আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলেকট্রনিক সার্কিট বানানোর নানা ধরনের বোর্ড এবং সল্ডারিং নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা !!! (স্পেশালি ইলেক্ট্রনিকস এর নতুন হবিস্ট ভাইদের জন্য )

আউলা মাথার বাউলা পোলা। ইলেক্ট্রনিকস এর নতুন হবিস্ট ভাইদের জন্য আজকে এই পোস্টে সার্কিট বোর্ড আর সল্ডারিং নিয়ে আলোচনা করব। ইলেকট্রনিক পার্টস গুলোকে জোড়া দিয়ে নানা ধরনের সার্কিট বানানোর জন্য প্রধানত ২ ধরনের বোর্ড বাজারে পাওয়া যায়। ১। প্রোজেক্ট বোর্ড ২।

ভেরো বোর্ড ছবিতে দেখুন প্রোজেক্ট বোর্ড জিনিসটা হল অনেকটা ৪ কোনা প্যাড এর মত। এর ম্যাট্রিক্স এর মত ছিদ্র গুলার ভেতর দিয়ে সার্কিট পার্টস এর পা গুলা এবং তার ঢুকিয়ে বোর্ড এ লাগাতে হয়। পার্টস গুলা শক্ত করে আটকানোর জন্য এই ছিদ্র গুলার নিচে অনেকটা স্প্রিং এর মত কাজ করে এরকম তামার ফ্রেম থাকে। এই ফ্রেম দিয়ে কিছু ছিদ্র সংযুক্ত করাও থাকে। ছবিতে দেখান হয়েছে বোর্ড এর ছিদ্র গুলার নিচে দিয়ে কিভাবে পয়েন্ট গুলা সংযুক্ত বা শর্ট করা থাকে।

শর্ট অংশ গুলা একেকটা তারের মত বা ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় “নোড” এর মত কাজ করে। একটা পয়েন্ট থেকে আপনি ইচ্ছা মত বাইরে দিয়ে তার বা পার্টস লাগিয়ে কাজ করতে পারবেন। এ জন্য বাজারে তামার চিকন তার কিনতে পাওয়া যায়। এটি কিন্তু প্যাঁচানো না। ডিশ লাইনের তারের মত ১টিই শক্ত চিকন তার।

প্রজেক্ট বোর্ড দুনিয়াজুড়ে হবিস্টদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় কেননা এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল একে বারবার ব্যবহার করা যায়। এক সার্কিট নিয়ে কাজ করলেন, আবার পার্টস গুলা টেনে তুলে ফেলে অন্য কম্বিনেশনে অন্য সার্কিট বানালেন। এবার আসুন ভেরো বোর্ড এ। এই বোর্ড দেখতে অরিজিনাল সার্কিট বোর্ড এর মত। এটা একটা শক্ত প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থে তৈরি এবং প্রোজেক্ট বোর্ড এর মত এরও একদিকে ছিদ্র গুলা শর্ট করা আছে।

কিন্তু এখানে তামার ফ্রেম এর বদলে তামার প্রলেপ দিয়ে লাইনিং করা আছে। ছবিতে এটা দেখান হয়নি তবে শর্ট কিভাবে করা হয় তা দেখান হয়েছে। বোর্ড উল্টালেই লাইনিং দেখা যাবে। এই বোর্ড এর অসুবিধা হল এতে সরাসরি কোন পার্টস লাগান যায়না। এখানে পার্টস গুলাকে সলডারিং করতে হয়।

এটা হল অনেকটা ওয়েল্ডিং এর মত ব্যাপার। ওয়েল্ডিং এর মত এখানেও একটা বিশেষ ধরনের আয়রন (কাপড়ের ইস্ত্রি না কিন্তু!!) দিয়ে সল্ডার নামক একটা পদার্থকে (তড়িৎ পরিবাহী এবং কম গলনাংকের খুব নরম এক ধরনের ধাতব সংকর যা বাজারে চিকন তারের আকারে পাওয়া যায়) গলিয়ে পার্টস এর পা গুলাকে বোর্ড এর তামার লাইনিং এর সাথে মানে বোর্ড এর সাথে লাগাতে হয়। আরও অসুবিধা হল একে বারবার ব্যবহার করাটা সমস্যা। কারন এখানে টান দিলে পার্টস উঠে আসেনা। ওগুলাকে ডিসন্ডারিং করতে হয়।

