আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাগল এবং বদি মিয়া

: যাও, যা কে এক ছাগাল লেকে আও! মেজর গুলাম আলীর হুকুম শুনে বদি মিয়া চিন্তায় পড়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন, 'রাজাকার হয়ে বিপদেই পড়া গেল। একে একে গ্রামের সব ছাগল মেলেটারীদের খাইয়ে দিলাম তবুও এদের ছাগল খাবার নেশা যাচ্ছে না। নতুন করে ছাগল যে কই পাই। ' তখন সময় একাত্তর সাল।

সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। বদি মিয়া আগে থেকেই পাকিস্তানকে পেয়ার করেন বলে পাকিস্তান রক্ষায় রাজাকার বাহিনীতে পা বন্দি করেছেন। আপাতত পাকিস্তান মেলেটারীর এক ক্যাম্পে খাদেমের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। সেনাদের খানার ব্যবস্থা করা তার দৈনন্দিন কাজের একটা প্রধান অংশ। ক্যাম্পের মেজর গুলাম আলী ছাগল খুব পছন্দ করেন।

সেকারনে মাঝে মাঝেই তিনি ছাগলের মাংস খেতে চান। আজও চেয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মেজর সাহেব ছাগল কেনা পছন্দ করেন না। তিনি চান বাঙ্গালীদের ছাগল জোর করে ধরে এনে রেঁধে খেতে। ছাগল ধরে আনার দায়িত্ব বদি মিয়ার।

এতদিন বদি মিয়া তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে আসছিলেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখন আর ছাগল পাওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে বদি মিয়া আছেন টেনশনে। অগত্যা মেজর সাহেবর ছাগল খাবার দাবী নিয়ে টেনশন করা বাদ দিয়ে বদি মিয়া গুলাম আলীকে বললেন, 'গুস্তাখি না নিলে একটা বাত বোলনা চাহতা হু। ' মেজর সাহেব ইশারায় অনুমতি দিলেন। বদি মিয়া বললেন, 'স্যার, ছাগলের গোস্ত মে সেই টেস্ট কাঁহা? সব দুই লম্বর হো গায়া।

তারচেয়ে আমি বরং একটা কাউ পাকাড়কে নিয়ে আসি। মুসলমান আগার বেশি বেশি কাউ খায়েগা তো উসকি ঈমান পাক্কা হো গা। আখিরাতমে জান্নাত মিলেগা। ' বদি মিয়ার কথা শুনে মেজর সাহেবের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। তিনি বললেন, 'তুম জানতা নেহি, গরুছে মুঝে এলার্জি হে? গরু খানেছে মুঝে খুজলি হোতি হে।

খুজলিকে সাথ সাথ কষা ভি হোতি হে। ইধারছে ইসুব গুলকা ভূষি ভি নেহি মিল রাহা। ইসলিয়ে গরু নেহি চাহিয়ে। তুম ছাগাল লেকে আও। আগার ছাগাল নেহি লায়া, তো তুম কো গোলিছে হালাল কার দুংগা।

' বদি মিয়া নিজের জান নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলেন। সামান্য ছাগলের জন্য আজ তার জান হুমকির মুখে-ভেবে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। পাকিস্তানের জন্য নিজের জীবন কোরবান করতে রাজি ছিলেন আর সেই পাকিস্তানীরা কিনা ছাগলের জন্য তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিলো। এ ব্যাপারটায় বদি মিয়া খুব দুঃখ পেলেন। অগত্যা দুঃখী মন নিয়ে তিনি বাড়ির দিকে রওনা দিলেন।

বাড়ি ফিরে কারো সাথে কোন কথা না বলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। অবেলায় স্বামীকে বিছানায় যেতে দেখে বদি মিয়ার স্ত্রী গুল নাহার বানু কিছুটা অবাক হয়ে গেলেন। তিনি স্বামীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'অবেলায় শুয়ে পড়লেন যে? শরীর খারাপ?' বিবির কথার আওয়াজ পেয়ে বদি মিয়া কাঁথার ভিতর থেকে মুখ বের করলেন। তারপর তাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। সব শুনে গুল নাহার বানু বললেন, 'আফনে চিন্তা কইরেন না খোদেজার আব্বা।

