আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দালি, লোরকা ও বুনুয়েল - যে তিন বন্ধুর হাত ধরে বিশ্ব দেখেছে নতুন আলো

সমাজবদ্ধ কিংবা মুক্তকারাবদ্ধ এই আমরা শান্তির পথে হন্যে হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত সালভাদর দালি, ফেদেরিকো গার্থিয়া লোরকা এবং লুই বুনুয়েল - যথাক্রমে চিত্রকলা, কবিতা-নাট্যকলা এবং সিনেমা - সংস্কৃতির এই তিন শাখায় সবচেয়ে প্রতিভাবানদের তালিকায় এই তিন জন স্প্যানিয়ার্ডই স্ব স্ব ক্ষেত্রে একেবারে প্রথম সারিতে থাকবেন। চিত্রকলায় সুররিয়ালিস্ট ধারার প্রসারে সবচেয়ে সফল ছিলেন দালি, সিনেমায় সুররিয়ালিজম, স্যাটায়ার ও ডার্ক কমেডির সফল চিত্রায়ণে অগ্রগণ্য একজন চিত্র পরিচালক ছিলেন বুনুয়েল আর অন্যদিকে মৃত্যু, প্রেম, সামাজিক আর রাজনৈতিক অসঙ্গতির প্রতি ধিক্কার আর সাধারণ্যের কবি ছিলেন লোরকা। এই তিন বন্ধুর পরিচয় ও ঘনিষ্টতার শুরু হয় মাদ্রিদের একটি স্টুডেন্ট হলে থাকতে গিয়ে। বুনুয়েলের নির্মিত প্রথম মুভি "উন চিয়েন আন্দালু"-তে কিছু দৃশ্যে দালি অভিনয় করেছিলেন, আর দালির কিছু ছবির থিমও ব্যবহৃত হয়েছিলো সরাসরিই। কিছু দৃশ্যের অনুপ্রেরণা এসেছে লোরকার কবিতা থেকে।

বুনুয়েলের ভাষ্যমতে মাঝেমাঝে স্টুডেন্ট হলের বাগানে তিনি নিবিড়মনে লোরকা'র নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি শুনতেন আর সেই কবিতাগুলোরই অনেক চিত্র ফুটে উঠতে দেখা যায় বুনুয়েলের মুভিগুলোতে। ঘন্টার পর ঘন্টা লোরকা আর বুনুয়েলের আইডিয়া শুনতে শুনতে ছবি আঁকতেন দালি। এই পারষ্পরিক কাজের প্রতি প্রভাবটাই তাদেরকে নিজ নিজ প্রতিভায় দিয়েছিলো নতুন ডাইমেনশন। সেসময়কার রাজনৈতিক অস্থিরতা বাম্পন্থী লোরকাকে অন্য ২ বন্ধু থেকে বিপরীতমুখী অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেয় - আবার ডানপন্থী মিলিশিয়ারা লোরকাকে যখন হত্যা করে তখন প্রচন্ডভাবে আহত হন অন্যরা এবং পরবর্তীতে তাঁদের কাজে সেই দুঃখবোধটা ফুটে উঠে প্রবলভাবে। সামাজিক অসঙ্গতি, যুদ্ধ-বিগ্রহ আর শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে এই তিন বন্ধু ছিলেন সবসময়ই সোচ্চার।

তিনজনের কাজেই প্রচলিত বিশৃংখলার প্রতি কড়াভাবে আঘাত করা হয়েছিলো। আমার প্রিয় এই ৩ ব্যাক্তিত্ত্বের কয়েকটি কাজ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো এই লেখায়। সালভাদর দালিঃ "Geopoliticus Child Watching the Birth of the New Man" এই পেইন্টিংটি ১৯৪৩ সালে নিউইয়র্কে প্রথম প্রদর্শিত হয়। এর পটভূমি বর্ণনায় দালি লিখেছিলেন - "parachute, paranaissance, protection, cupola, placenta, Catholicism, egg, earthly distortion, biological ellipse. Geography changes its skin in historic germination." কিছু অল্পপ্রচলিত শব্দের অর্থ নিয়ে আগে একটু বলে নিই। স্প্যানিশ paranaissance-এর ইংরেজি অর্থ "for naissance"- নাইসেন্সের বাংলা হলো কোনো ব্যাক্তি বা সঙ্গঠন বা কোনো একটা আন্দোলনের জন্ম।

