আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীল মেঘের পাহাড়...

জীবন বদলায়, রূপকথা বদলায় না...... ১. - তাহলে শেষ পর্যন্ত আমরা সাক্সেসফুল হলাম রায়হান ভাই!!! আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। - হুমম। আমারও একই অবস্থা। আর এ সবকিছুই হয়েছে মূলত তোমার জন্য। লাস্ট ১ মাসে কাজটার পিছনে যে শ্রম তুমি দিয়েছো, তাতে কাজটা সাক্সেসফুল না হলে তোমার সাথে অনেক বড় একটা অন্যায় করা হতো।

- আপনিও কিন্তু কম কষ্ট করেননি। - যাইহোক। এখন এই পর্ব আপাতত ক্লোজ। লেটস সেলিব্রেট ইট। - স্যরি, রায়হান ভাই।

আমি সেলিব্রেশনে জয়েন করতে পারবোনা। আমার এক সপ্তাহের ছুটি লাগবে। - বাড়ি যেতে হলে যাবে। এতো তাড়া কিসের? হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট খেপে আছে নাকি? - তা আবার বলতে। আরেকটু দেরি করলে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিবে।

- ওক্কে। তাহলে তোমাকে আর আটকাবোনা। সি ইউ। - থ্যাঙ্কস। ফাইলপত্র সবকিছু ঠিকঠাক করে বের হতে হতে ৫টা বেজে যায়।

মোবাইলটা চেক করতে গিয়ে দেখে স্ক্রিনে “5 missed call” লেখাটা উঠে আছে। লিস্ট চেক করতেই মেঘলার নামটা ভেসে উঠে। সেই দুপুর থেকে ট্রাই করছে মেয়েটা। আজকে নির্ঘাত খবর আছে ওর। ভাবতে ভাবতেই মেঘলাকে কল দেয় নীলাব্রু।

কিন্তু মেঘলা বার বার কল কেটে দিচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে ভীষন রেগে আছে। অনেকবার ট্রাই করার পরও মেঘলা কল রিসিভ করলো না। অতঃপর টেক্সটের আশ্র্য় নিতে হল নীলাব্রুকে। স্যরি লক্ষীটি।

মিটিং এ ছিলাম। প্লিজ ফোনটা রিসিভ কর। একটা গুড নিউজ আছে তোমার জন্য। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। টেক্সটা সেন্ড করে কিছুক্ষন পর আবার মেঘলাকে কল দেয় নীলাব্রু।

রিং হচ্ছে। - কি বলবে, বল? - খুব রেগে আছো, না? - আমি রাগলে তোমার কি? তোমার তো কিছু এসে যাবার কথা না। তুমি তোমার কাজ নিয়েই থাকো। আমার কথা না ভাবলেও চলবে। - ও আচ্ছা।

তাহলে গুড নিউজটা শুনবেনা? কি? - আমি শুনতে না চাইলে মনে হয় বলবেনা? ঢং রাখো। কি বলবে, বল? - কালকে কোথায় দেখা হচ্ছে? - মানে? - মানে কালকে বিকেলে কোথায় দেখা করছি আমরা? - তুমি কাল আসছো! সত্যি? নাকি আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে? - আজব!!! মিথ্যে সান্ত্বনা দিতে যাবো কেন? আমি সত্যিই কাল আসছি। এখন রাখি। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে, ব্যাগ প্যাক করে রাতের ট্রেন ধরতে হবে। কাল দেখা হচ্ছে।

ওক্কে? বাই। - বাই। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ প্যাক করতে বসে নীলাব্রু। ১১.৩০টার তূর্ণা-নিশিতা ধরতে হবে ওকে। নাকে-মুখে কিছু খাবার গুজে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ও।

স্টেশনে পৌঁছে নিজের জায়গাটা দখল করে বসে নীলাব্রু। আহ কি শান্তি!!! কতদিন পর বাড়ি যাচ্ছে ও, কতদিন পর মেঘলার সাথে দেখা হবে...এসবকিছু ভাবতে ভাবতে সারাদিনের সব ক্লান্তি ছাপিয়ে রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে ওর চোখে। ২. সকালে বাসায় পোঁছে নীলাব্রুর আনন্দ আর ধরে না। বাবা-মা, ছোট বোন সবাই এতোক্ষন ধরে ওর পথ চেয়ে বসেছিল। বাসায় পা রাখতেই ওর মা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে ওকে।

