আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার মেয়ের উপর নির্যাতনকারীর বিচার চেয়ে মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে গেদু চাচার খোলা চিঠি।

গেদু চাচার খোলা চিঠি। মা মনিরা, অনেক সহ্য করলাম এবং দেখলাম কিন্তু সভ্যতার এই চরম উন্নতির যুগে আমার মেয়েকে আমি নিরাপত্তা দিতে পারলাম না। আমার মেয়ে প্রথমত একজন মা...দ্বিতীয়ত একজন দশ বছর ধরে নরপশুর সাথে সংসার করা নির্যাতিত গৃহবধু এবং সবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহাকারী আধ্যাপিকা রুমানা মনজুর...যাকে তার নরপিশাচ স্বামী গত বছর ধরে তিলেতিলে তো অত্যাচার করেছেই...শেষে না পেরে তার জীবনটাই নষ্টের সর্বশেষ চেষ্টা স্বরুপ তার বা’ চোখটা নষ্ট করে দিয়েছে...হাতের দুই আঙ্গুল চোখের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে। মেয়ে আমার আর কখনই বা’চোখে দেখবেনা...ডান চোখের ব্যাপারেও ডাক্তার সন্দিহান। মা মনিরা, অনেকদিন দেখালাম তোমাদের দেশ চালানো...এইবার আমার মেয়েকে যেই নরপিশাচ নির্মম ভাবে অত্যাচার করেছে তার বিচার চাই।

এদেশে তোমরা অনেক দিন ধরে রাজনীতির দুই কান্ডারী হিসেবে আছ। প্রতিবার তোমাদের কারো না কারো কাছ থেকে বা তোমাদেরি আশপাশ থেকে নারী জাতি নিয়ে অনেক তির্জক মন্তব্য শুনি...কিন্তু এইবার আমার মেয়েকে নির্যাতনকারী নরপিশাচ হাসান সাইদের বিচার চাই। মা মনিরা...আমার এই মেয়ে সিমির মত অভিমানী না...তাই একটা চিঠি দিয়ে এই পুরুষ সমাজের প্রতি ঘেন্না প্রকাশ করে ওপারে চলে যায়নি। মায়েরা আমার,আমার মেয়ে ‘রুমানা’ ইয়াসমিন না...যে পুলিশের হাতে ধর্ষিত হয়ে রাস্তায় পরে মারা গেছে...আমার মেয়ে ফেলানী না...যে তোমাদের চুলাচুলির ফসল স্বরুপ বর্ডারের তারকাটায় গুলি খেয়ে দুই দিন ধরে ঝুলে ছিলো...আমার মেয়ে রুমানা একটা অবুঝ পাঁচ বছরের শিশু আনুশাহর মা...একজন গর্বিত শিক্ষিকা যিনি...ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা...যার দায়ীত্ব মানুষ গড়া...মনুষ্যত্ব জাগানো ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে। মা খালেদা, ইয়াসমিন মারা যাবার পরের দিন বেইজিং এ নারী সম্মেলনে গিয়েছিলে তুমি...নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্যে...আর ইয়াসমিনের বিচার আমরা দেখেছি বহুদিন পর...একদল নরপিশাচের জামিনে মুক্তির মধ্য দিয়ে।

একজন নারী মারা গেলো পুলিশের হাতে...যাদের কাজ মানুষ কে নিরাপত্তা দেয়া...যাদের কাজ নির্যাতিতাকে রক্ষা করা পিশাচের হাত থেকে তারা নিজেরাই ভ্যানে তুলে নিয়ে রাস্তায় গণধর্ষন করে রাস্তাতেই মেরে ফেলে রেখে যায়...নিশ্চুপ ছিলে তুমি...তোমার সরকার...অথচ তুমি একজন মেয়ে...একজন মা...সবার থেকে বড় কথা একজন নারী নেত্রী। মা, তোমার নাতনী জাইমা যদি আজকে এমন কিছুর শিকার হত?তাহলে কি হত মা মনি?তুমি কি এক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে এইটার বিচার করতে?সেই পুলিশের বিচার হতে কি আমরা পাঁচ বছর চেয়ে থাক্তাম?না...কারণ তোমরা ঠিকই নিরাপদ থাকো...এ এস এফ বেষ্টিত থাকো...তাই কুনজর তোমাদের দিকে যায়না...তার থেকেও বড় কথা দেশবাসীর ভালোবাসার মাঝে থাকো। কিন্তু মা,একজন মেয়ের বাবা হিসেবে বলছি...আমার মেয়ে রুমানার উপর নির্যাতনকারী হাসান সাইদের বিচার চাই...আমি কোন কথা শুনব না। মা মনিরা, সিমি চলে গেলো...অভিমান করে...কি দোষ ছিল ওর?আমার সিমি...ভালো আঁকত সেইটা?একটু রাত হলে বাড়ি ফিরত সেইটা?এই অপরাধে তাকে সমাজের একদল নিচুমনের পুরুষের কাছে গঞ্জনা সইতে হবে?সিথি চলে গেলো...কারণ কি?একই কারণ...কিছু মানুষের চোখ আছে মানবদেহের মতই কিন্তু দৃষ্টি পশুর মত। আরো অনেক মেয়ে আমার চলে গেছে...কারো খবর জানি...কারোটা জানিনা।

