আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুয়াডাঙ্গা মোমিনপুরে নির্যাতিতা এক বধূর পাশে প্রতিবাদী প্রতিবেশী : পুত্রবধূর চুল কেটে সমিতির কিস্তি পরিশোধ : জনরোষে শাশুড়ি

যৌতুক না পেয়ে পুত্রবধূর মাথার চুল কেটে বিক্রি করে সমিতির কিস্তি দেয়ায় শাশুড়ির মাথার চুল কাটতে উদ্যত হয় জনগণ। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর গ্রামে। দিনভর এ নিয়ে মোমিনপুর গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নির্যাতনের শিকার পুত্রবধূকে নিয়ে পৃথকভাবে সংসার করার জন্য বলেছেন সলিসসভার মাতব্বররা।

যদিও স্বামী সাইফুল ইসলাম বেল্টুর বিরুদ্ধে রয়েছে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ। নির্যাতনের শিকার স্ত্রীকে আর নির্যাতন করা হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়েছে। সালিসসভায় এ প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়। জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা তালতলা কুঠিপাড়ার আজাদ আলীর মেয়ে শারমীন আক্তার রুবির সাথে জেলা সদরের মোমিনপুরের মিনাজ উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম বেল্টুর বিয়ে হয়। গত বছরের ১৯ অক্টোবর বিয়ের সময় যৌতুক দাবি না করা হলেও বিয়ের পর স্বামীগৃহে প্রবেশ করেই শাশুড়ি আমেনা খাতুনের (৫০) রোষানলে পড়তে হয় রুবিকে।

যৌতুকের দাবি উত্থাপনের সাথে সাথে স্বামী-শাশুড়ি নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতনের কথা প্রতিবেশীরা জানলেও বিরোধ এড়াতে সকলেই মুখ বুজে থাকেন। গতকাল বুধবার আর তারা মুখ বুজে থাকেননি। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে রাস্তা থেকে ধরে এনে ঘরে আটকে মারধর শুরু করলে প্রতিবেশীরা ছুটে যান। তখনই উন্মোচিত হয় পুত্রবধূর মাথার চুল বিক্রি করে সমিতির কিস্তি পরিশোধ করা শাশুড়ির ডাইনিরূপের রোমহর্ষক বর্ণনা।

জনরোষে সটকে পড়ে নির্যাতক স্বামী বেল্টু। শাশুড়ি বাড়ি ছেড়ে পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়েও জনরোষ থেকে রক্ষা পায়নি। সেখানে তাকে আটকে রাখা হয়। এক পর্যায়ে জনগণ শাশুড়ির মাথার চুল কটে দেয়। রুবির ওপর নির্যাতনের বর্ণনা শুনে ক্ষুব্ধ জনগণ ৫০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে মারতেও উদ্যত হয়।

নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূ রুবি জনসম্মুখে মাথাভাঙ্গাকে জানায়, গত ৯ মাস আগে বিয়ে হয়। ৮০ হাজার টাকা দেনমোহরে বেল্টুর সাথে আমার আনুষ্ঠানিক বিয়ে হলে আমি স্বামীর বাড়িতে আসি। স্বামীর বাড়িতে আসার কয়েকদিনের মাথায় আমার নিকট যৌতুক দাবি করে। আমার পিতা দরিদ্র। যৌতুকের টাকা পাবে কোথায়? তাই সব নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করি।

শ্বশুর আমাকে ভালোবাসে। শাশুড়ি আর স্বামীর নির্যাতনের কথা প্রতিবেশীরা জানে। জেনেও কেউ এগিয়ে আসে না। সপ্তাখানেক আগে আমার শাশুড়ি আমার মাথার চুলগুলো কেটে নেয়। চুল কেটে নিয়ে বিক্রি করে।

এ সময় বলে, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে না পারলে এভাবে চুল কেটে বিক্রি করেই সমিতির টাকা শোধ করবো। মাথার চুল না কাটার জন্য আমি আমার শাশুড়ির পায়ে পড়েছিলাম। শোনেনি। মেয়েদের মাথার চুল নাকি ৪/৫শ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চুলগুলো কেটে নিয়ে বিক্রি করে সমিতির কিস্তি দিয়েছে।

চুল কেটে নেয়ার পরও আমার ওপর নির্যাতন থামেনি। স্বামীর পিটুনি তো আছেই। পিটুনির কারণে বাধ্য হয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়ে পিটিআই মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। স্বামী সেখান থেকে ধরে নিয়ে বাড়ি ফিরে ঘরে আটকে মারধর শুরু করে। এ সময় প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন।

প্রতিবেশীরা জানান, রুবির ওপর নির্যাতনের বর্ণনা শোনার পর ক্ষুব্ধ জনগণ তার স্বামীকে খুঁজতে শুরু করে। ততোক্ষণে সে আত্মগোপন করে। শাশুড়ি আমেনা খাতুনকে ধরে পাশের একটি বাড়িতে আটক করা হয়। জনগণ ছুটে গিয়ে কাঁচি দিয়ে শাশুড়ির মাথার চুল কাটতে যায়। কয়েকটি কাটেও।

তারা বলেন, যে শাশুড়ি তার পুত্রবধূর চুল কেটে বিক্রি করতে পারে, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে পারে, সেই শাশুড়ির মাথায় চুল থাকবে কেনো? উপস্থিত নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবেই শাশুড়ির মাথার চুল কেটে দিতে যায়। এ সময় সেখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করতে থাকে। এসব ঘটনা যখন ঘটে, তখন ঘড়ির কাঁটা সকাল ৯টা অতিক্রম করছিলো। পরিস্থিতি উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে। মোমিনপুর-নীলমণিগঞ্জের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান নিপুল ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

এ বিষয়ে গতকালই সন্ধ্যায় মোমিনপুর গ্রামে সালিসসভা বসে। সালিসসভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বেল্টু তার স্ত্রী রুবিকে নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করবে। এ সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাবে রুবির শাশুড়ি। স্থানীয় অনেকেই এ মন্তব্য করে বলেছেন, রুবির শাশুড়ি আমেনার গলাবাজির কাছে মহল্লাবাসী কাবু। ফলে সালিসসভার সিদ্ধান্ত না মানলেও দেখবে কে?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।