কতদিন মায়ের এই আদর পায়নি ও। মার যত্ন, বাবার হাজারো প্রশ্ন আর বোনের শত আবদারের মুখে এতোদিনের একাকিত্বে অভ্যস্ত নীলাব্রু একটু যেন হাপিয়ে ওঠে। তবুও ভালো লাগে ওর। সবার সাথে কথাবার্তা সেরে রুমে গিয়ে মেঘলাকে কল দেয় ও। ওপাশ থেকে মেঘলার ঘুম জড়ানো কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া যায়।

- হ্যালো। - এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি? - নীল!!! (বলে লাফ দিয়ে ওঠে মেঘলা) তুমি এসে গেছো? - হুমম। - সত্যি!!! কখন দেখা করছি? বল? বল? বল? - (মেঘলার পাগলামি দেখে হাসি পায় নীলাব্রুর) তুমি-ই বলো। - ওক্কে। বিকাল চারটায়, বাটালি হিলে।

- ওক্কে। - সারারাত জার্নি করেছো এখন রেস্ট নাও। বিকেলে কথা হবে। বাই। - ওক্কে।

টেক কেয়ার। বাই। ফোনটা রেখে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দেয় নীলাব্রু। মাকে বলে দেয় ওকে যাতে খাওয়ার সময় ডাকাডাকি না করে, খিদে পেলে ও নিজেই খেয়ে নিবে। ৩. সন্ধ্যে হয়ে আসছে।

পাশাপাশি বসে আছে ওরা দুজন। নীল আকাশটা যেন পাহাড়ের চূড়ায় নেমে এসেছে। একটু পরেই সূর্য অস্ত যাবে। সূর্য ধীরে ধীরে তার আবীর ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা আকাশে। - জানো? কাল না আমি একটা দারুন স্বপ্ন দেখেছি।

- কি? - দেখেছি আমরা একটা পাহাড় কিনেছি। সেই পাহাড়ের চূড়ায় খুব সুন্দর ছোট্ট একটা বাড়ি আমাদের। বেলা গড়াবার সাথে ঐ পাহাড়ের চূড়ার রঙ বদলায়। আর আমরা দুজন অবাক বিস্ময়ে নীল মেঘের পাহাড়ের রঙ বদল দেখি। - এতো কিছু থাকতে পাহাড়? মানুষ গাড়ি-বাড়ির কেনার স্বপ্ন দেখে।

আর তুমি দেখেছো পাহাড় কেনার স্বপ্ন!!! - এভাবে বলছো কেন? তোমার জন্য কি আমি স্বপ্নও দেখতে পারবোনা? আমি তো আর সত্যি সত্যি কিনে দেয়ার কথা বলিনি। তাছাড়া তুমি তো জানোই পাহাড় আমার কত্তো প্রিয়। সেদিনের গোধুলী বেলা নীল মেঘের মান-অভিমানের পালা চলতে চলতেই কেটে যায়। ৪. বাড়ি থেকে ফিরেছে প্রায় মাস দুয়েক হয়ে গেছে। আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেছে শহুরে যান্ত্রিকতার সাথে তাল মেলানো।

অফিস থেকে ফিরে রুটিন করে প্রতিদিন বাবা-মায়ের সাথে ফোনে কথা হয় নীলাব্রুর। আর মেঘলা??? ও তো কোন রুটিন-ফুটিনের ধার ধারে না। ভাবতে না ভাবতেই ফোন আসে পাগলীটার। - হুমম। কি খবর? - দারুন!!! - তাই? শুনি কি হেতু? - উমম...আমি...কাল...ঢাকা...আসছি।

- কি? সত্যি? - জ্বী স্যার সত্যি। তোমাকে বলেছি না আমি একটা চাকরীর জন্য এপ্লাই করেছি, ওরা আমকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকেছে। পরশু ইন্টারভিউ। কাল আসবো। বড় খালার বাসায় উঠবো।

পরশুদিন সারাদিন তোমার ডিউটি থাকবে আমাকে পাহাড়া দেয়া। - জো হুকুম ম্যাম। কখন আসছো? তোমাকে রিসিভ করতে যাবো। - থাক। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।

পরে দেখা যাবে কালকে এসে পরশু ফাঁকিবাজি করবে। কোন দরকার নেই। আমি ঠিকমতো পৌঁছে যাবো। টেনশন করো না। ৫. অফিস শেষে বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে নীলাব্রু।

হঠাৎ মেঘলার কথা মনে পড়ে ওর। ট্রেনে উঠে ফোন দিয়েছিল মেঘলা। কিন্তু এরপর আর কোন যোগাযোগ হয়নি। এতোক্ষনে নিশ্চয়ই পৌঁছে গেছে। ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ফোন দেয় ও মেঘলাকে।

