নিবৃতে আছি আমি ৭১ পরবর্তী যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন ছিল তা আশা করি মোটামোটি ভাবে অনেকেই জানেন। ঢাকার সাথে বিভাগীয় শহর ছাড়া ৫০ কিলোমিটার পথ যেতে মোটামোটি ৬-৭ ঘন্টা লেগে যেত। কারন তখন রাস্তা-ঘাট তৈরি হয়নি। আমি আমার বাপ-চাচাদের মুখে শুনেছি যে নরসিংদী থেকে কেউ যদি মামলা মোকাদ্দমা বা অনান্য কাজে ঢাকা বা নারায়নগঞ্জ যেত তবে সেই লোক আগের দিন সন্ধ্যায় রওনা দিত। রাতে তার গন্তব্য পৌছে অপেক্ষা করত পরের দিন কাজ শেষ করে আবার সন্ধ্যায় বাড়ির পথ ধরত।
তাদের পুরো পক্রিয়াটাই ছিল পায়ে হেটে। এখন আসি বর্তমান যুগের কথায়। আমি আমার কাজে নরসিংদী থেকে প্রাইভেটকারে ঢাকায় রওনা দিই। সায়দাবাদ দিয়ে অনেক জ্যাম থাকায় টঙ্গি রোডে যাবার মনস্থ করি। আমার গন্তব্য বাংলাভিশন অফিস তথা কারওয়ান বাজার।
আমি আবার একটু অলস টাইপের লোক তাই চাইলেও অনেক সকালে উঠতে পারিনা। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে রওনা দিতে দিতে ১০ টা বেজে গেল। সমস্যা নাই। যেহেতু সারাদিনই সময় আছে তাড়াহুড়া না করে ধীরে যাবার মনস্থ করলাম। কারওয়ান বাজারে কাজ শেষ করে এলিফেন্ট রোডে যাব চিন্তা করছি।
মাল্টিপ্লান মার্কেটে একটি কম্পিউটার কেনার জন্য। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই দারুন যে একবার কেউ নরসিংদী থেকে ঢাকা গেলে আর দ্বিতীয়বার যাবার ইচ্ছা করবে না। আমারও সেই গতি। যেতেই থাকলাম যেতেই থাকলাম যেতে যেতে কারওয়ান বাজারে পৌছলাম মাশাআল্লাহ ২.৩০ মিনিটে পথিমধ্যে গাড়িতে গ্যাস নেবার ইচ্ছা থাকলেও সময় হিসেব করে গ্যাস নেয়া হয়নি। কারওয়ান বাজারে কাজ ৫মিনিটে শেষ করে মাল্টিপ্লানের দিকে রওনা দিলাম কিন্তু বিধিবাম জ্যাম কাহাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? তাহা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম যখন মাল্টিপ্লানে পৌছে দেখি ৪.৫০মিনিট।
গ্যাস নেবার আর উপায় নেই কারন ৫ টা থেকে গ্যাস দেয়া বন্ধ রাত ৯ টা পর্যন্ত। অগ্যতা আগে দুপুরের খাবার (অদৌ দুপুর গড়িয়ে বিকেলে) সেরে কোন রকমে কম্পিউটার নিয়ে ৬টার মধ্য ফিরতি পথ ধরলাম। এখন চিন্তা করতে লাগলাম টঙ্গি দিয়ে ও জ্যাম আবার সায়দাবাদ দিয়ে জ্যাম বাধ্য হয়ে খিলগাও এর ভিতর দিয়ে আমুলিয়া মডেল টাউন এর ভিতর দিয়ে ডেমরা সড়কের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে নরসিংদী পৌছে যাব। কিন্তু বিধিবাম যেই পথ ধরলাম অমনি গ্যাস শেষ বাধ্য হয়ে তৈল দিয়ে গাড়ি চালাতে হলো। যখন খিলগাও দিয়ে নন্দীপাড়ায় ঢুকলাম অমনি তৈলও শেষ।
রাস্তার মোড়ে এসে গাড়ি বন্ধ। আমাদের গাড়ির জন্য যানজট সৃষ্টি হল। তাড়াতাড়ি দু-তিন জনে ঠেলে গাড়িকে নিরাপদে একটু সামনেই পার্কিং প্লেসে গাড়ি রেখে বাজার থেকে দু-লিটার তৈল ভরে কোন রকমে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আমুলিয়ার ভিতর দিয়ে এসে গ্যাসের জন্য পাম্পে এসে অপেক্ষা। ৯ টা বাজে গ্যাস দেয়া শুরু হল কিন্তু সমস্যা হল গ্যাসের চাপ কম। তাই আরো একটু অপেক্ষা করতে হল।
সব শেষ করে বাসায় পৌছতে পৌছতে রাত ১২ বেজে গেল। আমি শুধু চিন্তা করতে থাকলাম। যোগাযোগ ব্যবস্থার সেকাল আর একাল সম্পর্কে। আমার কাছে মনে হল যোগাযোগ ব্যবস্থার সেকালটাই ভাল ছিল। কারন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকলেও কোন সমস্যা ছিলনা।
এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার এত উন্নতির পরও আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা। শুধু শুধু অর্থ,সময়,জার্নি সহ অনেক রকম কষ্ট। এর মধ্যেই দেশের নীতি নির্ধারকদের চৌদ্দ গুষ্টি মনে মনে উদ্দার করেছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।