আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্কুলছাত্রীর পর্নোগ্রাফি ও প্রাসঙ্গিক কথা

ভালো আছি ভালো থেকো স্কুলছাত্রীর পর্নোগ্রাফি ও প্রাসঙ্গিক কথা অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক আইন না থাকায় দেশ এখন পর্নো সিডিতে সয়লাব। শনিবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, ভোলায় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে নেশাজাত দ্রব্য খাইয়ে যৌন নিপীড়নের দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় বন্দি করে ভিডিও পর্নো সিডি বানিয়ে বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সম্ভ্রান্ত্ত পরিবারের স্কুলছাত্রীকে এভাবে যৌন নিপীড়ন চালানোর ঘটনায় পুরো ভোলায় তোলপাড় চলছে। এ ছাত্রীর মতো নাট্য-অভিনেত্রী, মডেল কন্যা, স্কুলছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশার ৫০ জনেরও বেশি তরুণীর পর্নোগ্রাফি সিডি বাজারে বের হয়েছে। খাবারের সঙ্গে, বিশেষ করে কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় বা যৌন উত্তেজক ওষুধ যেমন ইয়াবা, ইডেগরা ইত্যাদি সুকৌশলে মিশিয়ে বন্ধু বা প্রেমিক তার প্রেমিকা বা বান্ধবীকে যৌনকর্মে আকৃষ্ট করে বা প্রলুব্ধ করে এসব পর্নো সিডি তৈরি করছে।

আবার এদের মধ্যে কাউকে ব্ল্যাকমেইল, কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ অভিনেত্রী হওয়া বা বিশেষ সুবিধার লোভে পড়ে নিজের অজান্তে এ ভুলপথে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের নামকরা একজন অভিনেত্রীর পর্নো সিডি বাজারে বের হয়েছে। এ পর্নো সিডি কেউ মোবাইলে, কেউ ল্যাপটপে, কেউ ইন্টারনেটে দেখছে। এসব পর্নো ছবি দেখে আবার অনেকেই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে যুবসমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, দেশে পর্নো সিডি কঠোরভাবে দমনের কোনো আইন নেই। বিশেষ করে বাজারে নাট্য-অভিনেত্রী, মডেল কন্যা, স্কুলছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশার অনেকেই নানাভাবে পরিস্থিতির শিকার হয়ে পর্নো সিডিতে জড়িয়ে পড়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দীর্ঘ তদন্ত করে এ পর্যন্ত দেশের নামকরা ৫০ তরুণী, মহিলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, মহিলা সাংবাদিক, মহিলা আইনজীবী, স্কুলছাত্রী ও কিশোরীর পর্নো সিডির ঘটনা তদন্ত করেছে। অনেকেই পরিবারের মানসম্মান রক্ষায় ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছে। আবার কেউ কেউ তাদের অজান্তে এসব করেছে বলে নীরবে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছে।

আবার কেউ পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তদবির করে ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে। জোট সরকারের আমলে দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেলের বাথরুমে অভিনব কৌশলে ছাত্রীদের গোসল দৃশ্যসহ বিভিন্ন দৃশ্য ভিডিও করা হয়েছে। একটি ছাত্রাবাসে ছাত্রীকে দাওয়াত দিয়ে তার পর্নো সিডি করা হয়েছে। অবশেষে সরকার পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের ফলে নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়, অপরাধ ও সামাজিক অস্থিরতা প্রতিরোধে নতুন করে পর্নোগ্রাফি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। তারা দীর্ঘ চেষ্টা করে কানাডা, ইতালি ও সুইডেনসহ উন্নয়নশীল দেশের আদলে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন তৈরি করেন।

আইনে বলা হয়েছে, পর্নোগ্রাফি অর্থ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যৌনোদ্দীপনা সৃষ্টি, ব্যক্তির ইমেজ বা মর্যাদা বিনষ্ট করার লক্ষ্যে বা অন্যায় লাভ বা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত অশ্লীল সংলাপ, প্রকাশনা, পুরুষ বা নারীর নৃত্য, নগ্ন, অর্ধনগ্ন, চলচ্চিত্র বা ভিডিও চিত্র তৈরি এ আইনের আওতায় পড়বে। এসব পর্নো সিডি উত্পাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, বহন, আমদানি-রফতানি, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয়, প্রদর্শন অপরাধ। সূত্র মতে, পর্নোগ্রাফির অপরাধের আইন দ্রুত বিচার আইন-২০০২ এর ধারা-৪ সংজ্ঞানুযায়ী গঠিত ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিত হবে। পর্নো সিডি তৈরির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার ও তার আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে আলামত জব্দ করতে পারবে। তল্লাশিকালে জব্দকৃত সফট কপি, রূপান্তরিত হার্ডকপি, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইস, এক্সেসরিজ, মোবাইল ফোনে সিম, যন্ত্রাংশ, অপরাধ কাজে ব্যবহৃত অন্য কোনো যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম বা বস্তা আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।

যদি কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি তৈরি করেন বা তৈরি করার জন্য পারফর্মার সংগ্রহ করে চুক্তিবদ্ধ করেন বা কোনো নারী বা অন্য নারী, পুরুষ, শিশুকে পারফর্ম করতে বাধ্য করেন বা নারী বা শিশুকে প্রলোভন দেখিয়ে পারফর্ম করিয়ে তাদের জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে তার স্থিরচিত্র, ভিডিওচিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করেন তবে ওই ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এ ছাড়াও কোনো ব্যক্তি এ আইনে পর্নোগ্রাফি বিক্রি বা প্রদর্শন বা সরবরাহ করলে তার কৃতকর্মের জন্য সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি নিজ দখলে রাখলে তাকে সর্বোচ্চ ৩ মাস পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। আবার কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রচারণার মাধ্যমে গণ-উপদ্রব সৃষ্টি করলে তার ৩ মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এ আইনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ৭ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলে আদালত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেবে।

হাজির না হলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার হবে। লেখক : সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও অ্যাডভোকেট জজকোর্ট, কুষ্টিয়া। সুত্র: View this link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.