সেল অফ দেখে অবাক হয় ও। মেঘলার ফোন তো কখনো অফ থাকে না। নিশ্চয়ই চার্জ শেষ ফোনের। বেশকিছুবার ট্রাই করে হাল ছেড়ে দেয় ও। কাল তো দেখা হচ্ছে মনকে এই সান্ত্বনা দিয়ে ঘুমাতে যায় নীলাব্রু।

৬. আজ খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠেছে নীলাব্রু। রেডি হয়ে মেঘলার ফোনের অপেক্ষা করছে। বেলা গড়িয়ে ১২টা বেজে যায়। কিন্তু ফোনের কোন পাত্তা নেই। ও নিজেও বেশ কয়েকবার ট্রাই করেছে কিন্তু ফোন অফ।

কিছুটা অবাক হয় নীলাব্রু। যথেষ্ট পাঙ্কচুয়াল মেয়ে মেঘলা। দুনিয়া উলটে যেতে পারে কিন্তু মেঘলা একবার যে সময় বলে তার কখনো হেরফের হয়না। আজ পর্যন্ত এমনটা দেখেনি নীলাব্রু। তাই বাধ্য হয়েই মেঘলার ছোট বোনের কাছে ফোন দেয় ও।

- হ্যালো। কে বলছেন? - হ্যালো, রোদেলা। আমি নীলাব্রু। - ভাইয়া!!! আপনি!!! মেঘলা আপু... - কি হয়েছে মেঘলার? তুমি কাঁদছো কেন? রোদেলা কথা বলো। - কালকে স্টেশন থেকে আপুকে নেয়ার জন্য জয় ভাইয়া গিয়েছিল।

খালার বাসায় যাওয়ার সময় একটা বাস এসে পিছন থেকে ওদের সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। জয় ভাইয়া স্পটডেড, আর হসপিটালে নেয়ার পথে আপুও... ৭. গত এক সপ্তাহ ঘর থেকে বেরোয়নি নীলাব্রু। খাওয়া-দাওয়া প্রায় নেই বললেই চলে। দুচোখের পাতা থেকে ঘুম বিদায় নিয়েছে অনেকদিন হল। চোখ বন্ধ করলেই মেঘলার শান্ত-স্নিগ্ধ মুখটা ভেসে ওঠে ওর সামনে।

সহ্য করতে পারে না ও। রেজিগনেশান লেটারটা মেইল করে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় নীলাব্রু। বাড়ি ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে ও। যে শহরটা ওর কাছ থেকে ওর ভালোবাসার মানুষটাকে কেড়ে নিয়েছে, সেই অভিশপ্ত শহরে আর থাকবেনা ও। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।

হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে নীলাব্রু। বৃষ্টির মৃদু ঝাপটা এসে ভিজিয়ে দেয় ওকে। অতি পরিচিত একটা স্পর্শে শিউরে ওঠে ও... একদিন তুমি আমায় বলেছিলে, "আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই " | সেই থেকে আমার ইচ্ছে, আমি পাহাড় হবো | সেই পাহাড়ের উচ্চতা হবে অনেক, জানি তোমার খুব কষ্ট হবে চুড়োয় পৌঁছাতে, তবু আমি তাই চাই | কারণ উচ্চতা যত বেশি হবে, আমি তোমার স্পর্শ পাবো ততো বেশি | আমি একটা পাহাড় হবো, সেখানে থাকবে একটা কি দুইটা লুকায়িত ঝর্না | ভেবনা ওটা ঝর্না, ওটা আমার কান্না | ঐ ঝর্নার পানিতে তোমার ঠোঁট দু'টো ভিজিয়ে নিও, অথবা ধুঁয়ে নিও তোমার আদুল গা | আমি পাবো আরেকটু বেশি করে তোমায় | তোমার জোঁকের ভয় একটু বেশি, ভয় পেয়োনা তুমি, একটু তো কামড়াবে ওরা, না হয় শুষে নেবে কিছুটা রক্ত | তুমি শুধু ভেবো ওটা আমার চুম্বন যা তোমায় বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন | আহা!!! আমার কতো না ইচ্ছে পাহাড় হবার, আমি জানি আমি পাহাড় হতে পারবো না, তোমার স্পর্শও আমি পাবো না কোনদিন, তবুও আমি পাহাড় হতে চাই, আমি একটা পাহাড় হবো || কৃতজ্ঞতাঃ আমার অনেক প্রিয় পেনসিলে আকা পরী আপুকে এতো সুন্দর একটা কবিতা শেয়ার করতে দেয়ার জন্য। অনেক থ্যাঙ্কস আপুনি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।