কি পেলাম তাহলে তোমাদের ক্ষমতার আসনে বসিয়ে?মেয়ে হয়ে মেয়ের মর্ম যদি এত দেরিতে বুঝো তাইলে দ্রুত বুঝবে কে?একজন মেয়ে কি তার সমস্যা একজন পুরুষকে আগে বলে নাকি একজন মেয়েকে?আমি জানিনা মা মনিরা...আমার মেয়ে রুমানার উপর নির্যাতনকারীর বিচার চাই...তোমাদের শক্ত অবস্থান দেখতে চাই। মা হাসিনা, পুরাণ ঢাকায় কেমিক্যালের গুদামে আগুন লেগে একই পরিবারের দুই মেয়ের সবাই মারা যায়। হাত ভরে মেহেদি নিয়ে ফিরে এসে বাবা-মা’র পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ দেখতে হয় তাদের। দিশেহারা সেই মেয়ে দুটির পাশে একজন মা হয়ে এসেছিলে...দ্রুতই। গড়ে দিয়েছো তাদের জীবন।

কিন্তু মা, ফেলানী কি আমাদের না?কি বলল সাহারা? ও নাকি আমাদের দেশের না?কেমন কথা মা গো?তুমি পুতুলের মা...জয়ের মা...নাতনী হলে ছুটে যাও সুদুর আমেরিকা...কারণ সবার আগে তুমি মা...কিন্তু সাহারা এইটা কি কথা বলল মা? আমি জানিনা সাহারার কয়টা ছেলে মেয়ে...কিন্তু যে একমুখে দুই কথা বলে তাকে তুমি এই গুরুত্বপুর্ণ পদে রেখেছ?ফেলানী যদি আমাদেরি না হবে তবে তার ঝুলে যাওয়া লাশের দিক কেনো ছিলো এই হতভাগা বাংলাদেশের দিকে?কিইবা তার দরকার ছিলো একজন ভারতীয় হয়ে বাংলাদেশে আসার...তাও বর্ডারের কাটাতেরের বেড়া ডিঙ্গিয়ে?এই গুলা কি মা সারকাস খেলা?মা রে,ফতোয়া নিয়ে দোররার শিকার মেয়েটার নাম আমি মনে করতে পারছিনা...যাকে কিনা সাংবাদিকের কলমের জালায় কবর থেকে তুলে আবার ময়না তদন্ত করা হয়েছিলো...তার খবর নিতে যেয়ে তোমার দলের এমপি কি কথা বলল মা?আমি এতশত জানিনা মা,আমার মেয়ে রুমানার উপর নির্যাতনকারী হাসান সাইদের বিচার চাই। পুলিশ নাকি খুঁজে পাচ্ছে...কিন্তু আমি জানি পুলিশকে তুমি নির্দেষ দিলে এক সেকেন্ড লাগবে সেই মানুষরুপি কুকুরকে খুঁজে পেতে। আমার মেয়ের চোখ নষ্ট করে দিয়েছে সে...যে কিনা আর ভালভাবে তার আদরের মেয়েকে দেখতে পারবে না...আমি আমার মেয়ের উন্নত চিকিৎসার সুযোগ চাই। মা আমি আর সইবো না...আমার মেয়েকে নির্যাতনকারীর বিচার চাই। মা মনিরা, অনেক হল।

