আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই লজ্জার এই কলঙ্কের দায় কার ঃ শিক্ষা আছে অনেক কিন্তু শিক্ষা নেবে কে?

আহ, বুলাওয়ে যদি চট্টগ্রাম হতো! মঙ্গলবার তৃতীয় ওয়ানডের সঙ্গে সিরিজ হারের পর স্টুয়ার্ট লয়ের একটি কথা শুনে তা-ই মনে হচ্ছিল। ২০১১ বিশ্বকাপে ৫৮-এর ধাক্কায় টালমাটাল বাংলাদেশ দল। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ফ্লাইটে ওঠার পর যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল বাংলাদেশ দল। আধা ঘণ্টা দূরের চট্টগ্রামে আরো বড় অনুপ্রেরণা অপেক্ষা করছিল ক্রিকেট দলের জন্য। সে রাতে চট্টগ্রামের মেয়র এসে যেভাবে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, রাস্তায় উৎসুক জনতা যে ভালোবাসায় হাত নাড়িয়েছিল, সে রকম কিছু বুলাওয়েতে সাকিবদের জন্য থাকবে না নিশ্চিত।

তবে গত ২০ দিনে হারারেতে হতাশার এমন সব ঘটনা ঘটেছে যে হারারে ছেড়ে বুলাওয়ে যাত্রার সঙ্গে মুক্তির আনন্দ মিশে থাকার কথা। অন্তত স্টুয়ার্ট ল সে রকমই ভাবছেন, 'হারারে ছাড়ছি। আমাদের ক্রিকেটের দুঃসহ স্মৃতিও পেছনে ফেলে যাব। ' বিশ্বকাপের চট্টগ্রাম পর্বে ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথ খুলে রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বুলাওয়েতে সে রকম কোনো প্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই।

সিরিজ হারিয়ে গেছে হারারেতেই। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, নিদেনপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হলেও তৃতীয় ম্যাচে লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা থেকে শেষ দুই ম্যাচে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা নিয়ে হৈচৈ করা যেত। কিন্তু ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া এ সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। যে দেশে এসে মাঠে নামার আগে পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সিরিজ জেতার আত্মবিশ্বাসকে কখনোই অতি আত্মবিশ্বাস মনে হয়নি। প্রস্তুতি ম্যাচে পৌনে তিন দিনে হারার পরও বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে দেখা যায়নি।

তবে ভেতরে ভেতরে যে খরগোশ ও কচ্ছপের সেই গল্প লেখা হয়ে গেছে অদৃষ্টে, তা কে জানত! ২০০৬ সালের পর জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও সাফল্যই নিশ্চিতজ্ঞান করেছিল বাংলাদেশ দল। শুধু দল বললে ভুল হবে, দেশের পুরো ক্রিকেটাঙ্গনের ধারণাটাই এমন ছিল। যেমনটা কচ্ছপের গতি সম্পর্কে পূর্বধারণা থেকে মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়েছিল খরগোশ। জেগে উঠে দেখে ধীরগতির কচ্ছপ পেঁৗছে গেছে দৌড়ের শেষ প্রান্তে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও প্রতিটি ম্যাচের পরতে পরতে জানতে পারল, নীরবে কতটা এগিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। সেই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এই জিম্বাবুয়ের তুলনা করতে গিয়ে বিস্মিত সাকিব আল হাসানরা। বাংলাদেশ ঘুমাচ্ছিল। আর রাতদিন খেটেখুটে টেস্ট প্রত্যাবর্তনের জন্য তৈরি হয়েছে জিম্বাবুয়ে। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ দলের লাগাতার হারের প্রধানতম কারণ প্রস্তুতি।

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট প্রশাসন বাংলাদেশের মত মাথা ভারী নয়। অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল একাধারে প্রধান নির্বাচক এবং ক্রিকেট অপারেশনস চেয়ারম্যান। শুধু আসন গ্রহণই নয়, খুব কাছ থেকে দেখে বলা_জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে সাবেক এ অধিনায়কের পরিকল্পনাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। তিনি যে খেলাটাকে ভালোবাসেন, বোঝেন ও উন্নতি ঘটাতে চান_এ আত্মবিশ্বাস ক্যাম্পবেলের ওপর শতভাগ আছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের। এ দায়িত্ব অহরাত্রি খেটে পালনও করছেন ক্যাম্পবেল।

