আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রজাপতি স্বপ্নেরা (পর্ব ৬)

(পর্ব ১) (পর্ব ২) (পর্ব ৩) (পর্ব ৪) (পর্ব ৫) ৬ রুমা কাপ টুর্নামেন্ট। এবং আজকের ইভেন্ট পাঞ্জা লড়াই নয়। সম্পূর্ণ নুতন গ্লাস আর কয়েনের খেলা। টেবিলের ঠিক মাঝখানে একটি গ্লাস রাখা। অবশ্য কোন জায়গাটা টেবিলের ঠিক কেন্দ্রবিন্দু এটা ঠিক করতে সাগর আর মিমের মাঝে বেশ লম্বা একটা তর্কাতর্কি ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে।

যথারীতি দুজনেই টেবিলের কেন্দ্রবিন্দুকে কিছুটা নিজের দিকে সরিয়ে দাবী করছিল। নয়ন বা আরিফ এখনও কাদের ভাইয়ের চায়ের দোকানে এসে পৌঁছায়নি। সুতরাং কোন মধ্যস্থতাকারী আপাতত উপস্থিত নেই। তাই উভয় পক্ষেই মহামান্যা রুমার নামে উভয়ের দাবী ছেড়ে দেয়াতে অবশেষে গ্লাসটি টেবিলের ঠিক মাঝখানে স্থান পেয়েছে। খেলাটা হল টেবিলের ধারে হাতটাকে মুঠো পাকিয়ে রাখতে হবে।

বুড়ো আংগুল থাকবে মুঠোর উপর দিকে। সেই বুড়ো আংগুলের উপর থাকবে একটি এক টাকার কয়েন। বুড়ো আংগুলের এক ঝটকায় কয়েনটাকে গ্লাসের ভিতরে ফেলতে হবে। যে বেশী বার গ্লাসে কয়েন ফেলতে পারবে সে-ই আজকের বিজয়ী। “ইয়েস।

হয় নাই। ” আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল মিম। সাগরের ছুঁড়ে দেয়া কয়েনটা গ্লাস থেকে অনেক দূরে পড়েছে। ক্রমাগত তিন তিনটে দিনের হেরে যাওয়ার প্রতিশোধ আজ বোধ হয় নেয়া যাবে। আনন্দে মিমের নাচতে ইচ্ছা করছে।

“আরে, এইগুলা শক্তির কাজ না, বুঝছিস। ” বডি বিল্ডারদের মত হাতের পেশী ফুলানোর চেষ্টা করল মিম। যে পরিমান চেষ্টা সে করল তাতে পেশী থাকলে হাতটা অবশ্যই ফুলে ঢোল হয়ে যেত। “এইগুলা হচ্ছে ব্যালেন্স। যার যত ব্যালেন্স বেশী..” “আরে নে নে,” বিরক্ত সাগর।

টোকা মেরে কয়েনটা মিমের দিকে ছুঁড়ে দিল। “এই পর্যন্ত তিনবার করছিস তুই। একবারও পারিস নাই। ” সত্য কথা। তবে পরাজয়ে ডরে না প্রেমিক।

ফরহাদ যদি শিরীর জন্যে পাহাড় কাটার মত কঠিন কাজ করতে পারে তবে তার তো এই সামান্য কাজটুকু পারা উচিৎ। তাছাড়া আগের তিনবার তো ছিল প্র্যাকটিস। “এইবার দেখ, পারি কি না। ” আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মিম। “আর এইবার যদি পারি দোস্ত, তুই কিন্তু তাইলে শেষ।

তোর চারবার হইছে। ” “হ্যাঁ হ্যাঁ কর, মনে আছে। ” বাতাসে হাত ছুঁড়ল সাগর। ভাগ্য আজকে তাকে একেবারেই সহায়তা করছে না। কয়েনটা গ্লাসের ধারে কাছেও যাচ্ছে না।

অথচ ছোট বেলায় তার হাতের টিপ ভালই ছিল। ঢিল মেরে গাছের আম, জাম, বরই ইত্যাদি পেড়ে দিত সে পাড়ার সমবয়সী মেয়েদের। একবার তো বেশ দূরে দাঁড়ানো এক ছেলের মাথা ফাটিয়ে বাপের হাতে আচ্ছা মত পিটুনীও খেয়েছিল। অথচ আজ ... খুব সাবধানে এক চোখ বুঁজে নিশানা ঠিক করল মিম। তারপরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল।

