আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোখবন্ধ রাখলেই প্রলয় বন্ধ হবে না

আমি নতুন কিছু লিখবো এমনিতেই মানুষের মন-মেজাজ ভালো নেই। তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বহু আগেই। এখন শুধু আশাটুকুই সম্বল। কিন্তু চারপাশে যা ঘটে চলেছে, তাতে আশার সেই প্রদীপটাও জ্বালিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের হর্তাকর্তারা সকাল-বিকাল আইনের শাসনের কথা বলে মুখে ফেনা তুললেও বাস্তবে কোথাও নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইনের রক্ষকেরাই ভক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন আছে। আইনের প্রয়োগও আছে। তবে তা অন্যের জন্য। নিজের লোক হলে সাত খুন মাফ।

বছরের পর বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে। সরকারের বদল হলেও অবস্থা বদলাচ্ছে না। ক্ষমতার বাইরে থাকলে সবাই পরিবর্তন চায়, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে তাদের হাবভাব বদলে যায়। তারা নিজেদেরকে আইন-কানুন, রীতি-নীতি সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করে। নিকট অতীতের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া দূরে থাক, বরং তারা বুক ফুলিয়ে বলতে শুরু করে যে আগের সরকার যা করেছে আমিও তাই করবো।

ক্ষেত্রবিশেষে মন্দ কাজের প্রতিযোগিতায় আগের সরকারকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে পরের সরকার। আর নানাভাবে তার বিষময় ফল ভোগ করতে হচ্ছে দেশের আপামর মানুষকে। নিত্যনৈমিত্তিক হাজারো দুর্ভোগের পাশাপাশি ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে তার কষ্টার্জিত মৌলিক অধিকারও। উদাহরণ অনেক। তবে সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে এখানে শেয়ারবাজার বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ তোলা যায়।

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই এসে লেগেছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রবল ধাক্কা। সেই ধাক্কায় বাস-ট্রাক-ট্যাক্সির ভাড়া শুধু নয়, আরেক দফা বেড়ে গেছে জিনিসপত্রের দামও। জ্বালানির দাম যতোটা বেড়েছে, যানবাহনের ভাড়া ও দ্রব্যমূল্য বেড়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। দীর্ঘদিন থেকে এ অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে, গত কয়েক বছর যাবত্ জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই তার সঙ্গে তাল রাখতে পারছে না।

ফলে বাড়তি উপার্জনের আশায় তারা এখন উদ্ভ্রান্তের মতো দিকবিদিক ছোটাছুটি করছে। কিন্তু ঝুঁকিমুক্তভাবে বাড়তি অর্থ উপার্জনের সেই সুযোগও সীমিত হয়ে আসছে ক্রমে। আগে অনেকে নানা ধরনের সরকারি সঞ্চয়পত্রের উপর ভরসা করতেন। কিন্তু সুদের হার কমে যাওয়া এবং যত্সামান্য মুনাফার উপর উেস ১০ শতাংশ করারোপের কারণে হিতাহিত না ভেবেই তারা তাদের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল শেয়ারবাজারে। তবে এটাও এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, নানাভাবে তাদেরকে শেয়ারবাজারে ঢুকতে বাধ্য কিংবা প্রলুব্ধও করা হয়েছিল।

অনেকটা খেদায় আটকে বুনো হাতি শিকারের মতো। তাদেরকেও সুকৌশলে আটকে ফেলা হয়েছে গভীর খাদের মধ্যে। এখন জ্বলন্ত চুল্লি থেকে ফুটন্ত কড়াইয়ে লাফিয়ে পড়ার মতো অবস্থা তাদের। নিজেদের আম-ছালা সবই তো গেছেই, সেইসঙ্গে নানা উত্স থেকে ধার-কর্জ করে আনা বিপুল পরিমাণ অর্থও উধাও হয়ে গেছে অনেকের। তারপরও পরিত্রাণ মিলছে না তাদের।

