আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিংসুক প্রেমিকা !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

এক সুমন এক ভাবেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে ! কিছুটা আনমনা হয়ে । আজকে অফিসে আসার পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে । ঝুম বৃষ্টি ! এই রকম বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে ভাল লাগতো কিন্তু সেই উপায় নাই ! অফিস ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । অবশ্য অফিস ছুটির আর খুব একটা বাকীও নাই । সুমন ঘড়ি দেখলো ।

ঘন্টা খানেক বাকি আছে । কি করবে ? একটু আগেই কি আজকে বের হয়ে যাবে ? যাওয়া যায় । বস আজকে আসে নাই । বকা দেওয়ার কেউ নাই । সুমন আর অপেক্ষা করলো না।

বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মন হচ্ছে বৃষ্টি আর অনেক্ষনই হবে কিন্তু সুমনের অপেক্ষা করতে মন চাইছে না । এখনই বাসায় যেতে হবে তারপর ছাদে উঠে ভিজতে হবে ! সুমন নিজের ডেস্ক থেকে উঠল । -এই সুমন ভাই ? দাড়ান ! সবে মাত্র অফিসের গেট দিয়ে বের হয়েছে তখনই ডাকটা শুনতে পেল । অহীনের ডাক । সুমন পেছন ঘুরে তাকাতেই অহীন একেবারে লাফ দিয়ে সুমনের ছাতার নীচে চলে এল ! -আরে আস্তে ! -হুম ! আস্তে আসলে তো ভিজে যেতাম দেখছেন না ! -আমাকে তো বলা যেত ! আমি নিয়ে আসতাম ।

! -হুম ! হয়েছে । এখন চলেন ! সুমন খানিকটা অবাক হয়ে বলল -কোথায় ? -আপনি বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছেন না ? -আপনাকে কে বলল ? -দেখুন, আমি কিন্তু আপনার অনেক খবরই জানি ! এখন চলেন ! আজকে আপনাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাবো সারা জীবনে মনে রাখবেন ! -কোথায় নিয়ে যাবেন ? -আরে চলুন না ! বৃষ্টিতে ভেজার জন্য অতি উত্তম জায়গা ! আসুন আসুন ! বৃষ্টির দিকে ট্যাক্সিটা পাওয়া অনেক ঝামেলার একটা ব্যাপার । সুমন নিজে খানিক্ষন চেষ্টা করে দেখলো কিন্তু কোন কাজই হল না । কোন ট্যাক্সি বা সিএনজি থামতে চাইছে না ! যখন হাল ছেড়ে দিলো তখনই একটা সিএনজি এসে হাজির ! অফিসের দুইতালা থেকে সুমন আর অহীনের পুরো দৃশ্যটা নিশি দাড়িয়ে দেখছিল ! হঠাৎ করেই নিশির মনে হল ওর রাগ উঠছে । ঠিক কারনটা ও ঠিক মত ববুঝতে পারছে না ! রাগ ওঠার কোন কারন তো নাই ! কিন্তু তবুও রাগ উঠছে কেন ? অহীনকে সুমনের পাশে দেখে সহ্য হচ্ছে না ? কিন্তু তা তো হওয়ার কথা না ! কোন কারনই নাই ! তাহলে কেন রাগ হচ্ছে ।

মনে হচ্ছে ঐ অহীনের নামনের মেয়েটাকে একটা জোরে চড় লাগাতে । ছেলে মানুষের সাথে তো মাখা মাখি কেন ? আর সুমন টাও হয়েছে এমন ? আসলেই ছেলে মানুষ এমনই হয়ে থাকে । একটা মেয়েকে ছেড়ে যেতে অন্য মেয়ের কাছে যেতে ওদের বিন্দু মাত্র সময় লাগে না ! এই তো কদিন আগেই সুমন নিশি প্রোপোজ করেছিল ! এমন একটা ভাব যেন নিশি কে ছাড়া ও বাঁচবেই না ! আর এখন দিব্যি অন্য মেয়ের সাথে ঘুর বেড়াচ্ছে । আশ্চার্য ! নিশির যদিও সুমনের প্রোপোজ এক্সসেপ্ট করে নাই তবুও কি এক মাসের ভিতরে অন্য মেয়ের দিকে ঝুকে পরতে হবে ? এমন কেন হবে ! মাঝ খানে নিশির একবার মনে হয়েছিল যে সুমন প্রোপোজাল ফিরিয়ে দিয়ে নিশি মনে হয় ভুলই করলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঠিক ই করেছে । এই রকম ছেলের সাথে বিয়ে করার কোন মানে নাই ।