নিজের মাঝে ফরহাদ, মজনু, রোমিও এই সব জগৎ বিখ্যাত প্রেমিকদের প্রেমটাকে সে উপলব্ধি করার চেষ্টা করল। তারপর রুমার নামে ছুঁড়ে দিল কয়েনটা। উড়ে গিয়ে ঠং করে গ্লাসের কানায় বাড়ি খেল কয়েনটা। কিন্তু ভিতরে ঢুকল না। ছিটকে এসে টেবিলে পড়ল।

“ইস,” হাহাকার করে উঠল মিম। “একটুর জন্যে। ” “হা হা হা... ড্র। ” এবার সাগরের চেঁচানোর পালা। “আবার হবে।

” চেঁচালেও বেশ ভয় পেয়েছে সাগর। আরেকটু হলেই গেছিল। তার নিজের তো গ্লাসের ধারে কাছেও যাচ্ছে না। কাদের ভাই অনেকক্ষণ ধরে দোকানের গ্লাস নিয়ে সাগরদের এই খেলাটা সহ্য করে নিচ্ছিল। ঠং শব্দটা শোনার পরে আর থাকতে পারল না।

হাতের কাজ থামিয়ে বলল, “আপনারা গ্লাসটা ভাংবেন। ” “ভাংবে না। ” বিষয়টাকে উড়িয়ে দেবার ভঙ্গিতে বলল সাগর। সে কয়েন ছোঁড়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। মিম না জিতলেও তার থেকে এগিয়ে আছে।

তাই এবারে চরম সাবধানতা প্রেমবাজ সাগরের। কাদের ভাই আবার তার কাছে মন দিল। তবে গ্লাসের মায়া ছাড়তে পারল না। বলল, “একেকটা গ্লাস দশ টাকা করে দাম। ” “দশ টাকা কেন?” কাদের ভাইয়ের দিকে তাকাল মিম।

“আট টাকা করে না?” “এটা চা খাওয়া গ্লাস। ” ব্যাখ্যা করল কাদের ভাই। “পানি খাওয়াগুলার দাম আট টাকা। ” কাদের ভাইয়ের কথা শুনতে গিয়েই হোক আর নিজের অক্ষমতার জন্যেই হোক কয়েনটা আবারও গ্লাসের বাইরে পড়ল। তবে সাগর মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে চেষ্টা করল যে কাদের ভাই আর মিমের আলাপই তার ব্যর্থতার মূল কারণ।

তারপরও নিজের মান সম্মান বাঁচাতে সাগর ঝটপট আলাপে যুক্ত হয়ে গেল। “কেন?” বলল সাগর। “এটা হিট প্রুভ। ” গ্লাসের গায়ে টোকা দিল মিম। সেই সাথে এই ব্যাপারে যে তার অগাধ জ্ঞান রয়েছে এটা জানানোর তাগিদে সাগরের র্ব্যথতায় উপহাস করতে ভুলে গেল সে।

সাগর জানতো এমনটাই হবে। নয়নের অনুপস্থিতিতে মিমই এইখানে সবচেয়ে জ্ঞানী। “গরমে ফাটে না। পানি খাওয়া গ্লাসে চা দিলে ফেটে যাবে। ” “জানতাম না।

” সাগর এখনও গ্লাসের বিষয়ে আগ্রহী। ইস, যদি জ্ঞান ঝাড়তে ঝাড়তে র্টুনামেন্টে কথা ভুলে যেত মিম। তবে মিমও ভয়ানক প্রেমিক। জ্ঞান ঝাড়–ক আর যাই করুক খেলা ভুলে যায়নি সে। কয়েনটা টেনে নিল।

হাত মুঠো করে নিশানা ঠিক করল। এবং গোল। “ইয়েস ইয়েস ইয়েস। ” লাফিয়ে উঠল মিম। “আজকে তুই সাইকেল চালাবি।

ইয়েস। ” পুরো তিন তিনটা দিনের পরাজয়ের গ্লানি আজকে তার ঘুঁচল। আগেও হেরেছে মিম। কিন্তু পর পর তিন দিন কখনও হারেনি। এখন তার টার্গেট হল সাগরকেও পর পর তিনদিন হারানো।

