিলি্লর কূটনৈতিক মহল বলছে, যে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তিতেই পর্দার আড়ালে আলাপ-আলোচনা, দরকষাকষির একটা বড় ভূমিকা থাকে। যিনি এ কাজটি করেন তাকে নম্র ও দরকষাকষির ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হয়। এবার তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ পর্দার আড়ালে আলাপ-আলোচনার কাজটা একেবারেই হয়নি।

অথচ গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির সময় শুধু দেব মুখোপাধ্যায়ই নন, এইচডি দেবগৌড়া পর্যন্ত নিজে এক দিন অন্তর জ্যোতি বসুর সঙ্গে কথা বলতেন। দিলি্লর প্রবীণ রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, দেবগৌড়ার সব থেকে বড় সুবিধা ছিল, তার কোনো ইগো ছিল না। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও বিনা নোটিশে যখন-তখন তিনি যে কারও বাড়িতে চলে যেতেন। তিস্তা চুক্তি রূপায়ণে মনমোহন সরকারের কর্মপদ্ধতি নিয়েই একাধিক প্রশ্ন উঠছে। প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজে কতবার কথা বলেছেন? দ্বিতীয়ত, ক্যাবিনেট সচিব বা ভারপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা কতবার রাজ্যের মুখ্য সচিবকে দিলি্লতে ডেকে পাঠিয়ে চুক্তির খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেছেন? তৃতীয়ত, রাজ্যের সেচ সচিবের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সেচ সচিবই বা কতবার কথা বলেছেন? চতুর্থত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ৩০ জুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে কলকাতায় গিয়েছিলেন।

তখনও তিস্তা চুক্তির খসড়া নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু আলোচনা করা হয়নি কেন? সিপিএমের প্রতিক্রিয়া সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু যেমন বলেছেন, 'মমতা যাচ্ছেন না কেন, সেটা তার ব্যাপার। তবে চুক্তির ব্যাপারে কোনো গোঁড়ামি রাখা উচিত নয়। দেখা উচিত, দু'দেশেরই স্বার্থ এবং সুসম্পর্ক যাতে বজায় থাকে। ' দিলি্লতে সিপিএমের লোকসভার দলনেতা বাসুদেব আচারিয়াও একই সুরে বলেছেন, 'তিস্তা চুক্তি হওয়া উচিত; কিন্তু উত্তরবঙ্গের স্বার্থও দেখতে হবে। ' আরএসপির বালুরঘাটের সাংসদ প্রশান্ত মজুমদারেরও বক্তব্য, 'তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিরোধিতা করছি না।

বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী হওয়া দরকার; কিন্তু ৫০-৫০ শতাংশ হারে পানি বণ্টনের পরিমাণ নিয়ে আমাদের বিরোধিতা রয়েছে। ' শেষ মুহূর্তে মমতা বাংলাদেশ সফর থেকে সরে দাঁড়ানোয় এবং শেষ পর্যন্ত চুক্তি স্থগিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে 'খারাপ বার্তা' যাবে বলে আশঙ্কা করছে বামদের একাংশ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.