আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাময়িক

বিকট আমার কোন সৌরভ নেই। রূপকথার বই নেই। কাছের মানুষ, জীব-জন্তু, বই পত্র অথবা একটা বিষাক্ত মাকড়শাও নেই। আবার বলা যায় আমার সবই আছে। পূর্বে উল্লিখিত বস্তুগুলোর চেয়ে হাজারগুণ দামী।

এই সৌরজগত, গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, বৃহৎ বিস্ফোরণ অথবা তথাকথিত স্বর্গ-নরক সবকিছুই আমার। নাহ, মালিকানা দাবী করছিনা কোন কিছুরই, কিন্তু সবকিছুর সাথেই আমি আছি আদিকাল থেকে, থাকবো অনন্তকাল পর্যন্ত। আমার বয়সের বিচার করাটা হাস্যকর দেখাবে, অভিজ্ঞতার যাচাই করাটাও। আমি জন্ম থেকেই অভিজ্ঞ এবং প্রাজ্ঞ। আচ্ছা, বয়সের হিসাব না করে আমাকে বরঙ বুড়োই বলা হোক! তো বুড়োর নতুন এক অভ্যাস হয়েছে সম্প্রতি।

উমম, এটা শ'তিনেক বছর যাবৎ, নগরায়নের ফলে যৌথ নিবাস ভেঙে একা থাকা মানুষগুলোর দিকে চেয়ে থাকি। দেখি কে কী করে। একেক মুহুর্তে একেকজনের দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিই। যেন এক পিপিং টম, হাহা! তবে স্নানরতা নগ্ন রমণী অথবা বইয়ে মুখ গুঁজে সুর করে মুখস্থ করতে থাকা ছেলেটার মধ্যে আমি কোন প্রভেদ করিনা। আমি শুধু দেখি।

কিছু করার বা বলার ক্ষমতা নেই। অনেকেই অবশ্য আমাকে মহা পরাক্রমশালী ভাবে। হতেও পারে! তবে আমি নিজেকে একজন নিস্পৃহ অবজার্ভার ছাড়া কিছুই দাবী করিনা। এই মুহুর্তে দেখছি একজন উঠতি বয়সের কবিকে। কবিতা লিখছে সে।

বোরিং! শম্পার সাথে দেখা হবার পর থেকে এক অনির্বচনীয় ভালো লাগায় ভরে আছে মন। শরীরটা যেন বায়বীয় পদার্থে রূপান্তরিত হয়েছে। উড়ছি খালি উড়ছি! আমি যেন এক ঘুড্ডি! অথচ এই কয়েকদিন আগেও নিজেকে হাড্ডিগুড্ডি ছাড়া কিছু মনে হতনা। কিন্তু এখন বুঝতে পারি খুব, সেখানে মাংস জন্মাচ্ছে, রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে খরস্রোতা নদীর স্রোতের চেয়েও দ্রুতগতিতে। ভালো লাগার অনুভূতিগুলো মার্বেলের মত গড়াগড়ি খাচ্ছে যেন স্বচ্ছ টাইলসে।

আজ বিকেলে আবার ওর সাথে দেখা হবার কথা। আমি সবুজ রঙ পছন্দ করি বলেছিলাম, তাই সে সবুজ রঙের জামা পড়ে আসবে। সেতো সবুজই! পিঙ্ক ফ্লয়েডের গানের মত বলা যায়, "Green us the color of her kind"! ওর জন্যে কী উপহার নেয়া যায়? কাছের সুপারশপটা থেকে একটা শো পিস? সবুজ মেয়েকে শো পিস! নো ওয়ে। এর চেয়ে ওকে নতুন আম ওঠা গাছের মঞ্জুরি দিলে অনেক বেশি খুশী হবে। এতটাই অনুভূতিপ্রবণা এবং প্রকৃতির কাছাকাছি আমার বালিকা।

আচ্ছা, বস্তুগত কিছু দেয়া যাবে, আর যা দিতে পারি তাকে আমি- কবিতা! একটা কবিতা লিখবো শুধু তারই জন্যে। আমার এই ভালো লাগার অনুভূতিটা তাকেও ছড়িয়ে দেবো। তারাদের আলোকসজ্জা, নিস্তব্ধতার রসায়ন...এইতো আসছে শব্দেরা! "সবকিছুই ভাল লাগে.. নিস্তব্ধতার প্রকৌশল, নিশাচরদের কুশল, জানতে পেরে,রূপবোধ জাগে.." হু, সবকিছুই ভালো লাগে এখন! আমি নিজেকে কবিতাবোদ্ধা বলে দাবী করবনা কখনও। কবিতার প্রতি আমার কোন দাবীও নেই। আমি শুধু দেখে যাই, দেখে যাই, এই ছেলেটার প্রেমাস্পদের জন্যে লেখা প্রথম কয়েকটি লাইনও দেখলাম, "সবকিছুই ভাল লাগে.. নিস্তব্ধতার প্রকৌশল, নিশাচরদের কুশল, জানতে পেরে,রূপবোধ জাগে.." কেমন লেগেছে? হাহা! নো কমেন্টস! সবকিছুই ভাল লাগে.. তারাদের আলোকসজ্জা, প্রেমময় অস্থিমজ্জা, ভালবাসাবাসি অনুরাগে.. প্রথম ভার্সটার সাথে দ্বিতীয় ভার্সটার একটা বেশ ভালো অন্ত্যমিল হয়ে গেলো তো! চাইলে এটাকে গানও বানানো যায়।

