আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গপ্পঃ গভীর রাতে ,কিস্তি ০০১

উহার সাথে আমার পরিচয় গভীর রাতে। অনেকে হয়ত নড়েনড়ে বসলেন ব্যাপারটা শুনে। তারা নড়ে চড়ে বসতে পারেন সমস্যা নেই। লঞ্চে করে দেশের বাড়ি যাচ্ছি। প্রতিবারেই কেন জানি সাথে বিশাল দলবল নিয়ে যাতায়েত হয়।

সবার হৈচৈ এ পথটুকু শেষ হয়ে যায়। এবার একাই যাচ্ছি। একা হওয়ায় খারাপ লাগছে না কিন্তু। আরাম করে বেডে শুয়ে এসেছি। আরাম করে পা এর উপর পা তুলে একটা বিড়ি ধরিয়ে বিছানার পাশেই ছাই ফেলেছি।

কেঊ দলবেধেঁ এসে জোর জবরদস্তি করে গল্পের আসরে নিয়ে বলেনি, আচ্ছা শাহেদ তন্নী মেয়েটার সাথে এখন আর তোকে দেখি না কেন। ব্যাপারটা খুলে বলত। আমরা আমরাই ত। তাছাড়া লঞ্চ ভ্রমন নিয়ে আমার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। দলবল বেধে গেলে ত প্রতি বারই একটা একটা কান্ড হয়েছে।

একবার নৌবিহারে গিয়েছে ডিপার্টমেন্টের ছেলে মেয়েরা। রাতে লঞ্চের পাটাটনে সবাই বসেছে ,ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় সবাই বেশ আমুদে মেজাজে। গান ধরা হল। হালকা গপসপ হল। একটু পরেই খাবারের ডাক আসবে, এসময় এক বড় ভাই রশালো জোকস নিয়ে বসলেন।

জোকসের বিষয় বস্তু অতি গুরুতর। কিছুক্ষনের মধ্যেই আসর পুরা মাত। হাসতে হাসতে বিষম খাওয়া অবস্থা। হঠ্যাৎ তিনি গম্ভীর হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন,আশেপাশে কোন মেয়েটেয়ে আসে নাকি দেখ ত। মনের মত কাজ পেয়ে সারভে দল যেন নড়েচড়ে উঠল।

আশেপাশে পরিচিত অপরিচিত অনেক মেয়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমাদের হাসি কাশি থেকে একটু দূরেই বিশাল একটা নারী বাহিনীর আস্তানা । সারভে দল চোখ বড় বড় করে রিপোর্ট পেশ করল,বাই আছে ত। ভাই আরও গম্ভীর হয়ে গেলেন বললেন,তাহলে পরের জোকসটা বলবো না,অন্যসময় বলবনে তোদের। লোকজন আর মজা পেয়ে গেছে।

দুইএকজন আধশোয়া ছিল তারা উঠে বসেছে। আমাদের মধ্যে চালু বলে কামরুলের বেশ নামডাক। পরীক্ষার আগে তার কাছে পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যায়। উপযুক্ত মূল্যে সে সেই প্রশ্ন বিলি করে বেড়ায়। কামরুম বলে, ভাই,আসতে আসতে বলেন।

কেউ শুনতে পাবেনা। তারপর বিশাল হাক ছাড়ে, ওই তোরা সব কাছাকাছি হয়ে বস। জহরুল ভাই জোকস বলবেন। আধশোয়া থেকে উঠে বসা লোকজন কাছে এসে বসে। অপরিচিত দুই একজন আবার এইসব দেখে উৎকর্ন হয়।

ঘাড় ফিরিয়ে জহরুল ভাই কি বলেন শোনার চেষ্টা করছে। আশেপাশে মেয়েরা যারা ছিল তারা গল্পসল্প বন্ধ করে কান খাড়া করেছে। জহরুল ভাই যেন মহা অনিচ্ছায় শুরু করলেন,আচ্ছা ঠিক আছে,শোন তাহলে। এই বলে থামলেন। সবাই গোলগোল চোখে তাকিয়ে আছে।

ব্যাপারটাতে তিনি বেশ আরাম পাচ্ছেন। কিছুক্ষন সেটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে নিয়ে শুরু করেলেন, ধর তোদের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়েছে। শ্রোতা মহলে হালকা আলড়োন পড়ল। সবাই জানতে চায় সদ্য বিবাহিত দম্পতিটির কাহিনী। সবার মনে পবিত্র জিজ্ঞাসা।