যে কারণে হারারে টেস্টে বাংলাদেশকে হারানোর পর সবচেয়ে সুখী এবং নির্ভার মানুষ তিনি, 'এ দিনটির জন্য কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি! দুই বছর আগে বাংলাদেশ দল যখন বুলায়েতে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে এসেছিল, তখনই ঠিক করেছিলাম টেস্টে ফেরার সময় এসেছে। তখন থেকেই পরিকল্পনা মতো এগিয়েছি। ' আর বাংলাদেশ? যে দলের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে বরাবরই সংশয়, যে দেশের ক্রিকেট প্রশাসন জানে যে টেস্টে উন্নতি না করলে কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন দেওয়াও কঠিন হয়ে যাবে, সে দল কিনা ২০১১ বিশ্বকাপকে একমাত্র লক্ষ্য ধরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট বাতিল করে দেয়! ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যালেন্ডারটা এমনভাবে সাজায়, যেন ওয়ানডে ফরম্যাটের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অংশ নিতে পারেন। গোল্লায় যাক প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট! যদি বা সুযোগ মেলে জাতীয় লিগে খেলার, সেটিও ক্লান্তির অজুহাতে এড়িয়ে যান জাতীয় দলের তারকারা। এ নিয়ে ক্রিকেট প্রশাসকমহলে বলার কেউ নেই।

বললে যদি সাকিব-তামিমরা তার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করেন! কেমন যেন ক্রিকেটারদের ঘিরে তোষামোদী ভাব ক্রিকেট প্রশাসকদের! কোনো সন্দেহ নেই, সাকিবের বিশ্বের ১ নম্বর ওয়ানডে অলরাউন্ডার হওয়া কিংবা লর্ডস আর ম্যানচেস্টারে তামিম ইকবাল যেভাবে ইংলিশ বোলারদের ঠেঙিয়েছেন, তা দেশের জন্য সন্মানজনক। কিন্তু এ কাজটি করার জন্যই তো সাকিব-তামিম বাংলাদেশ দলের জার্সি গায়ে তোলার সুযোগ পান। তাঁরা দেশকে বাড়তি কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য করছেন না। তাঁরা ভালো খেলেন বলেই প্রশংসিত হন। খারাপ খেললে সমালোচিত হবেন_এটাও স্বাভাবিক।

দেশের মুখ উজ্জ্বল তো আর বিনা পারিশ্রমিকে করছেন না সাকিব-তামিম কিংবা অন্য ক্রিকেটাররা। খ্যাতি-যশের সঙ্গে অর্থ-বিত্তেরও মালিক হয়েছেন তাঁরা। আরো হবেন। দেশের সুনামও বয়ে আনবেন। কিন্তু এ সুনাম বয়ে আনার কারণে কাউকে যে কোনো কিছু করার 'লাইসেন্স' দিয়ে দেওয়া কতটা বিধ্বংসী হতে পারে, তার প্রমাণ বাংলাদেশ দলের জিম্বাবুয়ে সিরিজ।

বোর্ড তো বরাবরের মতোই সহনশীল! সঙ্গে চার বছর ধরে ক্রিকেটারদের অন্ধের মতো সমর্থন করে গেছেন জেমি সিডন্স। এতে করে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের আবহটাই গেছে বদলে। হারলে লজ্জার ছাপ নেই। জয়ের আনন্দটাও বোঝা মুশকিল। কোথায় যেন প্রাণের অভাব।

যে কারণে নামে একটা দল হয়েও বাংলাদেশ দলের সামষ্টিক চিত্রটা বড্ড বেশি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। সেটি আরো বেশি প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে এবারের জিম্বাবুয়ে সফরে। মাঠে ও মাঠের বাইরের জিম্বাবুয়ে দলের শরীরী ভাষার সঙ্গে কী বিস্তর ফারাক বাংলাদেশ দলের। শুধু ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়েই নয়, শরীরী ভাষায়ও কী নির্দয়ভাবে বাংলাদেশকে শাসন করেছে জিম্বাবুয়ে! খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাই বলা, জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট এবং টানা তিন ওয়ানডের সঙ্গে সিরিজ হারের একটি ইতিবাচক দিক কিন্তু আছে।

সেটি আ@ে@@@াপলব্ধি। সময় এসেছে, সবকিছু নতুন ও সঠিকভাবে ভাবার। সে উপলব্ধি খুব পরিষ্কার। ১. পূর্বপরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। ২. ব্যক্তি নয়, দল আগে।

বুলাওয়েতে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ জিতলেই সে উপলব্ধি যেন ভুলে গেলে আরো বড় বিপর্যয়ের পথেই এগোবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ঘুমিয়ে পড়া খরগোশ কোনো রেসই জিততে পারে না! সূত্র ঃ কালের কণ্ঠ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।