এই নুতন খোলাটা তার জন্যে আর্শিবাদ স্বরূপ। সাগর একেবারেই পারছে না। চাই কি তিন দিনের জায়গায় হয়ত চার দিনও সাগরকে সে হারিয়ে দিতে পারে সে। তবে হারজিত যারই হোক খেলাটা শেষ হওয়াতে কাদের ভাই স্বস্তি বোধ করল। “কি হইল?” নয়ন কন্ঠ।

“কে জিতল আজকে?” হোটেলের দরজার মুখে সামান্য পানি জমেছে। সেটাকে ডিংগিয়ে নয়ন আর আরিফ ভিতরে ঢুকল। সাগর মোটামুটি টের পেয়েছিল যে আজকে তার বিজয় মুকুটটি পদ দলিত হতে যাচ্ছে। তাই পরাজয়টাকে সে বেশ সহজ ভাবেই নিল। দুই হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভেংগে বলল, “ভুয়া একটা খেলা।

” “হারছিস তো এই জন্যে। ” সাথে সাথে ফোড়ন কাটল মিম। এই ব্যাপারে এক্সপার্ট সে। মিমের পাশে এসে বসল আরিফ। কিভাবে যেন একটা অলিখিত নিয়ম তৈরী হয়ে গেছে চার জনের মাঝে, আরিফ কেন যেন সব সময় মিমের পাশেই বসে।

আর নয়ন সাগরের পাশে। পাশের টেবিলে বসে দুজন ছেলে পুরি খাচ্ছিল। হাত বাড়িয়ে তাদের সামনে রাখা কয়েকটা পানির গ্লাসের মাঝ থেকে একটা তুলে নিল মিম। আরিফের দিকে ঘুরল। সকাল থেকে দেখা হয়নি তাদের।

গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল, “তোরা সকালে কোথায় ছিলি?” “কাজ ছিল। ” আরিফের ছোট্ট উত্তর। পানি খাওয়া শেষ করে কয়েনওয়ালা গ্লাসটার পাশে হাতের গ্লাসটা নামিয়ে রাখল মিম। সাগর দুটো গ্লাসই হাতে তুলে নিল। পার্থক্য বুঝবার চেষ্টা করল।

“আমাদের আরিফের সামনে বিরাট এক টুর্নামেন্ট। ” নয়ন বলল। “ওয়ার্ল্ড কাপও বলতে পারিস। ” “কি রকম?” গ্লাস দুটো যাচাই করতে করতে বলল সাগর। কাঁচের রঙ ছাড়া গ্লাস দুটোর মাঝে তেমন কোন তফাৎ খুঁজে পেল না সে।

হিট প্রুভ গ্লাসটার রং কিছুটা নীলচে আর পানি খাওয়া গ্লাসটার রং সবুজাভ। আরো একটা পার্থক্য আছে। চা খাওয়া গ্লাসটাতে একটা কয়েন আছে। পানি খাওয়া গ্লাসটাতে নেই। এই পার্থক্যটা অবশ্য সাগর উচ্ছা করলেই মিটিয়ে দিতে পারে।

এবং দেয়াই উচিৎ। সুতরাং কয়েনটা বের করল সাগর। “প্রতিপক্ষ হচ্ছে এক পাল গরু। ” হাত নেড়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল নয়ন। “গরু?” মিমের চোখে মুখে হতভম্ব ভাব।

তবে সে বরাবরই জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক। সাগরকে পয়সাটা পকেটে ঢুকাতে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল, “এ্যাই, পয়সাটা আমার। ” কেড়ে নিল মিম। সাগর অবশ্য তাতে মাইন্ড করল না। এমন পয়সা কত আসবে যাবে।

খালি রুমার সাথে তার বিয়েটা হয়ে যাক। রুমাদের বাড়িটাতে বেশ একটা আলীশান ভাব আছে। মালদার পার্টি সন্দেহ নেই। ইস, প্রতিদিন শুধু বাড়ির সামনে দিয়েই চক্কর মারা হয়। মেয়েটা একদিন ডেকে ড্রইং রুমে বসালেও তো পারে।

