আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের রাজনীতি, সোমালিয়ার জলদস্যু ও চর্যাপদ

Quazi Hassan’ World of Writings ত্রান মন্ত্রী আব্দুর শুকুর চর্যাপদ। দেশের শীর্ষ মন্ত্রীদের মধ্য একজন। গত নির্বাচনে শতকরা নব্বই ভাগ ভোটে পেয়ে জিতেছেন। স্কুল জীবনে একবার বাংলা ছাড়া সব বিষয়ে তার নম্বর ছিল ৩৬ এর নীচে। বাবা এইটা দেখে বলেছিলেন , তুই একটা চর্যাপদ।

তিনি নামের ব্যাখা না দিলেও, নামটা প্রায় সাথে সাথেই ব্যাপক খ্যাতী এনে দিয়েছিল। মাস্তানি, চাঁদা , আর রাজনীতিতে নামটা খুবই কাজে দিল । চর্যাপদ আগের বার প্রতি মন্ত্রী হলেও এবারে পুরো মন্ত্রী । প্রতি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় দলকে আর নিজেকে শক্তিশালী করে ছিলেন। সে জন্যে দলের হাই কম্যান্ড তার উপরে খুব সন্তুষ্ট।

বয়স তার চল্লিশ হলেও, এর মধ্য পুরো মন্ত্রী । খারাপ না, ২০ বছরের ক্যারীয়ারের এত টুকু আসতে পারায়। কিন্তু দুঃখ একটাই । এর পরে তার উঠা হবে না । প্রধান মন্ত্রী পদটা দু- পরিবারের মালিকানায়।

যাই হোক চর্যাপদ অনেক ভেবে চিন্তে ত্রান মন্ত্রালয় নিলেন । নিজের আর দলের ইহকাল আর পরকাল নিয়ে যাতে আর ভাবনা না থাকে। এক জাহাজ ভর্তি কম্বল তিনি কিনলেন ফ্রান্স থেকে বন্যা পীড়িত মানুষদের সাহায্য করার জন্য । কিন্তু প্রেস বিজ্ঞপ্তি করে জানালেন সোমালিয়ার জলদস্যুরা ছিনতাই করে সব কম্বল নিয়ে গেছে । তিনি অনেক কষ্ট করে শুধু জাহাজ আর নাবিকদের উদ্ধার করেছেন ।

পত্রিকাগুলো খবর ছাপালো আব্দুস শুকুরের সব কথাই ভূয়া । তিনি কোনো কম্বল কিনেন নি, আর জাহাজও ছিনতাই হয় নি। তবে ফ্রান্সে তার ব্যাংক একাউন্টে ৫ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে । আব্দুস শুকুর চর্যাপদ ভীষণ একটা সমস্যায় পড়লেন। প্রথমে ভাবলেন পত্রিকা অফিসগুলোতে ভাংচুর আর সম্পাদকদের ধমকিয়ে বলবেন, খবর ছাপাতে ত্রান মন্ত্রী চর্যাপদের কম্বল আসলেও জলদস্যুরা ছিনতাই করেছে।

কিন্তু না, তা ধোপে টিকবে না। ফ্রান্সের একটা পত্রিকাও ছেপেছে তার একাউন্টে ৫ মিলিয়ন ডলার ডলার জমা হওয়ার কথা। সব রাগ যেয়ে পড়ল বিরোধী দলের নেতাদের উপর। পত্রিকাতে খবর না দিয়ে আর আন্দোলেন না করে, তার কাছে আসলেই তিনি তাদের সন্তুষ্ট করে দিতে পারতেন । বিরোধী নেতাদের উদ্দেশে তিনি বললেন, শালা বান .....আরো অনেক কিছু ।

বাপারটা যেহেতু রাজনৈতিক, উত্তরও দিতে হবে রাজনৈতিক ভাবে। প্রয়োজনে পাচ মিলিয়ন থেকে এক মিলিয়ন খরচ করতে পিছপা হবেন না। চাকরী থাকলে কত মিলিয়ন আসবে। খবর দিলেন সাঙ্গ, পাঙ্গ আর উপদেষ্টাদের। গভীর রাত পর্যন্ত চলল তাদের বৈঠক।

অনেকে আবার টলত টলতে বাড়ী ফিরলেন। পত্রিকা আর বিরোধী দলকে দাত ভাংগা জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলো। আগামী দুই দিন সারা শহরের মহল্লায় মহল্লায় মাইকিং আর মিছিল হবে। তৃতীয় দিন হবে পলটনের ময়দানে বিরাট জন সভা। সেখানে প্রধান অতিথী হয়ে বক্তৃতা দেবেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ত্রান মন্ত্রী আব্দুস শূকুর চর্যাপদ।

