আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কারেন্ট জাল চিনেন ??

shamseerbd@yahoo.com একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যখন এই প্রশ্ন করলেন ,আমি কিছুটা অবাকই হলাম। আমার চাচা আর আমি একজন আরেকজনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছি। ডাক্তারের হাতে ধরা আব্বুর প্রেসক্রিপশন । জবাব দিলাম হা চিনি। আমাকে আর সুযোগ না দিয়ে ডাক্তার নিজেই বললেন, কারেন্ট জালে কি হয় জানেনত, ইলিশ থেকে শুরু করে ছোট বড় সব মাছই ধরা পরে- ধরা পরতেই হবে।

আপনার আব্বাকে যে প্রেসক্রিপশন (টোটাল চৌদ্দটা ঔষধ) দেয়া হয়েছে সেটাতো কারেন্ট জাল, কোন না কোন ঔষধে কিছু না কিছু কাজ ত হবেই !!!!! সময় নিয়ে দেখলেন, তারপর একমাসের জন্য প্রেসক্রিপশন দিলেন । ২৫শে জুন অচেতন অবস্হায় আব্বুকে ভর্তি করানো হল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল এ। প্রথম দিনই তারা হাই ডিফিকালটিজ ইউনিটে রেখে সিটি স্ক্যান থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব পরীক্ষাই করল । সিটিতে হালকা স্ট্রোক এর লক্ষন দেখা গেলোও গায়ে জ্বর থাকার কারনে তারা ভাইরাল মেনিন জাইটিস এর ট্রিটমেন্ট দিয়ে যাচ্ছিল, জনিনা কেন জানি তাদের ডায়গনাইসিস কে আমার ঠিক মনে হচ্ছিলনা । ।

বিশেষ করে ডিউটি ডাক্তারদের কথাবার্তার কারনে। চট্টগ্রাম মেডিক্যালের মেডিসিনের একজন প্রফেসর দেখলেন। তিনি কল করলেন আরেকজন নিউরোমেডিসিনের প্রফেসরকে। দুজন আলোচনা করে ঔষধ দিলেন। এর মাঝে হঠাৎ করে দায়িত্বে থাকা এক ডাক্তার বললেন রোগীকে আমরা আইসিউতে নিয়ে যাচ্ছি- কেন কি কারনে এই সব জানতে চাওয়ার মত সিচুয়েশন তখন না, নিতে চায়, নিতে বললাম।

এর মাঝে করা যায় সম্ভব সব টেস্টই ওরা করাল, যেগুলো তাদের ঐখানে নেই সেগুলো বাহির থেকে করিয়ে আনল। কিন্তু আব্বুর অচেতন অবস্হার কোন উন্নতি তখনও হয় নাই। একটা জিনিস লক্ষ্য করছিলাম আব্বুর শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক ছিল আর অন্যান্য রিপোর্টগুলো সব নরমাল ছিল শুধুমাত্র সিটি স্ক্যানে স্ট্রোক এর সিম্পটোম ছিল তাও অত প্রকট নয়, জ্বর ও তখন চলে গিয়েছিল। এই অবস্হায় আইসিউতে আনা বা আইসিউতে রাখার দরকার কতটুকু জানিনা, তবে এক ওয়ার্ড বয় বলেছিল আপনারা প্রফেসর স্যার কে জিজ্ঞাসা করেন রাখার দরকার আছে কিনা, হাসপাতালের যে পরিচালক আইসিইউতে পঠাইছেন উনি খুব একটা সুবিধার না। এই অবস্হায় ডিউটি ডাক্তারকে বললাম প্রফেসর স্যারকে কল করুন।

উনি আসার পর জানতে চাইলাম আব্বুকে আইসিউতে রাখার দরকার আছে কিনা। উনি কিছুক্ষন দেখে সব রিপোর্ট দেখে বললেন ওনাকে কেবিনে নিয়ে যেতে পারেন, আইসিইউতে রাখার দরকার নেই, অথচ ঐ পরিচালক আইসিইউ থেকে রিলিজ করতে চাচ্ছিলেননা। এই সময়গুলোতে নিজেকে এত অসহায় মনে হয় বলার বাইরে। আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে সাইন করতে বলা হল। লেখা আছে- রোগীর অবস্হা খারাপ হলে তারা দায়ী না আর আমি নিজের ইচ্ছায় এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি !!!! আমি ঠিক বুঝতে পারছিলামনা কি করব, প্রফেসর বলেছেন আইসিইউতে রাখার দরকার নেই ।