আচ্ছা, আজ তার কথায় কথায় এত রুমার চিন্তা মাথায় আসছে কেন? হেরে গেছে বলে? “ভেন্যু হচ্ছে যুব উন্নয়ন ট্রেনিং সেন্টার। ” নয়নের নাটকীয় ভঙ্গির ঘোষনা এখনও চলছে। “এবং আম্পায়ার হল আমাদের ওয়ান এন্ড অনলি লাবু ভাই। ” “তুই মরছিস। ” মিম বলল।

আরিফ একেবারে র্নিবিকার। সাগর হাত বাড়িয়ে আরিফের গায়ে টোকা দিয়ে নিদারুন কন্ঠে আবৃতি শুরু করল, “রাখাল ছেলে, রাখাল ছেলে বারেক ফিরে চাও। বাঁকা গাঁয়ের পথটি ধরে কোথায় চলে যাও। ” আরিফ এখনও র্নিবিকার। মিম মানি ব্যাগ বের করে।

কয়েনটা ঢোকাতে ঢোকাতে বলে, “তুই দোস্ত এখন থেকে মাথায় গামছা বাঁধা শুরু কর। ” আরিফের আর র্নিবিকার থাকাটা সাজে না। এরা আসলে ঠিক বুঝছে না ঘটনাটার মাহাত্য। অশিক্ষিত, মূর্খ তো সব। তাদের কাছে অবশ্য এরচেয়ে বেশী কিছু আশাও করে না আরিফ।

আয়েস করে দেয়ালে হেলান দিল সে। “আরে, কাজটা শুরু করতে দে খালি। ” আরিফ বলল, “তারপর দেখবি আমার কত ইজ্জ্বত মানুষের কাছে। ” “ফু-উ-উ, ইজ্জ্বত?!” মিমের মুখ দিয়ে এই অসভ্য গোছের শব্দটা বের হল। যথেষ্ট হয়েছে।

সোজা হয়ে বসল আরিফ। সে কি হবে, সেটা সে হয়েই দেখাবে। এখন আর এটা নিয়ে এত আলাপ করার কোন মানে হয় না। সুতরাং বিষয়বস্তু এবার একটু অন্য দিকে ঘোরানো দরকার। “বিশ্বাস হইল না।

” আরিফ বলল, “নয়নকে জিজ্ঞাস কর। লাবু ভাইয়ের মেয়ের সাথে নয়নের বিয়ে কনফার্ম। খালি নয়নকে গরু মোটাতাজা করে বড়লোক হইতে হবে। ” এক নিঃশ্বাসে বলল আরিফ। চমৎকার প্রতিক্রিয়া দুই প্রেমিকের।

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার কথা শুনলেও বোধহয় তারা এতটা ধাক্কা খেত না। রীতিমত কয়েকটি পূর্ণ সেকেন্ড সময় লাগল তাদের ব্যাপারটা বুঝতে। পালা করে একবার আরিফ আর একবার নয়নকে দেখল তারা চোখ বড় বড় করে। শেষে মুখের ভাষা ফিরে পেল সাগর। “কে? সোমা?” নামটা জানে না আরিফ।

জানার কথাও না। তবে সাগর যখন বলছে তখন লাবু ভাইয়ের মেয়ের নাম সোমা হবার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ। এই সমস্ত ব্যাপারে প্রেমবাজ সাগর কখনও ভুল করে না। “হ্যাঁ। ” নির্বিকার কন্ঠে বলল আরিফ।

“নয়ন ডাইরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিছে আজকে লাবু ভাইকে। ” “সত্যি নয়ন?” মিমের কন্ঠে আগ্রহ ঝরে পড়ল। “এইখানে মিথ্যার আবার কি আছে। ” নয়ন স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল। “লাবু ভাই বলল গরু মোটাতাজা করণ খুব ভাল কাজ।

আগে কেন আমরা এই সিদ্ধান্ত নেই নাই। বললাম, আপনার মেয়ের সাথে যদি আবার বিয়ে দিতে রাজি না হন। এই জন্যে এতদিন এই সব ভাবি নাই। এখন আপনি যদি ভরসা দেন তাইলে গরুওয়ালা হইতে আমাদের কোন আপত্তি নাই। ” নয়নের সহজ সরল স্বীকারোক্তি ঠিক যেন দাগ কাটতে পারল না সাগর আর মিমের মনে।

