আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু করুন, বিরোধীদলীয় নেত্রী মুখ খুলুন, অর্থমন্ত্রী শুনুন.......

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্লিজ, শেয়ার-বাজারকে জাগিয়ে তুলতে একটা কিছু করুন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, দোহাই আপনার মুখ খুলুন। কণ্ঠ ছেড়ে হাঁক দিন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী রিক্ত-নিঃস্ব হওয়ায় শেয়ারবাজার ঘিরে আজ কোটি মানুষের হৃদয়ে ক্রন্দন-আর্তনাদ-বোবাকান্না। কান পেতে শুনুন।

আপনি মিডিয়ায় কী বলেন, তথাকথিত সুশীলরা কী তত্ত্ব দেন আর জবাবে মানুষ কী বলে? মানুষের জন্য সরকার। মানুষের জন্য রাজনীতি। মানুষের জন্য অর্থনীতি। শেয়ারবাজার না জাগালে এই বিপর্যয় থেকে বিনিয়োকারীদের উদ্ধার করে মুখে হাসি ফোটাতে না পারলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে না। একই সঙ্গে ঘরে ঘরে স্বস্তি আর সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাই নন, তিনি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। মানুষকে দেখিয়েছিলেন। মানুষ ও দেশকে ভালোবেসে তিনি সপরিবারে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। শোষিত মানুষের প্রশ্নে আপস করেননি। আপনি তার কন্যা।

দীর্ঘ সংগ্রামের সিঁড়িপথে প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখে উত্তাল সে াতের বিপরীতে সাঁতার কেটে উঠে এসেছেন আপনি। বলেছেন, আপনার চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক কে? আপনার কোটি অনুরাগী ভালোবেসে আপনাকে ডাকে জননেত্রী ও গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলে। আপনি শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়কদের বলেছেন, ওরা গরিবের রক্তচোষা। ওদের রেহাই নেই। মানুষ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।

আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনি বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরেছেন। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির নায়কদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। ওরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করুন। '৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়করা শাস্তি পায়নি। এবার ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর পরিবারকে বাঁচাতে সাহসী পদক্ষেপ নিন।

একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজার ধ্বংস করছে। এদের ছাড় দিলে সরকারের কাঁধেও বদনামের ছায়া পড়বে। শোনা যাচ্ছে, ৩৫০ কোটি টাকার গোপন লেনদেনে অধিকতর তদন্ত প্রক্রিয়ায় শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়করা চূড়ান্ত রিপোর্ট থেকে তাদের নাম মুছে ফেলার শেষ চেষ্টায় নাকি সফল হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কি মনে হয় না যদি এমনটি ঘটে থাকে তাহলে এই রিক্ত-নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের বুকভরা আর্তনাদ কারও কারও জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে? লুৎফর রহমান বাদল বিদেশ যাওয়ার অনুমতি নাকি পেয়েছেন। এই ৩৫০ কোটি টাকা লেনদেনের পর।

মোসাদ্দেক আলী ফালুরা কতটা ক্ষমতাশালী হলে সরকারের ছায়ায় থাকা কারও কারও সঙ্গে দহরম-মহরম থাকায় হাসতে হাসতে হাঁটেন আর মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেন? সামিটের আজিজ খানরা শেয়ারবাজার লুটে নিয়ে অধিকতর তদন্তপ্রক্রিয়া থেকে কি রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন? এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকারের ভাগ্যে কী ঘটবে মানুষ জানতে চায়। শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগে ৬৮ জন বিতর্কিত ব্যক্তি যাদের নামে অধিকতর তদন্ত হচ্ছে তাদের প্রায় সবাই বিশেষ করে খলনায়কের মতো মানুষের মুখে মুখে চলে যাওয়া ব্যক্তিরা নাকি রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন? অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে বলেছেন, এ সপ্তাহে বলতে পারবেন কবে চূড়ান্ত রিপোর্ট। এসইসির বিতর্কিতদের অধিকতর তদন্ত করছে। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, আপনার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একজন সেনাশাসক থেকে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। কোনো রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যের অভিজ্ঞতা আপনার ছিল না।

আপনার স্বামীর মৃত্যুর পর অথর্ব সাত্তার সরকারের ব্যর্থতার পথে আপসের হাত বাড়িয়ে সেনাশাসক এরশাদ ক্ষমতায় এসেছিলেন। বিএনপির সারা দেশের বড় অংশ তার সঙ্গে চলে গিয়েছিল। ছাত্রদলের তারুণ্যের মিছিলের উদ্ভাসিত শক্তির ওপর ভর করে আপনি বিধবা নারীর শাড়ি পরে ঊর্মিমুখর রাজপথের সংগ্রামে নেমেছিলেন সাহসিকতার সঙ্গে। শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আপনি শুধু গণতন্ত্রের শপথ নেননি, মানুষের কল্যাণে মানুষের জন্য রাজনীতির শপথ নিয়েছিলেন। এদেশের জনগণ আপনাকেও দুইবার প্রধানমন্ত্রিত্বের মুকুট পরিয়েছে।