গত কয়েক মাস ধরে বাঁচার জন্য ক্রমাগত চিত্কার করে চলেছে তারা। তাদের বুক ফাটা আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে বাতাস। কিন্তু কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। কেন তাকাচ্ছে না সেটা এক রহস্যই বটে! অন্তর্নিহিত কারণ যা-ই হোক, নীতিনির্ধারকদের এই রহস্যময় নির্লিপ্ততাই এখন দেশের স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবতা হলো, দীর্ঘদিন থেকে ধনী-গরিব, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও পেশাজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত কেউ ভালো নেই।

ভালো থাকার জন্য সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা এবং ইতিবাচক অগ্রগতি দরকার তার কোনো আলামতও দেখা যাচ্ছে না। বরং তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের ভয়াবহ বিপর্যয় সামলে ওঠার আগেই রাজনীতির আকাশ আবারও মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে। অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়। বছরের পর বছর ধরে কয়েক কোটি কর্মক্ষম মানুষ বেকার। তাদের কর্মসংস্থানের অর্থবহ কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে প্রায় স্থবির হয়ে আছে শিল্পখাত। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা হা-পিত্যেশ করি। কিন্তু সরকারি দপ্তরে ছুটোছুটি করে আর নীতিনির্ধারকদের নানা প্রতিশ্রুতি শুনে শুনে স্থানীয় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও হয়রান-পেরেশান হয়ে গেছেন। জ্বালানির অভাবে তাদের কারখানার চাকা ঘুরছে না ঠিকমতো। দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস-বিদ্যুত্ সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

আবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না তাদের জন্য। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নতুন নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাকে যারা সচল রাখবেন, সৃষ্টি করবেন ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তাদের অভাব-অভিযোগ শোনার মতোও কেউ নেই। যাদের শোনার কথা তারা ব্যস্ত অন্য কিছু নিয়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন যে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও জনবহুল একটি দেশের জন্য এটা মোটেও বেশি সময় নয়।

তবে ভিন্নমতও আছে। তারা মনে করেন যে সময়টা নেহাত্ কমও নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এখানে সময়ের হিসাব ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, সবকিছু সঠিকভাবে চলছে কিনা সেটাই হলো আসল। চলার গতি যদি শ্লথও হয়, তবু দেশ ঠিক পথে চললে সাধারণ মানুষ স্বস্তি বোধ করে। আর না চললে তারা উদ্বিগ্ন শুধু নয়, আতঙ্কিতও বোধ করে অনেক সময়।

কারণ দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে তাদের নিজেদের ভালোমন্দের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অবশ্য আমাদের দেশেও ‘অসাধারণ’ কিছু মানুষ আছেন—দেশ রসাতলে গেলেও যাদের কিছু যায় আসে না। তবে অঢেল বিত্তবৈভবের কারণে তারা নিজেদেরকে দেশের চেয়ে বড়ো ভাবলেও তাদের অফুরন্ত ধন-সম্পদের আসল উত্সটি কোথায় তাও কারো অজানা নয়। সকালের অবস্থা দেখে যেমন বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে, দেশ বা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। আমি আশাবাদী মানুষ।

কিন্তু দেশ যেভাবে চলছে বা চলে আসছে গত সাড়ে তিন দশক ধরে তাতে সেই আশা বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কী রাজনীতি, কী অর্থনীতি— সর্বক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। চুন খেয়ে বারবার মুখ পুড়লেও কারো মধ্যে ন্যূনতম বোধোদয়ের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বরং সব দেখে-শুনে মনে হচ্ছে, আমাদের কপালটাই হয়তো খারাপ! অবশ্য কপালের দোষ দেয়াটাই সব দিক থেকে নিরাপদ। কারণ এতে একদিকে যেমন নিজেদের ব্যর্থতার দায় এড়ানো যায়, অন্যদিকে তেমনি অপ্রিয় ভাষণের জন্য কেউ লাঠি নিয়ে তেড়ে আসারও ভয় থাকে না।

