আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জানাযার লোকসমাগম জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হতেপারেনা !!!

কিছুদিন আগে একটা কথা শুনে খুব অবাক হলাম ! বিএনপির সংসদের বিরোধীদলীয় চিপহুইপ জনাব জয়নাল আবেদিন ফারুক সাহেব বল্লেন " জিয়ার জানাযাতে লাখ লাখ লোক সমাগম হয়েছিল, এটা প্রমাণ করে যে জিয়া কতবড় নেতা হয়ে উঠেছিলেন ! তার জনপ্রিয়তা কতছিল ! আর সাবেক রাস্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের জানাযাতে লোক সমাগমই হয়নাই !".... এমন কথা কিনা বের হয় একজন দায়িত্তশীল ব্যক্তির কাছথেকে!!! আবাক না হয়ে কি পারাযায় ? এটা বলবে গ্রামের কোন এক বিএনপির মূর্খ অন্ধভক্ত, তা না বলে কথাটা বের হল বিরোধী দলীয় চিপহুইপের মুখ থেকে ! উনি ত নিজেও বাস্তবতা জানেন, যে দুটা প্রক্ষাপট ও বিদ্রোহ এক ছিলনা । তার পরও কেন এমন নোংরাকথা বের করেন, তাহলে কি উনারা নোংরা রাজনীতি থেকে কখনই বেরহয়ে আসতে পারবেননা ?? !! . আসলে জানাযার রাজনীতি ও ধর্মের ঢাক হল উনাদের রাজনীতির হাতিয়ার , এগুলো আজগুবি কথা উনারা ছাড়লে ত রাজনীতি করার কোন পুজিই থাকেনা । একটা ছোট্র কাহিনী বলি, আমার এলাকাতে এটা ছেলে বিদেশে কর্মরতছিল, নাম তার সেলিম । সে লেখাপড়া করেছে বড়জোড় ক্লাস ৮ পর্যন্ত । সৌদি আরবে ছিল প্রায় ৬-৭ বছর হবে , তারা ১৩ জন ভাই, প্রাই সবার লেখাপড়া এমনই লেভেল ! তাদের কিছু ভাইত গ্রামের আতংক , যেখানেই মারামারি সেখানেই তাদের পাওয়াযায় ।

এমন এক পরিস্থিতিতে সেলিম বিদেশ যায় এবং ৬-৭ বছর কাজ করে । একদিন ছেলেটা সড়ক দূর্ঘটনায় মারাযায় !! দেশে লাশ আসে মাস ৬ এর , আমি যানাজাতে গেলাম , দেখলাম তিলঠাই নাই !! হাজার হাজার লোকের সমাগম , গ্রাম থেকে গ্রামান্তর থেকে ছুটে আসালোকের ভারে যেন গ্রামটা মাটির নিচে ডেবে যাবে এমন অবস্থা , কি মহিলা কি পুরুষ , গায়ে গায়ে যেন বারি খেয়ে পরছে , কারণ এমন দূর্ঘটনায় মৃত্যুর পর ৬ মাস পর লাশ এসেছে , আর লাশটা কেমন আছে ৬ মাস পর সেটা দেখাই ছিল মেইন কথা । কেউ বলছে লাশ যেমন তেমনই থাকবে, কেউ বলছে লাশটা শুটকি করে পাঠিয়েছে , কেউ বলছে লাশের ভুড়ি কেঁটে পাঠিয়েছে, আর তার কফিন দেখে মানুষ ত আরও হতবাক যেন এমন কাঠের বাক্স আর কেউ কোনদিন জন্মেও দেখেনি !! এগুলোছিল তার আকর্ষণ , আর তারই ধারাবাহিকতায় এমন হাজার হাজার লোক সমাগম , ছেলেটা কোন এমপি / চেয়ারম্যান/ মেম্বার/ বুদ্ধিজীবি , এগুলোর কিছুই ছিলনা কিন্তু তার জানাযায় যে পরিমাণ লোক হয়েছিল তা কোন এমপির জানাযাতে