হঠ্যাৎ এদিকে দিকে তাকিয়ে বলেলেন,ধর শাহেদের বিয়ে হয়েছে। বাসর রাতে শাহেদ ঘরে ঢূকে যেই না দরজা লাগিয়েছে ওমনি বঊ... আমি ত আকাশ থেকে পড়লাম। চোখ বড়বড় করে বসে ছিলাম নিরীহ ছেলের মতন । আর আমাকে বলা কওয়া নেই না জানিয়েই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হল। অন্যায় ঘোর অন্যায়।

ওদিকে শাহেদ নামের বর আর তার চঞ্চল চপলা বউকে নিয়ে জহরুল ভাইয়ের গল্প চলছে। আর আমার কানদুটো ক্রমশ লাল হয়ে যাচ্ছে। রেড এলার্ট অবস্থা যাকে বলে। প্রতি কথার শেষে আকাশ ভেঙ্গে সবাই হেসে ঊঠছে। আর হাসির দমকে পাটাতন কাপছে।

আশেপাশে থেকে মেয়েদের হাসির দমক শুনতে পাচ্ছি। এবার কান দিয়ে যেন গরম ধোয়া বের হতে শুরু করেছে আমার। যাইহোক একসময় জহরুল ভাই গল্প শেষ করলেন। লোকজন সেই হাসির রেশ নিয়ে অনেকক্ষন গড়াগড়ি করল। আমি গড়াগড়ি করতে পারলামনা।

গল্প শেষে সবাই কি কারনে আমাকে 'মুজা শাহেদ' বলে ডাকা শুরু করেছে। গল্পের নায়ক মুজা দিয়ে বিশেষ কিছু কাহিনী করে। সেই থেকে মুজা নামের উৎপত্তি। কিন্তু এর সাথে শাহেদ নামটি কেন লাগাচ্ছে সবাই। প্রতিবাদ করে কাজ হলনা।

হয়না। বাঙ্গালির প্রতিবাদ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অরন্যে রোদন। তাও আবার অসমমতিতে সদ্য বিয়ে হওয়া নিরীহ পুরুষের প্রতিবাদ কে শোনে। তাই চুপচাপ বসে রইলাম। খাবারের ডাক পড়ল।

সবাই চলে গেছে। আমি বসে আছি। আমাদের ক্লাসের শারমিন এসে ভাল ছাত্র ফাহাদকে আদুরে ভংগিতে বলছে শুনি, এই চলো না খেয়ে নেই। আর ওই মুজা শাহেদ কেঊ ডেকে নাও। ডাইনিং বন্ধ হয়ে যাবে।

বলেই দুজন হাসিতে লুটোপুটি খেতে লাগল। আমাকে খাবার খেতে ডাকার তাদের কোন লক্ষনও দেখা গেলনা। নিজেদের মধ্যে হাসতে হাসতে খাবার খেতে চলে গেল জুটিটি। যাই হোক লঞ্চে এই জোকস প্রচুর ভাত পেল। ওতে আর রস ঢুকল।

প্রত্যেকে নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ঢুকিয়ে উহাকে সমৃদ্ধ করার মহতী কাজে নামলেন। পরদিন দেখা গেল ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি মেয়ে এদিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাচ্ছে। আর নিজের মধ্যে কি ঘুসরঘুসর করে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। এর বদৌলতে সেবারে নৌবিহার সবার ইউনিভারসিটির প্রিয় কটি দিনের একটি হল। এখনও দেখা হলে কেঊ কেউ ঐ নৌবিহারে কথা মনে করিয়ে দেয় ,বলে, আহ কি দিন ছিল।

গবেষনার কাজে গতমাসে ইউনিভার্সিটি গিয়েছিলাম। জুনিয়র এক ছেলের সাথে দেখা করিয়ে দিলেন স্যার। বেশ ভদ্র চটপটে মনে হল। কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে। কথায় কথায় পরিচয় দেবার শেষে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

গদগদ মুখে বলে,আরে আপনাকে ত চিনি। আপনি মুজা শাহেদ না? আমি উদাস চোখে তাকালাম। দলবেঁধে যাতায়াতের এইসব ঝামেলার অনেক স্মৃতি আছে। তাই এবারের একা একা আসতে আলাদা মজা লাগছে। কিন্তু রাত হতেই ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে গেল...... (আলস্য না পেয়ে বসলে চলবে) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।