cupola অর্থ গম্বুজ বা গম্বুজাকৃতির ছাদ - ছবির উপরের অংশের ছাতার মত যেটা দেখা যাচ্ছে তা'ই নির্দেশ করেছেন। placenta অর্থ অমরা বা জরায়ু - পৃথিবীর মাঝখান থেকে যে নতুন মানুষটা বেরিয়ে আসছে সেই ফাটলটার দিকে নির্দেশ করেছেন। Catholicism - ক্যাথলিক বিশ্বাসের প্রতিও আঙ্গুল তুলেছেন। ellipse অর্থ উপবৃত্ত বা ডিম্বাকৃতি। germination - অর্থ অঙ্কুরোদগম অর্থাৎ বীজ বা ডিম ফুটে বেরিয়ে আসা।

দালি'র দেয়া বর্ণনা থেকেই পেন্টিংটার থিমটা বুঝার জন্যে অনেকগুলো হিন্টস পাওয়া যায়। নিচে পড়ে থাকা খোসা থেকে বোঝানো হলো পৃথিবীর ক্রমানুক্রমিক পরিবর্তন। ডিম্বাকৃতির পৃথিবীর মধ্য থেকে জরায়ুর মত একটা ফাটল দিয়ে প্রবল ক্ষিপ্ততায় বেরিয়ে আসতে চাইছে একটা মানুষ। আর ফাটলটা পৃথিবীর মানচিত্রের ঠিক কোন জায়গাটা? হ্যাঁ- নর্থ আমেরিকা। হাত-পা দিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে পরিবর্তন করে দিচ্ছে পৃথিবীর চেহারা, ফাটল দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে রক্তের ফোঁটা - সে সময়ে চলমান ২য় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল যদি বিবেচনায় নিই তাতেই বুঝবো সালভাদর দালি এ দিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছেন।

রক্তক্ষয়ী এই বিশ্বযুদ্ধের পরিণতিতেই যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি আর ইউরোপের অনেক নতুন দেশের সৃষ্টি হয়। বেরিয়ে আসতে চাওয়া মানুষটার হাতটা পড়েছে এক্কেবারে ঠিক ইংল্যান্ডের দিকে - যার ফলে ইংল্যান্ডের অবয়বের কিঞ্চিত সংকোচন লক্ষ্যণীয়। আর আমরা সবাইই জানি একসময় প্রবল সাম্রাজ্য ছিলো যে ইংল্যান্ডের তা সংকুচিত হতে হতে আজ কোথায় আছে, আর বৃটিশদের জায়গাটা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে আমেরিকা। খেয়াল করলে বোঝা যায় আফ্রিকাকে একটু বেশি সোনালী রং দিয়ে এঁকেছেন আর তা থেকে চুইয়ে পড়ছে কিছুটা সাদা বা রুপালী রং-এর ফোঁটা। সোনা আর হীরার জন্যে আফ্রিকার আজ কি দুর্দশা আমরা জানি।

হাড় জিরজিরে নারীমূর্তিটা আঙ্গুল দিয়ে তাঁর পা জড়িয়ে থাকা শিশুকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ইউরোপের পতনের দিকে। নারীমূর্তি ও শিশুর অংশটুকু অনেকটা প্রাচীন গ্রীক মূর্তির অবয়ব মাথায় রেখেই আঁকা হয়েছিলো। গ্রীক মূর্তিতে যে শিশুটা ছিলো তা এই ছবির ক্ষেত্রে ভয় পেয়ে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে নারীমূর্তির পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই দুইজনের ছায়াটা একটু ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে- অপেক্ষাকৃত বড় শরীরের নারীর ছায়াটা এসেছে ছোট আর শিশুটার ছায়াটা হয়েছে বড় - যদিও প্রথম দেখায় মনে হতে পারে স্বাভাবিকভাবেই ছায়াগুলো এসেছে, কিন্তু রক্তের ফোঁটা আর পৃথিবীর ছায়া দেখে পরিষ্কার হয় আলোর নিক্ষেপনটা যে পাশ থেকে হয়েছে সেটা মাথায় রাখলে শিশুমূর্তির ছায়াই বড়(এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আমি টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে কয়েকট বস্তু পাশাপাশি রেখে পরীক্ষাও করলাম)। এই তুলনামূলক উল্টা ছায়া দেখানোর উদ্দেশ্য - পৃথিবীর এই পরিবর্তনের পরিণতি বর্তমানে যা আছে তার চেয়ে ভবিষ্যতে আরো প্রকট হবে সেই ইঙ্গিত।

