আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক ডজন নস্টালজিয়া.........

তেরোর ব্লগ মানেই হাবিজাবি !! ১. ছোটবেলা আমাকে কেউ যদি বলতো যে মুখ ধুতে আমি শুধু কুলি করতাম আর চোখ কোনা পানিতে ভিজাতাম। কারণ আমার ধারণা ছিলো যে পুরা মুখ ধুতে হলে বলবে সম্পূর্ণ মুখ অথবা মুখ-মন্ডল। শুধু মুখ মানে তো যা দিয়ে খাই। এই সহজ হিসাব কেনো জানি বড়রা বুঝতো না !! পরে বেশ বড় হয়ে ব্যাপারটা ধরতে পারলাম। ২. রোজার মাস।

যদিও আমি রোজা রাখি না তাও ঠিকই সবার সাথে নিয়ম করে ইফতারি করে ভাব নেয়া ছিলো আমার ছোট বেলার অভ্যাস। জানি এইটা সব পিচ্চিদেরই থাকে। মাঝে মাঝে শুনতাম রোজা ভেঙ্গে গেছে। আমার ধারনা ছিলো রোজা হয়তো ঘরের মত কিছু যা ভেঙ্গে যায়। একদিন আমি ধরাম করে পড়ে গেলাম।

পড়ে অনেক কান্না কাটি। আম্মু দৌড়ায় আসছে। বলে কি ব্যাপার ব্যাথা পাইছো আম্মু?! আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি না, আম্মু আমার রোজা তো ভেঙ্গে গেলো(যদিও আমি রোজা রাখি নাই তাও কেনো আমার মাথায় রোজা ভেঙ্গে গেলো এই কথা আসলো আমি আজো জানি না) ৩. ছোটবেলা আমি যখন কিন্ডার-গার্ডেন স্কুলে পড়তাম। আমাদের স্কুলের সামনে ছিলো অনেক ফুল গাছ। সেখানে অনেক প্রজাপতি উড়তো।

তো আমি ছাড়া কেউ ঐ প্রজাপতি ধরতে পারতো না। আমি অবশ্য ধরেই ছেড়ে দিতাম। তাই আমাকে মেয়েরা এমনকি ক্লাসের ছেলেরাও বিশেষ সম্মান দিতো। কারন আমি প্রজাপতি ধরতে পারি ওরা পারে না। ৪. ছোটবেলায় আমি তেলাপোকা চরম ভয় পেতাম।

এখনো পাই তবে কম। অবশ্য আগেও যেমন ঘৃণা করতাম এখনো করি। ছোটবেলা আমার ধারনা ছিলো যে তেলাপোকার মাথার উপর যে সাদা অংশটা আছে ঐটা আসলে পুরাটাই তার চোখ। সে ঐ বিশাল একটা চোখ দিয়ে ডেব ডেব করে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। যদিও বড় হলাম,বড় হয়ে তেলাপোকা নিয়ে একটা চ্যাপ্টারই পড়লাম তাও আমার এখনো দেখলে মনে হয় যে ঐটা আসলেই একটা বিশাল চোখ।

৫. আমাদের স্কুলের সমাজ ম্যাডাম ছিলো এক কথায় অনন্য। উনার দৈনন্দিন কাজ ছিলো এসে কিছু পড়তে দেয়া আর আমরা ঘেন ঘেন করে পড়তাম আসলে পড়তাম না, পাশের জনের সাথে গল্প করতাম। উনি জীবনে ধরতেও পারেন নি। একদা উনি ক্লাসে ঝিমাচ্ছেন। হঠাত টের পেলেন যে তার একজন ছাত্রী ক্লাসে নেই।

আমাদের বান্ধুবী তখন পাশের রুমে গপ সপ করছে। উনি তাকে ডেকে আনলেন। তারপর বললেন, “আহারে এইজন্যই তো বলি আমার ক্লাস রুমটা খালি খালি লাগে কেনো। আমার একটা মেয়ে নাই। এই মেয়ের জন্য আমার ঘুম আসে না”।

চটজলদি কানে ধরা অবস্থায় আমার বান্ধুবীর জবাব, “ম্যাডাম আপনি তো ঘুমাচ্ছিলেন !!! আমি কিন্তু পিছন থেকে দেখছিলাম !!” ৬. এই ম্যাডামকে নিয়ে গল্পের শেষ নাই। এই ম্যাডাম আমাদের অবজেক্টিভ পরীক্ষা নেয়া শুরু করলো। হঠাত শুনি উনি বলছে যে ২ নাম্বার অকশন,৩ নাম্বার অকশন। আমি প্রথমে ভাবলাম আমি কি ভুল শুনছি?! পরে দেখি না সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। মানে ম্যাডাম অপশন কে বলে অকশন।

আচ্ছা !! এরপর পুরা বছর আমরা ভুলেও অপশন শব্দটা উচ্চারন ও করি নাই। পরে শুনি যে পরের বছর গুলাতেও অন্যরা অকশন বলতো। ম্যাডাম তার ভালোমানুষী(!!) মনে ভেবে নিতো যে আসলেই তিনি কারেক্ট। এইটা অকশন ই হবে। ৭. আমাদের স্কুলের ডায়রীর পিছনের কভারে পুরো সব টিচারদের গ্রুপ ছবি থাকতো।