এইডা কুনো সমস্যা না। আমি ছাগলের ব্যবস্থা করতাছি। ' বদি মিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'আশে পাশে তিন গেরামে কোন ছাগল নাই। অর্ধেক ছাগল খাইছে মেলেটারিতে আর বাকী অর্ধেক মেলেটারীর ভয়ে পলাইছে। তুমি ছাগল পাইবা কই?' গুল নাহার বানু বললেন, 'বললাম তো, সেই চিন্তা আফনের না।

আফনে লিশ্চিন্তে ঘুমান। সকালের মইধ্যে সব ব্যবস্থা হইবো। ' অগত্য বৌয়ের কথায় বদি মিয়া কিছুটা শান্ত হলেন। তারপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। বদি মিয়া যখন সকালে ঘুম থেকে উঠলেন তখন তার নাকে মাংসের সুঘ্রাণ টোকা দিল।

রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখেন সত্যি সত্যি মাংস রান্না চলছে। গুল নাহার বানু স্বামীর দিকে চেয়ে একটা হাসি দিয়ে বললেন, 'আফনে ক্যাম্পে গিয়া মেজর সাবরে বলেন গোস্ত পাক হইতাছে। চিন্তার কুনো কারণ নাই। ' অগত্যা বদি মিয়া হাত মুখ ধুয়ে ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলেন। ক্যাম্পে পৌছে বদি মিয়া দেখেন মেজর সাহেব কয়েকজন সেপাই আর রাজাকারদের নিয়ে গল্প করছেন।

তাকে দেখে মেজর গুলাম আলী কথা থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'বদি মিয়া তুম আ গ্যায়ে? ছাগাল কা গোস্ত কাঁহা?' বদি মিয়া হেসে বললেন, 'স্যার গোস্ত বাড়িতে পাক হো রাহা হে। আপ গল্প কি জি য়ে। ' বদি মিয়ার কথা শুনে মেজর খুশি হয়ে বললেন, 'ওয়াও! ছাগাল মিল গেয়া? ভেরি গুড। আজ ভি পেট ভরকে খানা খায়েঙ্গে। ' দুপুরের দিকের কথা।

বদি মিয়া এবং তার বিবি ভ্যানে করে গোস্ত আর রুটি নিয়ে এসেছেন। মেজর সাহেব তার কয়েকজন সেপাই আর রাজাকারকে নিয়ে খানা খাচ্ছেন। বদি মিয়ার বিবি গুল নাহার বানু সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন আর বদি মিয়া মেজর সাহেবের পাশে দাড়িয়ে বাতাস করছেন। এমন সময় মেজর খাবারের প্রশংসা করে বললেন, 'বদি মিয়া, তোমহারা বাঙ্গাল'কে ছাগাল মে জাদু হে। এ্যায়সা লাগ রাহা হে জ্যায়সে জান্নাত সে খানা আয়া হে।

তুম ভি হামারে সাত কিউ নেহি খা রাহে হো?' বদি মিয়া বললেন, 'রান্ধনের সময় হাম লোগ খানা খা লিয়া। আপনার টেনশন নেহি ক্যারকে খাইতে থাকেন। দরকার হইলে আমরা পরে খায়েঙ্গে। ' কিছুৰনের মধ্যে খাওয়া শেষ করে মেজর সাহেব তার এক সেপাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আজ কুছ জেয়াদা খা লিয়া। কেয়া ক্যারে, খানা মাজাদার থা, ইসলিয়ে এ্যায়সা হুয়া।

' তারপর জমে থাকা হাড্ডির দিকে তাকিয়ে এক সেপাইকে বললেন, 'ইস হাড্ডিকা কেয়া ক্যারে। এ্যক কাম করো, সারে হাড্ডি হামারা ক্যাম্প মে জো কুত্তে রোজ আতা হে, উসে দে দো। বাড়া পেয়ারা কুত্তা হে। ' গুলাম আলীর কথা শুনে সেই সেপাই বললেন, 'সুবেছে কুত্তা নাজার নেহি আ রাহা। ' মেজর গুলাম আলী সেপাইয়ের কথায় কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, 'কুত্তেকো কেয়া হুয়া? মুক্তি নে গোলি তো নেহি মার দি?' কুকুর নিয়ে আলাপ শুরু হওয়ায় বদি মিয়া একটু ভয় পেয়ে গেলেন।

ব্যাপারটা গুল নাহার বানুর চোখ এড়ালো না। তিনি স্বামীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললেন, 'খালি খালি ডরাইতাছেন কেন? কইলাম তো, কুত্তাডা জবাই করনের সময় কেউ দেখে নাই। ' ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.