আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধিক শিক্ষক তোমায়, ধিক তোমায়।

"জেগে উঠুক তারুন্য,জেগে উঠুক স্বপ্ন,জেগে উঠুক মনুষ্যত্ব.........." ঢাকার প্রথম সারির একটা কলেজ, সময়টা ২০০৮ এর শেষের দিক বা ২০০৯ এর প্রথম। ক্লাস নিচ্ছেন বাংলা শিক্ষক, নাম হচ্ছে সোলায়মান কবির। পড়াচ্ছেন হৈমন্তী। মেয়েদের সারির সামনে গিয়ে মাইকে টিস্যু পেপার জড়িয়ে শাড়ির নিচে হৈমন্তীর নগ্ন পা কেমন দেখা যায় তা রসিয়ে রসিয়ে পড়াচ্ছেন। এসময় ক্লাসের একটি মেয়ে ক্লাসে প্রবেশ করার অনুমতি চায় , প্রসং টেনে নিয়ে স্যারের প্রশ্ন "তুই কি একটি মেয়ে?" কড়া প্রশাসনের কথা চিন্তা করেই তড়িঘড়ি করে এত বড় একটি বাক্যবানের শানে নযুল তৈরি করেন শিক্ষক যে ছাত্রীটিকে তিনি শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করেন মানবী হিসেবে নয়।

ব্যস ধামাচাপ পড়ে যায় অথচ সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এইরকম হাজারো অভিযোগ আছে। ঢাকার আর একটি প্রথম সারির কলেজ নামটা বলাই যায়, নটরডেম কলেজ। কুশীলব আবারো বাংলা শিক্ষক। নাম মুখতার স্যার। নৃশংসভাবে এঁকো ছাত্রকে মারছে।

ভিডিওটা দেখুন - এই শিক্ষক ছাত্রদের পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন টপিক অশ্লীলভাবে পড়ান। মোটামুটি সবাই জানেন ভিকারুননিসানূন কলেজে উনি কি অপকর্ম করে এসেছিলেন। সমস্যা হল নটরডেমে তিনিই সাদরে আমন্ত্রিত হলেন আর ছাত্রদের যেখানে নৈতিক শিক্ষা দেয়ার কথা তার বদলে তিনি তাদেরকে অশ্লীললতা,যৌনতা আর অনৈতিক শিক্ষা দিতেন। (নটরডেমে ছাত্ররা তীব্র প্রতিবাদ করতে পারে এই পোস্টের তাদেরকে বলছি এই শিক্ষকের সাথে নটরডেমের অন্যান্য শিক্ষকের একবার তুলনা করে দেখুন তো) যেহেতু কলেজ ছাত্র তাই মোটামুটি ১৮ বছরের ছাত্রই বেশি। এই বয়সে যৌনতার উদ্রেক খুবই বেশি থাকে বলে মুখতার স্যারের মত স্যারদের কথা ক্লাসে খুব আহ্লাদের সাথে গৃহীত হয়,কিন্তু এটা যে ছাত্রদের নৈতিকতার আবরন খুলে দিচ্ছে, ছাত্রদের নীতিবোধএর পোশাক খুলে নগ্ন করে দিচ্ছে তা কলেজ কর্তৃপক্ষ কখনৈ খেয়াল করে না।

বেশ কয়েকবছর আগে সম্ভবত ২০০৮ সালের দিকে মিরপুরের বিসিআইসি কলেজে কি হয়েছিল তা হয়ত মনে আছে, সেখানেও এক শিক্ষকের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছিল, যদিও তা প্রমান করা যায় নি। মনিপুর স্কুল এন্ড কলেজ, অনেক শিক্ষক আছেন, দু টো নাম বলব, ইংরেজির শিক্ষক শামীম আর সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক আব্দুল মালেক। দ্বিতীয়জন আবার জামাতের সক্রিয় সদস্য। ক্লাসে এই দুইজনই অশ্লীল কথা বলায় পারদর্শী। মিল্কভিটা দুধের প্যাকেট নিয়ে মালেক স্যারের বেশ রসালো উক্তি প্রচলিত আছে ছাত্র সমাজে, আর শামীম নামের শিক্ষকটি ক্লাসে অশ্লীল কথা বলতে বেশ আনন্দই বোধ করেন।

ঢাকার নামজাদা কলেজগুলোর কিছু ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। প্রতিটি কলেজই প্রথম সারির। স্বভাবতই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের সন্তানকে ভর্তি করিয়ে অভিভাবকরা নিশ্চিন্তে থাকেন যে তার সন্তানটি নিরাপদে থাকবে আর ভাল ফল করবে। কিন্তু ধারনা ভুল, মোটামুটি সকল প্রতিষ্ঠানেই এরকম কিছু শিক্ষক পাওয়া যাবে বিশেষ করে বাংলা ডিপার্টমেন্টে এবং জীববিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টে। তারা ছাত্রীদের তো বটেই ছাত্রদেরও যৌন নির্যাতন করে থাকে।

তবে তা বিভিন্ন কৌশলে কেউ কথায়, কেউ আচরনে, কেউ শাস্তি দেয়ার নাম করে আবার কেউ আদর করার ছলে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো অপ্রকাশিত থাকে। ভিকারুননিসানূন স্কুলে যা ঘটল তা হল এসকল বহু ঘটনার একটি চূড়ান্ত রুপ। প্রকাশ হলে শুধু ঐ ঘটনা কেন্দ্র করে আন্দোলন চলে, আর ফলশ্রুতিতে অভিযুক্তের তো কিছুই হয় না বরং নির্মল কোমল শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়ে যায়। পড়া-লেখায় তো আর উন্নতি হয়ই না বরং বয়োসন্ধিকালের এত বড় নেতিবাচক ধকল সামলাতে গিয়ে বেমালুম কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়।

