আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হায়! তারেক মাসুদ...

রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র ১. অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়... বিশ্বাসই করতে পারছি কাছ থেকে দেখা সহজ-সরল, অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন প্রকৃত চলচ্চিত্রনির্মাতা, যিনি কি-না কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো জায়গায় আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেছেন অনিন্দ্য চলচ্চিত্র 'মাটির ময়না'র জন্য। এই মাটির ময়না পেয়েছে আন্তজার্তিক ক্ল্যাসিক ফিল্ম এর স্বীকৃতি। এত অর্জন, এত মৌলিক কাহিনীসম্পন্ন সুস্থধারার 'চলচ্চিত্র' নামের জিনিসটি যিনি অতি যত্নে লালন করেছেন, মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণই ছিলো যার জীবনের অভিপ্রায়... সেই প্রিয় মানুষটিকে প্রাণ হারাতে হলো বাংলাদেশের অন্যতম অন্ধকার সড়ক দুর্ঘটনায়! লজ্জা-হতাশা-ক্ষোভে কিছুতেই মানতে পারছি না এ অবিচার! এ স্রষ্টার কেমন বিচার? তারেক মাসুদ স্যারের সাথে শেষ দেখা আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের সেমিনারে, তাঁর দৃঢ় চাহনি, স্পষ্ট বক্তব্য একজন শক্তিমান চলচ্চিত্রনির্মাতারই পরিচায়ক। আজকাল ছাগলা-দাঁড়ি ফারুকীদের উৎপাতে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেখা দায়। এই তারেক মাসুদ, যিনি সবাইকে সম্মানের চোখে দেখতেন, এফডিসির কাউকে নিয়েও তাকে সমালোচনা করতে দেখা যায় নি, সারা দেশ যখন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ভিডিও ফিকশন মেকিং নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন এই তারেক মাসুদই ফারুকী সম্পর্কে মন্তব্য করেন, "মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এমন একজন নির্মাতা, যে একটা কলাগাছ থেকেও অভিনয় বের করে নিয়ে আসার ক্ষমতা রাখে"।

এই প্রচারবিমুখ, শান্ত, ধীর স্বভাবের মানুষটার সর্বশেষ চলচ্চিত্র 'রানওয়ে'। যেটা এখনো সিনেপ্লেক্সে-হলে রিলিজই পায় নাই! অথচ ঢাকার বাইরে এর প্রদর্শনীর আয়োজন করে তিনি নিজেকে প্রকৃত চলচ্চিত্রনির্মাতার কাতারে দাঁড় করিয়েছেন তাঁর দৃঢ় ব্যক্তিত্বের স্বকীয় যোগ্যতায়। আশ্চর্য এক মানুষ তারেক মাসুদ। অসম্ভব প্রতিভাবান, শুধু 'মুক্তির গান' বা 'মাটির ময়না' নয়, 'নরসুন্দর' নামের একটি শর্টফিল্মের কাজও তিনি করেছিলেন, যেটা স্বল্পদৈর্ঘ্যে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র। এই যে ক্যামেরার কাজে শুদ্ধতা, মেকিংয়ে বৈচিত্র্য, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকে পরিচয় করিয়ে দেবার অভিপ্রায়, তা তো তারুক মাসুদেরই ছিলো।

আজ তাকেও হারাতে হলো। আকাশ থেকে ঝরে পড়লো একটি নক্ষত্র.... তাঁর সর্বশেষ চলচ্চিত্রের জন্য (কাগজের ফুল) শ্যুটিং স্পট দেখতে গিয়েই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এক ভয়াল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হলো শ্রেষ্ঠ এই চলচ্চিত্রনির্মাতাকে। হায়! এই ক্ষতি যে অপূরণীয়! ২. বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নিহত হচ্ছে অজস্র মানুষ। সামনে ঈদ।

