আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজবাডী় জেলা

good এক সমযে় বাংলার প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত গোযা়লন্দ মহকুমার সদর দপ্তর বর্তমান রাজবাডী় জেলা। রাজবাডী় জেলা ২৩০৩৫′ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৩০৫৫′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯০০৯′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে থেকে ৮৯০৫৫′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। বিখ্যাত শাসক রাজা সূর্য কুমার এর নামানুসারে জেলাটির নামকরণ করা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিধৌত রাজবাডী় জেলা কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত। রাজবাডী় জেলার সাধারণ জনগণ বন্ধুসুলভ, ধার্মিক, সৎ এবং সুশিক্ষিত।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, শিক্ষাবিদ ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন, শিক্ষা সংস্কারক মোহাম্মদ এযা়কুব আলী চৌধুরী এর চেতনার ধারক এ জেলা ১। শাহ পাহলোযা়নের মাজারঃ রাজবাডী় অঞ্চলে ষোড়শ শতকে ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করেন শাহ পাহলোযা়ন এর মত আউলিযা়রা। ১৪৮০ হতে ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শাহ পাহলোযা়ন বোগদাদ শরীফ পরিত্যাগ করে ফরিদপুর অঞ্চলে এসে চন্দনা নদীর তীরে বাসস্থান নির্মাণ করে উপাসনা করছিলেন। কথিত আছে শাহ পাহলোযা়ন মৃত্যুর সময় শিষ্যদের তার কবর পূর্ব-পশ্চিম লম্বা-লম্বি দিতে বলেছিলেন। কিন্তু তার শিষ্যবর্গ প্রচলিত বিধানমতে যথানিয়মে তাকে কবরস্থ করেন।

কিন্তু সকালে দেখা গেল তার কবর ঘুরে পূর্ব-পশ্চিম লম্বা-লম্বি হযে় গিযে়ছে। শাহ পাহলোযা়নই রাজবাডী় অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের ভিত রচনা করে গেছেন। ২। দাদ্শী মাজার শরীফঃ রাজবাডী় শহর থেকে রেল লাইন ধরে পূর্বদিকে ১ কিঃমিঃ দূরে দাদ্শী খোদাই দরগা। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে কামাল শাহ নামক এক আউলিযা় ষোড়শ শতকে এতদঞ্চলে আগমন করেন।

। ১৮৯০ সালে গোযা়লন্দ ঘাট পর্যন্ত রাজবাডী় রেল লাইন স্থাপনের সময় জঙ্গলের মধ্যে দরগাটির সন্ধান মিলে। সেই হতে দরগাটি এ অঞ্চলের মানুষ খোদাই দরগা নামে কামাল শাহ আউলিযা়র প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন। ৩। জামাই পাগলের মাজারঃ রাজবাডী় শহরের ৬ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে আহলাদিপুর মোডে় জামাই পাগলের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে একটি শেড নির্মিত হয়।

১৯৬০ সালের দিকে জামাই পাগল নামে এক ব্যক্তিকে সেখানে নেংটি পরা অবস্থায় শেওডা় গাছের নীচে মজ্জুম অবস্থায় দেখা যেত। তাকে কেহ প্রশ্ন করলে তিনি একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করতেন। তার মৃত্যুর পর উক্ত স্থানে জামাই পাগলের মাজার নামে একটি মাজার গডে় উঠেছে। লোকশ্রুতি আছে জামাই পাগল এক বোবা মেযে়কে পানিতে চেপে ধরে ছেডে় দিলে সে কথা বলতে শুরু করে। ৪।

নলিযা় জোড় বাংলা মন্দিরঃ বালিযা়কান্দি থানার নলিযা় গ্রামে একটি জোড় বাংলা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রযে়ছে। এর গঠন বিচিত্র। এ মন্দিরটি ১৭০০ সালে তৈরী বলে পন্ডিতগণ মনে করেন। ৫। সমাধিনগর মঠ ( অনাদি আশ্রম)ঃ বালিযা়কান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নে ১৯৪০ সালে স্বামী সমাধী প্রকাশরণ্য এ মঠটি নির্মাণ করেন যার উচ্চতা ৭০ ফুট (গম্বুজসহ), দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৫০ ফুট।