অজস্র মেলোডি ঘুরছে আমার মাথায়, হৃদয়ে, কোনটা তোমাকে দেবো বল সবুজ মেয়ে! কবিতা লেখা দেখতে ভালো লাগছিলোনা। ওর দিকে একটু পরে নজর দেবো। আপাতত পাড়ার চায়ের দোকানে খিস্তি-খেউড় বর্ষণকারী ইভটিজারদের দলটাকে পর্যবেক্ষণ করি। আমি একজন অবজারভার। কী আর কাজ সারাদিনে আমার! ইভটিজিঙ নিয়ে খুব মর্মান্তিক কিছু ঘটনা ঘটে গেছে ইদানিং।

বেশ কিছু মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এসবে অবশ্য আমার কিছুই এসে যায়না। নিষ্ঠুর? হু, তাই আমি। অবশ্য নিস্পৃহ শব্দটাই বোধহয় বেশি উপযোগী হবে। তো সে নিষ্ঠুর বা নিস্পৃহ যাই হইনা কেনো, এসব ক্রমবর্ধমান অপরাধ এবং ট্রাজেডির জন্যে মানুষ আমাকেই দায়ী করে অনেকসময়।

করুক! কী এসে যায়! যাহোক, পাড়ার চায়ের দোকানে... -মাথা গরম আছে কথা কম ক! -ক্যান কি হৈছে তর? -আবে হালায়! আমগো মহল্লায় আইসা ঐ বাইনচোত হারুন শম্পার লগে ঘুরাফেরা করে। এইটা মহল্লার পরিবেশ নষ্ট করতাছে! -নাডা, ঝাইরা কাশো মাম্মা! মহল্লার পরিবেশ নিয়া তোমারে এত টেনশিত হৈতে তো দেখিনাই কখনও। কি হৈছে বলোনা? আমরা আমরাই তো! -ধুরু কিছু হয়নাই, আসলে তোগো কিছু কওয়াই দোষ, মহল্লার একটা পরিবেশ আছেনা? -বস! নাডায় ধানাই পানাই করতাছে, ওরে ঝাইরা কাশতে কউনা! -ঐ নাডা হুম্মুন্দির পুত, মাইয়া তর পছন্দ এইডা কয়া ফালাইলে অসুবিদা কি? স্বীকার যা, নাইলে কৈলাম ক্ষুর দিয়া পোচ দিমু। মেজাজ বিলা হৈতাছে। -হ বস, শম্পারে আমার পছন্দ।

-তাইলে এই ক্ষুরের পোচ অহুন পড়ব হারুনের গলায়। কাহিনী ফিনিশ। নো ট্যানশন। -বস, আইজকা আইবো হুনছি... -তাইলে আইজকাই হইবো! স্টিকটা ছাড়। আচ্ছা! ওরা বেচারা কবিকে খুন করার প্ল্যান করছে।

বেশ! নাহ এটা প্রশংসাসূচক শব্দ না। কথা বলার একটা ভঙ্গীমাত্র। কোনকিছুতেই আমার কিছু এসে যায়না। কবিতা অথবা খুন অথবা প্রেম, সবই একইরকম। যাই হোক, গ্যাংস্টারেরা তাকে খুন করার প্ল্যান করছে আর সে এখনও মহানন্দে কবিতা লিখে যাচ্ছে! দ্বিতীয় ভার্সটা খেয়াল করিনি।

দেখি কী লিখেছে, সবকিছুই ভাল লাগে.. তারাদের আলোকসজ্জা, প্রেমময় অস্থিমজ্জা, ভালবাসাবাসি অনুরাগে... এটা ওর লেখা, আর আমি পড়ছি ভালো লাগে তারা, প্রেম খুবই ভালো লাগে এইগুলা। কাব্য বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ না থাকলেও বেশ বুঝতে পারি সে যা লিখেছে তা কবিতাই হয়েছে, আর আমি যে অল্টারনেট ভার্শনটা পড়েছি ওটা কিছুই হয়নি। এই অল্টারনেট ভার্শন শুধু আমার চোখেই পড়বে কারণ পাড়ার চায়ের দোকানে অন্য কবিতা লেখা হচ্ছে, যা এটার সাথে সাংঘর্ষিক... -ঐ হালায় উঠ! এক স্টিক খাইয়াই টাল হয়া গেছে পুরা। আইজকা অপারেশন আছেনা? -হ উঠি। -টাইম কয়টায় য্যান? -৫টা -চল তাইলে রওনা দেই।

