আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আতঙ্কগ্রস্থ মানুষগুলোর সাথে নিঃসঙ্গ যোদ্ধা হিসেবে লড়ে গেলাম ঘন্টাখানেক!! জানিনা কতটুকু সফল হলাম!!!

মাল্টি নিকধারী জারজ ও ইসলামবিরোধী রামছাগল গুলোর প্রবেশ নিষেধ...। সন্ধ্যা- প্রায়৭ টা। পিসিতে বসেছি মেইল চেক করার জন্য। হঠাৎ করে বাহিরের মৃদু গুঞ্জন কানে আসল!! প্রথম দিকে গুরত্ব না দিলেও গুঞ্জনটা যখন মৃদু হট্টগোল বলে মনে হল, তখন রুম থেকে বের না হয়ে পারলাম না!!! ব্যালকনী তে গিয়ে নীচে কি হচ্ছে বুঝার চেষ্টা করলাম। সকাল থেকে যা সন্দেহ করেছিলাম, ঠিক তাই!! ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ার পরে বাচ্চাদের অসুস্থ হয়ে পড়া নিয়ে তুমুল হৈচে হচ্ছে!! ব্যালকোনীতে দাড়িয়ে যা শুনলাম এবং বুঝলাম, তাতে ঘেমে যেতে শুরু করলাম।

পাড়ার মধ্যে কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের আজকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাদের সন্তানগুলো তখনো পুরোপুরি সুস্থ!! কিন্তু সবচেয়ে আতঙ্কজনক ব্যাপার হচ্ছে, দুইজন মা'কে দেখলাম তাদের সন্তানদের অন্যের প্ররোচনায় জোর করে তেঁতুল খাওয়াচ্ছে!!! রুমে আর থাকতে পারলাম না। কোনমতে গায়ে কাপড় দিয়ে নেমে গেলাম নীচে। দেখি অবস্থা যতটা ভয়ংকর ভেবেছিলাম, তার চাইতেও ভয়াবহ!! রাস্তার ধারের বাড়ীগুলো থেকে মানুষ বের হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। সবার মুখে একই বিষয়!! "ভিটামিন-এ" ক্যাপসুল খাওয়ার পরে ঐ অষুধের পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় নাকি বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং কয়েকজন নাকি মারাও গেছে!!! পাড়ার মধ্যে ঢুকে দেখি বেশ বড়সড় জটলা। সাথে কিছু বাচ্চার কান্নাকাটি।

পাড়ার কয়েকজন ভাবী সম্পর্কীয় মহিলার সাথে কথা বলে মনে হল কান নিয়ে যাবার গুজবে চিলের পিছে দৌড়ানো মানুষগুলোকে থামানোর মত সময় হাতে নেই। ততক্ষনে যা হবার হয়ে গেছে!! দুইজন মা তাদের সন্তানকে জোর করে তেঁতুল খাওয়াচ্ছে। এতে নাকি সেই অষুধের রিয়্যাকশন কেটে যাবে। কয়েকজনকে দেখলাম বাচ্চাগুলোকে জোর করে পানি খাওয়াচ্ছে। আর কয়েকজন অতিরিক্ত সচেতন অভিভাবকে দেখলাম তাদের সন্তানকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে।

এক কথায় পুরোপুরি ডিজাষ্টার সিচুয়েশন...!! এসব দেখে সাথে সাথে মনে হল আমার এখানে করণীয় অনেক কিছুই আছে। আমি ডাক্তার নই!! এই সব অষুধের রিয়্যাকশন এন্ড কিউর নিয়ে আমার বিন্দু ধারনা নেই। তারপরও আমার সামনে দাড়ানো জটলার মধ্যকার পাড়ার অল্পশিক্ষিত, অশিক্ষিত, আতঙ্কগ্রস্থ মানুষগুলোকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম.......। "গরমের দিনে খালি পেটে কৃমির অষুধ খাওয়ালে বাচ্চারা এরকম একটু আকটু অসুস্থ হতেই পারে!! যদি বাচ্চারা খুব অসুস্থ হয়ে যায় তো সেই ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেন!! অন্যের কথায় কান দিয়ে মিছেমিছি সুস্থ বাচ্চাকে ভুল ট্রিটমেন্ট করে অসুস্থ করার কোনও দরকার নেই!!! যতক্ষন না বাচ্চার মধ্যে কোন রকম অসুস্থতার লক্ষন প্রকাশ পাবে, ততক্ষন পর্যন্ত চিন্তা করার মানে হয়না!!" পাড়াতে আমার মোটামুটি ভালোই গ্রহনযোগ্যতা আছে। আর সেই অবস্থাটা বিবেচনা করে সুযোগটা কাজে লাগালাম।

অনেকেই আমার কথাগুলো ভালোভাবে চিন্তা করে একে অপরকে বুঝাতে চেষ্টা করল। বুঝতে পারলাম নিঃসঙ্গ যোদ্ধা হিসেবে আমি একেবারে পরাজিত হইনি!!! কিন্তু তারপরও দেখি পাড়ার কিছু মুরুব্বী গোত্রীয় মানুষের সন্দিহান চেহারা। আমার কথার উপর তারা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না!! তাদের সন্দিহান দৃষ্টি গায়ে মাখলাম না!! কারন তখনো আমার হাতে অনেক কাজ!!! এরপর চলে গেলাম পাড়ার অন্য একটা অংশে। সেখানেও দেখি একই অবস্থা। জানতে পারলাম "একটা বাচ্চা নাকি বিকেল থেকে কাশি দিচ্ছিল।

