আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কপোতাক্ষ পাড়ের ৩ জেলার ৩ লাখ মানুষ বন্যা আতঙ্কে

রফিকুল ইসলাম ::::------ অপরিকল্পিতভাবে দফায় দফায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ নদ খনন করা হলেও কোন কাজেই আসেনি। যার ফলে প্রতি বছরের মত এ বছরেও কপোতাক্ষ পাড়ের ৩ জেলার ৩ লক্ষাধিক পরিবার বন্যা আতঙ্কে ভুগছেন। চলতি বছর বর্ষা মৌসুম আগাম শুরু হওয়ার কারণে বদ্ধ কপোতা নদ কানায় কানায় পানিতে ভরে আছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছে ভূক্তভোগীরা। বন্যা পূর্ববর্তী প্রস্তুতি হিসাবে যা কিছু করণীয় অভাব-অনটনের কারণে সে প্রস্তুতি অসহায় হতদরিদ্র মানুষের পে দূরূহ হয়ে পড়েছে।

২০০০ সালের অক্টোবর হতে প্রতি বছর কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে তলিয়ে যায় যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাট এবং ফসলের জমি। বন্যার কারণে প্রতি বছর কপোতা পাড়ের মানুষের ভাগ্যে নেমে আসে অভাব-অনটন আর সীমাহীন দুঃখ কষ্ট। পরিবার-পরিজন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও আসবাবপত্র নিয়ে বন্যার্ত এলাকার লোকজন উঁচু রাস্তার পার্শে এবং স্কুল-কলেজের মাঠ ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল-কলেজের মাঠে এবং রাস্তার পার্শ্বে টোং ঘরে আশ্রিত লোকজন খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করেন। স্যানিটেশন ও পানীয় জলের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে।

গো খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বন্যার্ত অসহায় হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য সংকটের কারণে বাগানের শাক-সব্জি, কচুর লতি, কচুর মুখি, কচুশাকসহ খুদের ভাতই হয় তাদের একমাত্র সম্বল। তাও যদি একবেলা জোটে তো আর একবেলা জোটে না। সরকারি সহযোগিতা বন্যার্তরা যা পায় তার অর্ধেক আগাম উৎকোচ হিসাবে দিতে হয় জনপ্রতিনিধি ও দালালদের। প্রতি বছর বন্যার কারণে এভাবেই কেটে যায় কপোতা পাড়ের কর্মহীন হাজার হাজার মানুষের দিনকাল। � ুধার্ত অসহায় মানুষের বক্তব্য এমনই যে প্রতি বছর কপোতারে পানিতে ডুবে তারা সর্বস্বান্ত হলেও বন্যা দেখিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় স্থানীয় চেয়ারম্যান,মেম্বর ও সরকারি কর্মকর্তাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

২০০০ সালের ভয়াবহ বন্যায় কপোতাক্ষ তীরবর্তী যশোর, সাতীরা ও খুলনা জেলার প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এর ফলে তিগ্রস্ত লোকজনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পাশাপিাশি কপোতা বাঁচাও আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির জোরালো আন্দোলনের কারণে ২০০৩ সালে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেনতেন ভাবে কপোতা খনন করে। নামকাওয়াস্তে সেই খনন কাজ চলার সময় ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদের মাটি কেটে পাশ্বেই ফেলার কারণে বর্ষা মৌসুমে সেই মাটি আবার ধুয়ে নদীতে পড়ে ভরাট হতে থাকে। এছাড়া জোয়ারের পলি জমে অবশিষ্ট নদটুকুর স্রোতের প্রবাহ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার সুযোগকে পূঁজি করে অবৈধ দখলদারেরা নদসহ জেগে চর দখল করে নেয়।

সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দখলবাজদেরও পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক ভাবে কপোতা ও চর দখল করার কারণে কমবেশি যে স্রোতটুকু ছিল তা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে প্রতি বছর কপোতাে দেখা দেয় বন্যা এবং জলাবদ্ধতা। এছাড়া গৃহহীন হয়ে পড়ে ৩ লাধিক পরিবার। � এদিকে ল্য রেখে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর খুলনা জেলার পাইকগাছা কপিলমুনি পয়েন্টের ঘোষনগর থেকে ১ কোটি ৫০ ল টাকা ব্যয় নির্ধারণ পূর্বক ৪টি স্কেভেটর মেশিনের সাহায্যে আবারো কপোতাক্ষ নদের খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

খননকাজ চলাকালে যতদূর জোয়ার ওঠে ততদূর পলিতে আবার ভরাট হবার কারণে খনন কাজে নেমে আসে স্থবিরতা। ফলে সে বারেও খননকাজ নিস্ফল হয়ে যায়। এরপর পুনরায় ২০০৯ সালে ১ কোটি ৪০ ল টাকা বাজটের মধ্যে ৮৫ ল টাকা ব্যয়ে খুলনার ঘোষনগর হতে যশোরের সাগরদাঁড়ী পর্যন্ত কপোতা খননের কাজ শুরু হয়। বাকি টাকা যশোরের কেশবপুর ও মণিরামপুর উপজেলার কপোতা তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। ৮৫ ল টাকার বিনিময়ে মাত্র ১৪ কিলোমিটার নদ খনন করেই পাউবি ক্ষ্যান্ত হয়ে যায়।

এ সময় পাউবি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ মোল্ল্যার সাথে আলাপকালে তিনি জানিয়েছিলেন বাকি কাজ ৫০মিটার চওড়া এবং ৩ মিটার গভীর করে খনন করার জন্য ৯৩ ল টাকা বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। সাথে সাথে আলাদা বাজেটে কপোতারে সংযোগ খাল খনন ও স্লুইচ গেট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। যদি বরাদ্দ আসে তাহলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে কপোতারে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব। কিন্তু নতুন করে ৯৩ ল টাকা আর বরাদ্দ হয়নি। � এদিকে দফায় দফায় কপোতা খননের বৃহৎ কর্মযজ্ঞ ২০০৮ সালের ১৮ অক্টোবর দুপুরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পূনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খলিলুর রহমান সিদ্দিকী সরেজমিনে আসেন।

এরপর ২০০৯ সালের ২৫ মে রাত ৯ টায় বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন প্রায় ৫০ ফুট উচু পাটকেলঘাটা ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে টর্চ লাইটের আলোয় কপোতাে খনন কাজ পরিদর্শন করেন। কিন্তু কপোতা পাড়ের ৩ জেলার মানুষ জলাবদ্ধতার হাত থেকে রেহাই পায়নি। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কপোতাক্ষ খননের কাজে প্রায় ৩৪ ল টাকা ব্যয় হলেও কোন কাজেই আসেনি। অপরিকল্পিতভাবে হরিলুটের আশায় যথেচ্ছা ভাবে কপোতাক্ষ খননের নামে প্রকল্প তৈরি করে সরকারের কোটি কোটি টাকা জলাঞ্জলি দিলেও দেখার কেউ নেই। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তীরবর্তী নির্বাচনী এলাকার নির্বাচিত এমপিদের প্রায় সকলেই তাদের বক্তব্যে কপোতা খননের ব্যপারে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

কিন্তু মহাজোট সরকারের দীর্ঘ আড়াই বছরেরও অতীব গুরত্বপূর্ণ কপোতা নদ খননের ব্যাপারে বাস্তবমুখী কোন পদপে পরিলতি হয়নি। তবে একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে কপোতাক্ষ খননের ব্যাপারে গত অর্থবছরে সরকার ২৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে ভূক্তভোগী মহলের দাবি-দফায় দফায় অপরিকল্পিত ও যেনতেন ভাবে কপোতা খনন করে সিংহভাগ অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পানি কমিটি, পানি বিশেষজ্ঞ সহ ভূক্তভোগী মহল থেকে বার বার ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে (ঝুড়ি কোদাল) বদ্ধ এ নদ খননের কথা বললেও সে দিকে কর্ণপাত করেননি সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কাজেই প্রতি বছর যা হবার তাই হচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।