আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুভিং ব্রিজ..........

আমরা সচরাচর সে সমস্ত সেতুগুলো দেখি যেগুলো স্থির। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতে আরও কিছু সেতু আছে, যেগুলো নড়াচড়া করাতে পারে। প্রয়োজনের স্বার্থেই এই সেতুগুলো এমন করা হয়েছে। যেমন, ইংল্যান্ডের টেমস নদীর উপর দিয়ে কোনো জাহাজ অথবা ফিশিং বোট চলতে গেলে নদীটির উপরে থাকা সেতুটি নিজে থেকে সরে যায়। আর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেটি আবার জোড়া লেগে যায়।

কোথাও এটি সেন্সরের মাধ্যমে হয় আবার কোথাও ম্যানুয়্যালি করা হয়। প্রথমে,জেনে নেওয়া যাক, কোথায় পাওয়া যাবে সেতুগুলো। সেতু নদী অথবা দুই প্রান্তের সংযোগে ব্যবহার করা হয়। অবশ্য আজকাল স্থলেও কিছু সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে যেগুলোকে ফ্লাইওভার বা উড়ালসেতু বলা হয়। এই সেতুগুলো দিয়ে উড়ে যাওয়া না গেলেও যানযট টপকিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসেই।

যদিও আমাদের দেশে এই সুযোগ খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। নড়াচড়া করতে পারা সেতু আমরা সেগুলোকেই বলব, যেগুলো জলযানগুলোকে তাদের নিচ দিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরে যায়। নানান ধরনের নড়ন-চড়ন সেতু দেখা যায়। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো টানা সেতু বা ড্রব্রিজ। এই সেতুগুলোর প্রকৃতি অনুযায়ী তাদের নামকরণ করা হয়ে থাকে।

টানা-সেতু, যে সমস্ত সেতুকে একপাশ থেকে শক্ত কাছি বা দড়ির সাহায্যে টেনে অন্য মাথা তুলে ফেলা হয় সেই সমস্ত সেতুকে টানা-সেতু বলা হয়ে থাকে। টানাটানির বিষয়টি মোটামুটি এই রকম আদিকাল থেকেই এই সমস্ত টানা-সেতুর ব্যবহার দেখা যায়। সেই সময়ে টানা-সেতুগুলো ব্যবহার করা হতো দূর্গগুলোতে। দূর্গের চারপাশে পরিখা খনন করে পরিখার নিচে চোখা চোখা লৌহদণ্ড অথবা কাষ্টদণ্ড পুতে রাখা হতো। কখনও সেখানে পরিপূর্ণ করে রাখা হতো।

আবার সেই পানিতে কুমির বা বিষাক্ত সাপও ছেড়ে রাখা হতো। সেই পরিখার উপর দিয়ে দূর্গে প্রবেশের প্রবেশদ্বারে এই টানা সেতু স্থাপন করা হতো। এগুলোকে দূর্গ টানা-সেতু বলা যায়। তাছাড়া বড়বড় প্রাসাদেও এই ধরনের টানা সেতুর ব্যবহার দেখা যায়। আদিকালেই এ সমস্ত টানা-সেতুর ব্যবহার শেষ হয়ে গিয়েছে এমন ভাবাটা ঠিক না।

এখনো এই টানা সেতুর ব্যবহার দেখা যায়। তবে নদী বা খালের ক্ষেত্রে। যেমন, স্লাউয়ারহফবার্গ সেতুটি নেদারল্যান্ডে অবস্থিত। ভাঁজ সেতু বা ফোল্ডিং ব্রিজ, নামটি শুনেই বোঝা যায় যে, এই সেতুটির আকৃতি কেমন হতে পারে। আবার এই সেতুরও দুটি ধরন আছে, চ্যাপ্টা ভাঁজ সেতু ও গোল ভাঁজ সেতু।

চ্যাপ্টা ভাঁজ সেতু, পরিচয়টা খুব সহজভাবেই বলা যায়, যেগুলো চ্যাপ্টা ভাঁজ হয়ে সরে আসে, সেগুলোকে চ্যাপ্টা ভাঁজ সেতু ও গোল হয়ে খোলা সেতুগুলোকে গোল ভাঁজ সেতু বলে। এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সত্যিই এমন কিছু রয়েছে কি না! সত্যিই এগুলোর অস্তিত্ব রয়েছে। যেমন, চ্যাপ্টা ভাঁজ সেতু স্বচোক্ষে দেখতে হলে যেতে হবে জার্মানিতে। কারণ, জার্মানির করবস শহরে এ ধরনের সেতুর অবস্থান। সেতুটির নিচ দিয়ে যওয়ার সময়ে পুরো সেতুটি গুটিয়ে ইংরেজি ডাব্লিউ-এর আকার ধারণ করে।

শুধু জলপথই নয়, স্থলের জন্যও এই সেতু ব্যবহার করা হয় সেখানে। উত্তোলন সেতু বা লিফট ব্রিজ, নামটি শুনলেই বোঝা যায় কোন উঁচু ব্যাপার-স্যাপার। অবশ্য ধারণাটি অনেকটা সেখান থেকেই এসেছে। বাসা-বাড়িতে যেমন দ্রুত উপরে উঠার জন্য লিফট ব্যবহার করা হয়, তেমনি এই সেতুগুলো প্রয়োজনে উপরে উঠতে পারে আবার নেমে যেতে পারে। যখন কোনো সেতু তার নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের জন্য রাস্তা করে দিতে হয়।

তখন সেটি উপরে নিচে ওঠা-নামা করে। যেখানে পাওয়া যাবে সেতুগুলো অস্ট্রেলিয়ার সিডনির প্যারামাট্টা নদীর উপরে রয়েছে এ ধরনের একটি সেতু। ১৯৩৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। আরও দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ারই ডারউইন শহরের নদীটির উপরে। কানাডার ইউল্যান্ড ক্যানেলের উপর বেশ কয়েকটি লিফট ব্রিজ দেখা যায়।

এরপর, বারলিনটন খালের উপরে বারলিনটন লিফট ব্রিজ রয়েছে। ফ্রান্সের সিন নদীর উপরে রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু একটি উত্তোলিত সেতু। ৫৫ মিটার উঁচু জাহাজের নিচ দিয়ে অনায়াশে যেতে পারে। ৬৭০ মিটার লম্বা সেতুটি ২০০৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অফিসিয়ালি চালু করা হয়েছিল। পাল্মবাং শহরের উপর দিয়ে বয়ে চলা গঙর নদীর উপরে রয়েছে তেমনি একটি সেতু।

এই সেতুটির যেই অংশ উত্তলিত হয় তার ওজন মাত্র ৯৪৪ টন এবং প্রতি মিনিটে ১০ মিটার উঠা-নামা করতে সক্ষম। ৬৩ মিটার উঁচু দুইটি টাওয়ারে সাহায্যে এই উঠা-নামা পরিচালনা করা হয়। জাপানের চিকুগো নদীর উপরের লিফট ব্রিজ ওকাওয়া এবং ফুকোয়া শহরের মাঝে সংযোগ স্থাপন করেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।