পৃথিবীর উপরের দিকে ছাতার মত যে অংশটা সেটা হয়তোবা পারমানবিক বোমার উপর্যুপরি ব্যবহার নির্দেশ করছে। বামের অংশটায় খেয়াল করলে দেখা যাবে লাল গাউন পরিহিত একজন পোপ বা উচ্চপর্যায়ের ধর্মগুরু এবং সাদা কলারসহ কালো গাউন পরিহিত অধস্তন পাদ্রী সামনের ঘটনার দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। মধ্যবয়সে দালি ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসের প্রতি কিছুটা ঝুঁকে পড়েন। জন দ্যা ব্যাপ্টিস্টের কাজের প্রতি কিছুটা অনুরক্ত হয়ে পড়েন - এই প্রভাবটাই লক্ষ্যণীয় এই অংশে। আর ডানপাশের অংশে নৃত্যরতা নারীমূর্তি - দালির অন্য আরো অনেক পেইন্টিংয়ের মতই এখানেও এটি হয়তো একটা পরিবর্ধন।

হাত-পা ছোঁড়া অবয়বের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তাঁর দেখা অন্য পেইন্টিং এবং ডিমের ভেতরকার মানুষটা তাঁর নিজের ছবি থেকে। ফেদেরিকো গার্থিয়া লোরকাঃ অন্ধকারের মৃত্যুশোক সতেজ কিছু স্বপ্ন নিয়ে আমি ঘুমাতে চাই, গোরস্থানের আর্তনাদ থেকে বাঁচবো বলে। সেই শিশুটার স্বপ্ন নিয়ে আমি ঘুমাতে চাই সমুদ্রের উত্তালে হৃদয়টাকে চিড়তে চায় যে। শুনতে চাইনা আর - মৃতের শরীরে রক্তক্ষরণ হয়না, পূঁতিগন্ধময় মুখ পানির জন্যে তৃষ্ণার্ত হয়। শিখতে চাইনা আর – ঘাসের আর সর্পিল চাঁদের নিপীড়ন - ভোর অব্দি যে পরিশ্রম করে চলে।

আমি এক মূহুর্ত ঘুমিয়ে নিবো, এক মূহুর্ত, এক ক্ষণকাল, এক শতাব্দী; তবে জেনে রেখো - আমি মরিনি; জেনে রেখো - আমার ওষ্ঠাধরে আছে এক স্বর্ণখনি; পশ্চিমের ডানায় ভর করা আমি এক নগণ্য সহযাত্রী; নিজের অশ্রুজলের আমি এক সনির্বন্ধ প্রতিবিম্ব। ভোরের ক্ষণে যবনিকায় ঢেকে দিয়ো আমায়, ভোর যে অগণিত পিঁপড়া ছুঁড়ে দেবে আমার দিকে, আমার পাদুকাজোড়া ভিজিয়ে নিয়ো গাঢ় পানিতে বৃশ্চিকের কাঁটা তাহলে হড়কে যাবে। এখনই সতেজ কিছু স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে চাই, যে বিলাপ আমায় মাটিতে মিশিয়ে নেবে তা শিখবো বলে; সেই আঁধারশিশুর সাথে আমি থাকতে চাই সমুদ্রের উত্তালে হৃদয়টাকে নিংড়াতে চায় যে। মূল কবিতা - Gacela of the Dark Death Gacela শব্দের সমার্থক শব্দ গজল। মুসলিম সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত অনেকগুলো প্রসিদ্ধ শহরের একটি ছিলো স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চল- আর এই শহরেই জন্ম ও বেড়ে ওঠেন লোরকা।