মুখ চাওয়া চাওয়ী করল দুইজনে। উহু, কিছু একটা কিন্তু আছে এর মধ্যে। ভ্রু কুঁচকাল সাগর। নয়নের মত ছেলের পক্ষে এটা সম্ভবই না। বিরক্ত কন্ঠে নয়নকে বলে, “ইয়ার্কি করিস না দোস্ত।

” বলেই আবার চিন্তায় পড়ে সাগর। মিম তো তখন থেকে এক মনে নয়নের দিকে তাকিয়ে চিন্তাই করে যাচ্ছে। আসলেই কি অসম্ভব বলে কিছু আছে এই পৃথিবীতে। তাছাড়া নয়ন কি ছেলে না? তার কি মেয়ের প্রতি আগ্রহ থাকতে পরে না? আরিফের দিকে তাকায় সাগর। আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে, “আরিফ, সত্যি?” আরিফ বিরক্ত হবার চেষ্টা করে।

অবশ্য ভ্রু দুটো কুঁচকালেই তাকে নাকি বিরক্ত বিরক্ত দেখায়। স্বপ্না বলে ছিল। সুতরাং আরিফের ভ্রু দুটো পরস্পরকে ছুঁলো। “আরে,” বলল আরিফ, “এইখানে মিথ্যা বলার কি আছে। ” উত্তেজনায় টেবিল চাপড়ালো মিম।

ব্যাপারটার লাগসই ব্যাখ্যা সে পেয়ে গেছে। “এই জন্যেই তো বলি,” মিম বলল, “তুমি শালা অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাও না ক্যান?” আরিফ অন্যদিকে তাকালো। বলা যায় না যদি হাসি এসে যায়। মিমের ব্যাখ্যায় সাগরেরও এইবার বিশ্বাস হয়ে গেল ব্যাপারটা। “জিনিস একটা দোস্ত।

” আফসোস মেশানো প্রশংসা সাগরের কন্ঠে। “আ হা হা ... ঐ রকম একটা মেয়ের জন্যে জান দিয়ে দেওয়া যায়। ” নয়ন এখনও র্নিবিকার। ছোট্ট করে প্রশ্ন করল, “আর রুমা?” আরে তাই তো এতক্ষণ তো রুমার কথা মাথাতেই আসেনি। আসলেই সোমার কাছে রুমা কোন জিনিস হইল।

এতদিন ধরে ঘুরতেছি অথচ মেয়েটা... “ধ্যাৎ তোর রুমা। ” উঠে দাঁড়াল সাগর। প্রসঙ্গ পাল্টালো। “দোস্ত, একটু শেভ করে আসি। ” “শেভ করে কি করবি?” বাঁধা দেবার ভঙ্গিতে হাত তুলল মিম।

“দাড়ি হচ্ছে পুরুষ মানুষের শান। ” হাতের মুঠি পাকিয়ে একটা ঝাঁকুনি দিল মিম। কন্ঠে জোশ এনে বলল, “যেই পুরুষের গালে দাড়ি নাই, সেই পুরুষের কোন ইজ্জ্বত নাই। ” মিমের মুঠি পাকানো হাতের দিকে তাকিয়ে একটু বিভ্রান্ত হল সাগর। উজ্জ্বত রাখবে না সৌন্দর্য? যদিও সে জানে তার চেহারা তেমন আহামরি কিছু না।

শেষে বলল, “তারপরও একটা ইয়ে আছে না?” মিম ভাল মত সাগরের দিকে ঘুরে বসল। তার চেহারার গাম্ভীর্যই বলে দেয় সে এখন সিরিয়াস কিছু একটা বিষয় নিয়ে কথা বলবে। “শোন, আমি তোকে বলি,” বলল মিম। “বিশ্বে যত বড় বড় মহামানব আছে তাদের সবার মুখে দাড়ি ছিল। ” সাগর একমুহূর্ত চোখ পিট পিট করল।

আরিফ তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে ভ্রু কুঁচকালো। নয়ন মাথায় ব্যাপারটার বিচার বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। হয়ত তাই মাথাটা এক পাশে কাৎ হয়ে গেল। সাগর বুকে হাত বেঁধে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার বোঝা হয়ে গেছে মিম তাকে সহজে শেভ করতে যেতে দেবে না।

