আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিসায় ঝুঁকছে তরুণ-তরুণীরা

আমি নির্বাক হয়ে গেলে তোমার পতন অনিবার্য ! এক টেবিলে গোল হয়ে বসা ৪-৫ তরুণ-তরুণী। সবাই অভিজাত পরিবারের সন্তান। গাঢ় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আলো-আঁধারি পরিবেশ। গুড় গুড় করে আসছে শব্দ। সবার হাতেই একটি করে পাইপ।

কখনও একই পাইপ এক হাত থেকে যাচ্ছে আরেক হাতে। রাজধানীর অধিকাংশ নামিদামি রেস্টুরেন্টে এমন চিত্র এখন হরহামেশাই দেখা যায়। এর নাম সিসা লাউঞ্জ। আর এই সিসায় ঝুঁকছে অভিজাত পরিবারের তরুণ-তরুণীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক সেশনে সিসা টানলে ৫৪টি সিগারেটের সমান ক্ষতি হয়।

এছাড়া সিসার ধোঁয়ায় প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোঅক্সাইড থাকে, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাদক ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, সিসা সিগারেটের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। এছাড়া সিসায় ফলের নির্যাসের সঙ্গে অন্যান্য ক্ষতিকর মাদকদ্রব্যের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। অন্য মাদকে যে ক্যান্সার ছড়াতে পাঁচ বছর লাগবে সেখানে নিয়মিত সিসায় আসক্ত হলে দুই বছরের মধ্যে শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উচ্চবিত্ত পরিবারের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের নতুন নেশার নাম সিসা।

নতুন মাদক হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে সিসার। অনেকটা দেশীয় হুক্কার আদলে তৈরি সিসার প্রচলন মোগল আমল থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সিসা অনেক জনপ্রিয়। বিভিন্ন ফলের নির্যাস দিয়ে তৈরি হয় সিসার উপাদান। কিন্তু বাংলাদেশে এর সঙ্গে মেশানো হচ্ছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য তৈরির উপাদান।

মাদক হিসেবে তালিকাভুক্তি না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের উপপরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, সিসা সরাসরি মাদক না হলেও বাংলাদেশে এর অপব্যবহার হচ্ছে। অভিজাত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এটিকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করছে। সিসার উপাদানের সঙ্গে মাদকদ্রব্য মেশানোর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জানা যায়, রাজধানীতে দেড় শতাধিক সিসা লাউঞ্জ রয়েছে।

এসব লাউঞ্জে সব সময়ই ভিড় লেগে থাকে তরুণ-তরুণীদের। রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, বেইলী রোড, উত্তরার অধিকাংশ রেস্টুরেন্টেই সিসা লাউঞ্জ রয়েছে। প্রতি সেশনের জন্য নেওয়া হয় চার থেকে পাঁচশ টাকা। এছাড়া সিসা লাউঞ্জের আড়ালে চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। স্টিলের তৈরি কারুকার্যময় কলকের মধ্যে সিসার উপাদান রাখা হয়।

কলকের নিচের অংশে থাকে বিশেষ তরল পদার্থ। এটি দেখতে অনেকটা দেশীয় হুক্কার মতো। তবে এটি অনেক বড় আকারের এবং একাধিক ছিদ্রযুক্ত। এসব ছিদ্রে লাগানো থাকে লম্বা পাইপ। এই পাইপ দিয়েই সিসা টানা হয়।

সিসা লাউঞ্জে যাতায়াতকারী একাধিক তরুণ-তরুণী জানান, ইয়াবা-ফেনসিডিল বা অন্যান্য মাদক নেওয়ার পর সিসা টানতে অন্যরকম অনুভূতি হয়। এ কারণে সিসা পার্টির আগে সবাই সাধারণত অন্যান্য মাদক সেবন করে থাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক (গুলশান সার্কেল) হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, সিসার সঙ্গে অন্য মাদকের রাসায়নিক পদার্থ মেশানো এবং সিসা লাউঞ্জের আড়ালে মাদক ব্যবসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদকের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় সিসা লাউঞ্জের বিরুদ্ধে তারা কোনো অভিযানও চালাতে পারছেন না। সিসাকে মাদক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্র : সকালের খবর ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.