আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউরোপীয় রেনেসাঁর পোস্টমর্টেম-২ (সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ- এঁর লেখা থেকে)

আমি এই আমাকে খুঁজে ফিরি সবার মাঝে………………….. তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাকেই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্য ভালো মনে করে। আল-হাদিস আধ্যাত্মিকতায়ও বস্তুবাদ! এই যে বস্তুবাদী চেতনা, এটা আপনি ইউরোপের ঐ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেই দেখতে পাবেন, যা এ যুগে ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর হাতে অস্তিত্ব লাভ করেছে; এমনকি যে আধ্যাত্মিক আন্দোলন সম্প্রতি ইউরোপে বিরাট চমক ও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সেটারও মূল প্রাণ হচ্ছে সেই একই বস্তুবাদী মানসিকতা। অন্যসব শিল্প ও বিজ্ঞানের মত এটাও হয়ে পড়েছে নিছক একটি আর্ট ও সাইন্স, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মা- জগতের রহস্য ও বিস্ময় উদ্ঘাটন এবং আত্মিক বিনোদনরূপে ‘মৃত-আত্মা’র সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও কথপোকথন, যা প্ল্যানচেট নামে ইউরোপে এখন খুবই জনপ্রিয় একটি আদিভৌতিক বিজ্ঞান, যাতে রয়েছে হিমালয়ের উচ্চতা জয় করার মত অভিযান-রোমাঞ্চ। হৃদয় ও আত্মার সংশোধন, আল্লাহর ভয় ধারণ, সততা ও পুণ্যের পথ অবলম্বন, মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ এবং আল্লাহর প্রতি আত্মনিবেদনের মাধ্যমে জীবনের বেদনা ও যন্ত্রণা এবং বিপদ-প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্য ও স্থৈর্য্যের শিক্ষা গ্রহণ করার সঙ্গে এর দূরতম সম্পর্কও নেই। পক্ষান্তরে ইসলামী প্রাচ্যের তাসাওউফ ও আধ্যাত্মবাদের মূল প্রেরণাই হচ্ছে আত্মসংযম ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন।

একই ভাবে পাশ্চাত্যের মানুষ যেসকল কাজে প্রাণ ও সম্পদ বিসর্জন দেয়, দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে সেগুলোর পিছনেও বস্তুবাদী চিন্তা-চেতনা ও জাগতিক লক্ষ্য- উদ্দেশ্য ক্রিয়াশীল থাকে। যেমন স্তুতি ও সুখ্যাতি অর্জন করা, জাতির গর্ব ও গৌরবের পাত্র হওয়া এবং ইতিহাসের পাতায় অমরত্ব লাভ করা, এমনকি লোকলজ্জা ও নিন্দাভয়ও এর কারণ হতে পারে। পক্ষান্তরে ইসলামী প্রাচ্যে যে কোন ত্যাগ ও আত্মত্যাগের উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের মুক্তি। তাই একজন মুসলিম সবসময় এ আশঙ্কায় থাকে যে, তার আমল যেন কোন জাগতিক চাহিদার দোষে দূষিত এবং রিয়া ও যশলিপ্সার কলঙ্কে কলঙ্কিত না হয়ে পড়ে। তাহলে তো ধ্বংস ও বরবাদিই হবে একমাত্র পরিণতি।

তার চিন্তায় সর্বদা জাগরূক থাকে আল্লাহ তা‘আলার এ সতর্কবাণী- ‘আমি কি তোমাদের অবহিত করবো ঐ লোকদের সম্পর্কে যারা আমলের দিক থেকে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্থ! (ওরা তারাই) দুনিয়ার জীবনে যাদের কর্মপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে, অথচ তারা ভাবে যে, তারা উত্তম আমল করছে। ওরাই তারা যারা অস্বীকার করেছে তাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ এবং (অস্বীকার করেছে) তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি। ফলে বরবাদ হয়ে গেছে তাদের আমল। তাই কেয়ামতের দিন তাদের (আমলকে) আমি কোনই মূল্যদান করবো না। ’ আরো তাদের সামনে থাকে এই আয়াত- ‘এবং দুনিয়াতে এরা যে কোন আমল করেছে, আমি সেগুলোর দিকে অগ্রসর হবো, অনন্তর বানিয়ে দেবো সেগুলোকে উড়ন্ত ধূলিকণা।

’ নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া- সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, কেউ লড়াই করে বীরত্বের কারণে, কেউ লড়াই করে জোশ ও জাযবার কারণে, আর কেউ লড়াই করে খ্যাতি ও সুখ্যাতির জন্য। এগুলোর কোনটি আল্লাহর রাস্তায় বলে গণ্য হবে? তিনি বললেন, যে লড়াই করবে শুধু এ জন্য যে, আল্লাহর কালিমা বুলন্দ হোক, সেটাই শুধু আল্লাহর রাস্তায় বলে গণ্য হবে। হযরত ওমর (রা.) এভাবে দু‘আ করতেন- ‘হে আল্লাহ, আমার সব আমলকে তুমি নেক আমল বানিয়ে দাও এবং আমার সব আমলকে তুমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য খালিছ করে নাও। তাতে তোমার গায়রের কোন হিছ্ছাই রেখো না। ’ এছাড়া যুগে যুগে উম্মাহর নেককার লোকদের যে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা ছিলো নিজেদের আমল-ইবাদাত, দান-ছাদাকা ও সদাচার গোপন রাখার, সেসব কাহিনীতে তো ইতিহাসের পাতা ভরপুর! অর্থনীতির সর্বগ্রাসিতা জড়বাদী চিন্তা ও বস্তুবাদী চেতনা ইউরোপে এমনই এক সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছিলো যে, এরই যুপকাষ্ঠে তারা নিজেদের হৃদয় ও আত্মা এবং প্রাণ ও প্রাণসত্তাকে বলি দিয়েছিলো।

ফলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বস্তুগত মূল্যবোধ ছাড়া আর সবকিছু তারা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছিলো। তাসাওউফের পরিভাষা ‘ফানা ফিল্লাহ’-এর অনুকরণে বলা যায়, ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী এক্ষেত্রে ‘ফানা ফিল মাদ্দাহ’-এর স্তরে উপনীত হয়েছিলো। এককথায় অর্থনীতিই ছিলো তাদের জীবনের সর্বেশ্বরবাদ বা ‘ওয়াহদাতুল অজূদ’। উদাহরণ হিসাবে আমরা সমাজতান্ত্রিক দর্শনের জনক কালমার্ক্স-এর কথা বলতে পারি। তিনি মনে করেন, অর্থব্যবস্থাই হলো সমাজব্যবস্থার মূল প্রাণ।

এছাড়া ধর্ম, দর্শন, সভ্যতা, শিল্প ও ললিতকলা ইত্যাদি, জীবনের অঙ্গনে আর যা কিছু আছে সব এই অর্থব্যবস্থারই প্রতিবিম্ব ও প্রতিক্রিয়া মাত্র। তিনি বলেন, মানব-ইতিহাসের প্রতিটি যুগে, প্রতিটি অধ্যায়ে পণ্য উৎপাদনের নিজস্ব পন্থা ও পদ্ধতি ছিলো এবং সে আলোকেই সামাজিক সম্পর্ক- সমূহ নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে সম্পর্কগুলো উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকে না, (বৈষম্যপূর্ণ হয়ে যায়)। তখন একদল (স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ দল) সামাজিক সম্পর্কগুলোকে নতুন বিন্যাস- দানের প্রচেষ্টা চালায়, ইতিহাসে যা বিভিন্ন বিপ্লব ও বিদ্রোহ নামে পরিচিত, কিন্তু ঐতিহাসিকরা এসকল বিপ্লব ও বিদ্রোহের রূপ ও স্বরূপ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।

