আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার খেতাবের বাহার



নববর্ষ এলেই খেতাব দেয়ার একটা চল ছিল এক সময়। এখনও আছে কি না জানি না। তবে শান্ত-শিষ্ট (কি জানি বিশিষ্ট) বলে আমাকে কখনই কেউ ঘাটাত না। এই খেতাবপ্রাপ্তি থেকে ছাড় পেলেও জীবনে খেতাব একেবারে কম জুটেনি। ছোটবেলায় অল্প ব্যথায়ও আহ্লাদ করে কোঁকাতাম।

তাই দেখে আম্মা খেতাব দিয়েছিলেন "ননীর পুতুল। " এই খেতাবের চোটেই মনে হয় পরে এমন হয়েছিল যে ব্যথা পেলে পারতপক্ষে কাউকে কিছু বলতাম না। ভীষণ অলস আমি সব সময়ই। যত কম পরিশ্রম করে থাকা যায় সেই চিন্তাই থাকে। ছোট মামা আমার এই স্বভাবের জন্য খেতাব দিয়েছিলেন "কুইড়ার রাণী।

" বাসায় এলে এই নামেই ডাকতেন আমাকে। তবে এই খেতাব আমার স্বভাবের উপর কোনরকম প্রভাব ফেলতে পারেনি, এখনও আমি চরম অলসই আছি। ছোটবেলায় স্মরণশক্তিটা ভালোই ছিল। এখন যে কই গেল ঐ শক্তি । বিভিন্ন দেশের রাজধানীর নাম খুব ভালো মুখস্থ থাকত।

পড়তে চাইতাম না বলে আম্মা আমাকে খেলতে বসিয়ে পাশে বসে নিজে পড়তেন জোরে জোরে। ওতেই আমার পড়া হয়ে যেত আর পরীক্ষায় সব ঠিকমত লিখেও দিয়ে আসতাম। আব্বা তাই আমার খেতাব দিয়েছিলেন "কম্পিউটার। " ওয়ার্ড মিনিং-এর বইটাও খুব ভালোই মুখস্থ করতে পারতাম। সেটার জন্য খেতাব দিয়েছিলেন, "ডিকশনারী।

" কর্মস্থলে পিচ্চি-পাচ্চিরা (ইন্টার্ন) আমাকে একটা খেতাব দিয়েছে। বড়ই অপমানকর খেতাব, "ইন্টার্নীদের মত দেখতে আপু। " আর ইদানিং এমন একটা খেতাব জুটেছে কপালে যেটা সারাজীবনে কোনদিন পাইনি। খুবই দুঃখজনক যে আমার বর্তমান খেতাব, "আঁতেল। " তবে আজ পর্যন্ত যত খেতাব পেয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর যে খেতাব, তা প্রাপ্তির পিছনে আছে একটা লম্বা কাহিনী।

মাঝে মাঝেই আমার মধ্যে চুল কাটার ভীমরতী ধরে। কোমর সমান চুল কেটে-কুটে ফেলে দিই নির্দয়ভাবে। আম্মার কাছে বকাও খেয়েছি এ নিয়ে। একবার গ্রাম থেকে আসা কিছু আত্মীয়ের কল্যাণে মাথায় উকুন হয়েছিল। ঐ সময় আমার চুল এত বড় ছিল যে বসতে গেলে চুল হাত দিয়ে সরিয়ে নেয়া লাগত।

ঐ মাথায় উকুন হবার পর এত তাড়াতাড়ি বংশ বিস্তার করে ফেলেছিল যে আমার অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। উকুনের কালো চিরুনী দিয়ে রোজ দুই-তিনবার অভিযান চালাতাম। কিন্তু অত লম্বা চুলে চিরুনী গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত আসতে আসতে উকুন হারিয়ে যেত কোথায়। সময় পেলেই বড়পার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়তাম। সে আবার মাথার উকুন বেছে দুই আঙ্গুলের নখের মধ্যে কুটুস কুটুস করে মারায় বিশেষ পারদর্শী।

কিন্তু তাতেও কোন সুবিধা হচ্ছিল না। আম্মা তখন বুদ্ধি দিলেন চুল কেটে ফেলার। এমনিতেই তো আমার বাতিক আছেই, আম্মার অনুমতি পেয়ে আর দেরী করলাম না। আমাদের বাসার নাপিত মেজপার হাতে কাঁচি দিয়ে সামনে বসে পড়লাম। মেজপা বলল, কতটুকু কাটব।

বললাম, যতটুকু কাটলে ভদ্র সমাজে মুখ দেখানো যায়। মেজপা মনের মাধুরী মিশিয়ে আমার চুল কেটে দিল একেবারে কানের নীচ পর্যন্ত। এরপর শুরু হল ধুন্দুমার হত্যাযজ্ঞ। চুলে শ্যাম্পু দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে উকুন আমার দুই কাঁধে টুপ টুপ করে পড়ছে। ধরে ধরে কুটুস কুটস চলতেই থাকল।

এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। একদিনে সম্ভব না। পরপর তিন-চারদিন এই অপারেশন চলল। আবার গুণেও রাখতাম রোজ কয়টা করে মারা পড়ল। গড়ে প্রতিদিন ৬০-৭০ টা করে মারতাম।

অবশেষে আমার মাথা উকুনমুক্ত হল। তা যে কথা বলতে গিয়ে এত লম্বা কাহিনীটা বলছিলাম, উকুন তো শেষ হল, কিন্তু চুল তো আর লম্বা হয়ে যাবে না এক্ষুণি। ঐ কানের নিচের ছোট ছোট চুলগুলো সামাল দিতে বড়ই হিমশিম খেতাম। সারাক্ষণ কপালে, চোখের সামনে কয়েক গোছা চুল এসে পড়ে থাকত। ঐ দৃশ্য দেখে বড়পা একটা লম্বা খেতাব দিয়েছিল, The Gift of Magi-এর ডেলার মত truant school boy এর বাংলা করে, "স্কুল পালানো দুষ্টু দামাল ছেলে।

"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।