হয়ে থাকতে পারে কিন্তু কোন চেয়ারম্যানের জানাযাতেও অতিতের কেউ এত লোকসমাগম দেখেনি । তাহলে ঘটনা কি দাঁড়াল ? এ ছেলে সেলিম কি আমাদের গ্রামে জন্মনেয়া প্রধান বিচারপতি জনাব গোলাম রাব্বানির চেয়ে বেশি জনপ্রিয়, নাকি আমাদের গ্রামের মেজর জেনারেল গোলাম মওলার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ! আমাদের গ্রামে ত অনে নামিদামী জ্ঞানি ব্যক্তি আছেন , আছেন প্রফসর ও ডাক্তার , তবে তাদের চেয়ে বা অতিতের কোন নামিদামী ব্যক্তির জানাযার চেয়ে এইছেলের জানাযার লোক দেখে আপনি আমিও জয়নাল ফারুকের মত বলব এমন জনপ্রিয় ব্যক্তি এই গ্রামশুধুই নয় আরও ১০ গ্রামে কেউ ছিলনা তা এই জানাযাই প্রমাণ করে ! কথাটা সর্বকালের হাস্যকর হয়ে কি দাঁড়াবে না ??? আসুন বঙ্গবন্ধু ও জিয়া উভয়ের মৃত্যুর প্রেক্ষাপট দেখাযাক !! .........। বঙ্গবন্ধু যখন সেনাঅভ্যুথ্যানে নিহত হন তখন দেশের পরিস্থিতি আর জিয়ার মৃত্যর পর পরিস্থিতি এক ছিলনা ।

বঙ্গবন্ধু মারাযায় দেশিবিদেশি চক্রান্তে ও বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সেনা-সামরিক অভিযানে, যেটাছিল বাংলাদেশের রাজধানীর মধ্যে ! রাজধানী নিয়ন্ত্রণ মানে দেশ নিয়ন্ত্রণ , আথচ জিয়া মারাযায় দেশের এক প্রান্তে, চট্রগ্রামে । যার প্রভাব বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে পরেনা । জিয়া মৃত্যুর ঘটনা ছিল একটা আতি দূর্বল বিদ্রোহ , কেননা হত্যাকারিরা চট্রগ্রাম বেতার পর্যন্ত দখল করতে পারেনি । পক্ষান্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড হয়েছে বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক বিদ্রোহ , দেশ সামরিকের দখলে নিয়েনেয় । ঔ সময় আওয়ামী লীগের কথা উচ্চালন করার মত সাহস হারিয়েফেলেছে জনগণ ।

জিয়ার মৃত্যর পর বিএনপি ক্ষমতায়, তার জিয়ার দ্বিতীয় জানাযা করার জন্য বাংলাদেশের আনাছেকানাচে বাস ও ট্রাক পাঠিয়ে লোক হাজির করা হয়, সরকারি ও দলীয় খরচে লাখ লাখ লোক বাংলাদেশের সব জায়গা থেকে নিয়ে এনে ঢাকায় জানাযা করা হয়া ! তবে আমি বলব জিয়ার জানাযাতেই কোন লোক হয়নি, কারণ তার প্রথম জানাযা হয় চট্রগ্রামে , যেখানে কে জানাযা করেছে তা কেউ জানেনা !! !! কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর লাশকে তার অজোপারাগাঁওতে নিয়ে গিয়ে রাতের অন্ধকারে গ্রামের শুধু ৩০ জন মানুষদিয়ে জানাযা করিয়ে দাফন করানো হয় যাতে জনবিদ্রোহ না হয় তাই তরিঘরি করে জানাযা কার্য সমাধা করা হয়, দাফনের কাপড় কিন্তে বাজারেও যেতে