কেননা যারা এসকল বিপ্লব-বিদ্রোহ সঙ্ঘটন করেছেন, বা তাতে অংশ নিয়েছেন, হয়ত তারাও সেগুলোর উদ্দেশ্যটি অনুধাবন করতে পারেননি। তবে পরবর্তীকালে আমাদের পক্ষে এই ধাঁধার সমাধান বের করা সম্ভব। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারি যে, সমগ্র রাজনৈতিক বিবর্তন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার অব্যাহত পরিবর্তন ও সংশোধন, এগুলো মূলত সামাজিক সম্পর্ক-সমূহের পুনর্বিন্যাসেরই নব নব রূপ, যার অভ্যুদয় ঘটেছে শুধু এজন্য যে, নতুন উৎপাদন ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে এই সম্পর্কগুলোকে যেন নতুনরূপে সুসঙ্গত ও সুবিন্যস- করা যায়। আর যেহেতু পণ্য উৎপাদনের ব্যবসাসমূহ এবং তার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সম্পর্কসমূহ- এ দু'য়ের মধ্যে পার্থক্য ও ভিন্নতা অব্যাহত রয়েছে সেহেতু এ দু'য়ের মধ্যে সঙ্গতি- বিধানের প্রয়াস-প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। তবে পার্থক্য যখনই সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং বিভেদ তীব্র হয়ে ওঠে তখন প্রতিক্রিয়াটিও বিপ্লব-বিদ্রোহের রূপ ধারণ করে।

কিন্তু বিভেদ ও পার্থক্য স্পষ্ট না হলেই তার অস্তিত্ব অস্বীকার করা সঙ্গত হবে না। পণ্য-উৎপাদনের বিভিন্ন ব্যবসা এবং বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে এই যে পার্থক্য ও বিভেদ, তা শ্রেণীসঙ্ঘাতের মধ্যে প্রকাশ পায়। কেননা সমাজের সকল শ্রেণী মূলত অর্থনৈতিক ব্যবসারই বিভিন্ন অঙ্গ। ’ এই চিন্তাধারা থেকে কার্লমার্ক্স এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, মানব- জাতির শৈশবযুগটুকু বাদ দিলে তার সুদীর্ঘ ইতিহাস সমাজে শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। মোটকথা এভাবে ভদ্রলোক অর্থনৈতিক জীবন ছাড়া মানুষের জীবনের অন্যান্য দিকের অস্তিত্বই অস্বীকার করে বসেছেন।

ধর্ম ও চরিত্র, হৃদয় ও আত্মা, এমনকি বিবেক-বুদ্ধিকেও তিনি গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। কখনো তিনি স্বীকার করেননি যে, অর্থনীতির বাইরে এগুলোর কোন একটি কখনো ইতিহাসের কোন অনুঘটকরূপে ভূমিকা পালন করেছিলো। তার মতে ইতিহাসে যত যুদ্ধ ও বিপ্লব ঘটেছে সেগুলো আর কিছু ছিলো না, ছিলো শুধু বৃহৎ ও পূর্ণ উদর থেকে ক্ষুদ্র ও শূন্য উদরের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রচেষ্টা এবং অর্থনৈতিক ব্যবসা ও পণ্য-উৎপাদনের ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে নতুন বিন্যাস প্রতিষ্ঠার নিরন্তর সংগ্রাম। এমনকি ধর্মীয় যুদ্ধগুলোও তার মতে বিভিন্ন অর্থনৈতিক শ্রেণীর পরস্পর সঙ্ঘাত ছাড়া আর কিছু ছিলো না, যেখানে একটি শ্রেণী সম্পদের উৎস ও উৎপাদনব্যবসা কুক্ষিগত করে রেখেছিলো, আর অন্য শ্রেণী হয়ে উঠেছিলো তার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং কোমর বেঁধে নেমেছিলো ‘সম্পদ ও সম্পর্ক’ পুনর্বিন্যস- করার মাধ্যমে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায়। ফলে সঙ্ঘাত ও সঙ্ঘর্ষ হয়ে উঠেছে অনিবার্য, কিন্তু তার স্বরূপ চাপা পড়ে গিয়েছে ধর্মযুদ্ধের আড়ালে।

