আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এতো শক্তি কোথায় পেলে আপু!

When you become detached mentally from yourself and concentrate on helping other people with their difficulties, you will be able to cope with your own more effectively. Somehow, the act of self-giving is a personal power-releasing factor. আয়নার সামনে দাড়িয়ে মেয়েটি আজকেও ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললো। গলার কাছটাকে কি জানি কি আটকে আছে ভাবটা যাবার আগেই কান্না বন্ধ করে হাত দিয়ে চোখ মুছলো। বাসায় কেউ যদি টের পায় সে কাঁদছে, সবাই বেস্ত হয়ে যাবে। ভাইয়া হয়তো আজকে অফিস থেকে আসার পথে একগাদা চকলেট আনবে, মা হয়তো তার প্রিয় ডিশটা বানাবে। বাবা কানে কানে জিজ্ঞেস করবে মা বকেছে কিনা।

কিন্তু সে কাউকেই বলতে পারবেনা কি হয়েছে। তার কষ্টটা যে শুধু চেপে রাখার কষ্ট, কাউকে বলার না, হাল্কা হবার না। এটা সে এই বয়সেই বুঝে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই কল খুলে হাত মুখ ধুয়ে স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে নেয় মেয়েটি। সে এখন একাই আসাযাওয়া করতে পারে, কিন্তু বাসার সবার ধারনা সে পারবেনা।

তাই কেউ না কেউ তাকে এখনও স্কুলে পৌঁছে দেয়। মেয়েটা মনে মনে হাসে আর বলে, আমি যে কত্ত বড় হয়ে গেছি, তোমরা ভাবতেও পারবেনা। মেয়েটা বরাবর খুব ভালো ছাত্রী। খুব ভালো না হলে তার স্কুলে টিকে থাকাটাও খুব কঠিন। স্কুলের আপারা ওকে অনেক আদর করেন।

ডিবেট বা সাইন্স ফেয়ার কিংবা হ্যান্ডবল, ভলিবল সব কিছুতেই মেয়েটির থাকা চাই। স্কুলে একদিন না আসলে ওর মনে হতো দিনটাই যেনও বৃথা। সেই একি মেয়ে আজকাল যখন স্কুলের গেইটে এসে দাঁড়ায় ওর ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছে করে না। স্কুলের গেইট থেকে ক্লাস রুমের দূরত্ব যেনও অনন্ত অসীম। সব সময় চঞ্চল আর দুরন্ত মেয়েটা এখন স্কুলে ঢুকে ব্যাগটা শক্ত করে বুকে চেপে।

পেটের ব্যথার অজুহাতে আজকাল এসেম্বলিতেও মেয়েটা যায় না। অথচ 'সোনার বাংলা' গাওয়ার সময় পিটি আপা সবার আগে মেয়েটার খোজ করেন। এই গানটা মেয়েটাও খুব প্রিয় একটা গান ছিলো। শুধু গান! পুরো বাংলা বিষয়টি ই ছিলো মেয়েটির সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়। এক সময় প্রায়ই সপ্ন দেখত, বড় হলে বাংলা আপাদের মত গোল টিপ আর সুতি শাড়ি পরে স্কুলের বাংলা ক্লাস নেবে।

একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মেয়েটা ক্লাসে ঢুকে দেখলো সবাই হুড়োহুড়ি করে আম্বিয়ার চরিত্র বিশ্লেষণ পড়ছে। আজকে ফার্স্ট পিরিয়ডে 'পরিমল স্যারের' ক্লাস। গত ক্লাসেই 'হাজার বছর ধরে' পড়ানোর পর আজকে পড়া ধরবেন। মেয়েটার মুখ কুঁকড়ে গেলো, সবাই ধরেই নিয়েছে সবচেয়ে ভালো করে উত্তরটা এই মেয়েটাই দেবে। কিন্তু কেউ জানে না, মেয়েটি বইয়ের একটা পাতাও উল্টে দেখেনি।