বাংলাদেশের সম্ভাবনা যে অঢেল তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সম্ভাবনা অঢেল না হলে দশকের পর দশক ধরে দেশ শাসনে শাসকদের উপর্যুপরি ব্যর্থতা সত্ত্বেও আমরা এতোটা এগোলাম কী করে? সমাজ ও অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন যে অনেক—তা যেমন অস্বীকার করার উপায় নেই, তেমনি শাসকদের আত্মঘাতী কাণ্ড-কারখানা থেকেও মুখ ফিরিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পঁচাত্তরের রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পর সব ধরনের শাসকই আমরা দেখেছি। সামরিক স্বৈরশাসনের চণ্ডরূপ দেখার দুর্ভাগ্য যেমন আমাদের হয়েছে, তেমনি গণতন্ত্রের বাংলাদেশি সংস্করণ দেখার সুযোগও আমরা অনেক পেয়েছি। কিন্তু নামের বদল হলেও শাসকদের চরিত্রের বদল যে হয়নি তা নিয়ে এখন জনমনে আর কোনো সংশয় আছে বলে মনে হয় না।

পৃথিবী বদলে গেছে। গুটিকয় ব্যতিক্রম বাদ দিলে, অর্ধশতক আগের আত্মকোন্দলে জর্জরিত ও শ্লথগতির সেই পৃথিবী এখন জাদুঘরে ঠাঁই নিতে চলেছে। পরিবর্তনের এই বিশ্ব কাফেলায় সামিল হতে হলে আমাদেরও দ্রুত বদলানো দরকার। সাধারণ মানুষ তার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তার অকাট্য প্রমাণ হলো— যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই তারা পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে।

রাজনীতিকদের দিন বদলের ডাকে সাড়া দিয়ে বারবার নেমে এসেছে রাজপথে। রক্ত এবং ঘামও ঝরিয়েছে অনেক। তাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সময়ে কেউবা ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়েছে, আবার ক্ষমতার মসনদ থেকে কেউবা নিক্ষিপ্ত হয়েছে নর্দমায়। কিন্তু ফলাফল যে অভিন্নই থেকে গেছে তার সর্বশেষ প্রমাণ হলো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি। এখানে দিনে-দুপুরে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়েছে।

সবই হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়, সুপরিকল্পিতভাবে। কারা করেছে, কীভাবে করেছে তা কমবেশি সবাই জানেন। আর ক্ষমতার কলকাঠি যাদের হাতে তাদের আশীর্বাদ ছাড়া যে এদেশে কিছুই হয় না তাও কারো অজানা নয়। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি নিয়েও এখন যথারীতি চলছে ব্যাপক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। চাপানোর চেষ্টা চলছে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে।

সবচেয়ে হূদয়বিদারক বিষয় হলো, সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে যাওয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের কাটা গায়ে নুনের ছিটাও দেয়া হচ্ছে নির্দয়ভাবে। আর এ বিবেকবর্জিত কাজটি করছেন সরকারের দায়িত্বশীল পদে আসীন ব্যক্তিরা। তারা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন। ঠাট্টা-তামাশাও করছেন বিনিয়োগকারীদের নিয়ে। অবশ্য প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য জল ঘোলা করার এ-কৌশলও নতুন নয়।

কিন্তু ফলাফল পূর্বনির্ধারিত। সর্বস্বান্ত মানুষগুলো যেমন কোনোভাবেই তাদের রক্তপানি করা টাকা ফেরত পাবে না, তেমনি বরাবরের মতোই লুটেরা চক্রও থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বলা বাহুল্য, এ ধরনের লুণ্ঠন প্রক্রিয়া এ দেশে নতুন নয়। কার্যত পঁচাত্তরের পর থেকে এভাবেই চলে আসছে সবকিছু। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, পঁচাত্তর পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন সামরিক-বেসামরিক সব সরকারই সুপরিকল্পিতভাবে তাদের আজ্ঞাবহ কিছু ব্যক্তিকে টাকা বানানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

কখনও শিল্পায়নের নামে, কখনও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের নামে এবং কখনওবা উন্নয়নের নামে জনগণের সম্পদের অপচয় করা হয়েছে। ক্ষমতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদপুষ্ট হয়ে তারা কখনও সরাসরি জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সুকৌশলে। আবার কখনওবা নিজের করে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। উভয় ক্ষেত্রেই তার খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। কারণ রাষ্ট্রীয় সম্পদের জোগানও আসে জনগণের পকেট থেকেই।