তাহলে বলতে হয়, কালমার্ক্স-এর দৃষ্টিতে বদর, অহুদ ও কাদিসিয়া, ইয়ার্মুক এবং এজাতীয় আরো যত যুদ্ধের বিবরণ ইতিহাস সংরক্ষণ করেছে সেগুলো অর্থনৈতিক শ্রেণী -সংগ্রাম ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। (কিন্তু তাতে তার মস্তিষ্কের সুস'তা সম্পর্কে সন্দেহ উপস্থিত হতেই পারে। ) তো এই হচ্ছে আপনার পশ্চিমা বস্তুবাদী আধ্যাত্মিকতা এবং ‘অর্থনৈতিক সর্বেশ্বরবাদের’ দর্শন। তাসাওউফের পরিভাষায় বিষয়টিকে আমরা এভাবেও উপস্থাপন করতে পারি যে, প্রাচ্যের উপর যেহেতু আধ্যাত্মিক চেতনা ও ঈশ্বরচিন্তার একক প্রভাব ছিলো সেহেতু এক্ষেত্রে যারা ‘বিভোর ও বিলুপ্ত’ স্তরে চলে গিয়েছিলেন তারা আল্লাহ ছাড়া সকল ‘অস্তিত্ব’ অস্বীকার করে বসেছিলেন। বিলুপ্ত চেতনা ও আচ্ছন্নতার অবস্থায় তাদের শ্লোগান ছিলো ‘লা-মাওজূদা ইল্লাল্লাহ’; পক্ষান্তরে ইউরোপের চিন্তানায়কদের উপর যেহেতু বস্তুবাদের অপ্রতিহত প্রভাব ছিলো সেহেতু তারা অর্থনৈতিক বাস্তবতা ছাড়া জীবনের অন্য সবকিছুর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিলো।

তাদের যেন শ্লোগান ছিলো ‘লা-মাওজূদা ইল্লাল মাদ্দাহ’। প্রাচ্যের সুফীবাদীরা মানুষকে ভাবতেন পৃথিবীতে আল্লাহর ছায়া। তাই আচ্ছন্ন চেতনার সময় কেউ কেউ চিৎকার করে বলে উঠেছেন ‘আনাল হক’। পক্ষান্তরে পাশ্চাত্যের বস'পূজারীরা মানুষকে নিছক বুদ্ধিমান সামাজিক পশু ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনি। তাই সেখানে আজ দিকে দিকে একই শ্লোগান, আনাল হক-এর পরিবর্তে ‘আনাল হায়ওয়ান’! ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও তার প্রভাব এভাবে খৃস্টীয় উনিশ শতকে ইউরোপে একে একে এমন সব বাদ-মতবাদ ও জ্ঞান-গবেষণা আত্মপ্রকাশ করতে লাগলো যা দ্বারা মানুষ ও তার জীবন সম্পর্কে উপস্থাপিত ‘জৈব দৃষ্টিকোণ’টি আরো জোরালো ও সংহত হলো।

মড়ার উপর খাড়ার ঘা-রূপে তখন এলো ডারউইনের বিবর্তনবাদ। ১৮৬৯ খৃস্টাব্দে প্রকাশিত Origin of Species গ্রন্থে ডারউইন প্রমাণ করতে চাইলেন যে, প্রকৃতপক্ষে মানুষ হচ্ছে তার চেয়ে নিম্নস্তরের প্রাণী থেকে উন্নতিপ্রাপ্ত একটি প্রাণীমাত্র। বহু লক্ষবছরে সে তার বিবর্তনধারা অতিক্রম করেছে এবং এক প্রাণীর স্তর থেকে অন্য প্রাণীর স্তরে উপনীত হয়েছে। যেমন Amoeba থেকে বানর এবং বানর থেকে ক্রমান্বয়ে মানবরূপ লাভ করেছে। আর এই মানবরূপই হচ্ছে তার শ্রেণীগত উৎকর্ষের সর্বোচ্চ স্তর।