তারপরও ঐ কাগজে সাইন করার সময় আমার হাত কাঁপছিল, বুঝতেছিলামনা কি করছি। কেবিনে নিয়ে আসা হল। আব্বুর অবস্হার তেমন বিশেষ কোন পরিবর্তন নেই। এর মাঝে আরেকজন ডাক্তার এসে বললেন ওনার শ্বাসতো স্বাভাবিক আছে অক্সিজেন মাস্ক লাগানোর কোন দরকার নেই !!! জ্ঞান ফিরছেনা কেন এর কোন কারন কোন ডাক্তারই বলতে পারছেননা। উল্টা নিউরোমেডিসিনের প্রফেসর জানালেন আমরা ভাবছি এনজিউগ্রাম করবো কিনা !!! আমি বললাম ওনার হার্টেত কোন সমস্যা নেই, তিনি বললেন - হার্ট টা একটু দুর্বল ।

মনে মনে ভাবলাম তোমার ট্রিটমেন্ট করা এই খানে শেষ, উল্টা মেজাজ খারাপ হচ্ছিল পাশে ঐ পরিচালক ডাক্তারটাকে দেখে । ওর এনজিউগ্রাম করার খায়েশটা বুঝলাম করিডরে তাদের নতুন চালু হওয়া হার্ট এর চিকিৎসার পোস্টার দেখে। অবস্হার বিশেষ কোন পরিবর্তন না হওয়াই এক চাচার পরামর্শে আরেকজন নিউরো মেডিসিনের প্রফেসরকে কল করা হল, তিনি অবসর প্রাপ্ত বাট বিশেষ নাম করা । দেখে কিছু ঔষধ দিলেন আর এম আর আই করাতে বললেন । সাথে প্রোটিন টেস্ট করতে বলে একটা ইনজেকশন দিতে বললেন তিন দিন।

হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানাল ঐ ইনজেকশন একটা সাত হাজার টাকা করে, আপনারা বাইরে থেকে এনে দিতে হবে । কোন ধরনের টেস্ট ছাড়াই এত দামি প্রোটিন ইনজেকশন সাজেস্ট করে ওনি চলে গেলেন। আব্বুকে এ্যাম্বুলেন্সে করে নেয়া সম্ভবনা বলে এম আর আই করাতে নেয়া হলনা। তারপর দিন আবার ভিজিটে আসলেন মেডিসিনের ঐ প্রফেসর। তিনি এই প্রেসক্রিপশন দেখে বললেন- এত দামি প্রোটিন ইনজেকশনের কোন দরকারই নাই।

আপনার সকাল বিকেল দুধের সাথে ডিমের সাদা অংশ আর ডালের পানি খাওয়ান !!!! কিন্তু আসল সমস্যার কোন ট্রিটমেন্ট ই কেউ করতে পারছেননা । আব্বুর সেন্স তখনও ফিরে আসেনি, নয়দিন হতে চলল। মেডিসিনের ঐ প্রফেসর জানালেন তিনি আমেরিকা যাচ্ছেন, আর সাজেস্ট করলেন প্রথম যে নিউরো মেডিসিনের প্রফেসর দেখেছিলেন তাকে। শুনলেও মনে মনে আমি ওকে দেখানোর পক্ষপাতি ছিলামনা। তাই কল করলাম আরেকজন চট্রগ্রামের নামকরা মেডিসিনের ডাক্তারকে।

সব কিছু দেখে শুনে তিনি বললেন ওনাকেত দেখি স্ট্রোকের ট্রিটমেন্ট বাদ দিয়ে বাকি সব ট্রিটমেন্টই করা হইছে। সিটিতেইত ক্লীয়ার আছে সব। অন্য পরীক্ষার দরকার ছিলনা আর এম আর আই করানোরও দরকার নাই। তিনি কিছু ঔষধ দিলেন । দুইদিন পর আব্বুর জ্ঞান একটু একটু করে ফিরে আসল ।