এটি অনাদি আশ্রম বলে পরিচিত। স্বামীজী এ আশ্রমের মাধ্যমে ঐ এলাকার মানুষকে আলোর পথে অগ্রায়ণ করে গেছেন। ৬। রথখোলা সানমঞ্চঃ রাজবাডী় শহর থেকে দুই স্টেশন পশ্চিমে প্রাচীন হডা়ই নদীর তীরে বর্তমান পদ্মার কাছাকাছি বেলগাছি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। বেলগাছির অদূরে হাডো়যা়য় স্থাপিত হযে়ছে কষ্টি পাথরের মদন মোহন জিউর।

মদন মোহন এর মূর্তিটি পাল আমলের। বেলগাছিতে রাম জীবনের নামে গডে় ওঠে আখডা়। রাম জীবনের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে সেখানে সানমঞ্চ ও দোলমঞ্চের ধ্বংসাবশেষ রযে়ছে। ৭। নীলকুঠিঃ ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর নীলকরদের অত্যাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং প্রজা সাধারণ অতিষ্ট হযে় সংঘবদ্ধভাবে নীলকরদের বিরূদ্ধে রুখে দাডা়য়।

শুরু হয় নীলবিদ্রোহ। রাজবাডী়তে নীলবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এ সময় বালিযা়কান্দি থানার সোনাপুরের হাশেম আলীর নেতৃত্বে শত শত চাষী নীলকর ও জমিদারদের বিরূদ্ধে নীল বিদ্রোহে অংশ নেয়। বহু স্থানে নীলকুঠি আক্রমণ করে ও কাচারী জ্বালিযে় দেয়। এ অঞ্চলের বসন্তপুর, বহরপুর, সোনাপুর, বালিযা়কান্দি, নাডু়যা়, মৃগী, মদাপুর, সংগ্রামপুর, পাংশার নীলচাষীরা বিদ্রোহী হযে় ওঠে।

ফলে ১৮৬০ সালে বৃটিশ সরকার নীল কমিশন বসান এবং নীল চাষ স্বেচ্ছাধীন ঘোষণা করেন। ধীরে ধীরে কৃত্রিম নীল উদ্ভাবিত হয় এবং প্রাকৃতিক নীল চাষ বন্ধ হযে় যায়। ৮। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রঃ বিষাদ সিন্ধু খ্যাত মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি বিজডি়ত পৈত্রিক নিবাস পদমদীতে মীর মশাররফ হোসেন ও তার স্ত্রীর সমাধিকে ঘিরে ১৯৯৯ সালে তৈরী করা হয় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালযে়র অধীন দুই কোটি তিপান্ন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা ব্যযে় দুই একর জমির উপর স্মৃতি কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয় ।

নির্মিত এই স্মৃতি কেন্দ্রে একটি পাঠাগার, একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অতিথি কক্ষ, সভা কক্ষ, মিউজিযা়ম, ডাইনিং রুম প্রভৃতি তৈরী করা হযে়ছে। মীরের আবক্ষ মূর্তি যে কোন দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ স্মৃতি কেন্দ্রে মীর ভক্তদের পাশাপাশি শীত মৌসুমে প্রচুর পর্যটকের ভীড় জমে। ৯। দৌলতদিযা় ঘাটঃ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, কুষ্টিযা়, বরিশাল পদ্মা নদী দ্বারা বিভক্ত।

ঢাকা হতে দক্ষিণাঞ্চলে এসব জেলায় পৌছাতে হলে দৌলতদিযা় ঘাট অতিক্রম করা অপরিহার্য। ব্রিটিশ ভারতে গোযা়লন্দ বাংলার পশ্চিম আর পূর্বের সেতু বন্ধন হিসেবে বাংলার দ্বার নামে পরিচিত ছিল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকার সেতুবন্ধন হিসেবে দৌলতদিযা় ঘাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এ ঘাট পার হযে় ঢাকায় যাতাযা়ত করে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.