দেয়া হয়নাই ! সাবান পর্যন্ত আনতে দেয়া হয়নাই , এক বিধবা বঙ্গবন্ধুর দেয়া রিলিফের সাদা কপড় পেয়েছিল সেই কাপড় দিয়ে মাটি দেয়া হয় আর গোসলের জন্য ৫৭০ কাপড়কাঁচা সাবান গ্রামের এক ব্যক্তি ব্যবহার করে । রাইফেলের মুখে দাঁড়িয়ে সাহসকরে ৩০ জন ব্যক্তি জাতির মহান নেতার দাফন সম্পন্ন করে !!! কিন্তু জিয়া মারাগেলে দেশজুড়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে লাশদেখানোর নামকরে তার দল ক্ষমতায় ছিল বলে দেশের বিভিন্ন জায়গাথেকে লোক বিনাখরচে বাস ও ট্রাকযোগে হাজির করে লাশ না দেখিয়ে কফিন হাজির করে জানাযা করা হয় , জিয়ার মৃতদেহ না দেখিয়ে খালেদা জিয়ার রুপদেখিয়ে সবাইকে ভুলানো হয়! সবাই ফ্রি খরচে গিয়েছিল জিয়াকে দেখতে কারন এমন রাস্ট্রপতির মৃত্যু নূতন না হলেও লাশ দেখার পরিস্থিতি ছিল নূতন , আর সবাই বলছিল চল জিয়াটাকে দেখে আসি খরচ লাগছেনা , তার উপর শেখ সাহেবকে মারল তাকে আমরা দেখতে পারিনি কারন তরিঘরি করে মাটি দিয়েছে এবার জিয়াকে কি করে মারল দেখে আসাহোক , এই অসিলাতে সবাই সেদিন ঢাকামূখী হয়েছিল । কথায় বলে ফ্রি পেলে বাঙগালি আলকাতরাও খায় !!!! তাহলে ফ্রি বাসে চেপে এমন হত্যাকান্ডের মৃত্যু দেখতে যাবেনা কেন ? .। আর সেদিন রাজাকার কিছু কেঁদেছিল কারণ জিয়া ছিল রাজাকারের মেরুকরণকারি , তাদের প্লাটফর্ম ছিল জিয়া ও তার দল বিএনপি ! এই হল দুই সময়ের প্রেক্ষাপটের কিছু সংক্ষিপ্ত নমুণা !!! বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর পর যে যা পারে নিজেকে বাঁচাতে অফিস থেকে তার ছবি নামাতে থাকে , সেদিন এক দাদু আমাকে বলছিল " দেখ সেই শেখের ছবি আবার দেয়ালে টাংগানো কিন্তু আমরা ছবি টাংগাতে পারিনি ভয়ে ! কারণ যখন শুনলাম শেখকে মেরেছে তখন একটা শব্দ জোয়াড়ের পানির মত ভেঁসে আসল শেখের ছবি আফিস থেকে নামাও তাছাড়া আর্মিরা তোমাদের যার অফিসরুমে শেখের ছবি পাবে তাকেও শেষ করবে !" শুধ তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর এক বছর পরও সেনাবাহিনী তার নাম স্বরণ করে মিলাদ করতে দেয়নি , দেশের কোথাও এমন পরিবেশ ছিলনা যেখানে তার নামে মিলাদ পড়াহবে , ভৈরবে বঙ্গবন্ধুর স্বরণসভার আয়োজন করাহয় , কিন্তু আর্মি এসে কে বা কার নির্দেশে মিলাদের আসরে শুরুকরে পিটুনি ! তবারকের ডেস্কিতে বুটের লাথি মেরে ঢেলে ফেলা হল রান্না সামগ্রি !! হায়রে বাঙ্গালি ..........। সেই পরিবেশের সাথে কিনা জিয়ার মৃত্যুর পরিবেশের আর জানাযার তুলনা করাহয় !!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।