ঢাকা-গাজীপুর বা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে শুরু হবে দুর্ভোগ। জনগণের সতর্ক হওয়া জরুরী। পাগলের মতো বাড়িতে ছুটতে গিয়ে প্রাণ হারানোটা যেন একটা স্টাইলে পরিণত হয়েছে। যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই সেখানে ঝুঁকি নেওয়ার কোনো দরকার আছে কী? অনেক মানুষ যানজটে দেশের বাড়িতে পৌঁছাতেই পারে না, রাস্তাতেই ঈদের নামাজ পড়তে হয় তাদের। সরকারের না আছে কোনো মাথাব্যথা, এরচেয়ে বেশি ব্যস্ত কোথায় কোথায় কার কার ছবি টাঙাতে হবে, কোথায় নিজের নামে সবকিছু পরিচালনা করতে হবে।

আশ্চর্য অশিক্ষিতের দেশে বাস করি আমরা। যেখানে সবাই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে ঠিকই কিন্ত যে চাষা, চাষা-ই রয়ে যায়। শিক্ষাটা কেবল সার্টিফিকেটে, বাস্তব জীবনে নয়। অনেকেই ব্লগে লিখছেন, প্রতিদিনই তো অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, তাদের নিয়ে কেন পোস্ট নাই, তারেক মাসুদ মরছে, আমাদের এত মাথা ব্যথা কেন? আমাদের মাথা ব্যথা সবাইকে নিয়েই। এই তারেক মাসুদ নিজেকে কখনো আলাদা করে দেখেন নাই।

তাঁর চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য ছিলো গ্রাম-বাংলা। শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করি এই চলচ্চিত্রের কাণ্ডারীকে। আসুন এসব অযথা বিতর্কে না জড়িয়ে একটু শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। নিজে একজন মুক্তধারার চলচ্চিত্রনির্মাতা হিসেবে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি তারেক মাসুদ স্যারকে। আল্লাহ্ তাকে জান্নাতবাসী করুন।

তারেক মাসুদকে নিয়ে লেখা আমার কবিতা : নক্ষত্রেরা হারিয়ে যায় রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র সভ্যতা চলছে খুনি রাষ্ট্রের কতিপয় পা-চাটা পশুর ইশারায় তীব্র নৈঃসঙ্গবোধ চেয়ে থাকে অপলক রাষ্ট্র তার সতীত্ব হারায় কোনো এক বৈশাখী ঝড়ো রাতে। উড়ন্ত ভাসমান যানে চড়ে ভীষণ গর্জনে আকাশ থেকে নেমে আসে একদল নগ্ন বিচিত্র দানব, নক্ষত্রের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে। কিংবা ল্যাম্পপোস্ট নিভে যাওয়া রাতে, ওরা নেমে আসে, উল্লাস করে, বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে দেয় মৃত্যুর শীতল আমেজ, সমস্ত শহরে কেমন প্রোটোজয়িক মৃত্যু! সমগ্র মানবশরীরে বিষাক্ত ছত্রাক... স্বাধীনতা-সড়কের গলন্ত পিচ, খসে যাওয়া ইট-সুরকি, নষ্ট ডিভাইডার, গোগ্রাসে গিলে ফেলে ভূমিদস্যুরা। কেননা, স্বয়ং রাষ্ট্রই দিয়েছে ভূমিধর্ষণের লাইসেন্স। ওরা গ্লোবালাইজেশনের পাপেট মাত্র।

পুরুষাঙ্গ নেই, জিহ্বা দিয়েই সারে যৌনকর্ম! যানজট খেয়ে ফেলে অস্থির সময়, সস্তা বারবনিতাও ব্যস্ত নতুন শকটে চড়ে ঘুরে বেড়াবার আশায়। নগরের দালাল সে, একের পর এক অপরিকল্পিত ফ্ল্যাটে রোজ চলে বেশ্যাগিরি, রাষ্ট্রশৃঙ্খলবাহিনী নিশ্চুপ! মুখ খুললেই কেউ কেউ ডুবে যেতে পারে অন্তিম শয্যায় আর নক্ষত্রেরা মৃত্যুবরণ করে সড়ক দুর্ঘটনায়... বিস্তারিত জানতে, তারেক মাসুদ সম্পর্কে : Click This Link ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।