আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশুসদনে নাশতায় বরাদ্দ এক টাকা

ইতিহাসের পেছনে ছুটি তার ভেতরটা দেখবার আশায় ‘ইয়া মোটকা (পুরু) গন্ধওয়ালা রুটি। মুখে দিলে বালু কিচকিচ করে। রোজ কারও না কারওর প্যাটে ব্যথা হয়। সেদিন আমিন (ছদ্মনাম) বমিতে ভাসায়ে দিল। ডাক্তারে পরের বেলা শুধু ডাইল-ভাত খাওয়াইতে কইল।

ভাতেও গন্ধ, খাওন যায় না’-একটানা কথাগুলো বলে যাচ্ছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত শিশুসদনের এক শিশু। অতি অল্প বরাদ্দে তাদের কী খাওয়ানো হয় সে প্রশ্নের উত্তরে কথাগুলো বলতে বলতে আমিন যেমন কাঁদছিল, পাশে বসা বাকিদেরও চোখ কান্নায় ভেসে যাচ্ছিল। কেমন খাবার চাও জানতে চাইলে তাদের ঝটপট উত্তর, ‘গন্ধওয়ালা না, সুন্দর গন্ধের ভাত দিলেই হবে। ’ দেশের শিশুসদনগুলোয় একবারের নাশতায় বরাদ্দ ১ টাকা ৩৮ পয়সা। দুপুরে সর্বোচ্চ ১৫ টাকার খাবার দেওয়া হয়।

১ টাকায় কী খাওয়ানো হয়, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তত্ত্বাবধায়করা। সদনের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, দুবেলা একটি বড় রুটির সঙ্গে আলুর ঘণ্ট বা ডাল দেওয়া হয়। এর মান নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। নাম ও স্থান প্রকাশ না করার শর্তে এক শিশু জানায়, এর বেশি চাইতে গেলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ কখনও কখনও লাঠিপেটার শিকার হতে হয়। শিশুদের অভিযোগ, ভালো খেতে চাইলে তাদের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘এতিমদের এর চেয়ে ভালো খেতে হয় না।

’ আর সরকারি বা বেসরকারি কোনো পরিদর্শক দল এলে তাদের কোন ধরনের অভিযোগ না জানানোর বিষয়ে শিশুদের আগে থেকে শাসিয়ে দেওয়া হয়। শিশুদের এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে চাইলে তত্ত্বাবধায়করা রাজি হননি। অভিভাবকহীন শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৪৪ সালে ‘বঙ্গীয় এতিম ও বিধবা সদন’ আইনের মাধ্যমে সরকারি এতিমখানা ব্যবস্থা চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালে এগুলোর নাম পরিবর্তন করে শিশুসদন ও শিশু পরিবার করা হয়। এ প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে সারা দেশে ৮৫টি শিশুসদন ও শিশু পরিবার রয়েছে।

এগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার অনাথ বা এতিম শিশু থাকার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে আসন ফাঁকা থাকে অধিকাংশ সদনে। ঢাকার বাইরের কয়েকটি সদন : রাজশাহী শিশু পরিবারে অনুমোদিত আসন ৪৫০টি হলেও বর্তমানে সেখানে ১১৮ শিশু রয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতরের কাগজ থেকে জানা যায়, শিশুদের বসবাসের মাত্র দুটি কক্ষে একশরও বেশি শিশুকে থাকতে হয়। এখানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসকারী শিশুর সংখ্যা কম। পঞ্চগড় শিশু পরিবারে একশ শিশুর থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৭৪ শিশু।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগের পদ শূন্য। শিশুসদনে তত্ত্বাবধায়ক, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, একজন কারিগরি প্রশিক্ষক, মেট্রোন-কাম নার্স ও এমএলএসএসের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। শিশুসদন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কোনো সুইপার বা ঝাড়ুদার নেই। অফিসে পিয়নের কাজ থেকে শুরু করে রান্নার কাজসহ সদনের বেশিরভাগ কাজ এখানকার শিশুদের দিয়েই করানো হয়। শিশুসদনগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এসব সদনে শিশুদের থাকা, খাওয়া, বিনোদন আর স্বাস্থ্যসেবার ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই।

১ টাকায় কী নাশতা খাওয়ানো হয় সেই জবাবদিহি সমাজসেবা অধিদফতরকে করতে হবে। শিশুদের অভিযোগ ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ তো থাকবেই। তবে সেগুলোর মাত্রা বিবেচনায় নিতে হবে। সনদগুলোর পরিস্থিতি তেমন খারাপ না। ’ শিশুদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগ ও খাবারের বর্ণনা তাকে জানানো হলে সদনের কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে শিশুরা কথা বলায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পরবর্তী সময়ে আবারও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। আমার করার বা বলার সুযোগ কম। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.