আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাহুল গাঁধী'র কড়া বার্তা, অণ্ণার পথ বিপজ্জনক

অদ্ভুত উটের পিঠে লোকপাল বিল নিয়ে চলতি অচলাবস্থার মাঝে অবশেষে আজ নীরবতা ভাঙলেন রাহুল গাঁধী! সাধারণ মানুষের ‘মোহভঙ্গের কথা’ তুলে ধরায় অণ্ণা হজারেকে ধন্যবাদ জানিয়েও তাঁর পথের সমালোচনা করেছেন তিনি। লোকসভায় দাঁড়িয়ে যথেষ্ট চড়া সুরে তিনি বলেছেন, যে পথ অণ্ণা ও তাঁর সহযোগীরা নিয়েছেন, তা দেশের বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। আবার প্রধানমন্ত্রীর মতোই জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু একটি লোকপাল বিল পাশ করলেই সব রকম দুর্নীতির মোকাবিলা করা যাবে এমন নয়। এ প্রসঙ্গে পাঁচ দফা দাওয়াই-ও দিয়েছেন গাঁধী পরিবারের নবীন নেতা। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভার শূন্য প্রহরে আচমকাই রাহুলের সরব হওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কৌশল রয়েছে।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গাঁধীর যে রাজনৈতিক উত্তরণের জন্য দলে দাবি উঠেছে, আজকের ঘটনা সেই লক্ষ্যে আর একটি পদক্ষেপ। সরকারি সূত্রে খবর, ঠিক কবে, কখন রাহুল গাঁধী লোকপাল নিয়ে মুখ খুলবেন, তা নিয়েও কংগ্রেস সুচিন্তিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বক্তৃতার খসড়া চূড়ান্ত করার আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিন বার কথা বলেছেন রাহুল। আজ সকালে সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবশেষে লোকসভার স্পিকারের কাছে নোটিস দিয়েছেন।

এবং ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, রাহুলের বক্তব্য নিয়ে কংগ্রেসের সর্বস্তর যে ভাবে উচ্ছ্বসিত, তাঁকে যে মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে, তা মনমোহন সিংহের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কারণ এটাই প্রতিপন্ন হচ্ছে, কংগ্রেস এবং সরকারের মুশকিল আসান করতে শেষ পর্যন্ত রাহুলকেই আসরে নামতে হল। রাহুলের এই বক্তৃতার সাক্ষী হতে আজ লোকসভার স্পিকারস গ্যালারিতে ছিলেন প্রিয়ঙ্কা বঢরাও। গতকালই তিনি বিদেশ থেকে ফিরেছেন। রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, গোটা পরিকল্পনায় প্রিয়ঙ্কার অবদানও কম নয়।

আর স্পিকারস গ্যালারিতে বসে আজ রাহুলকে যে ভাবে প্রিয়ঙ্কা উৎসাহ দিয়েছেন, তা-ও দেখার মতো। পরে সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রিয়াঙ্কা বলেন, “রাহুলের প্রতিটি কথায় আমার সমর্থন রয়েছে। ” আর সংসদের বাইরে রাহুলের আত্মবিশ্বাসী দাবি, “যে প্রস্তাব সংসদে দিয়েছি, তা বিতর্কের অভিমুখই বদলে দেবে। ” সংসদে রাহুলের বক্তৃতার মাঝে বিজেপি বেঞ্চ থেকে বারবার বাধা এসেছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, আগাম নোটিস না দিলেও কেন রাহুলকে শূন্য-প্রহরে সবার আগে বলতে দেওয়া হল? আবার সংসদে বক্তৃতার পরে অণ্ণা সমর্থকরা, তুঘলক লেনে রাহুলের বাড়ি ঘেরাও করার চেষ্টা করেছেন।

আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখানোর পর পুলিশ ২৮১ জনকে গ্রেফতার করে। তা ছাড়া লোকপালকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার যে প্রস্তাব রাহুল দিয়েছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল মতান্তর প্রকাশ করেছে। বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “রাহুলের মন্তব্য অণ্ণা হজারের অনশন প্রত্যাহারের পথে বাধা সৃষ্টি করল। ” গাঁধী পরিবারের নবীন নেতা আজ লোকসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে কিছুটা উত্তেজিতও হয়ে পড়েন। তাঁর কথায়, “লোকপালের সহায়ক হিসাবে দুর্নীতি দমনে আরও পাঁচটি ব্যবস্থা নিতে হবে।

এক, নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সরকারকে অনুদান দিতে হবে। দুই, যে কোনও সরকারি লেনদেনে স্বচ্ছতা রাখতে হবে। তিন, জমি, খনি ইত্যাদির মতো দুর্নীতিপ্রবণ ক্ষেত্রগুলিতে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। চার, বার্ধক্য পেনশন ও রেশন কার্ডের মতো জন পরিষেবার ক্ষেত্রে উপভোক্তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি, কর ফাঁকি রুখতে ধারাবাহিক ভাবে চালিয়ে যেতে হবে কর কাঠামোর সংস্কার।

” রাহুলের এই প্রস্তাব নিয়েই আজ সামগ্রিক ভাবে কংগ্রেস নেতৃত্ব বিশেষ করে জিতিন প্রসাদ, সচিন পাইলট, মিলিন্দ দেওরার মতো নবীন প্রজন্মের নেতারা উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রচারে নেমে পড়েন। আবার দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, সরকার যে ভাবে অণ্ণা হজারের অনশন-আন্দোলন মোকাবিলা করছে, তা নিয়ে দলের বড় অংশের ক্ষোভ রয়েছে। সেই সঙ্গে দলের মধ্যে থেকে বার বার দাবি উঠেছে, রাহুল গাঁধী মুখ খুলুন। আজ রাহুলের বক্তৃতার পরে যে ভাবে সরকার ও দলের নেতারা সমর্থনে একজোট হয়েছেন, তাতে সমন্বয়ের অভাবটা কিছুটা হলেও মিটেছে। তবে এর পরেও প্রশ্ন উঠছে, অণ্ণার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সামগ্রিক ভাবে সরকার ও কংগ্রেস সম্পর্কে জনগণের একাংশের যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, রাহুলের বক্তৃতা সেই ক্ষত কতটা মেরামত করতে পারবে? তা ছাড়া, লোকপালকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে সরকার কোনও পদক্ষেপ করে কি না, সেটাও এখন দেখার।

কী চান রাহুল •* সংসদের প্রতি দায়বদ্ধ লোকপাল •* কর ফাঁকি এড়াতে সংস্কার •* বার্ধক্য পেনশন, রেশন কার্ডের মতো ক্ষেত্রে অভিযোগ নিরসনের ব্যবস্থা • *জমি, খনির ক্ষেত্রে দুর্নীতি ঠেকাতে নিয়ন্ত্রণ • *সরকারি লেনদেনে স্বচ্ছতা •* নির্বাচনে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারি অনুদান  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।