ফার্সী সাহিত্যের একটি আবিষ্কার - "গজল" থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকগুলো কবিতা লিখেছিলেন লোরকা। Gacela of the Dark Death তাঁর মধ্যে একটি। এই কবিতায় পারষ্পরিক সন্নিবেশ হয়েছে মৃত্যু অনুভূতি, প্রেম, জীবনবোধ, ঘুম আর দুঃখবোধ। ১৯৩৬ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগে, স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে এই কবিতাটি লিখেছিলেন তিনি। ডানপন্থী স্প্যানিশ মিলিশিয়াদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তার কয়েকবছর আগে থেকেই, বুঝতে পেরেছিলেন যে কোনোসময় আক্রান্ত হবেন তিনিও।

মঞ্চে তাঁর বেশ কিছু নাটকে সমাজব্যবস্থা আর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলে আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন। আসন্ন অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু উপলব্ধি করে তাঁর এ কবিতায় মৃত্যুকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। লুই বুনুয়েলঃ সিনেমাঃ The Phantom Of Liberty [ইউটিউব লিংক] ছবির পোস্টারের দিকে তাকালেই বোঝা যায় বুনুয়েল তাঁর মুভিতে কি পরিমাণ বিদ্রুপ করতে পারেন কিছু বিশেষ শ্রেণী বা জাতিকে। স্ট্যাচু অব লিবার্টি'র বিকৃত উপায়ে এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে। স্ট্যাচু অব লিবার্টি ছিলো আসলে ফ্রান্সের স্থাপত্যকর্ম যা পরবর্তীতে আমেরিকার প্রতি উৎসর্গ করা হয়।

এই মুভিটিতে ফ্রান্সের কিছু পটভূমিকেই নানাভাবে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেছেন বুনুয়েল। মুভির শুরুটা হয় নেপোলিয়নের বাহিনীর স্পেনে মানুষ হত্যার কিছু দৃশ্য দিয়ে। নেপোলিয়নের আর্মি লিবার্টি বা স্বাধীণতার কথা বলে স্পেন দখলের জন্যে আসে- আর তার বিরোধী স্প্যানিশ সাধারণ লোকেদের হত্যা করে। এসময় তারা বলে - "লং লিভ চেইন্স" বা "দীর্ঘজীবী হোক শিকল" আর "ডাউন উইথ লিবার্টি" বা "স্বাধীনতা নিপাত যাক"। স্ট্যাচু অব লিবার্টির নারীমূর্তির পায়ের দিকে একটা অবমুক্ত শেকল আছে- স্প্যানিশ সাধারণ্যের মুখ দিয়ে ঐ কথাগুলো বলিয়ে আসলে বুনুয়েল ফ্রান্সের মিথ্যা স্বাধীণতার আশ্বাস দিয়ে আগ্রাসী মনোভাবকে ব্যাঙ্গ করলেন।

অতঃপর নেপোলিয়নের সৈন্যরা চার্চে ঢুকে চার্চের নীতিবিরোধী মদ্যপান করতে থাকে, গান গায় ও চার্চের ভিতরে ভক্তদের দান করা খাবার খায়। আর অবশেষে চার্চে রাখা নারীমূর্তির প্রতি যৌনাকাঙ্খা প্রকাশ করে, নারীমূর্তির মৃতদেহ কফিন থেকে বের করে আনে - ফ্রেঞ্চ সৈন্যের এমনসব আচরণ নেক্রোফিলিয়া বা মৃতদেহের প্রতি বিকৃত কামনার ইঙ্গিত দেয়। এরপরে অঙ্কে দেখানো হয় একটি বাচ্চা মেয়েকে পার্কে একটা অপরিচিত লোক কিছু ছবি দেয়, আর তার বাবা-মা সেই ছবিগুলো দেখে এমন আচরণ করতে থাকে যেনো খুব অশ্লীল কোনো ছবি সেগুলো - আর ছবিগুলো দেখতে দেখতে মেয়ের বাবা-মা কিছুটা ইতস্তত বোধ করা শুরু করে - আসলে কিন্তু ছবিগুলো ছিলো পূর্ণিমার ছবি, বিশ্বের কিছু দর্শনীয় স্থানের ছবি আর অবশেষে তাজমহলের ছবি। তাজমহলের ছবিটি দেখে তারা বলে উঠে - "এটা অনেক বেশি হয়ে গেলো"। তাদের সারা বাড়িতে ফ্রেমে বন্দি অন্য ছবিগুলো বলতে গেলে সবই একই রকম দেখতে আর নিরস।