ডারউইনের বিবর্তনবাদই তখন সমাজ ও শিক্ষাঙ্গন সবত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়লো। সমগ্র ইউরোপে এমন আলোড়ন সৃষ্টি হলো, যার তুলনা বাদমতবাদের ইতিহাসে সত্যি বিরল। বস্তুত বিবর্তনবাদ ছিলো মানুষ ও তার জীবন সম্পর্কে চিন্তা করার সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারা, যার মাধ্যমে প্রাণীজগতের অভ্যাস ও বৈশিষ্ট্য এবং বিকাশ ও বিবর্তন সম্পর্কে জানার এবং জ্ঞান-পরিধি বৃদ্ধি করার অদম্য কৌতূহল ও স্পৃহা সৃষ্টি হয়েছিলো। বলা যায়, মানুষ যেন মানুষকে বাদ দিয়ে বানর নিয়েই বেশী করে গবেষণায় মেতে উঠেছিলো। বিবর্তনবাদ ইউরোপের চিন্তা-চেতনায় এ বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দিয়েছিলো যে, বিশ্বজগত কোন ঐশী ব্যবস্থা এবং অতিপ্রাকৃতিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব শক্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে।

শাশ্বত প্রাকৃতিক সূত্রসমূহ ছাড়া বিশ্বজগতের উদ্ভব ও বিকাশ এবং গতি ও পরিণতি অর্জনের পিছনে অন্য কোন সূত্র নেই, বরং প্রতিটি সৃষ্টি ‘ঊর্ধ্বজাগতিক বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ‘ক্রমস্বভাব প্রক্রিয়ায়’ প্রাণের প্রাথমিক স্তর থেকে পরবর্তী স্তরে উন্নীত হয়ে এসেছে। সুতরাং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী মহাপ্রাজ্ঞ কোন স্রষ্টার সৃষ্টি নয়, বরং প্রকৃতির স্বভাব প্রক্রিয়ার ফল, যার মূল কথা হচ্ছে, অস্তিত্বের সংগ্রাম, যোগ্যতরের বিজয় এবং প্রকৃতির নির্বাচন, যা সৃষ্টিজগতের সর্বত্র এবং বাক, বুদ্ধি ও বোধের অধিকারী অধিক উন্নত প্রাণী মানুষের ক্ষেত্রেও সমান কার্যকর। নৈতিক ও চিন্তা- নৈতিক ফলাফলের দিক থেকে এবং সূচনা ও পরিণতি সম্পর্কিত মৌলবিশ্বাসের দিক থেকে, সর্বোপরি বাস্তব প্রভাবের দিক থেকে বিবর্তনবাদ যে ধর্মের সঙ্গে আগাগোড়া সঙ্ঘর্ষপূর্ণ তা তো বলাই বাহুল্য; বরং এ ছিলো এক নতুন ধর্ম, যা অন্যসব ধর্মের মূলে কুঠারাঘাত করেছিলো। সুতরাং ধর্মনেতাগণ যদি ইউরোপের বুকে ধর্মের ভবিষ্যত সম্পর্কে শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং বিবর্তনবাদের বিরোধিতায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েন তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। প্রফেসর জোড লিখেছেন- ‘এখন আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও কষ্টকর যে, ডারউইন যখন Origin of Species গ্রন্থে তার মতবাদ প্রচার করলেন তখন আমাদের পূর্বপুরুষগণ কেমন স্তব্দ-বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন।

ডারউইন তার গবেষণার ফলাফল দ্বারা প্রমাণ করলেন- কিংবা ভাবলেন যে, তিনি প্রমাণ করেছেন- যে, পৃথিবীনামক গ্রহে প্রাণীর বিবর্তন প্রক্রিয়া Amoeba ও Jelly fish এর প্রাথমিক উদ্ভব থেকে চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলে এসেছে, আর আমরা হলাম প্রাণের বিবর্তনের সর্বোন্নত ও সর্বোচ্চ স্তর। এর বিপরীতে ভিক্টোরিয়া যুগের লোকদের বলা হয়েছিলো, মানুষ স্বয়ং স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি এবং প্রকৃতপক্ষে সে ফিরেশতার স্তর থেকে অবনমিত একটি শ্রেণী। অথচ ডারউইনের মতবাদ যদি ঠিক হয় তাহলে মানুষের পরিচয় ‘একটি উন্নত বানর’ ছাড়া আর কিছুই থাকে না। বলাবাহুল্য, ভিক্টোরিয়া যুগের মানুষের পক্ষে এটা মেনে নেয়া কঠিন ছিলো যে, মানুষ হবে অবনমিত ফিরেশতার পরিবর্তে উন্নতিপ্রাপ্ত বানর। এই মতবাদ তাদের কাছে ছিলো মৃত্যুর চেয়ে অসহনীয়।

