আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূনহীন প্রকাশনা শিল্প ‘দীর্ঘস্থায়ী শূন্যতায়’

তারা বলছেন, হুমায়ূন আহমেদ অনেক নতুন পাঠক তৈরি করতে পেরেছিলেন। তিনি একাই তিন দশকেরও বেশি সময় প্রশাকশনা শিল্পকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিতে পেরেছিলেন।     
ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ূন গত বছর ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চৌষট্টি বছর বয়সেই থেমে যায় তার কলম।  
তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের ‘বিরাট ক্ষতি’ হয়েছে বলে মনে করেন কাকলী প্রকাশনীর এ কে নাসির উদ্দিন আহমেদ সেলিম।


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যারা তার বই কিনতে আসতেন, তারা অন্যদেরও বই কিনতেন। অনেক নতুন পাঠক তিনি তৈরি করেছিলেন। তার মৃত্যুতে প্রকাশনা শিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। ”
মাওলা ব্রাদার্সের আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, “তিরিশ বছর তিনি এদেশের সাহিত্য অঙ্গনে দাপটের সাথে টিকে ছিলেন। আরেকজন হুমায়ূনের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত এই শূন্যতা পূরণ হবে বলে আমি মনে করি না।


যতোদিন লিখেছেন, বছরের পর বছর একুশে বই মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় সবার ওপরে থাকত হুমায়ূনের নাম। হুমায়ূনের মৃত্যুর পর চলতি বছরের বইমেলায়ও হুমায়ূনের নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে, যা তিনি লিখেছেন নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।  
তবে ‘হুমায়ূনহীন’ আগামী বই মেলায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন মাহমুদুল।
অবশ্য এডর্ন পাবলিকেশন্সের জাকির হোসোইনের মতে, যে প্রকাশকরা ‘হুমায়ূন আহমেদের বইনির্ভর’ ছিলেন, কেবল তারাই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
“বই মেলার পরিসংখ্যান বলে, প্রতি বছর মেলায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়।

এর মধ্যে হুয়ায়ূন আহমেদের বইয়ের মূল্য তিন কোটি।
“আসলে যে সব প্রকাশক তার বই প্রকাশ করতেন, তারা কিছুটা হতাশ। তারা ভাবছেন, হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিত বইগুলো দিয়ে সর্বোচ্চ আর দুই বছর ব্যাবসা করা যাবে। আমি এটা শুনে ব্যথিত হয়েছি। এতো বড় একজন সাহিত্যিক, তার বই মাত্র দুই বছর চলবে!”
১৯৪৮ সালে জন্ম নেয়া হুমায়ূন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই লেখালেখি শুরু করে সাহিত্য সমালোচকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন।

নন্দিত নরকে তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস।
এরপর শঙ্খনীল কারাগার, রজনী, এপিটাফ, পাখি আমার একলা পাখি, ফেরা, নিষাদ, দারুচিনি দ্বীপ, নির্বাসন, অমানুষ, রূপালী দ্বীপ, শুভ্র, দূরে কোথাও, মন্দ্রসপ্তক, বাদশাহ নামদার, সাজঘর, বাসর, নৃপতির মতো পাঠক হৃদয় জয় করা উপন্যাস আসে তার হাত দিয়ে। তার সর্বশেষ প্রকশিত রচনা মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লেখা ‘দেয়াল’।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘১৯৭১’, ‘সূর্যের দিন’ এর মতো উপন্যাস। হুমায়ূনের উপন্যাসের চরিত্র মিসির আলী ও হিমু তরুণ পাঠকদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।

অনন্ত নক্ষত্র বীথি, ইরিনার মতো কল্পবিজ্ঞান কাহিনীও লিখেছেন তিনি।
সংলাপনির্ভর এসব উপন্যাসে হুমায়ূন মধ্যবিত্তের রোমান্টিকতাকে নিখুঁতভাবে তুলে এনেছেন বলে সাহিত্য সমালোচকদের মত।
তাকে নিয়ে কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন, “অনেক উৎকৃষ্ট রচনাই অত্যন্ত জনপ্রিয়। হুমায়ূন আহমেদ আমাদের সস্তা চতুর্থ শ্রেণীর লেখকদের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছেন। ”
উপন্যাসের পর নাটক লেখায় হাত দেন হুমায়ূন।

এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠায় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের এই শিক্ষক।
১৯৮০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান তিনি। এরপর বহুব্রীহি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাতের মতো জনপ্রিয় নাটকও আসে তার হাত দিয়ে।
নাটক লেখার এক পর্যায়ে নির্দেশনায়ও নামেন হুমায়ূন। নাটক নির্দেশনায় হাত পাকিয়ে নামেন চলচ্চিত্র পরিচালনায়।

আগুনের পরশমনি দিয়ে শুরু করে শ্রাবণমেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামলছায়ার মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমনি কয়েকটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামে নানা বাড়িতে হুমায়ূনের জন্ম। তার বাবা পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, মা আয়েশা ফয়েজ।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।