অনেক দেখলাম শিক্ষা ব্যাবস্থা ঢেলে সাজানোর আপ্রাণ চেষ্টা...কিন্তু দেখলাম না নারীকে সম্মান জানানর মত কোন বিষয়। মা রে,যেই দেশে বাসে লেখা হয়... ‘সামনের নয়টা আসন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি,মানসিক প্রতিবন্ধী এবং নারীদের জন্যে জন্যে সংরক্ষিত’...সেই দেশের আমি আমার মেয়ের দিকে তাকাতে পারিনা...পুরুষ হিসাবে আমার লজ্জা লাগে। নারী মানেই অবলা না...নারী মানেই পন্য না...নারী মানেই যা খুশি তাই বলব তাইনা...নারী মানে আমার কাছে পৃথিবীর দ্বিতীয় রুপ। নারী আমার মা...আমার মেয়ে...আমার বোন...আস্থা...নারী মানেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধি,মানসিক প্রতিবন্ধীর সাথে এককরে ফেলা নয়(দৃষ্টি প্রতিবন্ধি,মানসিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি...ব্যাপারটা কেউ ঘোলা করে ফেলবেন না...এইটা দৃষ্টি ভঙ্গির ব্যাপার)...যা সরকারী বাসেও আমরা দেখি আহরহ। শিক্ষা ব্যবস্থাতে যদি এইসব বিষয় গুলা আসত তবে আজকে সমাজে হাসান সাইদের জন্ম হত না...সিমিকে কটুক্তি করার মত পুরুষের জন্ম হত না...ইয়াসমিন কে হত্যা করার মত পুলিশের জন্ম হত না...আমরা সিলেবাসে এত কিছু ঢুকাচ্ছি...কিন্তু নারিকে কিভাবে একজন মানুষ আর সমাজের অদ্বিতীয় অংশ হিসেবে গ্রহন করব তা দিচ্ছি না...।

পাঁচ বছর পর পর বাবা আর স্বামীর গল্প শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেলো অথচ মেয়েদের মেয়েই ভেবে গেলাম...সহকর্মী ভাবতে পারলাম না...রক্ত মাংসে গড়া মানুষ ভাবতে পারলাম না। আমি জানি না মা মনিরা,আমার মেয়ে রুমানার উপর নির্যাতনকারী হাসান সাইদের বিচার চাই...তাকে কাঠগড়ায় দেখতে চাই...কঠিন শাস্তি পাচ্ছে দেখতে চাই...আমার মেয়ের চোখ ও নষ্ট করে দিছে...ও আর আমাকে দেখতে পারবে না...বাপ হয়ে আমি তাকে জিবনের বাকিটা সময় ধরে ধরে বারান্দায় বসিয়ে বলব দেখ মা...কি সুন্দর জোছনা...মেয়ে বলবে... ‘আব্বু,আমার যে চোখ নাই’...পারবা সহ্য করতে এই কথা?পারবা একজন মেয়ের মা হয়ে যাওয়া মেয়েকে জিবনের বাকিটা সময় বাচ্চার মত মুখে ভাত তুলে দিতে?তাইলে কি পারো?আমার রুমানাকে নির্যাতনকারীর বিচার চাই...। মা মনিরা, আমি আর আমার কোন মেয়ের দিকে তাকাতে পারব না...কোন দুই চোখওয়ালা মেয়ের দিকে তাকাতে পারব না...আমার লজ্জা লাগবে...আমার ঘেন্না লাগবে নিজের প্রতি...আমি একজন পুরুষ তাই। কিন্তু মায়েরা আমার...হরতাল দাও...মিছিল দাও একে অপরকে দুনিয়ার সবচেয়ে বাজে মন্তব্যে ভাসিয়ে দাও...সবার আগে আগে আমার মেয়ে রুমানাকে নির্যাতনকারী হাসান সাইদ কে পুলিশের হাতে দেখতে চাই...আদালতের কাঠগড়ায় দেখতে চাই...তিলেতিলে জেলে পচে মরছে দেখতে চাই। আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি...আমার মেয়ে ল্যাব এইডে আছে...আমার মেয়ে নিজের দুই চোখের মতই অহর্নিশ তার মেয়ে আনুশাহর চিন্তায় ঘুমাতে পারছে না...ছটফট করছে...এপাশ অপাশ করছে...ঘাতক হাসান সাইদ হুমকি দিয়েছে...এসিডে ঝলসে দেবে তার মুখ...মেয়ের মুখ...আমি কি ঘুমাতে পারি মা গো? আমি বিচার চাই...খালেদা জিয়া আপনার কাছে...শেখ হাসিনা আপনার কছে...প্রধাণ বিচারপতি আপনার কাছে...স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আপনার কাছে...যার্বের প্রধানের কাছে...পুলিশের আইজিপির কাছে...দেশের সবার কাছে...আমার মেয়ে রুমানার উপর নির্যাতনকারী হাসান সাইদকে ধরিয়ে দিন...ও আমার মেয়ের দুই চোখে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে...নির্মম ভাবে অত্যাচার করে মেয়েকে মেয়ের রক্তেই পিছলে দিয়েছে...আমার মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়েছে...বলেছে এসিডে ঝলসে দেবে মেয়ের মুখ...মেয়ের একমাত্র সন্তান আনুশেহর মুখ।

আমি বিচার চাই। । একজন অসহায় পিতা হিসেবে...একজন বাংলাদেশি হিসেবে...সিমি...ইয়াসমিন...ফেলানীর হতভাগা পিতা হিসেবে। আমার মেয়ের উপর নির্যাতনকারীর বিচার চেয়ে মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে গেদু চাচার খোলা চিঠি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.