শেষবার বিশাল বিজয় অর্জন করে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের অভিযোগে টাইটানিকের মতো বিএনপিকে ডুবতে দেখেছেন। যারা বিএনপিকে ডুবিয়েছেন তারা আজ পাশে নেই। যারা আছেনওবা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। আজ সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে আপনার দায়িত্ব সরকারের ব্যর্থতার পাই পাই হিসাব আদায় করা। শেয়ারবাজারে স্মরণকালের ইতিহাসে ভয়াবহ কেলেঙ্কারি ঘটে গেল।

৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেল। ঘরে ঘরে তপ্ত নিঃশ্বাসের দহনে দগ্ধ হলো মানুষ। এখানে তরুণরা বিনিয়োগ করে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় আজ ক্ষতবিক্ষত। সামরিক-বেসামরিক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘাম ঝরানো অর্থ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা ও গৃহিণীদের শেষ সঞ্চয়টুকুও বিনিয়োগ করেছিল। কেউই রেহাই পায়নি।

এই মানুষের পক্ষে বিএনপি দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। আপনি কঠোর ভাষায় কি সংসদে, কি বাইরে ঝড় তুলতে পারেননি! মানুষের প্রশ্ন, আপনার দলের মোসাদ্দেক আলী ফালু ও লুৎফর রহমান বাদলদের নাম শেয়ার কেলেঙ্কারির তালিকায় প্রকাশিত হওয়ায়, মানুষের মুখে সমালোচিত হওয়ায় আপনি ও আপনার দল এই ইস্যুতে কার্যকর ভূমিকা রাখেননি। ইব্রাহিম খালেদের মতো সৎ, দক্ষ ও সাহসী মানুষ তদন্ত দলের প্রধান হওয়ায় শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়কদের স্বরূপ অনেকটাই উন্মোচিত হয়েছে। ওরা তাকে বিতর্কিত ও কলঙ্কিত করতে চেয়েছে। সরকারি তদন্ত দলের প্রধান হওয়ার পরও সরকার যেমন তাকে প্রটেকশন দেয়নি তেমনি বিরোধী দল তার পাশে দাঁড়ায়নি।

ব্যারিস্টার মওদুদ যখন বলেছিলেন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের মালামাল জব্দ করে আটক করতে তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশের আগেই তা প্রত্যাখ্যান করায় জনমনে প্রশ্ন বাড়ে? তাই বিরোধী দলের নেতা, মানুষের জন্য যদি হয় রাজনীতি, আপনি মানুষের ভাষায় যদি হন সত্যিকার আপসহীন ও দেশনেত্রী তাহলে মানুষের পাশে দাঁড়ান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় নিশ্চয়ই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছেন, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির নায়কদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে এবং ভবিষ্যতে লুটের পথ বন্ধ না করলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা যেমন আস্থা পাবে না তেমনি নতুন বিনিয়োগের অবারিত দুয়ার খুলে না দিলে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে না, অর্থাৎ জেগে উঠবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন আপনার অর্থমন্ত্রী একজন সৎ ও ভালো মানুষ হলেও কার্যত তিনি সাইফুর রহমানও নন কিংবা শাহ এ এম এস কিবরিয়াও নন। তিনি একজন সুশীল মানুষ। তাকে বইমেলা কিংবা শিল্প প্রদর্শনীতে দারুণ মানায়ও বটে।

মানুষ আর শেয়ারবাজার নিয়ে কারও তত্ত্ব কথায় শান্তি পাচ্ছে না, আস্থা পাচ্ছে না। এই শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে হলে নানা মহলের মতে, আপনাকেই সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে। যার দণ্ড প্রাপ্য তাকে দণ্ডই দিতে হবে। নিতে হবে সাহসী পদক্ষেপ। বাজেটে অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজার নিয়ে কিছুই বলেননি।

নেই কোনো পরামর্শ। নেই দিকনির্দেশনা। আপনি জানেন, দেশের মোট টাকার অর্ধেকের রং কালো। এই কালো রঙের টাকা বিনা প্রশ্নে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে না দিলে দেশের বাইরে চলে যাবে। অবাধে বিনিয়োগ করতে দিলে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।

তারা মনে করেন, এই বিনিয়োকারীদের এক-দুই বছর তাদের পুঁজি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। কিছু ব্যাংক শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে লাভ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা দেখাতে পারছে না। এখানে এই মুনাফা বিনিয়োগেরও ব্যবস্থা রাখা উচিত। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগের অনুমতি নেই। এই ১০ শতাংশের বাইরে মুনাফার পুরো টাকাটা বিনিয়োগের সুযোগ দিলে শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখবে।

এসইসি একেকদিন একেক নির্দেশনা দিয়ে শেয়ারবাজার ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। তাদের অন্তত দুই বছর মেয়াদি নীতিমালা করা উচিত যাতে প্রতিদিন নির্দেশনা দিতে না হয়। প্রতিটি ১০০ টাকার শেয়ার যেন ১০০ টাকায়ই বিক্রি হয় এটা নিশ্চিত করতে হবে। সব সরকারি শেয়ারের শতকরা ৪৯ শতাংশ দ্রুত বাজারে নিয়ে আসাও জরুরি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.