ডিসন্ডারিং এর সময় আয়রনকে উত্তপ্ত করে পার্টস এর গোড়ায় ধরে অন্য কিছু দিয়ে টান দিয়ে তুলতে হয়। এটা একদিনে শেখার বিষয় না। নিয়মিত চর্চা লাগে। তবে সল্ডারিং এ সহজ করার জন্য রেজিন নামক একধরনের ক্রিস্টাল এর মত বাদামি রাসায়নিক বস্তু পাওয়া যায় (সাধারনত কঠিন আকারে থাকে তবে আয়রন ধরলে বাষ্পসহ তরল হয়ে যায় এছাড়া কোথাও কোথাও তরলও পাওয়া যায়)। এটা সল্ডার কে তরল রাখতে এবং ধাতুর ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।

সল্ডারিঙঃ প্রথমে আয়রন উত্তপ্ত করে নিয়ে এর সূচালো মাথা কে রেজিন এ হাল্কা ডুবিয়ে নিয়ে এরপর হাল্কা সল্ডার লাগালে ভাল কাজ হয়। আর রেজিন তরল পেলে তা কোন ব্রাশ দিয়ে বোর্ড এর কাঙ্ক্ষিত যায়গায় ঘষে খানিকটা লাগিয়ে নিন। এরপর পার্টস এর পা বোর্ড এর ছিদ্রতে ঢুকিয়ে দিয়ে এরপর ১ হাতে আয়রন আর অপর হাতে সল্ডার তার ধরে এদেরকে একসাথে পার্টস এর গোড়ায় এবং তামার লাইনিং এর সাথে খানিক্ষন ( কয়েক সেকেন্ড) ধরে রাখলেই পার্টস আটকে যাবে। পার্টস এর পায়ের বাড়তি অংশ ধারাল প্লায়ার্স দিয়ে কেটে ফেলা উচিত তাহলে সার্কিট দেখতে জঙ্গলের মত লাগবে না। ছবিতে দেখুন পুরা প্রসেসটা দেখানো হয়েছে।

কোন প্রোজেক্ট করার ক্ষেত্রে প্রথমেই এটাকে প্রোজেক্ট বোর্ড এ করা উচিত। তারপর একদম ফাইনাল কাজে লাগানোর জন্য যে সার্কিট বানাবেন তা ভেরোবোর্ড এ বানাবেন। এছাড়া আরেক ধরনের বোর্ড আছে নাম PCB (printed circuit board). বাজারে কোন ইলেক্ট্রনিকস এর দোকানে যেয়ে আপনি সার্কিট ডায়াগ্রামের পিসিবি লেআউট দিলে তারা বানিয়ে দিবে। এটা অনেকটা ভেরো বোর্ড এর মত তবে এগুলা সাধারনত একটা বোর্ড এ কোন নির্দিস্ট সার্কিট বানানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। আমরা যেসব ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দেখি তার সব সার্কিটই এই পিসিবিতে বানানো হয়।

সার্কিট ডায়াগ্রাম এবং পিসিবি এর লেআউট আঁকানোর জন্য বাজারে অনেক সফটওয়্যার ( যেমনঃ altium, express PCB ইত্যাদি) পাওয়া যায়। যারা প্রফেশনাল না তারা ইচ্ছা করলে শিখতেও পারে আবার নাও শিখতে পারে তবে এগুলা প্রফেশনাল লোকদের অবশ্যই শিখতে হয় । আজকে এইটুকুই। কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্যের ঘরে লিখুন। (দৃষ্টি আকর্ষনঃ সল্ডারিং আয়রন কারেন্ট লাইনে লাগালে মানে কাজের সময় খুবই উত্তপ্ত করতে হয়।

তাই এটা ব্যাবহারে খুব সাবধান থাকতে হবে। যেন কোনভাবেই শরীরের কোথাও না লাগে। দুর্ঘটনাক্রমে লেগে গেলে সাথে সাথে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ক্ষত ধুতে হবে এবং ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এছাড়া সাধারনত বাংলাদেশে সহজলভ্য সল্ডারগুলাতে সীসা দেয়া থাকে যা বিষাক্ত ধাতু। তাই কাজ খোলামেলা পরিবেশে সাবধানে করা উচিত।

) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.