আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লন্ডনে বিলাতি বাচ্চু !পর্ব ৪ (ছবি ব্লগ)

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতিয় পর্ব আর রাজ্জাক কবরি। আমাকে দেখে মেয়ে এমনভাবে ঠোট বাকা করলো, যেন আমি ডিপজল এই দুঃখে বিষাদে ইচ্ছা হলো, শাবানার মত নাআআআআ বলে সোজা বিছানায় গিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদি। আস্তাগফিরুল্লাহ ! এই সব কি চিন্তা করি? আমি কি নারী? এই বিরহ বেদনার সময় ঠিক কাকে ফলো করা যায়? ইলিয়াস কাঞ্চন? উহু, তাহলে মনে হবে কেউ মরে গেছে। তখন আরেক ক্যাচাল। শাকিব খানের মত বলবো নাকি " চোধুরি সাহেব, আমরা গরিব হতে পারি, কিন্ত আমাদেরও মান সম্মান আছে?" নাহ চলবে না।

এত দামি জামা কাপড় পড়ে এই ডায়লগ দিলে মাইর খেতে হবে। নাকি মিশা সওদাগরের মত বলবো " এই যে সুন্দরি, কেমন আছো? আমি তোমাকে মন দিয়েছি। তুমি যতই বলো দেহ পাবি, মন পাবি না, আমি ততই বলবো , আরে ওইটাই তো চাই। " এই সাত পাচ ভাবতে ভাবতেই দেখি মেয়ে গায়েব। আর বৃটিশ গোয়েন্দারা বেশ তৎপর।

মানে হেগ সাহেবের এসে পড়েছেন। কিন্তু কি কথা হলো, সেটা জানতে না পারলে যে পেট গুরগুর করবে। বৃটিশদের যায়গা সংকট বলে রুমগুলি একটার সাথে আরেকটা লাগানো। তবে কান পাতলেও লাভ নেই। দেখি চা নিয়ে বেয়ারা যাচ্ছে।

- ওই হালা খাড়া ! এই খাওন নিয়া যাওনের আগে আমার টেস্ট করতে হইবো। আমি হইলাম গিয়া বুবুর থুক্কু পিএম এর বিশেষ নিরাপত্তা টিমের চিফ। আমার চেকিং ছাড়া ভিত্রে কিছু যাইতে পারবো না। কিসের চেকিং? চেখে দেখা আর কি ! এই রকম রাজকিয় নাস্তা তো আর আমার ভাগ্যে জুটবে না। - ওই মিয়া আমার পিছে পিছে আসো।

বলেই ব্যাটাকে নিয়ে সোজার বুবুর রুমে। দেখি আলোচনা শুরু। - সাহেব, আমারে বাচান। ভোটে তো হারমুই। এর পর পিঠের চামড়াও থাকবো না।

- কি করে বাচাবো? হামাদের নিজেরই তো চলছে না। ইখান উখান থেকে ধার করে চলছি। এমনকি ইরানের কাছে অস্র বিক্রি করে পেটে ভাত জুটছে। - ট্যাকা যা লাগে দিমুনি। এমন কইরেন না গো বড় ভাই।

আপ্নে না আমাগো ভারত মাতার বাপ? - কি বল্বো হাপনাকে? আগে বাপ ছিলাম। এখন হাপ্নাদের ভাড়ত মাটা, আমেরিকা আর ইস্রাইরেলের সন্টান হইয়া গিয়াছে। - বড় সাহেব গো কথা কি বলমু সাহেব? ইনুস মিয়ার যাদু টুনা কইরা তাগো এমুন বশ করছে, আমারে আর দ্যাখতেই পারে না। - হাপনার দরকার হোলে হাপনি হামাদের এখানে ঠাকতে পারেন। হাপ্নার বোন ঠো ওখান ঠেকে খামিয়ে, হামাদের এখাণে রেখেছে।

- হুজুর যদি মর্জি করেন তো আমিও আমার ট্যাকা আপনে গো এইখানেই রাখমুনে। চারিদিকে খালি বজ্জাত আর বজ্জাত। শান্তি পাইলাম না। শামীম, হুজুররে দেখা ! ওরে বাবা, লাগেজ ভর্তি দেখি নোট ! - ঠাক ঠাক আর শো করতে হবে না। ইচ্ছামত কেনা কাটা খরেন।

- তো হুজুর ! কতা দিলেন তো? - হু ঠিক আছে কঠা দিলাম। আমাকে দেখেই বুবু মুখ কালো করলেন - ওই ছ্যামড়া তুই আবার কথা গিলতে আইছোস? যা বাইরে যা। আর কে কে আসবে কে জানে? আমি আমার কাজ তো সেরে ফেলেছি। বাইরে এসে রুমের সামনে দাড়াতেই দেখি সেই সুন্দরি। অভিমানে আমার তো বুক ভার।

- আহা রে সোনা পাখি, খুব অভিমান হয়েছে বুঝি? আচ্ছা চলো তোমাকে লন্ডন শহর ঘুরে দেখাই। এহ ! আসছে । মুখ ব্যাকা করে এখন আল্লাদ। - দরকার নাই আমার লন্ডন দেখার। আমি এখানেই ভালো।

আমার কথা সে শুনবে কেন? - আগে তো টিকিটটা দেখো? এর পর না হয় সিদ্ধান্ত নিও। ওরে মা !! এমন সুন্দর টিকেট। সফর না করলে আমি তো মহা পাতক হয়ে যাবো। কি বলবো, এত্ত সুন্দর মসৃণ রাস্তা ! তবে জার্নিতে এত বার এত বেশি ঝাকুনি খেয়েছিল যে, মহাক্লান্তিতে আমি ফিট ! - ওরে বকাটে, ওরে মুখপোড়া । বলি চিতেয় উটেছিস নাকি, যে কথা বের হচ্ছে না? কি আজিব ! এই সাত সক্কালে বুড়ি দেখি জ্বালিয়ে খেলো।