ফ্রেঞ্চদেরকে অনেক বেশি "রক্ষণশীল" বলে এই দৃশ্যগুলোতে হয়তো বুনুয়েল কিছুটা খোঁচা মারতে চেয়েছেন। কিছুটা পরে একটা সাঁজোয়া ট্যাঙ্কে করে কিছু সৈন্যকে একটা শেয়ালের খোঁজ করতে দেখা যায়। অপ্রয়োজনে অস্ত্রের মজুদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এই দৃশ্যটিতে। আমার কাছে সবচেয়ে মজার যে দৃশ্যটি - এক প্রফেসর পুলিশ একাডেমীতে ক্লাস নিতে এসে পয়োঃবর্জ্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে যে ঘটনা বলেন। এক আত্মীয়ের বাড়ীতে তারা ঘুরতে গিয়ে খাবার টেবিলে আমন্ত্রিত হন।

ডাইনিং টেবিলে চেয়ারের বদলে ছিলো কিছু কমোড আর লোকজন সেখানেই বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্যে বসে পড়লো। টেবিলে রাখা কিছু গসিপ ম্যাগাজিন - আর তাদের আলোচনার বিষয়জুড়ে পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও তার ফলে সৃষ্ট বর্জ্য। এক পর্যায়ে সেই প্রফেসর খাবার রুম কোথায় সেটা ফিসফিসিয়ে গৃহপরিচারিকাকে জানতে চায়, তাপরে দরজা বন্ধ করে একটা রুমে আয়োজন করে খেতে বসে - সমস্ত দৃশ্যটা জুড়ে ছিলো তীব্র বিদ্রুপ - যেটা স্বাভাবিকভাবে আমরা করি তার ঠিক উল্টোটা করে এই দৃশ্যগুলোতে অভিনেতা-নেত্রীরা - দৃশ্যগুলো দিয়ে সমসাময়িক রেনেসাঁর প্রতিই যেনো বিদ্রুপ করেছিলেন। আর একটি দৃশ্যে এক পরিবার তাদের স্কুলে যাওয়া মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছে বলে পুলিশ স্টেশন, স্কুল সব জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে - অথচ সারাটা সময় মেয়েটা তাঁদের চোখের সামনেই ছিলো। পুলিশসহ অনায়ন্যরাও একই দশা।

সমস্যা থাকলে সেটা না চোখে না পড়া আর চোখে পড়া যে সমস্যা তা আসলে কোনো সমস্যাই না - এই ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি দৃশ্যটিতে। এছাড়াও এক খুনের আসামী দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে একেবারে শর্তহীন মুক্তি পেয়ে যায় আর সেলিব্রিটিদের মত অটোগ্রাফ দিতে থাকে - এ যেনো বিচার ব্যবস্থাকেও কড়া একটা ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা। এই মুভিতে বুনুয়েল একই সাথে ইনসেস্ট বা অনৈতিক সম্পর্ক, পুলিশের নির্মমতা, মৃতদেহ ও শিশুর প্রতি বিকৃত যৌনানুভূতি, সমাজ ব্যবস্থার উল্টো চলা রীতি, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আর ধর্মীয় পোষাকে ধর্মগুরুদের চরিত্রস্খলনসহ বেশ কিছু সামাজিক অনাচারের প্রতি প্রবলভাবে কষাঘাত করেছেন। নিঃসন্দেহে বলা যায় - স্যাটায়ার ক্যাটাগরিতে সর্বকালের সেরার কাতারে থাকবে এই মুভিটি। উৎসর্গঃ হাসান মাহবুব ভাই - দেখেও না দেখার ভান করে অস্বাভাবিকতা মেনে নেয়া সমাজব্যবস্থাকে আঘাত করেন যিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে।

বুনুয়েলের মুভি দেখা শুরু করেছিলাম তাঁরই রিকমেন্ডেশনে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।