আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোয়াবনামার অংশবিশেষ (আখতারুজ্জামান ইলিয়াস)

কবে যাবো পাহাড়ে... কবে শাল মহুয়া কণকচাঁপার মালা দেব তাহারে.... আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এ ভূখন্ডের সর্বকালের সেরা ঔপন্যাসিকদের একজন বলে আমি মনে করি। তবে আমার সমসাময়িক বাঙালিদের মধ্যে খুবই কম ছেলে-মেয়ে তাঁর লেখা পড়েছে। তাদের জন্য খোয়াবনামার অংশবিশেষ: চরিত্র: তমিজের বাপ, কুলসুম (তমিজের সৎমা), তমিজ। দৃশ্য: তমিজের বাপ মারা গেছে। তার সৎকার করে তমিজ ঘরে ফিরেছে।

তারপর... ডোবার এপার থেকেই ঘরের দরজার চৌকাঠে বাপকে বসে থাকতে দেখে তমিজ চমকে ওঠে, ভয়ও পায়। বাপ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ঘরে নতুন চালের ভাত রান্না হচ্ছে, সকালে পান্তা, দুপুরে ভাত, রাত্রে ভাত। এই দুটো মাস তিন বেলাই ভাত খাওয়া। বাজান এখানে হাজার বসে থাকুক, সেই ভাত খাবার অবস্থা কি তার আর হবে? তবে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কুলসুমকে সে ঠিক কুলসুম বলেই ঠাহর করে ফেলে এবং কুপির আলোয় তার চোখে বাজানের চাউনি দেখে সটান শুয়ে পড়ে বাজানের বিছানায়।

‘বাজান! বাজান! কী খাবা গো?’ ডাকতে ডাকতেই শুরু হয় তার ফোঁপানো কান্না, এই কান্না তার জমতে শুরু করেছিলো চোরাবালির ধারেই, এবং কাঁদতে কাঁদতেই বাপকে তার প্রিয় খাদ্য সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কার অব্যাহত রাখে। পাশে বসে কুলসুম হাত রাখে তমিজের ঝাঁকড়া চুলে, তারপর ঐ চুলে নাক গুঁজে সে নিঃশ্বাস নিতে থাকে জোরে জোরে। এই ঝাঁকড়া চুলে মিশেছে তার বাপের পাটের আঁশ কিসিমের চুলের গন্ধ। এতকাল পর গন্ধটাকে পাখির ডানা ঝাপটানোর গন্ধ বলে সনাক্ত করতে পারলো। তমিজের ঘাড়ের গন্ধে মিশেছে তার বাপের গায়ের আঁশটে গন্ধ, তার বুকে কাদার গন্ধ।

তমিজের সারা গায়ের গন্ধ নিতে নিতে কুলসুমও ফোঁপাতে শুরু করে এবং এখন কিছুক্ষণের মধ্যে সে কেঁদে ওঠে হাউমাউ করে। তমিজ তার বাপের গতরের ওম নিতে মুখ গুঁজে দেয় কুলসুমের উঁচু বুকে। কাঁদতে কাঁদে কুলসুম বলে, ‘প্যাট ভর‍্যা ভাতও খাবার পারে নাই গো মানুষটা, মুনসির ডাক শুন্যা কোটে চল্যা গেলো, একবার কয়াও গেলো না। ’ ‘বাজার জেয়াফতের বাড়ি উটকাতে ঐ বালুর মধ্যে কোটে কোটে ঘুরিচ্ছে গো। ’ ‘এবার একটা পিঠা মুখোত পড়লো না তার।

শোলোক শুনবার গেলো, আর ফিরলো না। ত্যাল পিঠা হলে তাঁই একলাই এক কুলা শ্যাষ করিছে। ’ তমিজ হামলে কেঁদে ওঠে, ‘মন্ডলবাড়িত জিয়াফতের ভাত খাবার যায়া কি কাউলকা তাঁই করিছিলো গো। ’ কুলসুম জানায়, ‘কাৎলাহারের কৈ মাছ দিয়া নাউ দিয়া ভাত খাবার চাইছিলো গো উদিনকা, খাবার পারলো না। ’ পেটুক বাপের আধপেটা খাওয়া গতরের তাপ নিতে তমিজ হাত রাখে কুলসুমের পিঠে, তমিজের বাপের তাপ পোয়াতে তাকে নিবিড় করে টেনে নেয় নিজের শরীরে।

পায়ের দুটো ঘা থেকে তার আধপেটা গতরের গন্ধ নিতে কুলসুম হাত বোলায় তমিজের হাঁটুতে আর উরুতে। আর তমিজের বাপ অনেক দূরে কাৎলাহার বিলের চোরাবালির ভেতর থেকে তার লম্বা হাত বাড়িয়ে কিংবা হাতটাই লম্বা করে আলগোছে টেনে নেয় তমিজের তবন আর কুলসুমের শাড়ি। গরহাজির মানুষটার গায়ের ওম পেতে আর গায়ের গন্ধ শুঁকতে দুজনে ঢুকে পড়ে দুজনের ভেতরে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।