পাশাপাশি এও সত্য যে, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও নিজেদের স্বার্থেই একপর্যায়ে ঠিকই লাগামও টেনে ধরেছে তারা কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করেন যে, শেয়ারবাজারের সামপ্রতিক ঘটনাপ্রবাহও তার ব্যতিক্রম নয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) বলেছে যে, বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে তারা যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে অচিরেই বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে বলে তারা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। সন্দেহ নেই যে আবারও পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হবে।

কিন্তু যা ঘটে গেছে তার নিষ্ঠুর ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে ভুক্তভোগী জনগণকে। আর ব্যতিক্রমহীনভাবে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদতে থাকবে। সঙ্গত কারণেই মনে হয় যে, দিনবদল হনুজ দূর অস্ত। তবে আমেরিকা-ইউরোপেও নিজস্ব লোককে নানাভাবে টাকা বানানোর সুযোগ করে দেয়ার উদাহরণ একেবারে কম নয়। বুশ-ব্লেয়ার চক্রের আগ্রাসী বোমায় বিধ্বস্ত ইরাক-আফগানিস্তান পুনর্গঠন-সংক্রান্ত বেশিরভাগ ঠিকাদারী কারা পেয়েছিল তা ইতোমধ্যে সবারই জানা হয়ে গেছে।

তবে সেখানে সবই করা হয় নিয়ম মেনে এবং আইনসিদ্ধভাবে। সর্বোপরি, পঁচাত্তরের পর থেকে ক্ষমতার জাদু কাজে লাগিয়ে জনগণকে জিম্মি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হস্তগত করার যে ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখে আসছি উন্নত দুনিয়ায় তা কল্পনাও করা যায় না। কারণ যতো ক্ষমতাধরই হোক না কেন, আইন অমান্য করে সেখানে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই। সদ্যবিদায়ী আইএমএফ প্রধানের রাতারাতি আকাশ থেকে পাতালে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ঘটনাই তার একমাত্র দৃষ্টান্ত নয়। আমাদের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন।

উন্নয়নশীল অনেক দেশের চিত্রও অবশ্য খুব একটা আলাদা নয়। সবমিলিয়ে, জনগণের পিঠ যে দেয়ালে ঠেকে গেছে তাতে সন্দেহ নেই। তবে তার চেয়েও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, নিকট অতীতের ইতিহাস থেকেও আমাদের শাসকরা কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করেননি বা করছেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তারা নিজেদেরকে যতোটা বুদ্ধিমান মনে করেন, জনগণকে ঠিক ততোটাই বোকা ভাবেন। ক্ষমতায় থাকাকালে জনগণকে তো তারা গ্রাহ্যই করেন না, এমনকি এটাও তারা ভুলে যান যে, গত কয়েক দশকে দেশ পরিচালনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন এমন শত শত মন্ত্রী ও সচিব এদেশেই বসবাস করেন।

আছেন আরও অনেক ডাকসাইটে লোক—ক্ষমতার অন্ধিসন্ধি সব যাদের নখদর্পণে। কোথায় কী হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে কিছুই তাদের অজানা নয়। তারা সবই বুঝেন, সবই জানেন। যারা বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলেন, তারাই বরং অভিজ্ঞজনদের চোখে হাস্যাস্পদ হয়ে যান। মোটকথা নিজেদের মতলব চরিতার্থ করার জন্য যে বা যারা নানান কথাবার্তা বলে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন, তারা জানেন না যে, এতে শেষরক্ষা হবার নয়।

এখন কথা হলো, সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহল থেকে ‘রাজনৈতিক সুনামি’ কিংবা ‘মহাপ্রলয়’-এর যে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় একটাই। সেটি হলো, সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং সর্বপ্রকার সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। অতএব, যতো তাড়াতাড়ি নিজেদের লাগাম টেনে ধরা যায় ততোই মঙ্গল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.