আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোমান পোলানস্কি : শৈল্পিক এক যোদ্ধা

বুকের ভেতর বহু দূরের পথ... রোমান পোলানস্কি- এমন এক ফিল্মমেকারের নাম যার সিনেমাতে মানুষের নিঃসঙ্গতা তীব্র আবেদন নিয়ে ধরা দিয়েছে। মানুষকে তিনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এমন সব জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখানে প্রেম-দ্রোহ-শিল্পের জন্ম হয়। মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে যিনি অবিরাম খেলতে ভালোবাসেন। তার ভেতরে যাওয়ার প্রচেষ্টায় সর্বদা লিপ্ত থাকতেই যার আনন্দ। তাই তার হাত ধরে জন্ম নেয় রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা মনস্তাত্ত্বিক অনবদ্য সব সিনেমা।

পোলানস্কি বিশ্বাস করতেন, 'সিনেমা সেটাই হওয়া উচিত যা দেখে দর্শক ভুলে যাবে সে থিয়েটারে বসে আছে। ' পোলানস্কি ১৯৩৩ সালের ১৮ আগস্ট ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম ফ্রান্সে হলেও বাবা-মা ছিলেন পোলিশ। পৈতৃক সূত্রে নাম পেয়েছিলেন রাজমন্ড রোমান লাইব্লিঙ্গ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা তার কিশোর মনের ওপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছিলো।

যার ফলে পোলানস্কির কাছ থেকে আমরা পেয়েছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর নির্মিত সর্বকালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র 'দি পিয়ানিস্ট'। একজন শিল্পী হিসেবে পোলানস্কি চলচ্চিত্রটিতে দেখাতে চেয়েছেন যুদ্ধ আক্রান্ত এক শিল্পীর বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এ ছবিটির জন্যই ২০০২ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের অস্কার পুরস্কার লাভ করেন। তবে পোলানস্কি পরিচালিত প্রথম ছবিটি ছিলো 'নাইফ ইন দ্য ওয়াটার' (১৯৬২)। আর হলিউডে তার যাত্রা শুরু হয় 'রোজমেরি'জ বেইবি' (১৯৬৮) দিয়ে।

চলচ্চিত্র দুটোই ছিলো সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী। দি পিয়ানিস্ট ছবির একটি দৃশ্য পোলানস্কি চলচ্চিত্রে নির্মাতার ভূমিকাটাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করেন। 'চলচ্চিত্র অনবদ্য হয়ে ওঠার মূল কারিগর পরিচালক ছাড়া আর কেউই নন। ' চলচ্চিত্র নির্মাণে নিজস্ব স্টাইল সম্পর্কে পোলানস্কির মন্তব্য, 'আমার চলচ্চিত্রগুলো প্রাতিক্ষণিক আকাঙ্খার প্রকাশ। চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় আমি শুধু আমার সহজাত প্রবৃত্তিকেই কাজে লাগাই, তবে তা একটি সুনির্দিষ্ট এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে।

' সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী ছবির ক্ষেত্রে আলফ্রেড হিচককের পরই রোমান পোলানস্কির নাম বিবেচনা করা হয়। পোলানস্কিও তার চলচ্চিত্রে হিচককের প্রভাব স্বীকার করে নিয়েছেন। চলচ্চিত্রকে বাস্তবসম্মত করে ফুটিয়ে তুলতে পোলানস্কি নানা কৌশলের আশ্রয় নিতেন এবং চলচ্চিত্রে এ বিষয়টিকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। 'চলচ্চিত্রে যদি ভায়োলেন্স দেখাতে হয় তবে তা যথার্থরূপেই দেখাতে হবে। যদি তা বাস্তবসম্মত করে দেখানো না যায় তবে বিষয়টি চলচ্চিত্রে তুলে ধরাই হবে অনৈতিক ও ক্ষতিকর।

দর্শককে যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্তই না করা গেল তবে ভায়োলেন্স দেখানো চলচ্চিত্রে অশ্লীলতারই নামান্তর। ' বিটার মুন ছবির একটি দৃশ্য। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন স্ত্রী এমানুয়েলা সিগনার ব্যক্তিজীবনে দুর্ভাগ্য আর বিতর্ক যেন পোলানস্কির নিত্যসঙ্গী। ১৯৬৯ সালে তাঁর জীবনে অত্যন্ত মর্মান্তিক এক ঘটনা ঘটে। পোলনস্কির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অভিনেত্রী শ্যারন টেইটকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী চার্লস ম্যানসনের অনুসারীরা নির্মমভাবে হত্যা করে।

১৯৭৮ সালে পোলানস্কি জড়িয়ে পড়েন নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে। সামান্থা জেইমার নামক ১৩ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ৪২ দিনের কারাবরণ করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে পালিয়ে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। এর পরের জীবন শুধুই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো। তবে নিয়মিত বিরতিতে চলচ্চিত্র ঠিকই বানিয়ে গেছেন।

কিন্তু সেজন্য তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। ব্যক্তিজীবনে নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত পোলানস্কির শৈল্পিক মনের আকুলিবিকুলি তার প্রায়শ্চিত্ত করার প্রচেষ্টা। ধর্ষণের ঘটনার প্রায় ত্রিশ বছর পর ২০০৯ সালে সুইজারল্যান্ডে জুরিখ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন । প্রায় ছয় মাস গৃহবন্দি থাকার পর মুক্তি মেলে। এরই মাঝে রাজনৈতিক থ্রিলার 'দি ঘোস্ট রাইটার' ছবির জন্য ২০১০ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পরিচালকের 'রৌপ্য ভল্লুক' জিতেন রোমান পোলানস্কি।

তবে গৃহবন্দী থাকায় পুরস্কার গ্রহন করতেও যেতে পারেননি । দি ঘোস্ট রাইটার ছবির একটি দৃশ্য রোমান পোলানস্কি নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে কালজয়ী সাসপেন্স ও থ্রিলারধর্মী অ্যাপার্টমেন্ট ট্রিলজি: 'রিপালসন' (১৯৬৫), রোজমেরি'জ বেইবি (১৯৬৮) ও দি টিনেন্ট (১৯৭৬)। এছাড়া- 'চায়না টাউন' [১৯৭৪], 'দ্য নাইন্থ গেট' [১৯৯৯], বিটার মুন [১৯৯২], 'হোয়াট?' [১৯৭৩], অলিভার টুইস্ট [২০০৫] ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আগামী ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া ৬৮তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে থাকছে পোলানস্কির নতুন ছবি 'কার্নেজ'। এতে অভিনয় করেছেন কেট উইন্সলেট ও জোডি ফস্টার।

এ পর্যন্ত তিনবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন পোলানস্কি। তার বর্তমান স্ত্রী অভিনেত্রী-সঙ্গীতশিল্পী এমানুয়েলা সিগনার। এ দম্পতির ঘরে রয়েছে দু'টি পুত্র সন্তান মর্গ্যান ও এলভিস। (তথ্যসূত্র: আইএমডিবি, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য ওয়েবসাইট এবং দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা) (১৮ আগস্ট ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত) **চলচ্চিত্র বিষয়ক আমার যত পোস্ট**  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৪ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.