নিশির নিজের মন থেকে সুমন আর অহীনের চিন্তা দুর করার চেষ্টা করলো ! কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে কিছু ঝেড়ে ফেলতে পারছে না । ঘুরে ফিয়ে ঐ দৃশ্যটাই চোখের সামনে আসছে । সুমন দাড়িয়ে আছে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে আর অহীন দৌড়ে এসে ছাতার ভিতর ঢুকে পড়লো ! একেবারে সিনেমার নায়িকা দের মত । জীবন টা সিনেমা পেয়েছে । ফাজিল মেয়ে !! থাপড়িয়ে দাত খুলে ফেলা দরকার ! নিশির রাগ বাড়তেই থাকে ! -ঐটা কি ছিল ? অহীন সিএনজির গ্রিল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিল ! সুমনের কথায় ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল -কোনটা কি ছিল ? -আরে ঐ ভাবে কেউ লাফ দিয়ে আসে ।

তাও অফিসের সামনে কলিগরা কি মনে করবে ! -করুক না ? সমস্যা কি ? -অহীন ! আপনার কাজ কারবার আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । অহীন কিছুক্ষন সুমনের তাকিয়ে বলল -আপনি এতো টেনশন নিয়েন না তো ! দেখবেন কাজ হবে । অপেক্ষা করেন ! দুই সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল ! বৃষ্টি হলেই আমার মন বিষন্ন হয়ে ! আর ইদানিং কেন জানি আরো বেশি মন খারাপ হয় ! নিশির আসে পাশে থাকলেই এমন টা হয় ! আচ্ছা মেয়েটার মনে আমার জন্য কি কোন ফিলিংস ই নাই ? কি রকম কঠিক মুখে আমার সামনে দিয়ে চলাচল করে ! আশ্চর্য হয়ে যাই ! আগে টুক টাক কথাবর্তা হত এখন তাও বন্ধ ! এখন মনে হচ্ছে মেয়েটাকে পছন্দ করে ভুলই করেছিলাম ! যে মেয়েটা আমার জন্য বিন্দু মাত্র কিছু অনুভুব করে না তার জন্য মন খারাপ করে কি লাভ ? তবে আজকে সময় আসলেই অনেক ভাল কেটেছে । অহীন আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাবে ভাবতেই পারি নি । আফতাব নগরে এমন একটা বাড়ি আছে আমি তো জনতামই না ! বৃষ্টির ভিতরে সিএনজি থামলো একদম বাড়িটা গেটের সামনে ।

একেবারে শেষ বাড়িটা ! আমি যখন বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম তখন মনে হল যেন আমি অন্য কোন জগতে চলে এসেছি ! পুরো বাড়িটা গাছগাছালীতে ভরা ! তার উপর আবার আকাশে মেঘ ! কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আছে । অহীন আমাকে টেনে নিয়ে গেল বাড়ির ভিতরে ! -এটা কার বাড়ি ? অহীন আমার কথার ঠিক মত জবাব না দিয়ে বলল -কেন ? এ বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করবেন ? -আরে আশ্চর্য ! এভাবে যে কারো বাড়ির ভিতর ঢুকা ঠিক নাকি ? -সুমন সাহেব, আপনি মনে হয় দেখেন নাই যে আমি চাবি দিয়ে গেট খুলেছি ! তারমানে কি দাড়ায় ? আমি সত্যিই অবাক হয়েছি ! বললাম -এটা তোমার বাসা ? -হুম ! -সরি এটা আপনার বাসা এটা আসলে অবাক হয়েছিলাম এতো যে হঠাৎ করেই তুমি বের হয়ে গেল ! অহীন হেসে বলল -তুমিই ঠিক আছে ! আর আমরা যে প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছি তাতে মনে হয় আমাদের তুমিতেই আসা ভাল ! তাই না ? আমি কিছুক্ষন চুপ করে অহীনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটাকে আমি ঠিক মত বুঝতে পারছি না ! মেয়েটা আসলে কি করতে চাইছে ! আর কেনই বা করতে চাইছে ! নিশি যেদিন আমার প্রোপোজ ফিরিয়ে দেওয়ার মনটা অনেক খারাপ ছিল ! অহীন পুরো ব্যাপারটা কোথা থেকে যেন জানতে পারে ! হয়তো নিশি নিজেই বলেছে । অহীন একেবারে সরাসরি আমার কাছে এসে বলল -আপনি কি হার মেনে নিবেন ? আমি অহীনের কথা ঠিক মত বুঝতে পারলাম না ! । বললাম -মানে কি ? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আপনার কথা ! তারপর অহীন আমাকে যা বলল তাতে আমি সত্যিই অবাক হলাম ।

