আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর সাদাসিধে কথা এবং আমার কিছু প্রশ্ন

চুশীল/প্রগুদিশীল/প্রচুদিশীল ব্লগার দ্বারা সাম্প্রদায়িক ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম আলোতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর সাদাসিধে কথা পড়লাম। তিনি স্বনামধন্য লেখক, শিক্ষক, এবং গবেষক। উনার এই লেখায় অনেক ইতিবাচক দিক আছে, বোঝা যায় তিনি দেশ এর উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন। শিক্ষকদের রাজনীতি নিয়েও হালকা কটাক্ষ করেছেন।

যদিও অনেকের ধারণা, তিনি রাজনীতির খোলস থেকে বের হতে পারেন না এবং উনার লেখা সবসময়ই পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি তার এই সাদাসিধে কথায় উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে সচেষ্ট হয়েছেন। কি কি বিষয়ে গবেষণা করা যায় সেই বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করলেনঃ কী কী বিষয় নিয়ে গবেষণা করা যায়, সেটা চিন্তা করতেই আমার জিবে পানি এসে যায়। সবার আগে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারি, আমাদের ইতিহাসের এত গৌরবোজ্জ্বল একটি বিষয় কিন্তু আমরা কি সেটা নিয়ে সত্যিকারের গবেষণা করেছি? পৃথিবীর জ্ঞানভান্ডারে সেই জ্ঞান কি সঞ্চিত আছে? আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু করেছি। সবাই টের পাচ্ছি যুদ্ধাপরাধীদের অপকর্মের সঠিক তালিকা এখনো আমাদের হাতে নেই।

আমরা যদি সত্যিকারভাবে গবেষণা করতে পারতাম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই যদি হাজার খানেক পিএইচডি থাকত, তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজটি কি এক শ ভাগ সহজ হয়ে যেত না? বঙ্গবন্ধুর মতো বর্ণাঢ্য জীবন কজনের আছে, আমরা কি তাঁকে নিয়েই গবেষণা করেছি? জনপ্রিয় বই খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু গবেষণা কি পাওয়া যায়? পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা আমাদের দেশের নেতাদের নাম কেন খুঁজে পাই না? একাত্তরে তাজউদ্দীন আহমদ যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন, তাঁর ওপরে কি গবেষণা করা হয়েছে? স্বাধীনতার পর কেমন করে পঁচাত্তরে দেশ উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করল, সেটা নিয়ে এই দেশে কয়টি নির্মোহ গবেষণা হয়েছে? এ বছর রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে হলেও আমরা কি এই দেশে রবীন্দ্র-সাহিত্যের ওপর কয়েক ডজন পিএইচডি শুরু করতে পারি না? আমি সিলেটে থাকি, বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমকে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি—তাঁর ওপর কি কয়েকটি পিএইচডি করা যায় না? এবার আমার প্রশ্নঃ ১। গবেষণার এই বিষয়বস্তুগুলো দেশকে ঠিক কোন্‌ উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে বা দেশের ঠিক কোন্‌ জায়গায় উন্নতিটা হবে? ২। তিনি রাজনীতি (শিক্ষক) থেকে বের হতে পেরেছেন কি-না!! ৩। জিবে পানি আসলো কেন? ৪। ছাত্র/ছাত্রী এবং শিক্ষকের রাজনৈতিক মতাদর্শ যদি ভিন্ন হয় তাহলে সেই ছাত্র/ছাত্রীর ডিগ্রী পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? ৫।

পিএইচডি পাওয়ার পরে সেই ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র কোথায় হবে? উল্লেখ্য, ভারত এবং পাকিস্তান তাদের বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রীপ্রাপ্তদেরকে উচ্চ বেতন (বিদেশে থাকলে যে বেতন পেত) দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা শুরু করেছে। পিএইচডিপ্রাপ্তদেরকে নিয়ে তারা একটা মহাপরিকল্পনা (এই বিষয়ে পরে পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে) করে এগুচ্ছে। আমাদের দেশের সরকার আজ পর্যন্ত এরকম পরিকল্পনা করেছে কি-না আমি জানি না। এবিষয়ে জাফর ইকবাল সাহেব সরকারকে কোন পরামর্শ দেননি। এইজন প্রযুক্তিবিদ হিসেবে মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমাদের দেশের শিল্প/প্রযুক্তিখাতের জন্য কিছু নির্দেশনা দিতে পারতেন।

যেমনঃ কম্পিউটার, গাড়ী, মোবাইল ফোনসেট এবং এসব এর যন্ত্রাংশের সবকিছুই আমরা বিদেশ থেকে আমদানী করি এবং প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়। এই সব যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের একটা পার্টও (চিফ, সলিড স্টেইট ডিভাইস, অথবা যেকোন কিছু) যদি আমরা তৈরি করতে পারতাম তাহলে কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হত এবং রপ্তানি আয়ও হত। চায়না মোবাইল ফোনসেটগুলো আমাদের জিঞ্জিরায় তৈরি হয় এবং ওগুলো কিনে আমাদের দেশের জনগণ প্রতারিত হচ্ছে। জিঞ্জিরার শ্রমিকদের সবাই অশিক্ষিত, কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাই কিন্তু দক্ষ। ইলেক্ট্রিক্যাল/ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিরিং এ পিএইচডি করেছে এইরকম হাজারখানেক (অথবা কয়েক শ) ইঞ্জিনিয়ার কি সেখানে নিয়োগ দেয়া যেত না? যাতে জিঞ্জিরার ঐ প্রতারক কোম্পানিগুলো এবং দক্ষ শ্রমিকগুলো দেশের একটা কার্যকরী শিল্পে পরিণত হয়!!! শেখ মুজিব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়, রবীন্দ্রনাথ আর বাউল সম্রাট আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিষয়।

কাজেই শেখ মুজিব/রবীন্দ্রনাথ/বাউল সম্রাট নিয়ে কি গবেষণা হতে পারে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ বা সংস্কৃতিবিষয়ক কোন বিষয়ের শিক্ষক/গবেষক/ছাত্র-ছাত্রীই ভাল বলতে পারবেন এবং ফলদায়ক গবেষণাও হতে পারে তাদের দ্বারা। মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাহেবের মুখে লালা আসলে বরং ঐসব ক্ষেত্রে ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি হবে না। কারণ, ডাক্তারকে বাদ দিয়ে একজন আইনজীবি দিয়ে সন্তান প্রসব করানো হলে বাচ্চার নাড়ি কাটার বদলে সেই সন্তানের লিঙ্গ কর্তনের আশংকা বাড়িয়ে তুলবে। ধন্যবাদ সবাইকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।