আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উল্টাচিন্তা-১: জ্যাম কমাতে প্রাইভেট কার কমানো ঠিক হবে কি?

ইতিহাস, নেই অমরত্বের লোভ/ আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ... ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম এখন শুধু এ শহরের বাসিন্দাদেরকেই বিব্রত করছেনা, বিদেশিদের কাছেও হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকার ট্রেডমার্ক সিম্বল। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। অনেক সমাধানের পথও বাতলানো হয়েছে। এসব সমাধানের মধ্যে আছে- মনো রেল, উড়াল পথ, মেট্রো ইত্যাদি। কিছুদিন আগে ঢাকার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট উন্নত করার কথা বলা হয়েছে, যা অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ বলেই মনে করি।

এ নিয়ে আমার একটা লেখাও আছে যা 'সেইফ' হওয়ার আগে লেখা বলে এখানে আবার শেয়ার করলাম। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পলিসির কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে ঢাকায় প্রাইভেট কারের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। এসব সমাধানের যথার্থতা নিয়ে কোন সংশয় নেই। প্রস্তাব গুলো হয়ত ট্রাফিক জ্যাম কমাবে; কিন্তু আমার মাথায় একটা 'উল্টাচিন্তা' ভর করেছে যা আপনাদের সাথে শেয়ার না করে শান্তি পাচ্ছিনা। আপনাদের মতামত পেলে উল্টাচিন্তা সিধাও হতে পারে (নাও পারে)।

এবার চিন্তাটা শেয়ার করি। ঢাকায় নাকি ৩.৫ লক্ষ প্রাইভেট গাড়ি আছে, যা কিনা ৭০% রাজপথ দখল করে আছে । ধরে নেয়া যেতে পারে অল্প কিছু গাড়ি যেগুলো মালিকচালিত সেগুলো বাদ দিলে অন্তত ৩ লক্ষ ড্রাইভার এগুলো চালায়। অর্থাৎ এই গাড়িগুলো ট্রাফিক জাম, কালো ধোঁয়া ইত্যাদি ছাড়াও প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের রুটি রুজির উৎস। গড়ে প্রতি ড্রাইভারের পরিবারে যদি স্ত্রী, দুই সন্তান ও বাবা অথবা মা থাকে তাহলে পাঁচ সদস্যের পরিবার ধরে ১৫ লক্ষ মানুষের অন্ন বস্ত্রে সংস্থান হয় এই গাড়ি গুলো থেকে।

ঢাকা প্রাইভেটকারশূণ্য হলে এই ১৫ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকার কি উপায় হবে? ঢাকায় জাম কমলে, পার্কিং স্পেস তৈরি হলে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ভাল হলে অনেকেই নিজের গাড়ি নিজেই চালাবেন। এতে আরো বেশি ড্রাইভার কর্মহীন হয়ে পড়বে। এতে বড়লোক গাড়ির মালিকদের পকেট আরো স্ফীত হবে সত্যি, কারণ ড্রাইভারের বেতন এবং চুরি-চামারি বাবদ মোটা অর্থের সাশ্রয় হবে। ফলশ্রুতিতে ট্রিকল ডাউন নীতি (ধন সম্পদ বড়লোকের কাছ থেকে চুইয়ে চুইয়ে গরিবের পাতে পড়া) অনুযায়ী বড়লোকের সম্পদ গরিব ড্রাইভার বা এদের পার্টস চুরি, তেল-গ্যাস তসরুফ করার যে সিন্ডিকেট তাদের গরিবি হাত পর্যন্ত পৌঁছুবে না। এতে ধনী যেমন আরো ধনী হবে, গরিব হবে আরো গরিব- এবং বোধগম্য কারনেই ধনী-দরিদ্র ব্যবধানও বাড়বে শনৈ শনৈ।

আমরা জানি এই ব্যবধান সামাজিক অসংসক্তি (social in-cohesion) বাড়িয়ে দেয়, যা অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়, সামাজিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। আর ওদিকে সদ্য চাকরি হারানো ড্রাইভারকুল তো ওত পেতে রয়েছেই- যে কোন উপায়ে কিছু উপার্জন করে বস্তির বাসায় অভুক্ত সন্তানের মুখে দুটো ভাত তুলে দেয়ার আদি মানবিক অদম্য অনুপ্রেরণার ভান্ডার হয়ে। কি হবে তখন? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।