দরজা খুলতেই বুড়ি বলা শুরু করলো - ছি ছি ছি ! বলি এই ম্লেচ্ছদের দেশে এসে, ম্লেচ্ছ মেয়ে মানুষ নিয়ে ঢলাঢলি? বলি এই খবর কি হাসু জানে? না জানলে আমিই জানিয়ে দিচ্চি যে তার আদরের ভাই, কেমন সুন্দর করে কেস্টলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘরের বৌ তো না, যে ঘরেই থাকবে। কোন ফাকে যে চলে গেছে। সাথে কিছু নিয়ে গেছে কিনা কে জানে? আমার দিল নরম বুঝে এর আগেও আমার ইজ্জত টাকা পয়সা সবই লুট হয়েছিল। এবার কি গেছে কে জানে? সেটা পরে।

এই খবর বুবুর কানে গেলে আর দেখতে হবে না। বুড়ির মুখ বন্ধ করি। শালি বুড়ি কিন্ত চোক্ষে ঠিকই সব দেখে দেখি। - আরে দাদি, আমার লক্ষ্মি দাদি। তুমি যা চাও, দিমু নে।

খালি বুবুরে কিছু কইয়ো না। - এহ কি আমার দাদা ঠাকুর এয়েছেন গো ! উনি হুকুম দিলেই আমি শুনলুম আর কি ! শেষ মেষ পায়েই ধরতে হলো শর্ত একটাই । তাকে নিয়ে লন্ডন ঘুরাতে হবে। ল্যাও ঠ্যালা। কিন্ত আমার এই অভিসারের কথা বুবুর কানে গেলো আরো বেশি ঠ্যালা ! তাই রাজি হলাম।

চিনি না তো কিচ্ছুই। ইংরেজিও যা জানি, তা দিয়ে তেমন কাজ হবে বলে তো মনে হয় না। তাও উপরওয়ালা ভরসা করে শুরু করলাম এই সাত সকালে রাস্তা ঘাট ফাকা। অনেকেই প্রাত ভ্রমনে বের হয়েছেন। গত রাতে বৃস্টি হয়েছিল মনে হয়।

তাই বাতাসটা খুব ফ্রেস লাগছে। কিন্তু এর মধ্যে আরেক ক্যারফা ! পেটে ছূচো দৌড়ানো শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই কোত্থেকে যেন পুরি ভাজার গন্ধ আসছে। - ও দাদি, চলো কিছু খাই। - ওরে মুখপোড়া তোর এত্ত খাই খাই কেনো রে? বলি মাত্র তো আধা ঘন্টা হাটা হলো।

পুরো শহর না দেখে কি করে খাই? - ওরে দাদি, শহরটা তো এতটুকু না। দ্যাখো আমি কিন্তু না খাইলে আর এক কদম চলতে পারমু না । হাল্কা ধমকে কাজ হলো। - তুই যা কিছু খা। আমাই খাবো না।

মা গো কি বিশ্রি মাংসের গন্ধ আসছেরে ! কোথায় কি খেয়ে ফেলে শেষ পর্যন্ত জাত মান খোয়াই আর কি ! ভাগ্য ভালো দেখি, বাঙালি পাড়ার কাছাকাছি এসে পড়েছি খুব ভাল লাগ্লো বাংলা অক্ষর দেখে। নাম ইন্ডিয়ান ড়েস্টুরেন্ট কিন্ত আসলে বাঙালি। ঠিক যে আবেগে অভ্যর্থনা পাবো বলে মনে করেছিলাম, সেরকম হলো না। কারণ তারা তো প্রতিদিনই অনেক কাস্টমার দেখে অভ্যস্থ ! - কুনথা খাইবা ভাই? - ভালো দেখে পুরি নিয়ে আসেন। (সকালে পুরির গন্ধ নাকে লেগেছিল) - এই হোঠেলে আমরা খারাপ খাম খরি না।

খারাপ কাজ? পুরি খারাপ কাজ? কোন দেশে আসলাম যে দেশিও বিদেশি হয়ে গেছে? - মশকরা ছাড়েন তো ভাই। জলদি দুইটা পুরি নিয়ে আসেন। উনি আকাশ থেকে পড়লেন। বড় বড় চোখ করে একটু চড়া গলায় বললেন - কিতা মাতিলা? একলা মানুষ দুইঠা ফুরির কথা বল্লা? ইগু মানুষ না জানোয়ার? কি এত বড় কথা? খেতে এসে এমন অপমান। সব দোষ শালার বুড়ির।

নাইলে এতক্ষণে হোটেলে আরাম করে ইজ্জতের সাথে নাস্তা করা যেতো। রাগে গজগজ করে বেড়িয়ে আসলাম। (পরে পুরির অর্থ বুঝতে পেরেছিলাম। সিলেট গেলে আর যাই হোক পুরির কথা মুখে আনা যাবে না। ) আমার রাগ রাগ চেহারা দেখে বুড়ি আর গাই গুই করলো না।

সিধা হোটেলে ফিরেই দেখি বুবু। - তোর কি আক্কল হইবো না? এই আধা পাগল বুড়িরে লইয়া কই গেছিলি? ওই দিকে যে তোগো ভাগ্নির বিয়াতে যাইতে হইবো, সেই খবর আছে? যা জলদি খায়া রেডি হ। এক ঘন্টার মধ্যে বাইর হইতে হইবো। চলবে...... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।