একদা আমার অতি প্রিয় বন্ধুক যাদের যাদের দেখতে পারতো না তাদের চেহাড়া বিকৃত করে দিলো। এক ম্যাডাম যিনি কখনো আমাদের ক্লাস নেই নি। উনি একদিন আমাদের গ্যাপ ক্লাস নিতে এসেছিলো। তো উনি দেখি আমার পাশে দাঁড়ায় অনেকক্ষন ধরে আমার ডায়রী তাঁকায় তাঁকায় দেখলো। পরে উনি চলে যাওয়ার পর আবিষ্কার করলাম আমার বন্ধুক উনার মুখে (ডায়রীর গ্রুপ ফটোতে) দাড়ি গোফ বানায় রাখছিলো।

৮. পিচ্চি কালে হয়তো অনেকই চারটি ছেলে(ওয়ান), চারটি মেয়ে(জিরো) এর কথা জানে। ক্যালকুলেটর দিয়ে আমরা অনেকই এইডা করতাম। তো এক গার্হ্যস্থ অর্থনীতি ক্লাসে ম্যাডাম অনেক ক্ষন হাবিজাবি পড়ায় বললো যে এখন আমি তোমাদের প্রশ্ন করবো। তখন আবার আমার পিছনের দুইটা মেয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে চারটা ছেলে,চারটা মেয়ে এর খেলা ক্যাল্কুলেটর দিয়ে একে অপরকে শিখাচ্ছিলো। ম্যাডাম সবাইকে পড়া ধরছে আর বলছে এইডা কে পারো? তো ওদের পাশের এক জন বললো কি কি রে? সে পড়া নিয়ে জিজ্ঞাসা করছিলো।

কিন্তু অই দুইজন মনে করলো যে অন্য কথা। ওরা বলে এই তো চারটি ছেলে চারটি মেয়ে। এইটা শুনেই আর বাকি কিছু না শুনেই ঐ মেয়ে লাফ দিয়ে বলে ম্যাডাম আমি পারি। ম্যাডাম তো অনেক খুশী। বলে কি? উত্তরে বলে, “চারটি ছেলে চারটি মেয়ে”।

এরপর ম্যাডামের রিয়াকশন নাই বললাম। ৯. ইংলিশ যে স্যারের কাছে আমরা কোচিং করতাম স্যার একদিন খুব ভাব নিয়ে ছিনতাই সম্পর্কে বলছে। উনি বললেন, “উনারে বলে কোনদিন ছিনতাই কারীরা ছিনতাই করে কিছু নিতে পারে নাই”। উনি বলতেছেন, “একবার একজন এসে বলে আমারে ঐ ব্যাটা রিকশা থেকে নামেন!! কিন্তু আমি বললাম তুই কেন তোর মত আরো ১০ জন এসেও আমারে নামাইতে পারবেন না!!” এইটা শুনে পিছন থেকে আমাদের বান্ধুবী জোরে স্যাররে বইলা উঠল, “পারবো কেমনে!! যা মোটা !!” ১০. একবার ক্লাস টেনে আরেক লুল ইংলিশ স্যার আমাদের পড়া ধরছে। আমাদের সায়েন্স আর আর্টস একসাথে ক্লাস হতো।

স্যার ঐদিন সব আর্টসদের পড়া ধরছে। কেনো জানি আমাদের ধরছে না। স্যারের ধারণা এইগুলা তো আমরা পারিই। পরে স্যার যারা পারে না তাদের বিশাল লাইন করে আমাকে লিডার এর দায়িত্ব দিয়ে বলে যে যাও এদের সবাইকে হেডস্যারের রুমে নিয়ে যাও। বলবা এরা কিচ্ছু পারে না।

তখন আমি মনে মনে ভাবছি যারে এই কাজটা দিতাছেন সেই তো মাথা মুন্ডু কিচ্ছু পারতো না। হা হা হা ১১. নাইনে উঠার পর আমাদের সময় কাটানোর অন্যতম কাজ ছিলো এক বান্ধুবীর প্রেমপত্র ছিনতাই করা এরপর তা জোরে জোরে রিডিং পড়া। সে বাসায় ধরা পড়ার ভয়ে বান্ডীল ভরা প্রেমপত্র নিয়ে আসতো। কিন্তু এইখানেও আমরা তার প্রেম পত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতাম। বেচাড়ি আমাদের অভিশাপ দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারতো না।

তার প্রেমপত্রে নানান সময়ে আমরা নানান জিনিস আবিস্কার করে ফেলেছিলাম। হে হে হে...একটা বিশেষ এডাল্ট কবিতাও ছিলো !! ১২. আবার ইংলিশ ক্লাস। ইংলিশ ক্লাসে ইংলিশ ফর টুডে তে ফিরোজা নিয়ে যে চ্যাপ্টার টা ছিলো স্যার ঐটা পড়াচ্ছে। স্যার একজনকে দাঁড় করায় জিজ্ঞাসা করলো আচ্ছা, they teased her. এর মানে কি? তো পিছন থেকে অন্যরা বলে দিলো যে তারা উত্তক্ত করতো। কিন্তু বেচাড়ি কিছু না বুইঝা সাথে সাথে জবাব দিলো তারা উত্তপ্ত করতো !! আবার আরেকদিন স্যার জিজ্ঞাসা করলো আচ্ছা বলো তো রেডিও তে কি কি প্রোগ্রাম হয়।

আমরা নানান জনে নানান টা বলছিলাম। কিন্তু যারে ধরলো সে বেচাড়ি হয়তো গাইড থেকে মুখস্থ করছিলো। সে শুধু মিন মিন করে বললো, FAMILY PLANNING PROGRAMME !!!! এরপর চুপ !! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।