কেবল বললাম -কাজ হবে ? -অবশ্য হবে ! কেবল আমি যা করতে বলবো তাই করতে হবে ! পারবেন তো ! তিন -আসবো ? সুমন একটু চমকালো ! দরজায় নিশি দাড়িয়ে ! হাসি মুখে ! সুমন অনুভব করলো ওর বুকের ভিতর হার্ট বীট বেড়ে গেছে ! এই মেয়েটা এখানে কি করে ! এতো দিন ধরে এখানে কাজ করে খুব কমই ওর সাথে কথা হয়েছে । কথা হয়েছে টুকটাক ! নিশির আর সুমনের ডিপার্টমেন্ট আলাদা তাই খুব একটা দরকার হয় না দেখা করার । তাহলে আজকে কি দরকার পড়লো ? -আসুন ! সুমন অনুভব করলো কথাটা বলার সময় ওর গলাটা কেমন যেন একটু কেঁপে উঠল ! নিশি ওর সামনে বসতে বসতে বলল -একটা দরকারে আসলাম ! -বলুন ! -তার আগে বলুন আপনি আমার উপর এখনও রাগ করে নেই তো ! -কোন ব্যাপারে ? -দেখুন আপনি ভাল করেই জানেন কোন ব্যাপারে ! আসলে জীবনে সব কিছুই মন মত হয় না ! তারপরেও তো সবার সাথেই মানিয়ে চলতে হয় ! -হুম ! তা তো অবশ্য ! বলুন ! -আপনি নাকি গ্রাফিক্স জিজাইন জানেন ? -এই একটু জানি আর কি ? -আমার একটা প্রেজেন্টেশন তৈরি করে দিতে হবে ! -কখন ? -আজকেই ! লাঞ্চ আওয়ারের আগেই লাগবে । দেখুন কালকে হলে আমি কিছু একটা করে ফেলতাম কিন্তু হঠাৎ করেই ঝামেলা টা বেঁধে গেছে । কিছু উপায় খুজে পাচ্ছি না ! -আচ্ছা ঠিক আছে ! আমার কিছু থিম করা আছে ! দেখা আপনার কাজে লাগে নাকি ! নিশি খুশি হয়ে উঠল ।

-আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো ! -না না ! ঠিক আছে । আগে আপনার উপরকারে আসি তারপর ! নিশি চলে যাওয়ার পরেও সুমন কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো ! মনে মনে একটা অনন্দ অনুভব করছে । কাজ কি তাহলে সত্যি হচ্ছে ? চার সুমন ছেলেটা প্রথম থেকেই কেন যেন লাগতো ! দেখতে শুনতে খারাপ তা কিন্তু না ! কিন্তু তবু কেন জানি ভাল লাগতো না ! তাই ছেলেটা যখন প্রপোজ করে বসলো একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম ! কিন্তু ছেলেটাকে যখন অহীনের সাথে আবার দেখলাম কেন জানি ভাল লাগলো না ! আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না এমন একটা কেন হচ্ছে ! এমন তো হবার কথা না । সুমনের কোন কিছুই ঠিক অপছন্দ করার মত না । অফিসের সবাই তাকে পছন্দ করে ।

