আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩৯০০০ “জি.পি.এ ৫”, ৩৯০০০ মেধাবী, মেধার সুপার নোভা, সরকারের পরিতৃপ্তির হাসি এবং ভয়াবহ অন্ধকারের দিকে যাত্রা!!

আমি শুনতে পাই লক্ষ কোটি ফিলিস্তিনীর আর্তনাদ...হাহাকার ২০০০ এবং ২০০২ সালের এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থি হিসেবে আমরা মনে হয় সবচেয়ে ভাগ্যবান। । স্টার /স্ট্যান্ড গ্রুপের শেষ গ্রুপের ছেলে মেয়ারা আমরা সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি। কেননা আমাদের পরের ব্যাচ থেকেই আমাদের দেশের কিছু “অতিজ্ঞ্যনি” মানুষ “জি.পি.এ” নামে আন্তর্জাতিক পদ্ধতির আদলে সম্পূর্ন দেশিয় জিঞ্জিরা মার্কা এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। প্রথম দুই বছর সব ঠিকঠাক থাকলেও এর পরের বছর থেকেই জি.পি.এ ৫ পাওয়াদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, এক সময় এর বিস্ফোরন ঘটে, আজকে সংবাদপত্র থেকে মনে হল মেধার সুপারনোভা ঘটেছে।

ব্লগার মেহেদী_হাসান জি.পি.এ পদ্ধতির উপর খুব সুন্দর একটা লেখা পোস্ট করেছেন। লেখাতে তিনি বিস্তারিত ভাবে তিনি এর ভয়াবহ দিক ব্যাখা করেছেন. তবে আমি সেসব বিস্তারিত ব্যখ্যায় যাবনা। আমি শুধু আমার কয়েকটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করব। স্টার/স্ট্যান্ড গ্রুপে ১ম ২০ জনকে মেধা তালিকায় রাখা হতো। তাদের মধ্যে হাতে গোনা তাদের সবাই কখনো সব বিষয়ে লেটার(৮০+) পেত না।

মানবিক ও বানিজ্য বিভাগে সেট ছিল অনেকটা অলৌকিক ব্যাপার ব্যাপার। কিন্তু দশ বছর পরে কি এমন মেধার বিকাশ হলো যে হাজারে হাজারে এ+ পাচ্ছে, মনে হয় সাইন্স ফিকশন সিনেমার মত কেউ মনে হয় সবার মাথায় অন্য গ্রহের বুদ্ধিমান প্রানীদের মস্তিষ্ক বসিয়ে দেয়া হয়েছে!! এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে বাংলা বিষয়ের জন্য আমাদের প্রচুর প্রচুর পড়াশোনা করতে হতো। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলায় ৭০%+ মার্ক তোলা। । আর সেটা করতেই নাকের পানি, মুখের পানি সব একাকার হয়ে যেত।

যারা মেধা তালিকায় স্থান পেত তাদের মধ্যে ১ থেকে ৫ এর মধ্যে যারা থাকত, শুধু তারাই বাংলায় ৮০+ পেত। আর মানবিক আর ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে আমরা শুধু ‘হিসাব বিজ্ঞান’ ও “কম্পিউটার শিক্ষা” এই দুটি বিষয়ে নিশ্চিত ৮০+ আশা করতাম অন্যকোন বিষয়ে ৮০+ এলে সেটা বোনাস হিসেবে বিবেচনা করা হতো. যারা মেধাতালিকায় ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে স্থান পেত, তারাও ৪/৫ টি বিষয়ের বেশী ৮০+ পেতনা। মানবিক বিভাগে তো ছিল আরও কম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে ৮০+ না পাওয়াটাই অপরাধ। এমনকি জি.পি.এ ৫ না পেয়ে হাত্মহত্যার চেষ্টাও নাকি হয়েছে।

মনে হয় সবাই “আলাদিনের চেরাগ” হাতে পেয়ে গেছে এবং মুড়িমুড়কির মত নম্বর পাচ্ছে। ২০০২ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষার আগে অর্থনীতির গোপিনাথ স্যার বলেছিলেন “অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল” বিষয়ে ২৫ বছরে মাত্র তিনজন ৮০+ পেয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এইসব বিষয়েও হাজারে হাজারে এ+/৮০+ আসছে যেটা আমরা কখনও সপ্নেও ভাবিনি। আমার পরের ব্যাচ দুটিতে এই সমস্যাটা ছিলনা । কিন্তু তার পরেই মেধার বিস্ফোরন ঘটে, যে জন্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমার পরের দুটি ব্যাচ।

কারন তাদেরকে বর্তমান সময়ের সাথে তুওলনা করে অতি অবমূল্যায়ন করা হয়। ইউনিভার্সিটিতে এই নিয়ে তাদেরকে আন্দোলন করতেও দেখেছি। আমরা এই সমস্যায় পড়িনি। আমার মতে বর্তমান পদ্ধতির সবথেকে ভয়াবহ দিক হচ্ছে শিক্ষকদেরকে নম্বর প্রদানে উদার হতে বলা। তাঁরা উদার হতে হতে “হাজী মোহাম্মদ মহসীন” হয়ে গেছেন, না হলে এই মেধার সুপারনোভা ছিল অসম্ভব।

এই ৩৯০০০ হাজারের মধ্যেই অবশ্যই মেধাবীরা আছে, কিন্তু তারা সেই ৩৯০০০ এর মধ্যেই হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে কেউ দুর্ভাগ্য বসত কেউ জি..পি.এ ৫ না পেলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হবার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। যা আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য খুবই ভয়াবহ। পরিশেষে আমি জি.পি.এ ৫ প্রাপ্ত ও উত্তির্ন সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। কিন্তু তোমাদেরকে তোমাদের পরবর্তী ব্যাচের সবাইকে বলছি, তোমরা প্রস্তুত হও।

প্রস্তুত হও একটা ভয়ঙ্কর কালো দৈত্যের এর সাথে লড়াই করার জন্য যে তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য হতাশা নিয়ে আসবে, যার জন্য সম্পূর্ন দায়ি আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। কেউ কি সেখানে আছেন সেই দৈত্যটিকে থামানোর জন্য??? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।