এক দুই মাস পরে খবরও থাকে না কারো। আবার পরিমল বাবুর মত কামলোভী শিক্ষকদের সাহসের আত্মা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে। সৌভাগ্যবশত হোক আর দুর্ভাগ্যবশত হৌক, ঢাকা শহরের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ হয়েছে, মোটামুটি সবগুলো প্রতিষ্ঠানের ভেতরের খবর আমি জানি। মজার কথা হল, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। আর তাই বিষয়গুলো গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছি।

মজার কথা হল, যে সকল শিক্ষক এসব কুরুচিপূর্ন কথা শিক্ষার্থী সমাজে বলে মজা পান সেসকল শিক্ষক বেশ জনপ্রিয়। কারনটা খুজতে অবাক হলাম যে গডফাদারদের মত এই সকল শিক্ষকরাও কিছু নেতাগোছের বখাতে শিক্ষার্থী লালন-পালন করে। তারাই এদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রী এনে দেয়। ক্লাসে শিক্ষককে তোষামদ করে। ঐ বিশেষ শিক্ষকের গুনগান করে।

আরো একটু গভীরে দেখলাম ঐ সকল শিক্ষার্থীরা ঐসকল শিক্ষকের কাছ থেকে বিশেষ সুবধা পায়। কোন কোন শিক্ষককে আমি নিজে ছাত্রদের চা-সিগারেট এমনকি টাকা পর্যন্ত অফার করতে দেখেছি। আমি নিজে একবার এক শিক্ষককে ছাত্রের হাত থেকে সিগারেট নিতে দেখেছি। সেই শিক্ষকটি বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠানের একটির শিক্ষক আর ছাত্রটিও ঐ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। এই যদি হয় আমাদের দেশের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাল-চিত্র তাহলে বাকিগুলোর কি অবস্থা একটু ভেবে নিন।

মূলত এখন শিক্ষকতা একটা ব্যবসা। মনিপুর স্কুলের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষকও করোলা জি গাড়িতে চলেন। পদার্থের শিক্ষক শওকত কবীরের আলিসান বাড়ি দেখলে আপনার মাথা ঘুরাতে বাধ্য। এই সকল শিক্ষকের যে কত টাকা আছে তা তারা নিজেরাও জানে না। আমি একটা শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তাম, রসায়নের হারুন স্যার, একবার বন্ধুরা মিলে হিসেব করে দেখেছি উনার মাসিক ইনকাম ৫ লাখের উপরে।

তাও আমরা শুধু প্রাইভেট কোচিং এর হিসেব করেছি। বই লেখা, খাতা দেখা, কলেজের বেতন অজানা। আরো কথা আছে, শিক্ষকরা এখন এই ব্যবসা কে পরিচয়পত্র বানিয়ে কোচিং ব্যবসা খুলে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছে আর কোমলমতি ছাত্রদের ঠেলে দিচ্ছে এক নৃশংস প্রতিযোগিতার দিকে। শুধু তাই নয় এই শিক্ষকরা পাশাপাশি শেয়ার ব্যবসার সাথে এত বেশি পরিমানে জড়িত যে তারা ক্লাসের মাঝেও শেয়ারের দামের ওঠানামা পর্যবেক্ষন করেন,তাছাড়া রিয়েল এস্টেট ব্যবসা তো আছেই। নানাবিধ দিকে জড়িয়ে নৈতিকতা হারিয়ে এসকল শিক্ষকরা এখন আর ছাত্রদের সেই শিক্ষাটা দিতে পারে না।

পাঠ্য বইয়ের সিলেবাস শেষ করতেই উনাদের জান বের হয়ে যায়। ভর্তিবানিজ্য আর নানারকম দুর্নিতি তো তাদের নিত্যদিনের কারবার বাসায় প্রাইভেট পড়াতে পড়াতে অপকর্মগুলো করার অনেক সুযোগ পেয়ে যায় আর নীতি বিবর্জিত অন্তসারশূন্য এসকল শিক্ষকেরা তার সদ্ব্যবহার করতে কুন্ঠাবোঢ করে না। কোন একটি ঘটনা প্রকাশ হলে তা নিয়ে চলে তোলপাড়। অথচ ফাঁকতালে সেই কোমলমতি প্রানের যে অপমৃত্যু ঘটে তা কেউ দেখে না। অনুরোধ থাকবে সকলের প্রতি সেই কোমলমতি প্রানটি রক্ষার ব্যবস্থা যাতে আমরা করি।

সর্বোতভাবে যেন তার পরিচয় এবং নামটি আমরা গোপন রাখি। আর অভিযুক্ত শিক্ষকের যেন এমন শাস্তির বিধান করি যাতে আর কেউ এই অপকর্মের সাহস না পায়। এসব বিষয় নিয়ে একদিন আমার এক শিক্ষকের সাথে আমি তর্ক করেছি, তারে যেই কথাগুলো বলেছিলাম তাই এখানে আবার বলছি - "একজন শিক্ষক একজন ব্যক্তি নয়, একজন শিক্ষক একটি প্রতিষ্ঠান" আর সবশেষে সেইসকল শিক্ষকের মুখের দিকে একদল থুথু নিক্ষেপ করলাম যারা শিক্ষকতার মহান পেশাটিকে এমন নির্লজ্জের মত কলঙ্কিত করেছে। তাদেরক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।