আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

র‌্যাডিসন, সোনারগাঁ, শেরাটন; দুবৃত্ত রাজনৈতিক-আমলা-বেনিয়া-সুশীলদের সংঘবদ্ধ ইফতার জৌলুশ; কোটি ভুখা নাংগা বাংলাদেশী রোজাদারের আফসোস

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!! ক্ষুধার্ত প্রতিবেশী খেয়েছে কিনা তা খবর না নিয়ে নিজে খাওয়াকে যে ইসলাম গহির্ত অপরাধ বলে গণ্য করে সে ইসলামেরই আরেক মহান বিধান ইফতারকে পুরোপুরি মস্করার কাজে পরিণত করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলের লেজ ধরে এ মিছিলে যোগ দিয়েছে নানান অ বা সিকি রাজনৈতিক সামাজিক সংঘ, ব্যবসায়িক সমিতি বা প্রতিস্ঠান। ইফতার পার্টি নামক এ নব্য ব্যধির কবলে গোটা বাংলাদেশ। জানামতে আর কোন মুসলিম দেশে এ রোগ এতটা বাসা বাধেনি। বাধ্য হয়ে গত কয়েকবছরে কিছু ইফতার পার্টিতে/মাহফিলে আমাকে যোগ দিতে হয়েছে।

এগুলোর প্রতিটির বাজেট পার হেড ৩০০ টাকার কম ছিলনা আর জানামতে ১৭৫০ টাকারও একটি ছিল গুলশানের কোন এক রেস্টুরেন্টে। র‌্যডিসনের একটি দাওয়াতে যাইনি, দাম সংগত কারনেই আরো বেশী। এসব ইফতার পার্টিতে খাবারের যে অপচয় হয় তা মেজাজ বিগড়ে যাবার জন্য যথেস্ট। আর একজনের বিলের টাকায় কোনো কোনো দরিদ্র পরিবারের পুরোমাসের ইফতারীর জোগাড় হয়ে যেতে পারে। অথচ শুয়োরের বাচ্চা পলিটিশিয়ান ও মেকি জীবনযাপনের জন্য কুখ্যাত কর্পোরেটরা 'রোজা' ও 'ইফতারের' মহান নৈতিক তাৎপর্যের অনুসরন করে দরিদ্রদের মাঝে ইফতার বিলানোর পরিবর্তে নিজেরা শামিয়ানা টাংগিয়ে সংঘবদ্ধ ভাবে তা ভক্ষন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ধিক! ধিক!! মানুষের ক্ষুধা উপলব্ধি করা ও ক্ষুধার্ত মানবেরে যৎসামান্য হলেও খাবার দানের কালচার চাংগে তুলে সে শামিয়ানার তলায় তারা যথারীতি ভিনমতের রাজনীতির গীবত গাওয়ার মচ্ছবে পরিণত করেছে! জামাতে ইসলামীর মত মৌলবাদি দলও এহেন পুঁজিবাদি ও ভোগবাদি তান্ত্রিকতার ভন্ডামীতে লিপ্ত হয়েছে। ছি! ছি!! দেশে প্রতিদিন কয়টি ইফতার মাহফিল ঠিক কি মানে হচ্ছে, তার খরছ কত এ ব্যাপারে আমাদের কাছে সুনির্দিস্ট কোনো ডাটা নেই। তবে শুধুমাত্র র‌্যডিসন, সোনারগাঁ ও শেরাটনকে ২০ দিনের জন্য ১০০০ লোক দিয়ে ১০০০ টাকা পারহেড কাউন্ট করলে যে অংক দাড়াঁয় তা নিম্নরূপ: ২০*১০০০*১০০০ = ২,০০,০০,০০০ অর্থাৎ ২ কোটি টাকা। ৩০০০ টাকা বেতনের একজন গার্মেন্টস কর্মীর তা ৫৫৬ বছরের বেতন! অন্যভাবে হিসেব করি: নিম্ন আয়ের ৫ সদস্যের পরিবারে ১ মাসের ইফতারীতে যা যা লাগে- ছোলা ৩ কেজি ২১০ টাকা চিনি ৫ কেজি ৪০০ টাকা মুড়ি ২ কেজি ১০০ টাকা খেজুর ২ কেজি ৪০০ টাকা ডাল ১ কেজি ১০০ টাকা মসলা ১০০ টাকা কলা ১৫০ টি ৪৫০ টাকা অন্যান্য ২৪০ টাকা মোট ২০০০ টাকা অর্থাৎ এ তিনটি হোটেলের 'অপচয় ও জৌলুস' এর বিনিময়ে গোটা রোজার মাস ১০,০০০ পরিবারের ভদ্রস্থ ইফতারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। এ দেশের আনাচে কানাচে সমস্ত ইফতার পার্টিকে খাতায় আনলে একটি দরিদ্র পরিবারও যে অন্নকস্টে ভুগবেনা, নিছক পানি দিয়ে বা বাসি ভাত দিয়ে ইফতার করতে বাধ্য হবে না তা বলাই বাহুল্য।

টিভি ক্যামেরায় দু:খগাঁথা প্রচার নয় আমরা চাই কার্যকর একটা কিছু। আসুন ইফতার পার্টি বর্জন করি। সে টাকায় অনাথের ইফতারে ব্যয় করি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।