সেই হিসাবে মত আমারও তাকে পছন্দ করার কথা । সারাক্ষন কথা বলছে নিজে হাসছে আবার অন্যকে হাসাচ্ছে ! এমন ছেলে সবাই পছন্দ করে ! আমিও করি ! কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয়েছিল সুমন আমাকে একটু আগে ভাগেই প্রোপোজ করে ফেলেছে । এমনটা কেন হবে ? আমাকে পছন্দ কর । ভাল কথা ! কিন্তু আগে তো আমার মন জোগাবে ! তা না আমি সামনে আসলেই কেমন চুপ করে যায় ! যেন আমি অন্য গ্রহের কোন প্রানী । আমার সামনে কোন কথা বলা যাবে না ! আমি নিজেও ওর সাথে কয়েকদিন কথা বলেছি কিন্তু আমাকে আকারে ইঙ্গিতে তেমন কিছুই সে বোঝাই নি ! বা বোঝাতে পারি নি ! আমি ওর মনোভাব প্রথম টের পাই সাবরিনার কাছ থেকে ।

শুনে খানিকটা হয়ে গেছিলাম । পরে আস্তে আস্তে টের পেতে শুরু করি আসলেই সুমন আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে ! সুমনের মত ছেলেকে সবাই পছন্দ করে কিন্তু তাই বলে এমন হুট করে কিছু বলে উঠবে ? আগে কি ওর উচিৎ ছিল না আমি দিকটা দেখা ! আমার মনটা কি ওর আগে জয় করার দরকার ছিল না ? তা না ! তাই প্রথমে খানিকটা বিরক্তই হয়েছিলাম ওর আচরন দেখে কিন্তু সব চেয়ে বেশি বিরক্ত হলাম অহীনের সাথে ইটিস পিটিস করতে ! আমি ওকে রিফিউজ করেছি দুইদিনও হয় এরই ভিতরে নতুন একজন ? কি রে ভাই ? কটাদিন অপেক্ষা করলে হত না ? প্রথমে ভেবেছিলাম সম্পুর্ন ভাবে এড়িয়ে যাবো কিন্তু ঐ দিন বৃষ্টিতে ওকে আর অহীন কে দেখে কিছুতেই ভা লাগলো না ! কিছুতেই নিজের মন থেকে ওটা দুরকরে দিতে পারলাম না । এমন কেন হচ্ছিল ঠিক বুঝতে পারলাম না ! বাসায় গিয়ে সারাটা সময় কেবল চোখের সামনে ওদের দুজনের দৃশ্য ভাসতে লাগলো । বারবার কেন জানি মনে হচ্ছিল যে কিছু একটা আমার ছিল সেটা অন্য কেউ নিয়ে যাচ্ছে ! কেন নিয়ে যাবে ? না ! আমি কিছুতেই নিয়ে যেতে দিবো না ! তারপরেই সুমনের সাথে মেলামেশা টা বেড়ে যায় । বলা যায় ইচ্ছে করেই আমি বাড়িয়ে দেই ।

আমি জানতাম এমটা হবে ! সব ছেলে গুলোই এমন ! তবুও এর ভিতর সুমন অহীনের সাথে অনেক কথা বলতো ! অনেক হাসাহাসি করতো ! অফিসে রপরে প্রায় দিনই ওদের এক সাথে বাইরে যেতে দেখতাম ! পাশাপাশি বাসে সিটে অথবা রিক্সায় বসতে দেখে আসলেই মনের ভিতর একটা ক্রোধ জেগে উঠতো ! বারবার মনে হত আমি হেসে যাচ্ছি নাকি ! না ! আমি হারতে পারি না ! অহীনের কাছে আমি হারতে পারি না ! যা আমার ছিল তা আমি ছিনিয়েই নিবো ! আজকে সুমনকে সব কিছু খুলে বলতে হবে ! আজকেই ! ওকে আসতে বলেছি ! আজকেই সুমনকে নিজের করে নিবো ! (গাড়ি চলবে) Click This Link


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।