আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার চায়না ভ্রমণ এবং Mr. Antrata Siyanimyo

এ সবই থাক তোমাদের, আমি বড় চাই না হতে, ধুলো মাখা পথই আমার, তুমি চোড়ো জয়োরথে। শত লাঞ্ছণা দিও, কোরো আমায় অসম্মান। তবু আমি বোকাই হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশান। আমার জীবনের কয়েকটি পাতা...... আমি একটি বেসরকারি বিমান এয়ারলাইন্সে কাজ করি। বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশ নিতে হয়।

বাংলাদেশে একবার International Airlines Conference এ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে প্রতিনিধিরা আসেন, সেখানে আমার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। বক্তব্য শোনার অভ্যাস বাঙ্গালীর মোটেই পছন্দ নয়। কিছুক্ষণ শুনেই তেমন ভাল লাগছিল না। প্রায় ১ ঘণ্টার কিছু পরে চাইনিজ একজন লোকের ডাক পড়ল। নাম Antrata Siyanimyo. পেশায় চায়নার একটি ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা, বয়স ৪০এর বেশি নয়।

কিছুক্ষণ তার বক্তব্য শোনার পরই সবাই কেমন যেন অবাক হয়ে তার কথা শুনতে থাকল। কথা বলার স্টাইল এতো সুন্দর হয় জানতাম না। শুধু মুগ্ধ হতে থাকলাম। কনফারেন্স শেষে Antrara Siyanimyo এর সাথে কথা বলার সুযোগ হয়। তার হাসির মধ্যে কী যেন একটা লুকিয়ে আছে।

আমি শুধু তাকিয়ে থেকে দেখলাম। চায়নিজ আরও একজনের সাথে আমার অনেক ভাল বন্ধুত্ব হয়, মেয়েটির নাম Somyo. আমার খুব কাছের বন্ধু হয়ে যায় সে ৭ দিনেই। অপরদিকে Antrata এর সাথে প্রায় প্রতিদিন আমরা সবাই বেড়াতে যেতাম। আমার সাথে তার ঘনিষ্ঠতা অনেক বেড়ে গেলো। দিন সাতেক পর তারা তাদের দেশে ফিরে গেল।

যাওয়ার সময় Antrata আমার হাত ধরে কয়েকটি উপদেশ দিলেন। তার প্রত্যেকটি কথাতেই কোন না কোন শিক্ষণীয় কিছু থাকে। বিদায়ের কথাগুলো এমনভাবে আমাকে বললেন যে আমি না কেঁদে পারলাম না। আমি তারও নিঃশব্দ কান্নার আওয়াজ অনুভব করতে পারলাম। আমার মন ইদানীং খুব খারাপ থাকে।

Antrara Siyanimyo-র হাসি চোখ থেকে সরাতে পাড়ছিলাম না। তার জ্ঞানের কথাগুলো বার বার মনে পড়তে লাগলো। কয়েকমাস পর বাংলাদেশে Somoy এর সাথে দেখা হয়, সে কয়েকদিন বাদেই চায়না ফিরে যাচ্ছে। আমাকেও সাথে ওর সাথে ঘুরতে যেতে বলল। আমি তাড়াতাড়ি টিকেটএর ব্যবস্থা করলাম।

অতঃপর চায়নার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। থাকার জায়গা হিসেবে Somoy র বাড়িই ঠিক হল। ওর বাড়িতে সবাই থাকেন, যৌথ পরিবার। বাড়িগুলো বাংলো টাইপের, কিন্তু ২ তলা। Somyo এর বাড়িতে আমার তেমন ভাল লাগছিল না।

ও আমাকে অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতো। সেখানকার বাজারগুলো ছিল ছবির মতই সুন্দর। ব্যাগ, চুড়ি আর মেয়েদের প্রয়োজনীয় প্রসাধনীর দোকানগুলো ছিল দেখার মতন। দোকানদার হিসেবে ছিল কিছু ছোট ছোট মেয়ে, ওদের মাথায় খুব সুন্দর করে ওড়না বাঁধা কিছু সম্পূর্ণ ড্রেসআপ ছিল উপজাতীয়দের মত। কিছুক্ষণ পর ফলের দোকানে গেলাম।

গিয়ে তো আমার চোখই আটকে গেল। এত সুন্দর ছিল যে বুঝাই যাচ্ছিলো না এটা কোন দোকান না ফলের বাগান !!! সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল আর যতো রকমের রঙ হয় প্রায় সবধরনেরই ফল দেখতে পেলাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেখি বোতলে ফলের রস বিক্রি হচ্ছে। আমার খেতে ইচ্ছে হল। Somoy বলল, এগুলো খেতে হবে না, মাথা ঘুরতে পারে।

আমি জোর করেই একটা বোতল কিনলাম। সেখানে ছিল আঙ্গুর আর আপেলের রস। কেনার পর যখন হাঁটছিলাম তখন Somoy বলল, এটা খেলে কিছুটা নেশা হয়, তাই তোমাকে না করেছিলাম। যাওয়ার পথে আমরা চায়না এয়ারপোর্টে গেলাম। সেখানে যারা কন্ট্রোল রুমে কাজ করে আমরা তাদের সাথে দেখা করতে গেলাম।

গিয়ে দেখি প্রায় সবাই মেয়ে। একেকজনের উচ্চতা ৫ ফুট ১০ এর বেশি, কয়েকজন ৬ ফুট। নিজেকে খুব বেমানান লাগছিল কারণ আমি মাত্র ৫ ফুট ৩।  ওদের সাথে হাসিমুখে কথা বললাম। ওরা তেমন বেশি কিছু বুঝে না চায়নিজ ভাষা ছাড়া।

শুধু হাসে। কথা বলতে বলতে দেখলাম খুব বড় একটি বিমান ছেড়ে যাচ্ছে। আমি এতো বড় বিমান কখনো দেখি নি। তার ২ পাখা মনে হয় কয়েক মাইল হবে। শুধু অবাক হলাম।

................................................ .......................................... কিছুক্ষণ পরে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ফোনের শব্দে। ধ্যাত... যার জন্য চায়না গেলাম তাকেই দেখতে পারলাম না। Antrara Siyanimyo কে খুঁজে বের করার আগেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠার পরও আমি Antrara Siyanimyo এর প্রতি গভীর টান অনুভব করছি। এমন একজন মহৎ মানুষের সাথে দ্বিতীয় বার সাক্ষাৎ লাভ করতে পারলাম না।

আমি যে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম আমি একবারের জন্যও বুঝতে পারি নাই, এতোটা স্পষ্ট ছিল সবকিছু। আমি এখনও Antrara Siyanimyo –র হাসি দেখতে পাচ্ছি। আর কিছু হোক বা না হোক কিন্তু আমার চায়না ভ্রমণ থিকই হয়েছে। বাস্তবের মত স্বপ্নটা অনেক অনেক অনেক বেশি ভাল ছিল।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।