আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিজড়ারূপী ‘পুরুষ’দের দাপটে প্রকৃত হিজড়ারা ঘরছাড়া

ভালকে সমর্থন এবং খারাপকে বর্জন করতে শিখুন । চাঁদাবাজি ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে হিজড়া সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে হিজড়া নেত্রী দিপালীসহ অন্তত ৩০ জন হিজড়া আহত হয়েছেন। যে কোনও সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশংকায় সাধারণ হিজড়ারা আতঙ্কে রয়েছেন।

আহত হিজড়াদের ৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ৫ জন নবাবপুরস্থ ন্যাশনাল হাসপাতালে ও বাকিরা নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার ঘটনায় সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও গে-ারিয়া থানায় ২০ টিরও বেশি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। হিজড়ারা জানিয়েছেন, রাজধানীতে বসবাসরত হিজড়ারা দু’তিনটি গ্রুপে বিভক্ত। এদের মধ্যে পুরুষ হিজড়া মেজবাহ-রমজান গ্রুপের সাথে ভারত থেকে আসা হিজড়াদের যোগসাজশ আছে বলে স্বপ্না ও দিপালীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। রোববার শ্যামবাজার এলাকায় মেজবাহ-রমজান গ্রুপের কর্মীরা হিজড়া নেত্রী দিপালীসহ ১০/১২ জন হিজড়াকে বেধড়ক মারধর করে এবং দিপালীসহ তিনজনের পায়ের রগ কেটে দেয়।

পশ্চিম যাত্রাবাড়ি এলাকাতেও হিজড়াদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত হিজড়া সুইটি, নীহার, টুম্পা, সীমা, নদী, চুমকি, রীতু, আঁখী, সুন্দরী, স্বপ্নাসহ কয়েকজন জানান, প্রতিপক্ষের হামলার আশংকায় আত্মরক্ষার্থে কয়েকশ’ হিজড়া বাসা-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তার পরেও লাঠিসোটা, রড, হাতুড়িসহ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৭০/৮০ জন হিজড়া ক্যাডার ট্রাকযোগে বিভিন্ন মহল্লায় গিয়ে হানা দিচ্ছে, এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। মগবাজার এলাকার হিজড়া নেত্রী স্বপ্না জানান, ভারতের চব্বিশ পরগণা ও নদীয়া জেলার বাসিন্দা লিপি, হেমা, গীতা, পাপিয়া, পিপাশা, সীতা, ববিতা, মর্জিনাসহ শতাধিক হিজড়া ক্যাডাররা পুরান ঢাকার মেজবাহ-রমজান গ্রুপের ছত্রচ্ছায়ায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত। হিজড়া উন্নয়ন শিল্পী পরিষদের আহবায়ক দিপালী হিজড়া অভিযোগ করেন, প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া প্রকৃত হিজড়ারা এখন হিজড়াবেশি পুরুষ ‘মেজবাহ-রমজান’ চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গচ্ছেদ করে কৃত্রিমভাবে হিজড়ায় রুপান্তর হওয়া পুরুষরা জোট বেধে প্রকৃত হিজড়াদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এরা চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের সাথেও জড়িত। দিপালী জানান, ভারতীয় হিজড়াদের এদেশে অনুপ্রবেশ ও তাদের চাঁদাবাজি, মাদক পাচার, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। অপরাধ চক্রের হোতাদের নাম, ঠিকানা, প্রমাণাদির পূর্ণ তালিকা ১৯ মে ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে বলে দিপালী হিজড়া জানান। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, স্পর্শকাতর অভিযোগটি তদন্তের জন্য এরই মধ্যে ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ (স্মারক নং-৫৮২৯-তাং-২৩/৫/২০১১) দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘২৩ মে থেকেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তদন্ত চলছে- অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ হামলা-পাল্টা হামলার বিষয়টি স্বীকার করে মেজবাহ-রমজান গ্রুপের সদস্য পুরুষ হিজড়া আসমানী জানান, বারবার মিমাংসার চেষ্টা করেও সুরাহা করা যাচ্ছে না। তবে অস্ত্রোপচার করে হিজড়ায় রূপান্তরের কথা অস্বীকার করে আসমানী বলেন, ‘জন্মগতভাবে পুরুষ হলেও পরবর্তীতে প্রাকৃতিকভাবেই আমরা হিজড়ায় পরিণত হয়েছি। ’ তিনি দাবি করেন, আমরাই মূলত হিজড়া সংগঠনগুলো গড়েছি, বাঁধন ও সুস্থ জীবন নামে দুটি এনজিও’র সঙ্গেও আমরা সম্পৃক্ত। কিছু হিজড়া বিভিন্ন এলাকা দখল করে দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজি করে।

মেজবাহ-রমজানের নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হচ্ছে। ভারতীয় হিজড়াদের ব্যাপারে আসমানী বলেন, ভারত থেকে আগত হিজড়াদের কয়েকজন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে ভারতীয়রা বেড়াতে এলেও তারা আবার নিজদেশে ফিরে যায়। মেজবাহ-রমজান গ্রুপের প্রধান মেজবাহ উদ্দিনের বাড়ি পুরান ঢাকার আবুল হাসনাত রোডে। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক মেজবাহ উদ্দিন নিজেকে হিজড়া হিসেবেই পরিচয় দিয়ে থাকেন।

তার ইন্ধনদাতা রমজান আলী ভারতের ‘রেশমা হিজড়া’ হিসেবে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) চব্বিশ পরগণা জেলার গুমাহাবরা থানাধীন হিজলপুকুর গ্রামে তার বাড়ি। অস্ত্রপচারের মাধ্যমে হিজড়ায় রুপান্তরের ব্যাপারে কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. রফিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী একজন পুরুষের অন্ডকোষ কেটে ফেলা দিলে তার প্রজননসহ পুরুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম হারিয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা হিজড়ার মত আচরন করে থকে। ‘ ভারতে এ প্রবনতা বেশি লক্ষ করা যায় বলেও তিনি জানান।

Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.