আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টাইটানিক এবং আমাদের সভ্যতা

একদিন জন্মের চিৎকারে পৃথিবীতে এসেছিলাম। আবার একদিন কিছু চিৎকারের মাঝ দিয়েই চলে যাব। 'উনি এসেছেন রসায়ন পড়ে, বাঙ্গালিকে শেখাবেন শিষ্টাচার!' বাক্যটি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন ভদ্রলোক। ফার্মগেইট থেকে এয়ারপোর্টের দিকে আসছিলাম বিআরটিসির বাসে চড়ে। রমজানের দুপুর বলে ভীড়ের পরিমাণ বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই।

প্রয়োজনের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা এতটাই অপ্রতুল, যে বাধ্য হয়েই ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠতে হয়। আমিও উঠলাম। কিন্তু দরোজার পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকটি কোনভাবেই আমাকে সামনে যেতে দেবেন না। উল্টো আমাকে শুনিয়ে দিলেন উপরের বাক্যটি। শুনলাম এবং প্রচন্ড রাগ করলাম।

কিন্তু কিছু বললাম না। আমার মতো কিছু কিছু প্রাণীর বোধ হয় শুনে যাওয়া ছাড়া করার কিছুই থাকে না। কারণ, এরা কখনোই ঝগড়া জিনিসটা দেখতে পারে না। মনে মনে ভাবলাম, এই জাতি তো এমনি। সত্যিই কি আমরা এমন! এই বিস্ময়বোধক বাক্যটির যথার্থতা আছে কি নেই, তা নিয়ে পড়ে আলাপা করা যাবে।

এখন বলা যাক বর্তমানের কথা। বেশ কিছুদিন আগে টাইটানিক মুভিটি নতুন করে দেখছিলাম। একদিকে জাহাজ ডুবে যাচ্ছে, অন্যদিকে চলছে নারী ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার তোড়জোর। দৃশ্যটিকে আমি নতুন করে উপলব্ধি করলাম। এরও কিছুদিন আগে নিরদ চন্দ্র চৌধুরীর লেখা 'আত্নঘাতি রবীন্দ্রনাথ' বইটি পড়ছিলাম।

সেখানে বাঙ্গালি জাতিসত্বার যে পরিচয় পেলাম, তা আমার কাছে বেদনাদায়ক। সভ্যতার সংজ্ঞায় বাঙ্গালি কি নির্ধারণ করেছে তা একজন খাঁটি বাঙ্গালিই বলতে পারেন। আমি খাঁটি বাঙ্গালি, তা দাবি করছি না। কিন্তু একটি সংজ্ঞা দিতে পারি। আমাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় প্রবাদের একটি হলো, চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা।

এই প্রবাদের মাধ্যমে কি আমাদের সভ্যতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করছি আমরা? টাইটানিক মুভির কথা ফিরে আসি। সেখানে দেখলাম, সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে সবার আগে। আমি অদ্ভূত দৃষ্টি নিয়ে লক্ষ্য করলাম, টাইটানিকে উপস্থিত মিলিওনিয়ার, বিলিওনিয়াররা নিজেদের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করছেন নারী ও শিশুদের! পৃথিবীর যে কোন স্থানেই ধনিক শ্রেণীর মাঝে একজন কিংবা দুইজন ভাল মানুষ হতেই পারেন। কিন্তু একটি জাতির মাঝে সম্মিলিত ভাল মনের ধনিক শ্রেণী খুঁজে পাওয়ার কথা আমরা এশিয়ানরা বেশি করে বাঙ্গালিরা চিন্তাও করতে পারি না। এখানে 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা'কেই চূড়ান্ত বাক্য বলে ধরা হয়।

আমাদের জাতি সত্বার এই অতি দুর্বল দিকটির দিকে নিরদ চন্দ্র চৌধুরী বেশ ভালভাবেই দৃষ্টি দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই দিকটি বেশ ভালই বুঝেছিলেন। তিনি যে ইংলিশদের প্রতি দুর্বল ছিলেন তা নিজেদের পারিবারিক আভিজাত্যের কারণে নয়, ইংলিশদের এই সভ্যতার জন্য। একটি জাতির মাঝে সম্মিলিত সাদা মনের মানুষ সৃষ্টি করতে হলে একে সংস্কৃতির মতো চর্চা করতে হয়। আমাদের এখানে এই কথার মূল্য সর্বনিম্ন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.