ফিজিওথেরাপি দিতে বললেন তিনি। আল্লাহর রহমতে আব্বু উঠে বসতে পারছেন আর ধরে ধরে হাঁটাতে পারছেন -এই অবস্হায় ওনি রিলিজ করে দিলেন। কিন্তু কেন জানি উনি রিলিজের সময় যে প্রেসক্রিপশন সাজেস্ট করলেন তাতে আগেই চলতে থাকা বেশ কিছু ঔষধ ও রেখে দিলেন !!! এটা কি উনি করলেন না যে ডিউটি ডক্টর এটা তৈরি করেছিল তিনি ভুল করলেন জানিনা। যাই হউক আব্বুকে বাসায় আনার পরও মোটামুটি ডেইলি ১৪টা ঔষধ খেতে হত প্রতিদিন । অবস্হার আরেকটু ভাল হলে উনাকে ঢাকায় এনে ডাক্তার দেখালাম , তিনি ১৪টা ঔষধ কেটে দিয়ে সেখান থেকে তিনটা ঔষধ রাখলেন !!!!!! আব্বু আল্লাহর রহমতে এখন অনেকটাই সুস্হ............. অসুস্হতা এমনই এক জিনিস এই ব্যাপারে ডাক্তারের উপর ডিপেন্ড করা ছাড়া আসলে আমাদের আর কোন উপায় থাকেনা।

কি হয়েছে না হয়েছে তা তারা ছাড়া আর কারো পক্ষে বোঝা সম্ভবনা । কিন্তু এই সিচুয়েশন পার করার পর আমার মনে হইছে আমাদের অধিকাংশ ডাক্তারই এই রোগ সনাক্তকরনে খুব বেশী যত্নবান না। তারা যখন রোগী দেখতে আসেন এবং রোগী দেখেন তখন মনে হয় তারা ট্রেন ধরার তাড়ায় থাকেন। কোনমতে একটু দেখে সময় দিয়ে সাজেশন দেয়ার কোন ইচ্ছায় তাদের মাঝে কাজ করেনা। অথচ একজন ডাক্তারের আস্হাপূর্ন ব্যবহার আর সাজেশন মনে হয় একজন রোগীর উপর ঔষধের চেয়ে বেশী প্রভাব রাখতে পারে বলে আমার মনে হয়।

আর এই সময়গুলো স্বজনদের কাছে এত বেশী অসহায় বোধ হয় যে ডাক্তাররা যা বলেন তার বাইরে চিন্তা করার কোন সুযোগ থাকেনা। কিছু ডাক্তার আবার এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে দুপয়সা বেশী ইনকামের পথ খোজেন । ডাক্তারদের মাঝে শুভবোধের বিকাশ ঘটুক এর বাইরে আসলে আর কিইবা কামনা করতে পারি, বিপদে আপদেত ঐ ডাক্তারের কাছেই যেতে হবে আমাদের। এখন তারা যদি নিজেদেরকে একটু বদলে নেন এই আর কি........... পৃথিবী আসলে বড়ই নির্মম । আর আমরা মানুষরা যে কত অসহায় সেটা প্রিয়জন কোন সমস্যায় পরলে তখনই কেবল গভীর ভাবে বোঝা যায়।

পরম করুনাময় আল্লাহর রহমত ছাড়া আসলে আমাদের মুক্তির আর কোন উপায় নেই । । গত কিছুদিন ধরে আসলে খুবই টাফ টাইম কাটাচ্ছি। চারদিকে শুধু বিষাদ আর বিষাদ। বউ এর খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড আবিদ মারা গেল হঠাৎ করে, সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত বুধবার কিডনীজনিত রোগে মারা গেল আমারই আরেক ফ্রেন্ড রুমি ।

কি অবলীলায় আমরা সবাই একে একে মৃত্যুরই দিকে এগিয়ে চলেছি, নির্মোহ ভাবে................... "দোস্ত আমি স্বপ্নে দেখলাম তোর ফুটফুটে সুন্দর একটা মেয়ে হইছে, সে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসছে" - দেড় দুই মাস আগে একদিন রুমি ফেসবুকে আমাকে এই মেসজ দিল , তার কিছুদিন পর রুমি বিয়ে করল , আর তার কিছুদিন পর............................রুমি আর নেই আমাদের মাঝে...................। বড্ড, বড্ড অসহায় আমরা..............  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।