লিরিকটা লেখা শেষ করেছি! সবকিছুই ভাল লাগে... নিস্তব্ধতার প্রকৌশল, নিশাচরদের কুশল, জানতে পেরে,রূপবোধ জাগে... সবকিছুই ভাল লাগে... তারাদের আলোকসজ্জা, প্রেমময় অস্থিমজ্জা, ভালবাসাবাসি অনুরাগে... সবকিছু শুধুই আমার পৃথিবীর সব কাগজ, ছন্দতার সহজ খোঁজ, লিরিকের দেশে, যেন রাজকুমার... সবকিছু এমনই থাক... স্বপ্নতার দীর্ঘায়ন, মনেতে অন্যমন কষ্টের বাজপাখি, বহুদূরে উড়ে যাক... ও এটা পেলে দারুণ খুশী হবে! ও নিজেওতো গান পারে। আমরা দুজন মিলে বাঁধবো গান। উড়িয়ে দিবো কষ্টের বাজপাখিকে বহুদূরে! সবকিছুই ভালো লাগে। সবকিছুই ভালো লাগে! আহা! জীবন! কবিতা পাঠ সমাপ্ত হল আমার। শেষ দুই স্তবকে সে লিখেছে পৃথিবীর সব কাগজ, ছন্দতার সহজ খোঁজ, লিরিকের দেশে, যেন রাজকুমার... সবকিছু এমনই থাক... স্বপ্নতার দীর্ঘায়ন, মনেতে অন্যমন কষ্টের বাজপাখি, বহুদূরে উড়ে যাক... আর আমার প্রাজ্ঞ চোখ এটার বদলী সংস্করণ পড়েছে আরো রূঢ়ভাবে, অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! চেগাইয়া মইরা থাকুম ভালো লাগা মারা খাইবো চরম মারা! এটা হয়েছে মৃত্যুর ছায়া তার ওপর পড়ায়।

যে মুহুর্তে সে এসব লিখছে, তখন তার জীবন নাশের পরিকল্পনা করছে অন্যরা। আমার অভিজ্ঞ চোখ বুঝতে ভুল করেনা কখনও। আরে বেশ! এবার দুইপক্ষকে একসাথে দেখা যাচ্ছে! ঘটনা বেশ দ্রুতই ঘটছে। আমি কী আমাকে তারিফ দেবো? নাহ থাকগে! কিছুই এসে যায়না -হারুন ভাই, আছেন কিরকম? -এইতো ভালোই! -মহল্লায় আসেন, কথাবার্তা কন না আমগো লগে, এইডা কি ঠিক, আপনেই কন? -না, মানে বিশেষ কাজে আসিতো! -তর বিশেষ কাজের গুষ্টি মারি! এই ক্ষুরডা দেখছোস? এক্কেরে হান্দায়া দিমু। শম্পারে নিবি নাকি গলায় ক্ষুরের পোচ নিবি, টস করুম? কে যেন আমাকে বলেছিলো আমি নাকি একজন ওল্ড জিপসি ম্যান! হাহা! হু, জিপসিই তো।

এই দৃশ্যপট থেকে আপাতত সরে যাই। অন্যখানে, অন্য কোনখানে গিয়ে ভয়ারিজম করি! কবি, গ্যাংস্টার, প্রেমিকা, সবুজ মেয়ে, কবিতা, এসবের কী হবে সেটাও তো আপনাদের ভাষ্যমতে আমিই বলে দেবো! আপনাকে দেখছি আমি এই মুহুর্তে। কী করছেন না করছেন। ওহো, আমি তো ওল্ড জিপসিম্যান, তুমি করে বলাই শ্রেয়! আচ্ছা তর সইছেনা ওদের পরিণতি কী হবে জানার জন্যে? আমার কাছে গল্প, কবিতা, অনুভূতি আর আবর্জনা, ভাগাড়, দূষিত রক্ত সবই এক। যে কবিতাটি প্রেমিক লিখলো, সে যদি মারা গিয়ে থাকে, তাহলে আমার অতল গহবরে হারিয়ে যাবে, সে এবং তার কবিতা।

আর আমি ঐ কবিতাটিকে অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! অর্থহীন! এভাবেই পড়ব। আমার কোন দায়বদ্ধতা নেই। আমার অতল গহবর থেকে যদি বের করতে পারো, তো ভালো। ছন্দোবদ্ধ কবিতা এবং মানুষটার স্মৃতি দুই'ই পাবে। হয়তোবা সে গলায় চাকু খেয়ে ড্রেইনে পড়ে আছে এখন কবিতা সমেত।

আমার কিছুই এসে যায়না তাতে। তোমরা অনেক অপশন পাও, পুজো করার, ঘৃণা করার, অবজ্ঞা করার, কেঁদে বুক ভাসানোর, কিন্তু আমার অপশন একটাই। ক্যারাভানটা নিয়ে পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে মহাবিশ্ব এবং তোমাদের এই অতি ক্ষুদ্র পৃথিবী দেখা। নিস্পৃহ নিষ্ঠুরতায়।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।