এটা ভিটামিন-এ ক্যাপসুলের সাইড ইফেক্ট মনে করে বাচ্চাটার অভিভাবক তার বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছেন!!!" এরপর সেখানের কিছু জটলাবাধা মানুষগুলোকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম। তারা সবাই আমাকে খুব ভালোভাবে না চিনলেও তাদের মধ্যে কিছু পরিচিত বড়ভাই আমাকে চিনল। তাদের সাহায্য নিয়ে আমি আতঙ্কগ্রস্থ লোকগুলোকে বুঝাতে শুরু করলাম। তাদের চেহারা দেখে বুঝলাম, তারা আমার কথাগুলোকে একেবারে ফেলেও দিতে পারছেনা আবার পুরোপুরি গ্রহনও করতে পারছেনা। হঠাৎ করেই নিজেকে কেমন জানি অসহায় মনে হল।

কারন একা একা আর কতুটুকই সচেতনতা সৃষ্টি করানো যায়!! তবুও হাল ছেড়ে দিলাম না। ঐ পাড়া থেকে নেতাগোছের এক বড়ভাইকে একটু রিকুয়েষ্ট করে আমার সাথে নিলাম। উনাকে বুঝালাম উনার কাজ তেমন কিছু নাই!!! শুধু আমার সাথে থাকলেই চলবে!! কারন আমি যাদের কাছে যাব তাদের কাছে আমার গ্রহনযোগ্যতাটাই আসল!! এভাবে আরো কয়েকটা জায়গায় গেলাম। সব জায়গায় দেখি একই অবস্থা!! সবাই আতঙ্কগ্রস্থ!!! নিজের সাধ্যমত দুই একটা জায়গায় গিয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে তাদের আতঙ্কগ্রস্থ না হওয়ার জন্য বুঝাতে চেষ্টা করলাম। তারা কয়েকজন আমার কথা শুনল এবং কয়েকজন বাচ্চার মার চেহারা দেখে বুঝলাম তাদের মধ্যে থেকে কিছুটা হলেও আতঙ্কগ্রস্থ ভাব কমে গেল!! তবে বেশীর ভাগই দেখলাম আমার কথাগুলো শুনে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারলনা।

এরকম চলতে চলতে দেখি এক কাজিনের ফোন। ফোনটা রিসিভ করেই বুঝলাম যেটা নিয়ে দৌড়াচ্ছি, সেটার ব্যাপারেই জানার জন্য ফোন করেছে। জানতে পারলাম, "কাজিনটা তার ৩ বছর বয়সী বাচ্চাকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাইয়েছে এবং তখন পর্যন্ত বাচ্চাটা পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু কার জানি পরামর্শে কি এক হোমিওপ্যাথি অষুধ কিনে এনেছে বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য। ভিটামিন-এ ক্যাপসুলটার কারনে যদি শরীরে কোন বিষাক্ত কিছু ঢুকেও থাকে তো সেটাকে নষ্ট করে দিবে...।

" এই কথা শুনে কাজিনকে বুঝালাম যে বাচ্চা সুস্থ থাকলে এটা নিয়ে টেনশন করার কিছুই নেই। আর কাজিনের আশেপাশে যারা আছেন, তারা যেন আতঙ্কগ্রস্থ না হয়!!!! এরপর আসল ছোট খালার ফোন। উনিও আমার কাছে এই ব্যাপারে জানতে চান। কাজিনকে যেভাবে বুঝালাম, উনাকেও সেই একই ভাবে বুঝালাম। এরপর বাড়ীতে ফিরতে গিয়ে দেখি রাস্তার সামনে এক পরিচিত ডাক্তার আঙ্কেরের চেম্বারের সামনে ভিড়।

ধারনা করতে পারলাম কি ঘটছে ওখানে। কিন্তু সেখানে গিয়ে মানুষ গুলোকে বুঝানোর তেমন প্রয়োজন বোধ করলাম না। কারন ঐ ডাক্তার আঙ্কেলের উপর আমার আস্থা আছে। আশা করছি উনিই সবাইকে বুঝাতে পারবেন!! এরপর...............?? মোটামুটি ক্লান্ত শরীরের বাড়ীতে ফিরে আসলাম। নিঃসঙ্গ যোদ্ধা হিসেবে লড়ে গেলাম কিছুক্ষন!! জানিনা কতটুকু সফল হলাম!!! তবে নিজের কাছে সান্তনা এটাই যে, আমি আমার অবস্থান থেকে কিছু করার চেষ্টা করেছি।

সেটা যত সামান্যই হোক না কেন!! ============================================= সামুতে লেখালেখি ছেড়েই দিয়েছি। তারপরও লিখবনা লিখবনা করে অবশেষে লিখে ফেললাম। আর এটার কারন এই না যে, নিজেকে বীর প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। বরং আমি এটাই বুঝাতে চেয়েছি আপনার একটা ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সমাজকে কিছুটা হলেও পাল্টে দিতে পারে। তাই হাল ছেড়ে দিবেন না।

আপনি একা, তো কি হয়েছে??!! আজকে আপনি যে পথ দেখিয়ে গেলেন। আগামীকাল সেই পথেই হাজার হাজার পথিক চলে আসবে। আপনি হয়তোবা আগামীকাল কে দেখে যেতে পারলেন না, তবে মনে বিশ্বাস রাখুন আপনার ক্ষুদ্র পদাংক অনেকেই অনুসরন করেছে। শুধু সাহস করে আপনাকে আপনার প্রথম পদক্ষেপটা বাড়াতে হবে......................। ভালো থাকুন সবাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।