জনসভায় একটা ঘটনা ঘটনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হল। সব দোষ যেয়ে পরবে বিরোধী দলের উপর। আর পরিত্রান পাবেন মন্ত্রী চর্চাপদ। তবে মন্ত্রী মহোদয় তার সাহিত্যে দক্ষতা দেখানোর সুযোগ হাত ছাড়া করলেন না। নিজেই রচনা করলেন মাইকিং, পোষ্টার আর চীকার ভাষা।

সাথে সাথে চূড়ান্ত করলেন, বক্তৃতায় কি কি বলা হবে। কিন্তু তা শুধু শেয়ার করলেন বিশ্বাসী দুই চামচা উপদেষ্টার সাথে। কারণ ব্যাপারটা একেবারে টপ সিক্রেট। মাইকিং ভাইসব, আগামী বুধবার ৩ রা এপ্রিল ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে বিরাট জনসভা। এতে প্রধান অতিথি হয়ে বক্তৃতা করবেন, দেশের একমাত্র গরীবের প্রতিনিধি এবং ত্রান মন্ত্রী আব্দুস শুকুর চর্যাপদ।

কম্বল ছিনতাইয়ের সত্য গল্প তিনি নিজের মুখে জনগনের উদ্দেশ্যে বলবেন। আপনারা দলে দলে এই জনসভায় যোগদান করে একে সাফল্যমন্ডিত করে তুলুন। চীকা ও পোস্টার ত্রান মন্ত্রী চর্যাপদ : বুড়ী গংগা, মেঘনা , যমুনা যতদিন বহমান জলদস্যুদের কম্বল চুরিতে তোমার নাই সামান্য কোন অপমান মিছিল জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো চর্যাপদের চাকরী গেলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে কম্বল চুরি করার গল্প বিশ্বাস করে যারা বিদেশীদের মস্ত বড় পোষা দালাল তারা বক্তৃতা প্রিয় ভাই বোনেরা, -----------গত বাধা রাজনৈতিক বক্তৃতার সুচনা---------- ভাইসব, বিরোধী দল আমার কথার বিরোধিতা করে। বলে কম্বল ছিনতাই হয়নি । কম্বলের টাকা আমার বাংকের একাউন্টে গিয়েছে।

কিন্তু এ কথা তার জানলো কি করে। তারা কি সোমালিয়ার জলদস্যুদের দলের সদস্য। না হলে যে কথা জলদস্যুরা পর্যন্ত জানে না, সে কথা বিরোধী দলের নেতারা আর তাদের দোসর পত্রিকাগুলোই বা জানলো কি করে । বিরোধী দল এখনো আমাকে চিনে শেষ করতে পারে নি। বাংলা ভাষায় আমার বিশেষ অবদানের জন্য আমার উপাধি দেয়া হয় চর্যাপদ ।

আমিই একমাত্র মন্ত্রী যে কুড়ে ঘরেও থেকেছি আর এখন গুলশানের সাত তালায় ঘুমাই । আমি নীচ আর উপর --দুই জায়গার মানুষ। আমার থেকে গরীবের কাছা কাছি কে হতে পারে? সে জন্যই প্রধান মন্ত্রী আমাকে বিশেষ অনুরোধ করে ত্রান মন্ত্রী বানিয়েছেন। গত চার বছরে যতবার বন্যা হয়েছে, আমি ততবারই বিদেশ সফরে গিয়েছি। সেখান থেকে আপনাদের জন্য সাহায্য এনেছি।

সেই সাহায্য যাতে দুষ্ট লোকের কাছে যেয়ে না পড়ে, সে জন্য আগে থেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। সোমালিয়ার জলদস্যুরা এদের মতই একজন। তার আমাকে কথা দিয়েছে, তার রয়টারকে আজকেই ফোন করে বলবে কম্বল ছিনতাইয়ের কাজটা আসলে তাদেরই ছিলো। পরিশেষ এই পর্যায় চর্যাপদ একটা পানির বোতলে চুমুক দিলেন, মাইকের সুইচটা বন্ধ করে পাশে দাড়ানো সহকারীকে জিজ্ঞাসা করলেন, বোমাগুলো এখনো ফাটচে না কেন? কিন্তু ঘটনাক্রমে আব্দুর শুকুর চর্যাপদ মাইকের একটা সুইচ বন্ধ করলেও, আরেকটা মাইকের সুইচ খোলা ছিলো। মুহুর্তের মধ্যেই যে যে দিকে পারল, সে দিকেই ছুটতে থাকলো।

১১/১১/১০ http://www.lekhalekhi.net ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.