“যেমন?” সাগর বলল। মিম এই প্রশ্নটার জন্যে প্রস্তুত হয়েই ছিল। হাতের আংগুল গুনে বলতে লাগল, “এই যেমন ধর, সক্রেটিস, লিওর্নাদো দা ভিঞ্চি, টলস্তয়, রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়ার, ডারউইন, কার্ল মার্কস..আঁ..” মিমের ভান্ডার শেষ। মাথাটাকে ডানে বাঁয়ে ঘোরাতে লাগল সে। ঝাঁকুনিতে যদি আরো দু চারটা নাম বের হয়।

“মওলানা ভাসানী। ” মিমকে সাহায্য করল নয়ন। “হ্যাঁ,” উত্তেজনায় চেঁচিয়ে উঠল মিম। “মওলানা ভাসানী..” হেসে ফেলল আরিফ মিমের অবস্থা দেখে। তবে সাগর এখনও ধৈর্য্যশীল।

আগের ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে আছে সে। নয়নের প্রতি মিমের বুকটা কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। তাইতো রবীন্দ্রনাথকে বাদে আর কোন দেশীয় মহামানবদের কথা তার মাথাতেই আসেনি কেন এতক্ষণ? ভীষণ অন্যায়। একটানে দেশীয় মনীষীদের নাম বলে গেল মিম। “ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, মাইকেল মধুসুধন দত্ত...” মিম হয়ত আরো বলত।

কিন্তু আংগুল তুলে বাঁধা দিল আরিফ। “মধুসুধনের ঐটা দাড়ি ছিল না। ” “কেন?” আক্রমনাত্মক ভঙ্গি মিমের। “থুতনিটা শুধু ফাঁকা ছিল। বাকি গোটা গালেই তো চুল ভর্তি।

” “ঠিক আছে। ” বুকের উপর থেকে হাতের বাঁধন খুলল সাগর। “আমি এইবার তোকে দাড়ি ছাড়া কয়েকজন মহামানবের নাম বলি। ” “বল। ” মিমের কন্ঠে অগ্রীম আত্মসর্মপণের সুর।

যে হাত দিয়ে গুনছিল সেই হাতটা নামিয়ে নিল সে। “কাজী নজরুল ইসলাম,” শুরু করল সাগর। মিম আর নয়ন এক সাথে সর্মথনের ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো। এবার সাগরের আংগুলে গুনবার পালা। তবে আরিফও তার সাথে গুনতে শুরু করল।

একটানা বলে যেতে লাগল সাগর। “জীবনান্দ দাস, কবি জসীম-উদ্দিন, গৌতম বুদ্ধো, আইনেস্টাইন, স্টিফেন্স হকিন্স, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, ডক্টর কুদরত-ই- খুদা... তারপর...” “দোস্ত তুই শেভ করতে যা। ” তেতো কন্ঠে বলল মিম। ফিক করে হাসল সাগর। “থ্যাংক ইউ।

” সাগর বেরিয়ে যেতেই আরিফও উঠে দাঁড়ালো। “থাক তোরা। ” বলল আরিফ। “আমিও উঠলাম। একটু বাজার যেতে হবে।

” “চা খাবি না?” মিমের প্রশ্ন। “না। ” অনাগ্রহ আরিফের। “ঠিক আছে পরে দেখা হবে। ” হাত বাড়িয়ে দিল নয়ন।

দুই বন্ধুর সাথে হাত মিলিয়ে বের হল আরিফ। অসাবধানতায় দরজায়র সামনে জমে থাকা পানিতে তার পা পড়ে গেল। “এহ-হে..” বিরক্ত হল আরিফ। তবে আনন্দে মিমের সবগুলো দাঁত বেরিয়ে গেল। বলল, “চলতে পথে মটর শুটি জড়িয়ে দুখান পা, বলল ডেকে গাঁয়ের রাখাল, থুক্কু শহরের রাখাল একটু থেমে যা।

” হেসে ফেলল আরিফ। হ্যাঁ, শহরের রাখাল হতে যাচ্ছে যে। সেই সাথে একটা পরিচিতি। তা সে যেমনই হোক। নিজের পরিচিতি।

হাসল তিন বন্ধু। তবে প্রতিদিনের হাসির থেকে আজকের হাসিটা যেন অনেক প্রাণবন্ত দেখালো। (র্পব ৭) (পর্ব ৮) (পর্ব ৯) (পর্ব ১০) (পর্ব ১১) (পর্ব ১২) (পর্ব ১৩) (শেষ পর্ব) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.