আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশই খেয়ে ফেলে ৫০ কেজি মাংস!

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে: গরুর মাংস ছিল প্রায় ৮০ কেজি। এর ৩০ কেজি নিলামে বিক্রি করে বাকি ৫০ কেজিই খেয়ে ফেলে পুলিশ। আর অভিনব কায়দায় তারা গরুর মালিক আবদুল গফুর ও মাংস দোকানি শামসুল হককে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজারে। তিন দিন আগে ঘটনা ঘটলেও ঘটনা নিয়ে গোটা এলাকায় তোলপাড় চলছে এখনও।

পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ গোটা এলাকার মানুষ। এলাকার লোকজন জানান, পুলিশ এ ঘটনা ঘটানোর আগে এসআই ফয়েজ হরিপুরের মানুষদের ‘গরু-ছাগল’ বলেও গালি দেন। এ সময় ফয়েজ হালকা গণধোলাইও খেয়েছেন। সিলেটের হরিপুর বাজার গোটা জেলার একটি পরিচিত নাম। ধর্মীয় অনুশাসনের শক্তিশালী এলাকা বলে পরিচিত এটি।

সামাজিক বন্ধনও এখানে বেশ শক্তিশালী। হরিপুর বাজারে দু’টি মাংসের দোকান। এর মধ্যে একটি দোকান পরিচালনা করেন হেমু ভেলুপাড়া গ্রামের শামসুল হক ও অন্যটি হেমু ভাটপাড়া গ্রামের শাহ আলম চুকাই। শুক্রবার দুপুরে চুকাইয়ের দোকানে একটি গরু জবাই হয়। ওই গরুর পেটে একটি বাচ্চা পাওয়া যায়।

এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয় পুরো এলাকায়। এ সময় চুকাই তার লোকজন পাশের দোকানের শামসুল হকের জবাই করা গরুকে চোরাই গরু বলে আখ্যায়িত করে বিষয়টি চাউর করতে থাকে। এই হুলস্থূলের মধ্যে স্থানীয় হরিপুর বালিপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী সিলেট পুলিশ সুপারকে ফোন করে বিষয়টি জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে এলাকায় ছুটে যান জৈন্তাপুর থানা পুলিশের এসআই ফয়েজ। তিনি হরিপুর বাজারে নেমেই বলেন, ‘হরিপুরের মানুষ গরু-ছাগল- আমাদের না জানিয়ে এসপিকে জানায় ঘটনা।

’ এ সময় উপস্থিত জনতা তার ওপর উত্তেজিত হয়ে তাকে ধাওয়া দেয়। এক পর্যায়ে তাকে কিলঘুষি মারে। পরে স্থানীয় মেম্বার আবদুর রকিবসহ এলাকার মুরব্বিরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ফয়েজ আহমদ চুকাইয়ের দোকানে অভিযান না চালিয়ে শামসুল হকের দোকান থেকে জবাই করা দেশী গরুর প্রায় ৮০ কেজি মাংস ও গরুর মালিক আবদুল গফুর ও দোকানি শামসুল হককে থানায় নিয়ে যান। দোকানি শামসুল হক এলাকায় সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হওয়ায় স্থানীয় লোকজন তাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় যান।

গভীর রাত পর্যন্ত জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে উপজেলা চেয়ারম্যান, দলীয় নেতাকর্মীসহ হরিপুরের মুরব্বিরা থানায় যান। কিন্তু ওসি আবদুল জলিল তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। তিনি বারবার বলেন, এটি চোরাই গরু। কিন্তু কার গরু তা তিনি প্রমাণ করতে পারেননি। শেষে এসআই ফয়েজ বাদী হয়ে মাংস দোকানি শামসুল হক ও গরুর মালিক আবদুল গফুরকে আসামি করে থানায় গরুর চুরির মামলা করে তাদের দু’জনকে এ মামলায় আদালতে চালান দেন।

তারা গত তিন দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। এদিকে, তাদের কারাগারে পাঠানোর পর পুলিশ ৮০ কেজি মাংসের মাংসের মধ্যে ৩০ কেজি নিলামে বিক্রি করে দেয়। এ সময় হরিপুর এলাকার লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত লোকজন জানান, জৈন্তারপুর থানার পুলিশের মেসে নিয়ে ৫০ কেজি মাংস রান্না করে খাওয়া হয়। তবে, উপস্থিত এক জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, পুলিশ ১৫ থেকে ২০ কেজি মাংস নিয়েছে।

আর নিলামে তারা ৬ হাজার টাকা বিক্রি করলেও কাগজে-কলমে ৪৮০০ টাকা দেখিয়েছে। এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর থানার ওসি আবদুল জলিল গতকাল মানবজমিনকে জানান, আমরা কোন মাংস খাইনি। যা ছিল তা নিলামে বিক্রি করেছি। তিনি জানান, আসলে ওই দিনের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। পরিস্থিতি এরকমভাবে তৈরি করা হয়েছিল কোনটি সত্য আবার কোনটি মিথ্যা তা নির্ণয় করা ছিল কষ্টকর।

তবে মাংস দোকানি শামসুল হক ও গরুর মালিক আবদুল গফুর নির্দোষ হলে পুলিশ তাদের দোষী সাজাতে চেষ্টা করবে না বলে জানান তিনি। Click This Link ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।