যদি ও 'স্যার' শেষ করানর বহু আগেই মেয়েটি এই উপন্যাসটি কম করে হলেও ২০ বার পড়েছে। ওর খুব ভালো লাগার উপন্যাস ছিলও। না, আম্বিয়া নয়। টুনির মাঝেই নিজেকে খুজত মেয়েটি। এখন এই উপন্যাসটার নাম শুনলেও ঘিন্না লাগে।

জঘন্য কিছু ঘটনা চোখের সামনে এসে এমন ভাবে নাচতে থাকে জে নিজের কাছ থেকে নিজে পালিয়ে বেড়াতে চায় মেয়েটি। সেদিন পরিমল 'স্যার' বলেছিলেন একটু বসতে, হাজার বছরের চরিত্র বুঝিয়ে দেবেন। সরল বিশ্বাসে মেয়েটি অপেক্ষাও করছিলো। কিন্তু ......................................... নাহ, মেয়েটি আর ভাবতে পারে না। নিজেকে সংযত করে নেয়।

কেউ কিছু বুঝে গেলে কিভাব্বে! নাহ, কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। নাকের লোম ছিঁড়তে ছিড়তে পরিমল ক্লাসে ঢুকে। এক মুহূর্তের জন্য মেয়েটির চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। মাথা নিচু করে লোকটির কথা শুনে যায়। না শুনে উপায় নেই।

তার জীবনে যাই হোক না কেন পরীক্ষা থেমে থাকবে না। মাকে জেমন তেমন বুঝিয়ে কচিং বাদ দিয়েছে, তাই ক্লাসের পড়া(!) তাকে শুন্তেই হবে। আর কানটা বন্ধ করে রাখার ও তো উপায় নেই। লোকটা মেয়েটাকে ডেকে দাড় করায়। ঝাড়ি দিয়ে বলে বেঞ্চের নিচে মুখ লুকাইসো কেন? আমার দিকে তাকায়ে পড়া শোনো।

বলে শুকরের মত ঘত ঘত করে হাসে। মেয়েটা কুকড়ে যায়, একটা পাপড়ি না মেলা ফুলের মত। মেয়েটা মাথা উঁচু করে, উচু করে দেখে সত্যি ই সেখানে কোন মানুষ দাঁড়িয়ে নেই। হিংস্র এক বন্য দাঁতালো জন্তু কি জানি কি বলে যাচ্ছে। মেয়েটার কানে কিছু ঢোকে না।

মনে মনে ভাবে বাংলা ভাষাটা এতো নোংরা কেন! পরিশেষেঃএই লিঙ্কের তথ্য মতে পরিমল স্বীকার করেছে সে ভিকারুন নিসার আরও ১২ জন ছাত্রিকে নির্যাতন করেছে। এই মেয়েগুলো প্রত্যেকটা দিন এই পশুর অধমের মুখামুখি হয়েছে, ৪৫ মিনিটের ক্লাস করেছে, পরিক্ষার খাতায় লিখতে হবে বলে হয়তো এই জানয়ারের লেকচার ও খাতায় তুলেছে। ,এই ছোট্ট ছোট্ট আপুগুলো এতো শক্তি কোথায় পেলো কেউ কি বলতে পারেন? আমি কোন ভাবেই পরিমলকে শিক্ষক হিসেবে ভাবতে পারছিনা। আমি জানিও না সে বাংলা বিভাগের কোন বিশয়গুলো পড়াতো। বাংলা ভাষাটাকে কি নির্মম ভাবে ধর্ষণ করে গেলো এই জানোয়ারটা আমরা কি বুঝতে পারছি! রফিক, বরকত; পারলে আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন! আর আমার ছোট্ট বোনগুলোকে কি বলার আমি জানি না।

আমি আসলেই জানি না। আপুরা তোমরা কেউ যদি এই লেখাটা পড়ে থাকো, মনে রেখ তোমরা পৃথিবীর যেকোনো সাইন্টিস্ট, নভোচারী বা বিশাল যেকোনো মানুষের চেয়ে অনেক বড়, অনেক অনেক উঁচুতে তোমাদের জায়গা। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।