আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষে ৩০ হাজার শিশুর মৃত্যু। পাশে দাঁড়ায়নি কোন মুসলিম দেশ! দুর্ভিক্ষ দূর করতে জন্য ১২০০ কোটি টাকা দিতে পারে বাংলাদেশই।

সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষে ৯০ দিনে ২৯ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য প্রচারিত হয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ খরার কারণে সোমালিয়া জুড়ে লাখ লাখ মানুষ ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করবে বলে জানিয়েছে খাদ্য ও কৃষি সংগঠন (এফএও)। দুর্ভিক্ষকবলিত সোমালীয়রা শুধু খাবারের অভাবে আছে তাই নয়, প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারও পাচ্ছে না। এটাকেই মূল সমস্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমালিয়ার আরও তিনটি নতুন এলাকা এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। আগামী দিনগুলোতে সোমালিয়ার আরও অঞ্চল দুর্ভিক্ষকবলিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৬০ বছরের মধ্যে সোমালিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ এ দুর্ভিক্ষে ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের এখন জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। দক্ষিণ সোমালিয়ার অধিকাংশ এলাকাই আল শাবাব সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

গত বছর তারা খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি নিষিদ্ধ করে এবং বেশ ক'টি সাহায্য সংস্থাকে ওই এলাকা থেকে বের করে দেয়। এতে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়। পূর্ব আফ্রিকা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টিহীনতার দরুণ খরা কবলিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এর শিকার হয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষ। নিদারুণ খাদ্যাভাবের কারণে সোমালিয়ার লাখো মানুষ পার্শ্ববর্তী কেনিয়া ও ইথিওপিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

জাতিসংঘ সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার ডাক দিলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। খরা-উপদ্রুত সোমালিয়া থেকে হাজার হাজার লোক ইথিওপিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছে৻ দক্ষিণ পূর্ব ইথিওপিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা ডোলো আডো-র শিবিরগুলোতে এক লাখ ১০ হাজারেরও বেশি লোক এসে পৌঁছেছে৻ যারা শিবির পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে তারা আসলে ভাগ্যবান কারণ , খরার শিকার অনেক লোকই এত দরিদ্র এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে যে তাদের বাড়ি ছাড়ার শক্তিও নেই এবং তাদের বাঁচার আশা ক্ষীণ৻ ডোলো আডোর শরণার্থী শিবিরগুলোতে এখনই ভিড় উপচে পড়ছে, অসহায় মানুষদের গাদাগাদি ভিড় সেখানে – তার পরেও প্রতিদিন সেখানে নতুন আরও প্রায় শ শ মানুষ এসে যোগ দিচ্ছেন৻ ক্ষুধায় তারা কাতর, অনাহারে দুর্বল এবং অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের নিয়ে টানা কয়েকদিন ধরে হেঁটে সোমালিয়া পেরিয়ে সেখানে এসে পৌঁছেছেন৻ সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ কবলিত হিসেবে ঘোষিত দুটি এলাকায় ১৬০ কোটি ডলারের জরুরি সাহায্যের জন্য সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন দাতাদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বান বলেন, সেখানে ৩৭ লাখ লোক এখন সঙ্কটে রয়েছে, যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। ধারণা করা হচ্ছে খরার প্রভাবে সঙ্কটগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে। জাতিসংঘ ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করার পর ওই এলাকাকে প্রথম দুর্ভিক্ষ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ব সংস্থা জানায়, ওই এলাকা ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক খরায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে। সঙ্কটের ফলে আরও অবনতি ঠেকাতে এবং বর্তমান চাহিদা মেটাতে দাতাদের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন উল্লেখ করে বান বলেন, জীবন রক্ষার প্রয়োজনে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জরুরি সাহায্য প্রয়োজন। একের পর এক বর্ষার মৌসুম বৃষ্টিহীন। গবাদি পশু মরে গেছে। ক্ষেতে আর কিছুই জন্মাচ্ছে না।

বিশেষ করে সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চল এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বহু দশক ধরে এখানকার মানুষ যুদ্ধ আর সংঘর্ষের মুখে ক্লিষ্ট হয়েছে। এখানে ইসলামী নামধারী গ্রুপ আল-শাবাব তাদের নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করে রেখেছে। তাদের সন্ত্রাসের শিকার সাধারণ মানুষ। অল্প কিছুকাল আগেও তারা এই অঞ্চলে কোনো ত্রাণসামগ্রী ঢুকতে দেয়নি।

পূর্ব আফ্রিকা ৫০ বছরেরও বেশি সময় বৃষ্টিহীনতায় খরাকবলিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এর শিকার হয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষ। খাদ্যাভাবের কারণে সোমালিয়ার লাখো মানুষ পার্শ্ববর্তী কেনিয়া ও ইথিওপিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার ডাক দিলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সেখানকার ১৫ লাখ মানুষকে খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।

কিন্তু প্রায় ১০ লাখ মানুষের কাছে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমালিয়া সম্পূর্ণ মুসলমান অধ্যুষিত একটি দেশ। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা ৩০০ কোটিরও বেশী এবং মুসলমান দেশের সংখ্যা ৫০ এরও অধিক। মুসলমানগণের মধ্যে এমন হাজার হাজার লোক রয়েছে যাদের একজনের যাকাতও হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে। অপরদিকে সোমালিয়ার সাহায্যের জন্য দরকার ১৬০ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ১২শ কোটি টাকা।

প্রকৃতপক্ষে এ টাকা এক বাংলাদেশ সরকারই স্বাচ্ছন্দে দিতে পারে। মূলত, ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অভাবের কারণেই এরূপটি হচ্ছে। অথচ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- “সমস্ত মুসলিম বিশ্ব মিলে একটি দেহ স্বরূপ। ” দেশের এক অংশে আঘাত পেলে যেমন তা সর্বাংশে সঞ্চালিত হয় তেমনি মুসলিম বিশ্বের একটি অংশ দুদর্শাগ্রস্থ হলে তাও সর্বত্র বিস্তার লাভ করবে। তাই মুসলমান হিসেবে এ ভ্রাতৃত্ববোধের জাগরণ দরকার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।