আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ষা গেলেই অশুদ্ধ হবে নদীর জল

একদিন জন্মের চিৎকারে পৃথিবীতে এসেছিলাম। আবার একদিন কিছু চিৎকারের মাঝ দিয়েই চলে যাব। সাভার থেকে আশুলিয়া হয়ে আব্দুল্লাহপুর আসার পথে রাস্তার পাশে তুরাগ নদী। ছয় মাস আগের অবস্থার সঙ্গে বর্তমান অবস্থার যোজন পার্থক্য। ছয় মাস আগে যখন তুরাগ নদীর তীর ধরে আসতাম নাকে থাকত রুমাল।

দুর্গন্ধ আমার একদমই সহ্য হয় না। কিন্তু দুর্গন্ধ তো বাংলাদেশের নিত্য সঙ্গী। ছয় মাস পরের তুরাগের কথা যদি বলি, আমার কেবল তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে হয়। বিশেষ করে বেড়ীবাধ থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত রাস্তাটুকু আমি মোহাচ্ছন্ন থাকি। রাস্তার দুদিকেই তুরাগের টলটলে জল।

কোনদিন এখানকার পানিতে গোসলের স্বাদ পূর্ণ হয়নি। কিন্তু ইচ্ছে হয়, বড্ড। নদীর সঙ্গে রমনীয় একটি ব্যাপার নিশ্চয়ই জড়িত। অথৈ জলের নদী দেখলে কথাটি আরো বেশি করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে জাগে। তুরাগের সঙ্গে যাই জড়িত থাক না কেন, বর্তমান তুরাগকে দেখে আমার হিংসে হয়।

ইচ্ছে করে এমন জলে সারাদিন ডুবে থাকি। কিন্তু সেই স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই। আর মাত্র কিছুদিন। এরপরই বর্ষার ভেজা দিনগুলো পেরিয়ে আসবে শীতের কাঠখোট্টা শুকনো দিন। ধূলোর রাজ্যে আবারো আমাদের বসবাস শুরু হবে।

বৃষ্টির কাদাকে যারা ভয় পান, তাদের জন্য আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে শীতের ধূলো। কিন্তু আমরা সয়ে যাই। সহ্যই আমাদের শক্তি। কিন্তু তুরাগের কি হবে? এই ভরাট য়ৌবন তার শরীর থেকে হারিয়ে যেতে খুব দেরি হবে না। বর্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিনের মাঝেই সে ফিরে যাবে তার কঙ্কাল সার দেহের রূপে।

তখন তার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করবে না। অবৈধ পাপাচারের ফসল থাকবে তার দৃশ্যমান দেহে। দুর্গন্ধ আসবে রমনীয় শরীর থেকে। সেখানে কেবল একজন কৌতুহলী দর্শনার্থী তার ঘৃণামিশ্রিত থুথুই নিক্ষেপ করতে পারে। আমি কিন্তু তাই করি।

বর্তমানে যেমন তুরাগের দিকে তাকিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিই। ঠিক তেমনি তার ভাটার দিনে নাক-চোখ বন্ধ করে থুথু ফেলতেও কৃপণতা করি না। কিন্তু এর জন্য তুরাগের কতটুকু দোষ! আমার নিক্ষেপিত থুথু পেয়ে সে কি কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করে! কিংবা আমার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে? তার কোন বিকার নেই। সে কেবল বয়ে চলেছে। পঁচা দুর্গন্ধময় সকল অভিশাপকে আমাদের থেকে দূরে নিয়ে যেতে বছরে একবার তার শরীরে য়ৌবন আসে।

আমরা উল্লসিত হই। সেই যৌবনের চারটি মাস তার থেকে চলে গেলে সে আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়ে আমাদের পাপের ফসল ধারণ করতে। সারা বছর সে একই কাজ করে যায়। তুরাগের মতো বুড়িগঙ্গা কিংবা শীতলক্ষার সঙ্গেও আমাদের একই আচরণ। শিল্প কারখানায় পয়নিষ্কাসনের ব্যবস্থা কি হওয়া উটিত তা কেবল বিশেষজ্ঞরাই ঠিক করতে পারেন।

আমি যেহেতু বিশেষভাবে অজ্ঞ। তাই এই ব্যাপারে তেমন কিছুই বলতে পারবো না। তবে যখন সাভারের ফ্যাক্টরিগুলো থেকে দুর্গন্ধ ময়লা যুক্ত পানিগুলোকে বের হয়ে নদীতে পড়তে দেখি, যখন আমিনবাজারের তুরাগ নদীতে ইচ্ছেমতো শিল্প কারখানাগুলোর ময়লা নিষ্কাসন হতে দেখি, যখন নদী অবাধে ভরাট হতে দেখি, তখন মনে হয় নদীকে ধ্বংস করার জন্য এগুলোই প্রধান কারণ। তুরাগ, বুড়িগঙ্গা কিংবা শীতলক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য আমরাই দায়ী। আমাদের শিল্প কারখানার জন্য পয়ঃনিষ্কাসনের কড়া নীতিমালা এবং অবৈধ দখল প্রতিরোধই এই ধারায় পরিবর্তন আনতে পারে।

আর এই পরিবর্তন যে প্রয়োজন তা ঢাকাবাসী খুব ভাল করেই জানে। কিন্তু আমাদের মাঝে সেই সৎ সাহস কিংবা যোগ্যতা কোথায়? সেদিন আব্দুল্লাহপুর তেকে সাভার যাচ্ছিলাম। পথে সিটি কর্পোরেশনের ময়লা বহনকারী ট্রাকের দেখা। উপচে পড়া ময়লা থেকে সারা রাস্তাকেই সে কিছু কিছু করে বিতরণ করে যাচ্ছিল। ট্রাকের এই উদারতায় আমি যতটা না আপ্লুত হয়েছি, তার চেয়ে বেশি দৃঃখিত।

কিন্তু আমাদের তো এই নিয়েই বসবাস করতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের গায়ে এই ময়লা ঢেলে দিলেও তারা কখনোই পরিবর্তন হবে না। কিন্তু পরিবর্তন তো হতেই হবে। কে আনবে এই পরিবর্তন? সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।