তাই তারা মানুষকে বিবর্তনবাদের কলঙ্ক থেকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপায় ও পন্থা গ্রহণের চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু উপায় ছিলো না। বৈজ্ঞানিক গবেষণার দিক থেকে বড় ধরনের দুর্বলতা ও শূন্যতা থাকা সত্ত্বেও আমজনতা ও বিজ্ঞানীদের এক বিরাট অংশ বুঝে, না বুঝে ডারউইনের বিবর্তনবাদ মেনে নিয়েছিলো। অথচ বিজ্ঞানেরই মূল কথা হলো, চূড়ান্ত গবেষণা ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া কোন ধারণাকে সত্যের মর্যাদা দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বিবর্তনবাদের ক্ষেত্রে মানুষ বিজ্ঞানের মূল শিক্ষাই যেন ভুলে গেলো এবং ‘প্রমাণ ছাড়াই প্রমাণিত’ বলে মেনে নিলো।

আসল কথা, ধর্মের প্রতি সৃষ্ট বিদ্বেষের কারণে মানুষের চিন্তা ও মনমসি-ষ্ক এধরনের মতবাদ গ্রহণ করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলো। কারণ ধর্ম ও ধর্মনেতাদের বিরোধিতার জন্য এর মধ্যে তারা জোরালো ভিত্তি পেয়ে গিয়েছিলো। এভাবে এ সত্য আবারও প্রমাণিত হলো যে, মানুষ যতই বিজ্ঞানমনস্কতা ও মুক্তবুদ্ধির গর্ব করুক আসলেই সে আবেগ-অনুভূতির দাস। সুতরাং জীবন ও জগত সম্পর্কে তার কোন সিদ্ধান্তই আস্থাযোগ্য নয়, যতক্ষণ না অকাট্য কোন প্রমাণ (আসমানি অহি) তাকে সমর্থন করে। বিবর্তনবাদের পক্ষে মানুষের চিন্তার গতি এমনই বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত ছিলো এবং প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও প্রকাশনার এমন সর্বপ্লাবী ঢল নেমেছিলো যে, তার মুকাবেলা করা সম্ভবই ছিলো না।

ফলে এক অসম যুদ্ধে ধর্ম ও গীর্জাকে আত্মসমর্পণ করতেই হলো। এমনকি ১৮৮৩ খৃস্টাব্দে ডারউইনের মৃত্যুতে ব্রিটিশ গীর্জাকে শোক প্রকাশ করতে হলো এবং তাকে সেই সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হলো যা গীর্জা কোন মানুষকে দিতে পারে। অর্থাৎ ধর্মনেতাদের সমাধিস্থলে তার সমাধি-ব্যবস্থা অনুমোদন করতে হলো। চিন্তা-চেতনা, নীতি-নৈতিকতা, শিল্প-সাহিত্য, জীবন, সভ্যতা ও রাজনীতি সর্বত্র বিবর্তনবাদের প্রভাব ছিলো অত্যন- সুদূরপ্রসারী। ‘প্রকৃতির কোলে নগ্ন-স্বাধীন জীবনযাপনের স্বভাবযুগ’-এ ফিরে যাওয়ার যে একটা জোরদার প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো, মূলত সেটা ছিলো বিবর্তনবাদেরই একটি প্রকাশ।

ইউরোপের জীবন ও সভ্যতা এবং কর্ম ও চরিত্রের আরো বহু বিষয় আসলে এ চিন্তা ও বিশ্বাসেরই অনিবার্য ফল ছিলো যে, মানুষ একটি উন্নত প্রাণী। পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হওয়ারও কারণ ছিলো এটি; ব্রিটিশ চিন্তাবিদ মিস্টার শেপার্ড যেমন বলেছেন, ইংলেন্ডে এমন একটি প্রজন্ম আত্মপ্রকাশ করেছে যারা পারিবারিক জীবনের ধারণা সম্পর্কেই অজ্ঞ; পশুপালের অবাধ জীবন ছাড়া অন্য কোন জীবনের সঙ্গে যারা পরিচিতই নয়। বস্তুবাদের অমার্জনীয় অপরাধ ইউরোপের এই সর্বগ্রাসী বস্তুবাদ ও ধর্মহীন শিক্ষা, যাতে চরিত্র ও নৈতিকতা এবং আল্লাহভীতি ও পরকালচিন্তার চি‎হ্নমাত্র ছিলো না, এসবের ফল এই ছিলো যে, রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনার স্নায়ুকেন্দ্রগুলোতে যারা অবস্থান করতো, কখনো কখনো তারা এমন সব অপরাধে লিপ্ত হতো যা নিকৃষ্টতম অপরাধীদের পক্ষেও কল্পনা করা সম্ভব হতো না। নির্দ্বিধায় যে কোন নীচতায় তারা নামতে পারতো শুধু এজন্য যে, তাতে দেশের বা সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক স্বার্থ ছিলো, কিংবা ব্যক্তিগত লাভালাভের প্রশ্ন ছিলো। ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী জনগোষ্ঠীর কালো থাবা যেখানে যেখানে পড়েছে সেখানেই রয়েছে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার অসংখ্য উদাহরণ; তবে এখানে আমরা শুধু উল্লেখ করবো ভারতবর্ষ ও মুসলিম মধ্যপ্রাচ্যের কথা।

ভারতবর্ষে ব্রিটিশজাতির আগমন কীভাবে হয়েছিলো। শঠতা, ধূর্ততা ও নিষ্ঠুরতার কত শত কাহিনীর জন্ম হয়েছিলো, কত রক্তগঙ্গা প্রবাহিত হয়েছিলো, ইজ্জত-আবরু কী নৃশংসরূপে লুণ্ঠিত হয়েছিলো, সে কাহিনীও থাক। শুধু সেই সময়ের এক দু’টি ঘটনা বলি, যখন ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার আগে শেষ আক্রোশ মিটিয়েছিলো। মানবজাতির ইতিহাসে নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার অন্যতম চমকপ্রদ ঘটনা এই যে, ভারতবর্ষের ‘বেঙ্গল প্রভিন্স’-এ ব্রিটিশ সরকার একটি কৃত্রিম মহাদুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিলো এবং তা এভাবে যে, একদিকে কৃষকদের ধান কেটে আনার জন্য নৌকা ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর জন্য বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ করা হয়েছিলো, অথচ ধানচালই ছিলো প্রদেশটির প্রধান খাদ্য। ক্ষুধায় অনাহারে মানুষ যখন দলে দলে মরছে, গুদামে তখন বিপুল খাদ্যশস্য নষ্ট হচ্ছে! চিন্তাশীল সকলেই একমত যে, তখন ঐ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের প্রাকৃতিক কোন কারণ ছিলো না এবং অনাহারে মৃত্যুর কোন সম্ভাবনা ছিলো না, যদি ব্রিটিশ সরকার সামান্য কর্মতৎপরতার পরিচয় দিতো।

কারণ খাদ্যের মজুদ ছিলো প্রচুর, রেল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো সন্তোষজনক। তাছাড়া ভারতবর্ষ ছিলো এমনই উর্বর দেশ যে, অন্যান্য দেশেও খাদ্যসরবরাহ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো। এসব কেন করা হয়েছিলো? শুধু এই ধারণা ও কল্পনার উপর যে, ক্ষুধা-অনাহারে উৎপীড়িত মানুষ ব্রিটিশবাহিনীতে ভর্তি হতে উৎসাহিত হবে। তাছাড়া প্রমাণ করা যাবে যে, দেশ পরিচালনার যোগ্যতা ভারতের স্থানীয় প্রশাসনের নেই, এখনো ব্রিটিশ- শাসনের প্রয়োজন রয়েছে এবং স্বরাজচিন্তা আগাগোড়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ চিন্তা। ১৯৪৭ সনে বিভাগপরবর্তী ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড মাউন্ট বেটন।

তখন দিল্লী ও পূর্বপাঞ্জাবে পর্দার আড়ালে মুসলিমনিধনের যে, ভয়াবহ ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠছিলো লর্ড বেটন সে সম্পর্কে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। তার কাছে লাগাতার খবর আসছিলো এবং প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগের অভিজ্ঞ ও মানবতাবাদী লোকেরা তাকে সম্ভাব্য সম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে আসছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন ‘জাগ্রত নিদ্রায়’। কারণ মুসলিম সমপ্রদায়ের উপর তিনি এ জন্য ক্ষিপ্ত ছিলেন যে, ভারতের মত পাকিস্থান তাকে গভর্নর জেনারেল পদে গ্রহণ করতে রাজী হয়নি, (কারণ তার ভারতপ্রীতি ও নেহরুপত্নির প্রতি দুর্বলতা ছিলো সুবিদিত)। ব্যক্তিগত প্রতিশোধ স্পৃহা ছাড়াও লর্ড মাউন্ট বেটন দাঙ্গা ও গৃহযুদ্ধ থেকে প্রমাণ করতে চাচ্ছিলেন যে, ভারতবাসী এখনো স্বাধীনতার উপযুক্ত নয় এবং ভারতবর্ষে ব্রিটিশশাসনের প্রয়োজন ছিলো। ভারতের উভয় অংশ গণনিরাপত্তা ও শানি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এখনো ইংরেজজাতির উপর নির্ভরশীল।

বলাবাহুল্য যে, এই একটি লোকের ধর্মভয়শূন্য হৃদয়ের কারণে তখন এমন ভয়াবহ মানবনিধনযজ্ঞ সঙ্ঘটিত হতে পেরেছিলো, যার নমুনা মানবজাতির না অতীতে আছে, না আগামী বহু শতাব্দী তার নমুনা ‘প্রসব’ করতে সক্ষম। রেডক্লিফের নামও এখানে আসতে পারে, যাকে ভারতে হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষ পাঞ্জাবের কিছু শহর সম্পর্কে মধ্যস্থতাকারী মেনেছিলো যে, সেগুলো ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে, না পাকিস্থানের? কিন্তু তিনি বিশ্বাসভঙ্গ করে অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিলেন। ফল হয়েছিলো ফিরোযপুর ও গুরুদাসপুর থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর গণবিতাড়ন এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, (আর ইজ্জত-আবরু তো ইংরেজ সভ্যতার কোন বিষয়ই নয়)। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ট্রুম্যান-এর ভূমিকা ছিলো আগাগোড়া ন্যাক্কারজনক। ইহুদিবাদকে তিনি সমর্থন করেছেন সম্পূর্ণ অন্ধ সেজে যুক্তি ও বিবেকের টুঁটি চিপে ধরে।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকাই ছিলো প্রধান। আরবদের সম্পূর্ণ ন্যায়ানুগ দাবী তিনি উপেক্ষা করেছিলেন, কারণ আর কিছু নয়, ভোটের হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য তার প্রয়োজন ছিলো ইহুদীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মিডিয়া শক্তির সমর্থনের। আরব ইসলামী দেশ আলজিরিয়ার স্বাধীনতাযুদ্ধে ফ্রান্স যে মানবতা- বিরোধী অপরাধ করেছে, বিশ্বইতিহাসে অবশ্য তার নযির আছে, তবে খুব বেশী নেই। কিন্তু আমেরিকার সমর্থন ছিলো পাশবিক শক্তি ব্যবহারকারী দখলদার দেশ ফ্রান্সের প্রতি।

আলজিরিয়ার মাটিতে অসহায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর দিয়ে বর্বরতা ও পাশবিকতার যে ভয়াবহ ঝড় বয়ে গিয়েছিলো তাতে আমেরিকা ও ইউরোপ ছিলো সম্পূর্ণ নির্বিকার। এসব ঘটনা এবং আরো বহু ঘটনা জ্বলন-ভাবে প্রমাণ করে যে, ইউরোপ-আমেরিকার নেতৃবর্গের চরিত্র ও নৈতিকতা বলতে কিছু ছিলো না (এখনো নেই)! বস্তুত তাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি আবর্তিত হয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে, নীতি ও আদর্শকে কেন্দ্র করে নয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.